![বিশ্বব্যাংকের ঋণ: আসছে ১০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা](uploads/2024/06/23/The-World-Bank-1719123608.jpg)
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৯০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এই ঋণের টাকা আর্থিক খাতের চলমান সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে কাজে লাগানো হবে। এ ছাড়া টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত নগরাঞ্চলে বাজার ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
শনিবার (২২ জুন) অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পর্ষদের সভায় এ ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় এ তথ্য জানায়।
অনুমোদিত ৯০ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সংস্কার, টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে অর্থনীতির সহনশীলতা তৈরি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি হ্রাস করা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে।
এ প্রকল্পটি ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার লক্ষ্যমাত্রাগুলোর একটি। এর আওতায় ই-জিপি পদ্ধতিতে সরকারি ক্রয়ে কার্যাদেশ সম্পাদনার সময় বা লিড টাইম বিদ্যমান ৭০ দিন থেকে ১৫ দিন হ্রাস করে ৫৫ দিনে নামিয়ে আনা হবে। এতে সরকারি ক্রয় সম্পাদিত হবে আরও দ্রুততর সময়ে। ব্যাংকিং খাতের তদারকি শক্তিশালী করা হবে এবং সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সব সরকারি ভাতা বিতরণে দক্ষতা সৃজন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনতে সব ধরনের বিনিয়োগ আরও কার্যকর করতেও এ অর্থ কাজে লাগানো হবে।
অবশিষ্ট ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে শহরাঞ্চলে জলবায়ু-সহিষ্ণু বাজার অবকাঠামো সুবিধা সৃজন-সম্পর্কিত প্রকল্পে। এর আওতায় উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে শুরু করে সর্বদক্ষিণে কক্সবাজার জেলা পর্যন্ত ৯৫০ কিলোমিটার হাইওয়ে সংশ্লিষ্ট শহরাঞ্চলে জলবায়ু-সহিষ্ণু ও জেন্ডার রেসপন্সিভ ‘অর্থনৈতিক করিডর’ গড়ে তোলা হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় কৌশলগত উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে শহরাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক করিডর তৈরি করা হবে, যাতে লিঙ্গসমতাভিত্তিক নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। এতে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সব পণ্য ও সেবা উৎপাদককে স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজার নেটওয়ার্কে যুক্ত করার ব্যবস্থা থাকবে।
বিশ্বব্যাংক নিজেদের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে জানায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের শহর-নগরে ৩৮ শতাংশ জনগণ বসবাস করত। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০ শতাংশে। কারণ দিনে দিনে দারিদ্র্যের পাশাপাশি জলবায়ুর প্রভাবের ফলে শহরাঞ্চলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী বাড়ছে। শহরাঞ্চলে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগও এ ধরনের অভিবাসনের বড় কারণ। ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে অভিবাসনের এ চাপ কমাতে হলে সারা দেশে সড়ক যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকার বাইরে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো এ ধরনের অবকাঠামো সৃজনের জন্য এ তহবিল থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাবে। সফলভাবে বিনিয়োগ হলে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসমূহের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে ২০ শতাংশ। তবে এ বিনিয়োগ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও তদারকি করার লক্ষ্যে প্রতিটি পৌরসভা ও সিটিতে একটি করে কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠনের কথা প্রকল্পে বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ওই কমিটিতে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের প্রধান আবদুলায়ে শেক বিবৃতিতে বলেন, বিশেষ এ বিনিয়োগ ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের জন্য সেকেন্ডারি সিটিসমূহ বা ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে গ্রোথ হাব বা ‘প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র’ গড়ে তোলা জরুরি।