![বাজারে মিলছে হাঁড়িভাঙা আম টার্গেট আড়াই শ কোটি টাকা](uploads/2024/06/23/Mango-1719124754.jpg)
রংপুরের কৃষি অর্থনীতির আশীর্বাদ হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এ আম এরই মধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য তথা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের আশা, এ বছর ২৫০ কোটি টাকার হাঁড়িভাঙ্গা আম বেচাকেনা হবে।
হাঁড়িভাঙ্গার রাজধানী খ্যাত রংপুরের মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা যায়, এ আমের বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সকালেই ভ্যান, অটোরিকশায় করে আসতে থাকে ক্যারেটে ক্যারেটে আম। অনেককেই হাটের রাস্তায় সাইকেল ও ভ্যানে ক্যারেটে আম নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আম বেচতে দেখা গেছে।
মৌসুমের শুরুতেই ক্রেতা ও বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট আমের হাট। চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দাম হাঁকাচ্ছেন আমচাষি ও বাগানমালিকরা, বিক্রিও হচ্ছে ভালো দামে। এ মৌসুমে আমের বাজার শুরু হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মণে। আমের সাইজ ও রংভেদে দাম গিয়ে ঠেকেছে প্রতি মণ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা । আমের উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর দাম কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন আমচাষিরা।
পদাগঞ্জ এলাকার আমচাষি নূর আলম জানান, এবার শুরু থেকে আমের দাম মোটামুটি ভালো। তা ছাড়া চাহিদাও বেশি। আমের দাম এমন থাকলে লাভ হবে।
সাজেদুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমের দাম এ বছর কিছুটা বেশি। গত বছরের তুলনায় আমের দাম বেশি হলেও চাহিদা থাকায় ভালো বিক্রি হচ্ছে।’
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী ও অনলাইনে বাজারজাতকারীরা বাজারে আসায় আমের চাহিদা আরও বেড়েছে। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই।
আরাফাত ইসলাম নামের একজন শিক্ষার্থী জানান, প্রতি বছর আমের মৌসুমে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাঁড়িভাঙ্গা আম সরবরাহ করেন তিনি। যা আয় হয় তা থেকে নিজের পড়াশোনার খরচ চালান।
এ বছর বিরূপ আবহাওয়ার কবলে পড়ে ব্যাহত হয়েছে আমের উৎপাদন। টানা দাবদাহে আমের সাইজ এবার গতবারের তুলনায় অনেক ছোট। অনেক বাগানে এবার আমের উৎপাদনই হয়নি। সব মিলিয়ে এ বছর কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ব্যবসা করতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
মোখলেছার নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার আমের মুকুল এলেও বৃষ্টির পানিতে পচে গিয়ে কম গুটি এসেছে। তার ওপর রোদে আমের গুটি ঝরে পড়েছে। নানা চেষ্টাতেও গুটি টেকানো যায়নি। যদি আমের দাম ভালো থাকে তবে লোকসান কিছুটা কম হবে।’
খোড়াগাছ মণ্ডলপাড়ার আমচাষি আবুল কাশেম জানান, এ বছর তার একটি বাগানে কোনো গাছেই আম আসেনি। অন্য বাগানের উৎপাদিত আমের পরিমাণ খুব কম। তাই এ বছর তাকে লোকসান গুনতে হবে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর জেলায় তিন হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার আবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে হাঁড়িভাঙার আবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় দামের হেরফের হয়।’
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘আমের মৌসুমে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।’