![পাহাড়ি এলাকায় প্রথমবারের মতো আঙুর চাষ](uploads/2024/06/22/Grapes-Fruit-Cultivation-1719050427.jpg)
শেরপুরের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে আঙুর চাষ করে সফলতা এসেছে। এতে এ অঞ্চলে আঙুর চাষের অপার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পরীক্ষামূলকভাবে যে পরিমাণ ফলন হয়েছে, নিয়মিত এমন ফলন পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে আঙুর আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না।
জানা গেছে, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি এলাকা মেঘাদল গ্রামের বাসিন্দা জলিল মিয়া ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে ঘুরতে গিয়ে শখের বশে প্রথমে দুই জাতের গড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে ১০টি আঙুর ফলের চারা নিয়ে এসে নিজের জমিতে রোপণ করেন। পরে আরও দুই ধাপে ৪০টি জাতের ৮০টি চারা এনে নিজের ১৫ শতাংশ জমিতে আঙুরের বাগান শুরু করেন তিনি। এতে সবকিছু মিলিয়ে তার খরচ হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। চারা লাগানোর ১০ মাস পর তার বাগানে আসতে থাকে মিষ্টি ফল। এখন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুরের ছড়া। যে পরিমাণ ফলন হয়েছে, তাতে বাগান থেকে সব খরচ উঠে লাভ হবে দুই লাখ টাকার ওপরে। এখন তিনি নিজেই উৎপাদন শুরু করেছেন আঙুরের চারা।
উদ্যোক্তা জলিল মিয়া বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়েছিলাম একটা কাজে। সেই সময় কলকাতাতে গিয়ে দেখি আঙুরের চারা। আমি সেখান থেকে শখের বশে কিছু চারা নিয়ে আসি। এরপর আবার দুই ধাপে আরও কিছু চারা নিয়ে আসি। পরে বাড়িতে এসে চারাগুলো রোপণ করি। শুরুতে চিন্তা করেছিলাম যে, চারাগুলো হবে না। কিন্তু আস্তে আস্তে সেগুলো বড় হয় এবং ফলনও আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি নিজেই আঙুরের চারা উৎপাদন করছি। আমার কাছে বিভিন্ন জাতের আঙুরের চারা আছে। যে-কেউ নিতে পারবে আমার কাছ থেকে। আমার কাছে কয়েকটি জাতের মধ্যে সবুজ-গোল, সবুজ-লম্বা, কালো জাম, কালো লম্বাসহ কয়েকটি জাত আছে। এসব আঙুর খুব মিষ্টি। অনেকেই আমার বাগানে আসছেন। কেউ ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ আবার পরামর্শ নিচ্ছেন। অনেকেই আবার চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমিও তাদের পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে তারা আমার মতো আঙুরের বাগান করে সফলতা পান। আমি এখন উদ্যোগ নিচ্ছি আগামীতে নতুন করে বৃহৎ পরিসরে বাগান করার। যদি কৃষি বিভাগ আমার পাশে থাকে, তা হলে গারো পাহাড় থেকে ব্যাপকহারে আঙুরের আবাদ করা সম্ভব।’
স্থানীয় কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম আমাদের গারো পাহাড়ে আঙুর চাষ হয়েছে। এত সুন্দর আঙুরবাগান হয়েছে, সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে। আসলে আমি প্রথম এমন আঙুরবাগান দেখলাম। এ থেকে আমার নিজেরও আঙুরের বাগান করার চিন্তা এসেছে। আমি জলিল ভাইয়ের কাছ থেকে চারা নিব।’
পাশেই থাকা আরেক কৃষক রমজান মিয়া বলেন, ‘আমাদের পাহাড়ি এলাকায় এত সুন্দর একটা আঙুরবাগান হয়েছে। বান্দরহোলার (থোকায় থোকায় ঝুলছে) মতো ধরে আছে আঙুর। এ ফলে যে লাভ তাতে আমারও বাগান করার ইচ্ছা আছে।’
স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যুবক কাঞ্চন মারাক বলেন, ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের গারো পাহাড়ের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় যে আঙুর চাষ হবে এটা অকল্পনীয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাষি জলিল মিয়া যে আঙুরের বাগান করেছেন তাতে তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন। যে পরিমাণ ফলন হয়েছে, তাতে করে অনেক কৃষক আঙুর ফল চাষ করবেন। যদি এ ফলের চাষ সম্প্রসারণ করা হয়, তা হলে আমাদের আর অন্য দেশ থেকে আঙুর আমদানি করতে হবে না।’
শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলিল মিয়া প্রথমবারের মতো আঙুর চাষ শুরু করেছেন। তাকে অবশ্যই উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। শুধু তাই নয়, অন্য কোনো উদ্যোক্তা যদি আঙুর চাষে আগ্রহী হন, তাদের উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আঙুর একটি উচ্চমূল্যের ফসল। বিদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে আঙুর আমদানি করতে হয়। কিন্তু আমরা যদি দেশে আঙুর চাষ সম্প্রসারণ করতে পারি, তা হলে আমদানিনির্ভরতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’