ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

সবার নজর ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ডের’ দিকে

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম
সবার নজর ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ডের’ দিকে
নড়াইল সদর উপজেলায় চিত্রা অ্যাগ্রো ফার্মে ২২ মনের বেশি ওজনের ষাঁড় ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’। ছবি: খবরের কাগজ

নড়াইলে এবার কোরবানির জন্য ৪ হাজার ৪৭৮টি খামারে ৫৩ হাজার ৬৩৯ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় অন্যতম আকর্ষণ ২২ মণের বেশি ওজনের ষাঁড় ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’।

জানা যায়, নড়াইল সদর উপজেলার তারাপুর এলাকায় প্রকৃতির মাঝে গড়ে ওঠা চিত্রা অ্যাগ্রো ফার্মে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ৭৫টি গরু। এর মধ্যে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৫টি ষাঁড়। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ২২ মণের বেশি ওজনের ষাঁড় ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’। ব্ল্যাক ডায়মন্ডের দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ও উচ্চতায় ৬ ফুটের মতো। ষাঁড়টির মালিক দাম হাঁকাচ্ছেন ৮ লাখ টাকা। এরই মধ্যে এটির দাম ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।

চিত্রা অ্যাগ্রো ফার্মের কর্মী আরহাম ও আব্দুর রহমান বলেন, “খামারে অনেক গরুর মধ্যে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ সবচেয়ে বড়। এটি খুব শান্ত হলেও মাঝেমধ্যে অশান্ত হয়ে যায়। ষাঁড়টি বের করতে গেলে ১৫ থেকে ২০ জন লোক লাগে। নিয়মিত পরিচর্যায় দুই বেলায় গোসল করানো হয় ষাঁড়টিকে। নিয়ম করে তিন বেলা খাবারে দেওয়া হয় খামারির নিজস্ব জমির কাঁচা ঘাস, ভুট্টা, চিটাগুড়, খৈল, লবণ, গম ভাঙা। ব্ল্যাক ডায়মন্ডের সঙ্গে একই খামারে ৭৫টি গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। চলতি বছরে কোরবানি ঈদের জন্য ৫৫টি দেশি ষাঁড় প্রস্তুত করা হয়েছে এই খামারটিতে।”

খামার কর্তৃপক্ষর দাবি পুরো জেলায় ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ডের’ চেয়ে বড় গরু আর একটিও নেই। এই ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিনই লোকজন ভিড় করছেন খামারে। দরদাম করছেন অনেকে। কেউ কেউ ছবিও তুলছেন।

চিত্রা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক মিল্টন এইচ সিকদার বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় পড়াশোনা শেষ করে ১৭ বছর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে চাকরি করেছি। লোভনীয় অফারকে প্রত্যাখ্যান করে নিরাপদ খাদ্য জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে স্মার্ট কৃষিতে নিজেকে নিয়োজিত করেছি।’

মিল্টন আরও বলেন, ‘গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যশোরের সাতমাইল হাট থেকে ষাঁড়টি কিনে আনি। তখন এর ওজন ছিল ৪০০ কেজির মতো। আমরা একে প্রাকৃতিকভাবে লালন-পালন করেছি, পরিমিত খাবার দিয়েছি। বেশি খাবার দিলে এর ওজন ৬ থেকে ৭ মণ বেশি হতো। ওজন অতিরিক্ত হলে ঝিমায় যেত, কিন্তু ষাঁড়টি খুবই প্রাণবন্ত। ষাঁড়টিকে আমরা হাটে তুলব না, খামার থেকেই বিক্রি করব।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘নড়াইল জেলায় এবার কোরবানির জন্য ৪ হাজার ৪৭৮টি খামারে মোট ৮৪ হাজার ৮১২ গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। আর সদরের তারাপুরে চিত্রা অ্যাগ্রো খামারটিতে অনেক বড় একটি গরু আছে। শুরু থেকে খামারটির বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে খামারিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।’

সিদ্দিকুর রহমান আরও জানান, জেলায় মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় খামারিরা বড় গরু পালনে কম আগ্রহী। জেলায় ১০টি গরুর হাটে ভেটেনারি টিমের উপস্থিতিতে সুস্থ গরু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ভোক্তার কাছে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, জেলায় খামারি রয়েছেন ৪ হাজার ৪৭৮ জন। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৫৩ হাজার ৬৩৯টি গবাদিপশু মোটাতাজা করেছেন। তার মধ্যে ষাঁড় ১৫ হাজার ৩৪৮টি, বলদ ২ হাজার ২৮৮৬, গাভি ৪ হাজার ৭১৫, ছাগল ৩১ হাজার ২৫৫ ও ভেড়া ৩৫টি। জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩৮ হাজার ৬৭৬টি। পশু চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত থাকছে ১৪ হাজার ৯৬৩টি, যা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পাঠানো হবে।

ঈদের পরও চড়া গরু-খাসি, কমেছে পোলট্রি মুরগি ও কাঁচা মরিচের দাম

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
ঈদের পরও চড়া গরু-খাসি, কমেছে পোলট্রি মুরগি ও কাঁচা মরিচের দাম

‘ঈদের পর মানুষের হাতে টাকা কমে গেছে। চাহিদাও কমে গেছে। এ জন্য পোলট্রি মুরগির দাম কমতেই আছে। আগে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ১৭৫-১৮০ টাকা কেজি পোলট্রি মুরগি।’ কারওয়ান বাজারের সততা মুরগি আড়তের বাহার উদ্দিন মুরগির দামের কথা জানাতে গিয়ে বললেন এই কথা।

রবিবার (২৩ জুন) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচের দামও কমে ১৮০-২০০ টাকায় নেমেছে। ১৬০ টাকার শসা হয়েছে ৮০ টাকা। তবে ঈদের পর পেঁয়াজের দাম না কমে বরং কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে ৯০-৯৫ টাকা হয়েছে। ঈদের পর গরু ও খাসির মাংসের বাজারে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। দাম কমেনি। বরং সরবরাহের ঘাটতির অজুহাতে কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বেড়ে ৭৮০-৮০০ টাকা ও ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। 

গরু ৮০০, খাসি ১২০০ টাকা
ঈদে এবার ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে গরু ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার ও ছাগল ৫০ লাখ ৫৬ হাজার। তার পরও ঈদের পর গরুর মাংসের দাম কমছে না। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে ঈদের পর কেজিতে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খাসির মাংসের দামও কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি হয়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। 

টাউনহল বাজারের মন্টু বলেন, ‘ঈদের পর গরুর মাংসের দাম কমেনি। সরবরাহ কমে গেছে। আবার কাস্টমারও কম। মানুষের হাতে টাকা কমে গেছে। বেচাকেনা কম হচ্ছে। এ জন্য দাম বেশি। গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। অন্যান্য বাজারেও ৭৮০-৮০০ টাকা কেজি ও খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজর ২০০ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান।

ঈদের আগে পোলট্রি মুরগি ১৯০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ১৭৫-১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারের ভাই ভাই মুরগি আড়তের শরিফ বলেন, ‘ঈদের পর মানুষ গরু, খাসি খাচ্ছে। পোলট্রি মুরগির চাহিদা কমে গেছে। এ জন্য দামও কমেছে কেজিতে ১৫-২০ টাকা। তবে কমেনি সোনালি মুরগির দাম। ৩০০-৩২০ টাকার সোনালি মুরগি ঈদের পরও সেই দামে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি মুরগিও ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছে।’ ১৫৫-১৬০ টাকা ডজনের ডিমের দামও কমে বিভিন্ন বাজারে ১৪০-১৫০ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান। 

ঈদের পরও বাড়তি পেঁয়াজের দর
ঈদে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৮৫-৯০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। ঈদ চলে যাওয়ার পরও কমার পরিবর্তে কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। টাউনহল বাজারের রফিকুল খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের পর কমেনি দাম। এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ আদার কেজি ২০-৪০ টাকা কমে ২৮০-৩০ টাকায় নেমেছে। রসুনের দামও কমে এখন ২০০-২২০ টাকা কেজি। 

কারওয়ান বাজারের করিম বলেন, ‘ঈদের পর পেঁয়াজের দাম বাড়লেও আদা ও রসুনের দাম কয়েক দিন থেকে কমছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। টাউনহল বাজারের রফিক বলেন, ‘বর্তমানে আলু ৬০ টাকা কেজি। তবে গোল লাল আলুর দাম একটু বেশি, ৬৫-৭০ টাকা কেজি। 

কমেনি মসলার দাম
ঈদ চলে গেলেও কমেনি কোনো মসলার দাম। আগের মতোই জিরা ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি, এলাচের কেজি ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৪ হাজার টাকা, গোলমরিচ ১ হাজার ১০০, লবঙ্গ ১ হাজার ৬০০ ও কিশমিশ ৫৪০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মাসে ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মসলার দাম বেড়ে গেছে। তাই ঈদের পরও কমছে না দাম। আগের মতোই বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৭৯০-৮১৮ টাকা, খোলা আটার কেজি ৪০-৪৫ ও দুই কেজির আটা ১১০-১৩০ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ ও প্যাকেট চিনি ১৩৫ টাকা। 

চালের দাম স্থিতিশীল
ঈদে পরিবহন খরচ বাড়লেও ঢাকায় চালের দাম বাড়েনি। আগের সপ্তাহের মতো মিনিকেট বর্তমানে ৬৬-৭০ টাকা, আটাশ চাল ৫২-৫৪ টাকা ও মোটা গুটি স্বর্ণা চাল ৫২ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা হাজি রাইস এজেন্সির জসিমসহ অন্য বিক্রেতারা বলেন, ‘ধান ওঠায় কমছে চালের দাম। তবে ঈদের আগে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এ জন্য আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তবে বাড়েনি চালের দাম।’ 
পোলাও চালের দামও বাড়েনি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোলাওয়ের প্যাকেট চাল ১৫০-১৭০ টাকা ও বস্তার চাল ১২০-১৪০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতারা জানান। 

মাছের দাম বাড়তি
ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়লেও এখনো আগের মতো জনজীবন স্বাভাবিক হয়নি। মাছের চাহিদা কমলেও সরবরাহ বাড়েনি। এ জন্য বাজার কিছুটা চড়া বলে বিক্রেতারা জানান। কেজিতে গড়ে ৩০-৫০ টাকা কমেছে বলে বিক্রেতারা জানান। বর্তমানে রুই ও কাতলা ৩২০-৬০০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৫৫০-৮০০ টাকা। নদীর চিংড়ি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাবদা ৫০০-৭০০, পাঙাশ ১৮০-২০০, তেলাপিয়া ১৮০-২০০, শিং ও মাগুর ৪০০-৬০০ টাকা কেজি। বাতাসি মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৮০০ ও নদীর মাছ ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে শসাসহ বিভিন্ন সবজির দাম
ঈদের আগে শসার কেজি ১২০-১৬০ টাকা হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ৮০-১০০ টাকায় নেমে নেমেছে। পেঁপে ৪০-৫০ টাকা কেজি, করলা ৫০-৭০, ঢ্যাঁড়স ৪০-৫০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০, ঝিঙে ও ধুন্দুল ৫০-৬০, সজনে ডাঁটা ৮০-১২০, পটোল ৫০-৬০, বেগুন ৭০-১০০ টাকা। ৩৪০-৪০০ টাকার কাঁচা মরিচ হঠাৎ করে ২০০ টাকার নিচে নেমে গেছে। বিভিন্ন বাজারে ১৬০ টাকা কেজি। লাল শাকসহ অন্যান্য শাকের আঁটি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আইসিবিকে ‘সভরেন গ্যারান্টি’ দেওয়ার পরিকল্পনা

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
আইসিবিকে ‘সভরেন গ্যারান্টি’ দেওয়ার পরিকল্পনা

রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-কে তিন হাজার কোটি টাকার ‘সভরেন গ্যারান্টি’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এতে আইসিবি বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সমপরিমাণ টাকার ঋণ নিতে পারবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে কয়েক দফায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তারল্য সংকট মেটাতে সরকারের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ চেয়ে আসছিল আইসিবি। তবে আর্থিক সংকটে থাকা সরকারের পক্ষে সরাসরি ঋণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানটির ঋণে সরকার ‘গ্যারান্টার’ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গ্যারান্টি পেতে সরকার নির্ধারিত ফরম্যাটে কিছু নথিপত্রসহ আবেদন করতে হয়। এসব নথি প্রস্তুতের কাজ চলছে। শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।

সরকারের কাছে কত টাকার ঋণ গ্যারান্টি চাইবেন- এমন প্রশ্নে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আইসিবি পাঁচ হাজার কোটি টাকা চায়। এখন সরকার কতটা দেবে, তা তো বলতে পারি না।’

তিনি জানান, এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করেছিল আইসিবি। তবে ১৩ জুন চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সরকার গ্যারান্টার হলে ঋণ দিতে আপত্তি নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সরকার গ্যারান্টি দিলে আইসিবিকে ঋণ দেওয়া হবে।

ওই ঋণ ব্যবহারের বিষয়ে আইসিবি এমডি জানান, আইসিবির পরিকল্পনা হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকার ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে নেওয়া উচ্চ সুদের পুরোনো ঋণের কিছুটা পরিশোধ করা। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ঋণের ৫০ অনুপাত ৫০, অর্থাৎ অর্ধেকটা ঋণ পরিশোধে এবং বাকিটা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা আছে। তবে এই হার ৬০ অনুপাত ৪০-ও হতে পারে।

ঋণ করে পুরোনো ঋণ পরিশোধের কারণ ব্যাখ্যায় আইসিবির এমডি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের সুদহার অনেক বেশি। সরকারের গ্যারান্টিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ মিলবে। এতে সুদ ব্যয় বাবদ খরচ কমবে।

পতনের বৃত্ত থেকে বের হচ্ছে পুঁজিবাজার

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:৪০ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:৪১ পিএম
পতনের বৃত্ত থেকে বের হচ্ছে পুঁজিবাজার

দেশের পুঁজিবাজারে ঈদের আগে টানা পতন চললেও ছুটির পর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আগের দুই কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল রবিবার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে ঈদের পর লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসেই পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

তিন কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ১২৮ পয়েন্ট।

গতকাল মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসই এবং সিএসইতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে।

এর আগে অব্যাহত দরপতনে ঈদের আগে এক মাসের মধ্যে ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কমে যায়। আর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে চলে আসে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। বাজারে ক্রেতাসংকট প্রকট হয়ে ওঠে।

এ পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটি শেষে পুঁজিবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাজারে ক্রেতা বেড়েছে। অবশ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দানা বাঁধা আতঙ্ক এখনো কাটেনি। ফলে দাম বাড়ার পরই দাম কমার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।

রবিবার পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। 

এরপর একশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। ফলে দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। এতে দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকা বড় হয়। লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম এক দিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বিপুল পরিমাণ ক্রয় আদেশ এলেও বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।

এদিকে দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান থাকলেও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সব কটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৫২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বিচ হ্যাচারি, ওরিয়ন ইনফিউশন, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইউনিক হোটেল।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে স্যালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড।

স্যালভো কেমিক্যালের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে ৪ টাকা ২০ পয়সা বা ১০ শতাংশ। তাতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।

দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। আর ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে বিডি মনোস্পুল পেপার।

গতকাল রবিবার দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো সোনালী আঁশ, বিএসআরএম স্টিল, ওয়ালটন, রেনাটা, সোনালী পেপার, ওয়াটা কেমিক্যাল এবং আফতাব অটোমোবাইলস।

এদিন ডিএসইতে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড।

নর্দার্ন জুটের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।

দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড।

গতকাল রবিবার দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, জেএমআই সিরিঞ্জ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, এপেক্স ট্যানারি, খান ব্রাদার্স, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বিকন ফার্মা।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৫টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

আরও বেশি মিলিয়নিয়ার আকৃষ্ট করতে চায় ইউএই!

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আরও বেশি মিলিয়নিয়ার আকৃষ্ট করতে চায় ইউএই!
দুবাইয়ের আইকনিক লা মের সমুদ্রসৈকত। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে নিজেদের দেশে আরও অনেক বেশি মিলিয়নিয়ার আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ অভিবাসনবিষয়ক পরামর্শক সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ‘হেনলি প্রাইভেট ওয়েলথ মাইগ্রেশন রিপোর্ট-২০২৪’ অনুযায়ী চলতি বছর অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি নতুন মিলিয়নিয়ার আকর্ষণ করবে ইউএই। খবর আরব নিউজের।

হেনলি প্রাইভেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোল্ডেন ভিসা, কম কর সুবিধা, ঈর্ষণীয় জীবনযাত্রা এবং কৌশলগত অবস্থানের সমন্বিত সুবিধার কারণে যুক্তরাজ্য, ভারত ও আফ্রিকা থেকে আসা মিলিয়নিয়ররা এই দেশটিতে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী পরপর তৃতীয় বছরে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ধনকুবের আকর্ষণকারী হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করার পথে রয়েছে ইউএই। চলতি বছরের শেষ নাগাদ রেকর্ডসংখ্যক ৬ হাজার ৭০০ জন বিত্তশালী অভিবাসী আমিরাতকে তাদের নিজেদের বাসস্থান হিসেবে বেছে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউএইতে মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ থেকে প্রচুর অর্থপ্রবাহ আসার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। 

প্রসঙ্গত, বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত ‘হেনলি প্রাইভেট ওয়েলথ মাইগ্রেশন রিপোর্ট-২০২৪’ বিভিন্ন দেশ থেকে কোটিপতিদের আগমন ও প্রস্থানের সংখ্যা তুলে ধরে। এই প্রতিবেদনে ১০ লাখ (১ মিলিয়ন) ডলার বা তার বেশি তরল বিনিয়োগযোগ্য সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তিকে মিলিয়নিয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং কোন দেশে কতজন মিলিয়নিয়ার অভিবাসী হয়েছেন এবং কতজন দেশ থেকে চলে গেছেন, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলিয়নিয়ারদের অভিবাসনের জন্য বিশ্বের এক নম্বর গন্তব্য হিসাবে নিজেকে ধরে রেখেছে এবং শুধু চলতি বছরেই ৬ হাজার ৭০০ জন নতুন মিলিয়নিয়ার আগমনের রেকর্ড হতে পারে দেশটিতে।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী সংযুক্ত আরব আমিরাত তার শূন্য আয়কর, গোল্ডেন ভিসা, বিলাসবহুল জীবনধারা ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে কোটিপতিদের আকৃষ্ট করছে। ভারত, বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল, রাশিয়া ও আফ্রিকা থেকে ধারাবাহিকভাবে আসা বিত্তশালীসহ ব্রিটেন ও ইউরোপীয়দের একটা বড়সংখ্যক মিলিয়নিয়ারের প্রত্যাশিত আগমন দেখে মনে হচ্ছে, আমিরাত তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ মিলিয়নিয়ারকে আকর্ষণ করবে। ২০২৪ সালে দেশটি (যুক্তরাষ্ট্র) ৩ হাজার ৮০০ কোটিপতিকে আকৃষ্ট করতে পারবে বলে অনুমান করা হয়েছে।

দুবাইয়ের হাউরানির প্রাইভেট ওয়েলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি অফিসের নেতৃত্বদানকারী সুনীতা সিং-দালাল বলেছেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিবর্তন ও বিকাশ অভাবনীয়। মাত্র পাঁচ বছরেরও কম সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রবর্তন করেছে, ধনী ব্যক্তিদের তাদের সম্পদ রক্ষা, সংরক্ষণ এবং বাড়ানোর জন্য উদ্ভাবনী সমাধানের একটি পরিসীমা দেয়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ হাজার ৫০০ জন বিত্তশালীর নেট প্রবাহের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর আবারও তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। এ ছাড়া মিলিয়নিয়ারদের অভিবাসনের জন্য বারোমাসি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে। এর মধ্যে কানাডায় অভিবাসী মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ২০০ জন এবং অস্ট্রেলিয়ায় ২ হাজার ৫০০ জন।

নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথের গবেষণা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু অ্যামোয়েলস বলেছেন, এই গন্তব্য দেশগুলোতে সম্পদ ও প্রতিভার স্থানান্তরের সুবিধাগুলো উল্লেখযোগ্য ও বিস্তৃত। অ্যান্ড্রু অ্যামোয়েলস বলেন, ‘অভিবাসী মিলিনিয়াররা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কারণ তারা যখন কোনো দেশে চলে যায় তখন তারা তাদের অর্থ সঙ্গে নিয়ে আসে। এ ছাড়া তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ উদ্যোক্তা এবং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং এ কারণে নতুন দেশে তারা স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। এই হার (নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি) মিলিয়নিয়ার ও বিলিয়নিয়ারদের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশেরও বেশি হয়ে থাকে।’

মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি
মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন সুতা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে

একটির দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজির দাম প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এমনি অদ্ভুত দাম মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আমের। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক হারে চাষ হয়েছে বিশ্বের সব থেকে দামি এই আমের। আমের অন্য জাত থেকে ব্যতিক্রমী ফলন হওয়ায় ফলচাষিসহ ফলপ্রেমীদের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছে বিদেশি আমটি। বিশেষ পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই আম রং, স্বাদ ও আকারে অন্য সব আম থেকে পুরোপুরি আলাদা। মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আমের এমন অদ্ভুত নাম হলো কীভাবে, আর আকাশচুম্বী দামের পেছনে আসল কারণটাই বা কী, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

আমের নাম মিয়াজাকি বা সূর্যডিম কেন
উৎপত্তিস্থল জাপানের কিউশু রাজ্যের মিয়াজাকি নামক শহরে হওয়ায় শহরের নামটি যুক্ত হয়ে গেছে আমের নামের সঙ্গে। তবে জাপানি ভাষায় আমগুলো পরিচিত ‘তাইয়ো-নো-তামাগো’ নামে, যার বাংলা অর্থ ‘সূর্যের ডিম’। তাই বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চলে ‘সূর্যডিম’ নামেই আমটি অধিক পরিচিতি পেয়েছে।

অবশ্য আমের রং অনেকটা গাঢ় লাল হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ‘রেড ম্যাংগো’ বা ‘লাল আম’ নামটিই অধিক প্রসিদ্ধ।
জাপানে মিয়াজাকি আমের প্রথম চাষের সময়কাল ১৮৬৮ থেকে ১৯১২ সাল হলেও ফলটি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পায় ১৯৭০ দশক থেকে।

মিয়াজাকি আম দেখতে কেমন
তাইয়ো নো তামাগো আম দেখতে অনেকটাই মুরগির ডিমের মতো। আমগুলোর ওজন সর্বোচ্চ ৩৫০ গ্রাম এবং এতে চিনির পরিমাণ ১৫ শতাংশ বা তার বেশি। আকারে এটি সাধারণ আমের চেয়ে বেশ বড় ও লম্বা এবং গন্ধ ও স্বাদে মিষ্টতাও বেশি। রং গাঢ় লাল বা লাল ও বেগুনির সংমিশ্রণ।

ওপরের খোসার নিচে ভেতরের সুস্বাদু খাওয়ার অংশটি একেবারেই আঁশমুক্ত এবং উজ্জ্বল হলুদ সুগন্ধযুক্ত।
মিয়াজাকি আমের দাম এত বেশি কেন
২০১৬ সালে জাপানের ফুকুওকায় নিলামে এক জোড়া মিয়াজাকি আমের মূল্য উঠেছিল ৫ লাখ ইয়েন। মূল্যটি সে সময়ের বাজার রেট অনুযায়ী ৪ হাজার ৫৪৭ মার্কিন ডলারের সমতুল্য ছিল। ইন্টারনেটের সুবাদে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত সবার নজর কাড়ে জাপানি আমটি।

তাইয়ো নো তামাগোর সর্বোচ্চ ফলন হয় এপ্রিল থেকে আগস্টের মাঝামাঝি। গাছ থেকে সংগ্রহের পর সেরা আমগুলো সরাসরি চলে যায় নিলামে। প্রতিবছর এপ্রিল মাসে মিয়াজাকি শহরের পাইকারি বাজারে শুরু হয় এই নিলাম। স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আমের রং, মিষ্টতা, স্বাদ ও আকার-আকৃতির বিচারে নির্ধারিত হয় সেরা মানের আম।

নিলামে দেশের বড় বড় ফল ডিস্ট্রিবিউটররা সেগুলোর জন্য ভিড় করেন। গড়পড়তায় নিলামের মূল্য থাকে আমপ্রতি ৫০ মার্কিন ডলার বা ৫ হাজার ৮৬৩ টাকা (১ মার্কিন ডলার=১১৭ দশমিক ২৫ বাংলাদেশি টাকা)। তবে কখনো কখনো এই মূল্য অনেক বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত একটি আমের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ২ হাজার মার্কিন ডলার (২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৩ টাকা)।

২০১৯ সালে জাপানে এক জোড়া তাইয়ো নো তামাগোর দাম উঠেছিল প্রায় ৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা সে সময়ের বাজার রেট অনুসারে প্রায় ৪ লাখ টাকারও বেশি। ২০২৩ সালে ভারতে এই আমের কেজি বিক্রি হয়েছে আড়াই লাখ রুপিতে।

এমন চোখ কপালে তোলা দামের নেপথ্যে রয়েছে আমটির সুনির্দিষ্ট চাষাবাদ পদ্ধতি এবং দুষ্প্রাপ্যতা। এ ছাড়া পেকে যাওয়ার পর যে গভীর লাল রঙ ধারণ করে তা আমের অন্যান্য জাতের মধ্যে বেশ দুর্লভ।

মিয়াজাকিতে সূর্যডিমের চাষ পদ্ধতি
এই উপক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রধান সুবিধা হলো উর্বর মাটি এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত; এর সঙ্গে যুক্ত হয় দিনভর সূর্যালোকের নিরবচ্ছিন্ন উষ্ণতা। এই সবকিছু একসঙ্গে সূর্যডিম আমের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে মিয়াজাকিকে।

এ ছাড়া স্থানীয় কৃষকরা যত্নসহকারে আমগাছগুলোর জন্য গ্রিনহাউসের ব্যবস্থা করেন। ঘরগুলো ফলের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সরবরাহ করেন। বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি আম সতর্কতার সঙ্গে একটি জালে আবদ্ধ করা হয়। এই জাল গ্রিনহাউস সিলিংয়ে একটি ওভারহেড তারের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা থাকে। ফলে ঘরের ভেতরে থাকলেও প্রতিটি ফল গ্রিনহাউস গ্লাসে প্রতিফলিত সূর্যালোক পায়। এতে করে বৃদ্ধির পাশাপাশি সেই নজরকাড়া গভীর লাল রং পেতেও সহায়তা করে। 

সম্পূর্ণ পেকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আমগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয় না। বরং সেগুলো নিজে নিজেই গাছ থেকে পড়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। নিচে স্থিতিশীল জাল থাকায় আমগুলো পড়ে শক্ত আঘাতে ওপরের ত্বক নষ্ট হয়ে যায় না। এভাবে হাতের কোনো স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠা আমগুলো তাদের মৌলিক গড়ন, ওজন, গন্ধ ও স্বাদ পায়।

বাংলাদেশে সূর্যডিম আমের উৎপাদন
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যডিম আমের চাষ হলেও উৎপাদনের দিক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বেশ এগিয়ে। সেখানে রাংগুই বা আম্রপালির সঙ্গে একত্রে চাষাবাদ হচ্ছে সূর্যডিমের।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার অন্তর্গত ধুমনিঘাট এলাকার ৩৫ একরের আম বাগানটি তৈরি হয়েছিল ২০১৬ সালে। এখন পর্যন্ত বাগানটিতে সূর্যডিম আমগাছের সংখ্যা প্রায় ১২০টি। এগুলোর প্রতিটির বয়স ৩ থেকে ৪ বছর এবং প্রতিটিতেই এ পর্যন্ত আম ধরেছে ৩০ থেকে ৪০টি।

এ বছর মুন্সীগঞ্জের উত্তর বেতকা মামুদাতপুর গ্রামের একটি আম বাগানে চারটি আমগাছ থেকে উৎপাদিত হয়েছে ৩০ কেজি মিয়াজাকি আম। এই বাগানের মিয়াজাকিগুলো বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন কেজিপ্রতি ৭০০ টাকায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদিত সূর্যডিম আমের সংখ্যা ছিল ২৪ টন। আর ২০২৩-২৪-এ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ টন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ উৎপাদন।

প্রথম দিকে শখের বশে হলেও এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মিয়াজাকি চাষ করছেন। বাংলাদেশে এ আমের চাষাবাদ শুরুর পর প্রথম দিকে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ২০২৩-এ অনেক খামারি একই পরিমাণ বিক্রি করেছেন ২ হাজার টাকায়। এমনকি অনেকে এর কমেও দিচ্ছেন।

বিশ্ব বিখ্যাত আমের এই দরপতন বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দেশজুড়ে।

মূলত মিয়াজাকির উৎপাদনে জাপানে যেমন যত্ন নেওয়া হয়, তা এখানে নেওয়া হয় না। অন্য জাতের আমের মধ্যে একসঙ্গে এগুলোও চাষ করা হয়। কিন্তু জাপানসহ বিশ্বের অন্যত্র মিয়াজাকির জন্য থাকে আলাদা নেট হাউসের ব্যবস্থা। প্রত্যেকটি আম কতটা সূর্যালোক এবং কতটা পানি পাচ্ছে- তা সূক্ষ্মভাবে যাচাই করা হয়। এমনকি কোনো কোনো স্থানে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েও এই আমের পর্যবেক্ষণের রীতির কথা শোনা যায়। সূত্র: ইউএনবি