ঢাকা ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

মঙ্গল গ্রহে যাত্রার প্রস্তুতি ৪৫ দিনের কৃত্রিম অভিযানে নাসার নতুন দল

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:২৮ পিএম
আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ০২:২৮ পিএম
৪৫ দিনের কৃত্রিম অভিযানে নাসার নতুন দল
'মার্স ডুন আলফা' ধারণাগত মঙ্গল গ্রহের ভিজ্যুয়ালাইজেশন

চলতি মাসেই মঙ্গল গ্রহে কৃত্রিম অভিযানে যাত্রা করবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নির্বাচিত চার সদস্যের একটি দল। আসলে মঙ্গল গ্রহে না গিয়ে পৃথিবীতেই এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ৪৫ দিনব্যাপী এই অভিযানের মাধ্যমে মঙ্গলে কাজ ও বসবাসের অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এই স্বেচ্ছাসেবক দল।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে অবস্থিত নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে (জেএসসি) নির্মিত হয়েছে একটি বিশেষ আবাসস্থল। যেখানে এই কৃত্রিম মঙ্গল অভিযান পরিচালিত হবে। এই আবাসস্থল মঙ্গল গ্রহের পরিবেশের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। এখানে কাজ ও বসবাসের ক্ষেত্রে মহাকাশচারীদের সম্ভাব্য অবস্থার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরবে। নির্বাচিত দলটির সদস্যরা হলেন- জেসন লি, স্টেফানি নাভারো, শরিফ আল রোমাইথি ও পিজুমি উইজেসেকরা। আজ ১০ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত তারা নাসার হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রিসার্চ অ্যানালগ (এচইআরএ) নামের এই কৃত্রিম আবাসস্থলে অবস্থান করবেন। এ ছাড়া এই অভিযানের জন্য দুজন বিকল্প সদস্যকেও বাছাই করা হয়েছে। তাদের নাম হলো- জোস বাকা ও ব্র্যান্ডন কেন্ট।

এই মিশন নাসার হিউম্যান রিসার্চ প্রোগ্রামের (এএইচআরপি) অংশ। এই প্রোগ্রামে মহাকাশ ভ্রমণে মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় নিয়ে গবেষণা করে। এই চার সদস্যের অভিযান বিজ্ঞানীদের মানুষের শরীরের ওপর বিচ্ছিন্নতা, আবদ্ধ থাকা এবং দূরবর্তী পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। ফলে ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযানের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মূল্যবান তথ্য দেবে।

নাসা জানিয়েছে, যে জায়গাটি তৈরি করা হয়েছে তার নাম ‘মার্স ডুন আলফা’। মঙ্গল গ্রহের ধারণাগত ভিজ্যুয়ালাইজেশন হচ্ছে মার্স ডুন আলফা। যেখানে রয়েছে থ্রি-ডি-প্রিন্টেড থাকার জায়গা। প্রত্যেকের জন্য রয়েছে আলাদা ঘর ও রান্নাঘর। এ ছাড়া ছোট আকারের হাসপাতাল, খেলাধুলার জায়গা, শরীর চর্চার জন্য জিম, বাথরুম সবই আছে। সেখানে ফসল ফলানোর জায়গাও আছে। এমন ব্যবস্থাও থাকছে, কখনো যদি কোনো যন্ত্র বিকল হয় বা আবহাওয়াজনিত কারণে যদি কোনো বিপদে পড়তে হয়, তাহলে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের কী কী করতে হবে।

দেড় মাসের এই অভিযানে ক্রু সদস্যরা কেবলমাত্র গবেষণা চালানো ও বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করবেন না। তারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে হাঁটার অভিজ্ঞতাও লাভ করবেন এবং মিশন কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। যেখানে মঙ্গল ও পৃথিবীর মধ্যে বার্তা আদান-প্রদানে প্রায় পাঁচ মিনিট সময় লাগবে, অর্থাৎ মঙ্গল থেকে কোনো বার্তা পাঠালে পৃথিবীতে সাড়ে পাঁচ মিনিট পরে পৌঁছায়। তেমনি পৃথিবী থেকে কোনো বার্তা পাঠালে মঙ্গলে সাড়ে পাঁচ মিনিট পরে পৌঁছায়। সেই পরিস্থিতিও এই অভিযানে অনুকরণ করা হবে।

তবে মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে বার্তা পাঠানোর সময় নির্ভর করে দুটি গ্রহের মধ্যবর্তী দূরত্ব এবং বার্তা পাঠানোর পদ্ধতির ওপর। নাসা ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক (ডিএসএন) নামের বিশেষ অ্যান্টেনা ও যোগাযোগ সরঞ্জামের একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মঙ্গলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পৃথিবী থেকে মঙ্গলে বার্তা পাঠাতে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এই সময়গুলো কেবলমাত্র অনুমান। বাস্তব সময় বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা, যন্ত্রপাতির ত্রুটি ও অন্য কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট নাসার পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে একটি ছবি পাঠিয়েছে। রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে ছবিটি পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় ১৪ মিনিট সময় লেগেছে।

এইচআরপির মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়েও গবেষণা চালানো হবে। এই গবেষণাগুলোয় প্রতিটি ক্রু সদস্যের শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত প্রতিক্রিয়ার ওপর নজর থাকবে। এই গবেষণা মহাম্মদ বিন রাশিদ স্পেস সেন্টার (এমবিআরএসসি) ও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইসা)-এর সহযোগিতায় চলমান গবেষণাকে সহায়তা করবে। এটি মঙ্গলে প্রকৃত অভিযানের সময় মহাকাশচারীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য কেমন হবে, সে সম্পর্কে ধারণা দেবে। এই ধরনের কৃত্রিম অভিযানের মাধ্যমে গবেষকরা মহাকাশ অভিযানে মানুষ সামনে আসবে এমন সম্ভাব্য বাধাগুলো দূর করার উপায় আগে থেকে জানতে পারবেন।

এইচইআরএ মিশনটি মাত্র ৪৫ দিনের হলেও, নাসার আরও একটি চলমান গবেষণা প্রকল্প রয়েছে যার নাম ক্রু হেলথ অ্যান্ড পারফরম্যান্স এক্সপ্লোরেশন এনালগ (সিএইচপিইএ)। এই গবেষণায় মঙ্গলে পুরো এক বছর কাটানোর অভিজ্ঞতা কেমন হবে, সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। সিএইচপিইএ মিশনের জন্য আলাদা একটি আবাসস্থল ব্যবহৃত হয়, যা এটিচইআরএ মিশনের আবাসস্থল থেকে আলাদা হলেও জনসন স্পেস সেন্টারেই অবস্থিত।

কৃত্রিম অভিযানে নাসার দলের সদস্যদের পরিচিতি


ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেকানিক্যাল, এয়ারোস্পেস এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক জেসন লি এবার যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে নতুন নাম হয়ে উঠছেন। তিনি কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের থার্মাল ফ্লুইড, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং স্পোর্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষাদান করছেন। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক প্রোগ্রামের পরিচালক এবং নাসার কানেকটিকাট স্পেস গ্রান্ট কনসোর্টিয়ামের ক্যাম্পাস পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এই দলটিতে আরও রয়েছেন মার্কিন বিমান বাহিনীর রিজার্ভের স্পেস অপারেশন্স অফিসার স্টেফানি নাভারো। মধ্যপাচ্যে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে সহায়তা করার জন্য অপারেশন ফ্রিডম সেন্টিনেল মিশনে নিয়োজিত হওয়ার আগে তিনি এয়ার ন্যাশনাল গার্ডে ১০ বছরেরও বেশি সময় কাজ করেছেন। তিনি তার বেসামরিক ক্যারিয়ার শুরু করেন মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে। আমরিকার হাওয়াইয়ের তথ্য কেন্দ্রের আধুনিকীকরণ প্রকল্পে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি নর্থরপ গ্রুম্যানে স্যাটেলাইট যোগাযোগ প্রোগ্রামে সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।

দলে আছেন শরীফ আল রোমাইথি, যিনি বিমান সংস্থায় চালক হিসেবে ১৬ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তিনি একাধিক এয়ারবাস ও বোয়িং বিমানে ৯ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় উড্ডয়ন করেছেন। বর্তমানে তিনি বোয়িং ৭৭৭ এবং ৭৮৭ বিমানের ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা বিমান চালনা ক্ষেত্রে তার দক্ষতা এবং নেতৃত্বের স্বাক্ষর দেয়।

এ ছাড়া দলে রয়েছেন পিয়ুমি উইজেসেকারা, যিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত নাসা এমস রিসার্চ সেন্টারের রেডিয়েশন বায়োফিজিক্স ল্যাবরেটরিতে পোস্টডক্টরাল রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। তার গবেষণা মহাকাশযান চলাকালীন আয়নাইজিং বিকিরণ ও চাঁদের ধূলিকণাসহ মহাকাশের চাপের প্রভাব মানব শ্বাসযন্ত্রের ওপর কীভাবে পড়ে, তা জানার জন্য টিস্যুর মডেল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

জোস বাকা টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি মডিউলার সিস্টেম ডিজাইন, ড্রোনসহ চালকবিহীন যানবাহনের কার্যকারিতা উন্নতকরণ ও জটিল পরিবেশে মাল্টি-রোবট দলের সমন্বয় সাধনের ওপর কাজ করেছেন।

ব্র্যান্ডন কেন্ট মেডিকেল পরিচালক হিসেবে ঔষধ শিল্পে কাজ করছেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন থেরাপি উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী চলমান প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

জাহ্নবী

 

নভোচারী আটকা পড়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
নভোচারী আটকা পড়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দুই নভোচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকা পড়েছেন। বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানের বেশ কয়েকটি যান্ত্রিক সমস্যার কারণে নাসার নভোচারী ব্যারি উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস সেখানেই অবস্থান করছেন। এ দুইজন নভোচারীকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। তবে তাদের ফিরে আসার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।

৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে স্টারলাইনার মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ফ্লাইট কমান্ডার ব্যারি উইলমোর ও ফ্লাইট পাইলট সুনিতা উইলিয়ামসসহ একদিন পর নভোযানটি  আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছায়। এই মিশন নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের অংশ, যা বোয়িংয়ের নভোযান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়মিত মিশন পরিচালনা করার জন্য যোগ্য কি-না তা পরীক্ষা করছে। মূলত এই নভোচারীদের ১৪ জুন পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ছিল। তবে তাদের ফিরে আসা বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে। এখনো পৃথিবীতে ফিরে আসার দিন-ক্ষণ অনির্ধারিত।

নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের পরিচালক স্টিভ স্টিচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা সময় নিচ্ছি ও ভালোভাবে মিশন ব্যবস্থাপনা দলের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। রনডেইভু (rendezvous) ও ডকিং (docking)-এর সময় আমরা হিলিয়াম সিস্টেমে ছোট লিকেজ ও থ্রাস্টারের কার্যক্রমের সমস্যা দেখেছি। সে জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ডেটা ব্যবহার করছি।’

বোয়িং ও নাসা জানিয়েছে, নভোযানটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ার পরও মহাকাশচারীরা বর্তমানে নিরাপদে আছেন। তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আছেন, যেখানে তাদের জন্য খাবার, পানি ও অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সব সরবরাহ রয়েছে। আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্টেশনের কার্যসূচি তুলনামূলকভাবে ফাঁকা রয়েছে। মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য কোনো চাপ নেই। 

নাসা ও বোয়িং আরও জানিয়েছে, ব্যারি উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস আইএসএসের ‘এক্সপিডিশন ৭১’ ক্রুদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রয়োজন অনুসারে স্টেশন অপারেশনে সহায়তা করছেন। নাসার স্টারলাইনারের সম্ভাব্য প্রত্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করছেন।

বোয়িংয়ের স্টারলাইনার প্রোগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক ন্যাপি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ক্রুদের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। তারা জানেন ক্রু ফ্লাইট টেস্টে আমরা যা শিখেছি, তা ভবিষ্যতের ক্রুদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত ও সুচারু করবে।’

স্টারলাইনার উৎক্ষেপণের আগে থেকে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই উৎক্ষেপণের কথা ছিল চলতি বছরের ৬ মে। তবে মহাকাশযান কক্ষপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্সের (ইউএলএ) রকেটের অক্সিজেন ভাল্বের সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে উৎক্ষেপণটি বাতিল করা হয়েছে।

২৫ মে নতুন করে উৎক্ষেপণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে পরে মহাকাশযান পরিচালনার জন্য সাপোর্ট সিস্টেম ও যন্ত্রপাতি রয়েছে, এমন সার্ভিস মডিউলে হিলিয়াম সিস্টেমে লিকেজ ধরা পড়ে।

এরপর হিলিয়াম লিকেজ ও থ্রাস্টারের সমস্যা স্টারলাইনারের ডকিং বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কায় পড়ে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ডকিংয়ের পাঁচ দিন পর নাসা ও বোয়িং জানায়, মহাকাশযানটিতে পাঁচটি ছোট হিলিয়াম লিকেজ হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, ফিরতি যাত্রার জন্য যথেষ্ট হিলিয়াম জ্বালানি রয়েছে।

মূলত নভোচারীদের এই সফরে আট দিন থাকার কথা ছিল। তবে বর্তমানে মহাকাশচারীদের সমস্যা সমাধানের জন্য কমপক্ষে এক মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

বোয়িং জানিয়েছে, আগামী ২ জুলাই নির্ধারিত স্পেসওয়াকের পর মহাকাশচারীদের ফিরতি সময়সূচি সমন্বয় করা হবে। নাসার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, নতুন লক্ষ্য ফিরতি যাত্রার তারিখ ৬ জুলাই।

মহাকাশে থাকা সুনিতার জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ৩২২ দিন মহাকাশে ছিলেন সুনিতা। নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় মহাকাশে থাকার রেকর্ড তার। এবার নিয়ে তৃতীয়বার মহাকাশে গেলেন সুনিতা। ব্যারিও অভিজ্ঞ নভোচারী। তিনিও তিনবার মহাকাশে গিয়েছেন। সূত্র: এবিসি নিউজ

 

চাঁদের নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছে চীনের চন্দ্রযান

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
চাঁদের নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছে চীনের চন্দ্রযান
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর মতো চাঁদ কি বসবাসের যোগ্য? চাঁদের মাটিতে কি প্রাণের সঞ্চার হতে পারে? মানুষ এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে, অনেক আগে থেকে। এবার এই উত্তরের সন্ধানে চাঁদের কঠিনতম প্রান্তে মহাকাশযান পাঠিয়েছে চীন। সেখানকার মাটি খুঁড়ে পৃথিবীতে নমুনা নিয়ে ফিরেছে নভোযানটি।

চীনের চ্যাংই-সিক্স লুনার মডিউল গত মঙ্গলবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। দেশটির উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহাকাশ কর্মসূচির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে চাঁদের দূরবর্তী দিক থেকে প্রথমবারের মতো নমুনা সংগ্রহের ঐতিহাসিক অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিসিটিভি জানিয়েছে, পুনঃপ্রবেশ করা মডিউলটি মঙ্গলবার চীনের উত্তরাঞ্চলীয় অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে নির্ধারিত এলাকায় সফলভাবে অবতরণ করেছে। সিসিটিভির সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, মডিউল প্যারাসুটের মাধ্যমে অবতরণ করছে এবং মিশন নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তালি দিচ্ছে সবাই।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ)-এর প্রধান ঝাং কেইজিয়ান বলেন, চ্যাংই-সিক্স চন্দ্র অনুসন্ধান অভিযান সম্পূর্ণ সফল হয়েছে।

সিসিটিভি জানিয়েছে, অবতরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি অনুসন্ধান দল মডিউলটি উদ্ধার করে। সরাসরি সম্প্রচারের সময় দেখা যায়, একজন কর্মী মডিউলটির পরীক্ষা করছেন, যা একটি চীনা পতাকার পাশে ঘাসের ওপর রয়েছে।

এই সফল মিশনকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ‘চিরকালের স্বপ্ন’ বলে প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশও নিজেদের চাঁদে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করছে। গত মঙ্গলবারের এক অভিনন্দন বার্তায় সি চিন পিং মিশনটিকে ‘মহাকাশ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশ গড়ার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন’ হিসেবে অভিহিত করেন।

বেইজিং ২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশে মহাকাশচারী পাঠানোর এবং চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি গবেষণা কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করেছে। ধারণা করা হয়, চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে জলীয় বরফ রেয়েছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করতে চায়।

সিএনএসএ জানিয়েছে, চ্যাংই-সিক্স অনুসন্ধান যানটি চাঁদের দূরবর্তী দিক থেকে প্রায় দুই কেজি চাঁদের ধুলা ও পাথর নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে, যা চীনের গবেষকরা বিশ্লেষণ করবেন। এরপর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণা করবেন।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই চাঁদে পাড়ি জমিয়েছিল চীন। গত ৩ মে দেশটির দক্ষিণ প্রান্তের হাইনান প্রদেশ থেকে ‘লং মার্চ-ফাইভ’ নামক রকেটে চড়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল চ্যাং-৬।

চন্দ্রযান চ্যাংই-৬-এর লক্ষ্য ছিল চাঁদ থেকে মাটি এবং পাথর সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসা। বিজ্ঞানীদের একাংশ ভেবেছিলেন চিনের চন্দ্রযান বোধ হয় চাঁদের মাটিতে অবতরণ করতেই ব্যর্থ হবে।

 

পছন্দের জিনিস সহজ করে মস্তিষ্কের কাজ

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম
পছন্দের জিনিস সহজ করে মস্তিষ্কের কাজ
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের পছন্দের খাবার, রং, জায়গা, এমনকি মানুষের প্রতি আকর্ষণ- এ সবকিছুর পেছনেই রয়েছে মস্তিষ্কের কার্যকৌশল। বিবর্তনের ফলে মানুষের মস্তিষ্কে এই পছন্দের ধারণা গেঁথে গেছে। আমরা সাধারণত উজ্জ্বল রঙের প্রতি আকৃষ্ট হই। কারণ এগুলো আকাশ ও পানির মতো ইতিবাচক জিনিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার গাঢ় রং, যা ময়লা বা রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত- সেগুলো আমরা এড়িয়ে চলি।

আমরা সাধারণত এমন ভৌগোলিক পরিবেশ পছন্দ করি, যা আশ্রয়, সম্পদ ও সুন্দর পরিবেশের ভারসাম্য দিয়ে থাকে। সম্ভবত কারণ, বিবর্তনের ফলে আমাদের পূর্বপুরুষরা এই জায়গায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সাধারণত নিখুঁত চেহারাকে সুন্দর মনে করে। কারণ এটি সুস্থ জিনের লক্ষণ হতে পারে।

পছন্দের ব্যাপারে জিনগত প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছেলেবেলায় হয়তো প্রিয় রং, দেশ, চলচ্চিত্র ও তারকা ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হতো। এই উত্তরগুলো নির্বাচনে মিশ্রভাবে কাজ করে মৌলিক প্রবণতা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার। এসব পছন্দের ক্ষেত্রে বিবর্তনীয় পছন্দ ও ব্যক্তিগত পছন্দের মতো বিষয় মিশ্রণ হয়। কোন ফুটবল দলকে সমর্থন করি বা কোন ছুটির অভিজ্ঞতা মনে রয়েছে, সেগুলো উত্তর নির্বাচনে কাজ করে। এসব পছন্দের তালিকা মনে রাখি ও কথায় কথায় সেগুলো বলি।

পছন্দের আরেকটি কারণ হলো সহজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল বা সহজীকরণ। পৃথিবীতে এত বিচিত্র পছন্দের জিনিস আছে যে, সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্লান্তিকর হয়। তাই মস্তিষ্ক শর্টকাট পদ্ধতি ব্যবহার করে। শর্টকাট হিসেবে মস্তিষ্ক পছন্দের জিনিসগুলোকে বেছে নেয়। রেস্টুরেন্ট বা ছুটি কাটানোর জায়গা নির্বাচন, এমনকি কোন পডকাস্ট শুনবেন, সেসব ক্ষেত্রে পছন্দের জিনিসের দিকেই ঝুঁকে পড়ি। এটা সুবিধাজনক ঠিকই, তবে নতুন কিছু চেষ্টা করে দেখার সুযোগ বা সাহসিকতার জন্য এতটা দুর্দান্ত নয়। বিশেষ করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পছন্দের প্রবণতা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বাবা-মায়ের যদি একটি সন্তানের প্রতি আরেক সন্তানের চেয়ে বেশি ঝোঁক থাকে অথবা কোনো কর্মকর্তার যদি একজন কর্মচারীকে বেশি পছন্দ করেন, তাহলে তা অন্যায় ও বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। ব্যক্তি-পছন্দ পক্ষপাতিত্ব তৈরি করে,  আর  পক্ষপাত দুর্নীতি ও বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। সূত্র: বিবিসি

জাহ্নবী

হাতিরা একে অপরের নাম ধরে ডাকে

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম
হাতিরা একে অপরের নাম ধরে ডাকে
ছবি: সংগৃহীত

বহু বছর ধরে আফ্রিকান হাতিদের ওপর গবেষণা চালিয়ে আসছেন গবেষকরা। এ সময় তারা একটি আকর্ষণীয় ঘটনা লক্ষ করেছেন। কখনো কোনো হাতি কোনো দলের সদস্যদের উদ্দেশে ডাক দিলে, ওই দলের সবাই সাড়া দেয়। তবে অনেক সময় একই হাতি যখন একই ধরনের ডাক দেয়, তখন শুধু একটি হাতি সাড়া দেয়।

এরকম হওয়ার কারণ কী হতে পারে? হাতিরা কি একে অপরকে নাম ধরে ডাকছে? নতুন এক গবেষণায় এই প্রশ্নেরই উত্তর মিলেছে। কেনিয়ার আফ্রিকান সাভানা হাতিদের নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনটি চলতি মাসে ন্যাচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা আম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্ক এবং সাম্বুরু ন্যাশনাল রিজার্ভে ১০০টিরও বেশি হাতির ডাক বিশ্লেষণ করেছেন। এই ডাকগুলো বেশির ভাগই গর্জন ছিল, যা হাতিদের স্বরযন্ত্র ব্যবহার করে তৈরি করে, ঠিক মানুষের কথা বলার মতো।

একটি মেশিন লার্নিং মডেল ব্যবহার করে গবেষকরা এসব ডাকে এমন কিছু শনাক্ত করেছেন, যা কোনো নির্দিষ্ট হাতিকে ডাকার সময় ব্যবহৃত নামের মতো উপাদান নির্দেশ করে।

এরপর গবেষকরা ১৭টি হাতির কাছে অডিও বাজিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এই পরীক্ষায় হাতিরা নিজেদের ডাক ও অন্য কোনো হাতিকে উদ্দেশ্য করে ডাকের প্রতি কীভাবে সাড়া দেয়, তা পর্যবেক্ষণ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, হাতিরা তাদের উদ্দেশ্য করে ডাকা হলে বেশি সাড়া দিয়েছে। যখন তারা এমন ডাক শুনেছে, তখন তারা আরও উৎসাহিত আচরণ করেছে, শব্দের উৎসের দিকে হেঁটে গেছে। অন্যদের উদ্দেশ্য করে ডাকা হলে তার চেয়ে বেশি ডাক দিয়েছে।

প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক কর্নেল ইউনিভার্সিটির (সাবেক কলোরাডো স্টেট ইউনির্ভাসিটি) বিহ্যাভিরিয়াল ইকোলজিস্ট মিকি পারডো গবেষণার ফলাফলের আলোকে জানান, ‘হাতিরা একে অপরকে নামের মতো কিছু দিয়ে ডাকাডাকি করে।’

পারডো বলেন, ‘এভাবে একে অপরকে ডাকতে হলে, হাতিদের অবশ্যই নির্দিষ্ট শব্দকে নির্দিষ্ট হাতির সঙ্গে সম্পর্কিত করে শিখতে হবে। এরপর সেই শব্দগুলো ব্যবহার করে ওই নির্দিষ্ট হাতির মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হয় সামাজিক সম্পর্ক বোঝার সক্ষমতা ও উন্নত শিখার দক্ষতা।’

তিনি আরও বলেন ‘হাতিরা যে একে অপরকে আলাদা আলাদা প্রাণী হিসেবে সম্বোধন করে, এটা তাদের সামাজিক বন্ধনের গুরুত্বকে তুলে ধরে। বিশেষ করে, এই প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক বন্ধন বজায় রাখার গুরুত্বকে তুলে ধরে।’

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলজ প্রাণী হাতিদের অত্যন্ত বুদ্ধি, তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও উন্নত যোগাযোগের সক্ষমতার জন্য পরিচিতি আছে। আগের গবেষণায় দেখা গেছে, একে অপরকে অভিবাদন জানানোর সময় দৃশ্যমান, শ্রাব্য ও স্পর্শগত ইশারার মতো জটিল আচরণ ব্যবহার করে।

হাতিরা কেন একে অপরকে নাম ধরে ডাকে? 
গবেষণা দলের আরেক সদস্য জর্জ উইটমেয়ার ‘আমরা সবকিছু জানি না ঠিকই, তবে আমাদের বিশ্লেষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, সাধারণত যখন একটি হাতি অন্য একজনকে ডাকে, বিশেষ করে নাম ধরে ডাকে, তখনই এই ঘটনা ঘটে।’ জর্জ উইটেমেয়ার ‘সেভ দ্য এলিফ্যান্টস’ সংরক্ষণ সংস্থার বৈজ্ঞানিক বোর্ডের চেয়ারম্যান।

তিনি আরও বলেন, ‘মা হাতিদের বাচ্চার প্রতি গর্জনের ক্ষেত্রেও নামের মতো উপাদান সাধারণ ছিল। মা হাতিরা তাদের বাচ্চাদের শান্ত করতে বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রায়ই নাম ধরে ডাকে। আমরা মনে করেছিলাম স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের নামের মতো উপাদান বেশি দেখা যাবে, তবে সেই ধরনের ডাকে এটি কম দেখা গেছে।’

প্রাণিজগতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট শব্দ বা নাম ব্যবহার করা বিরল, তবে অভূতপূর্ব নয়। ডলফিন ও তোতাপাখিদেরও এটি করতে দেখা যায়। তবে তখন তারা শুধু অন্য প্রাণীর তৈরি শব্দ নকল বা অনুকরণ করে। হাতিদের ক্ষেত্রে এই নাম ধরে ডাকার বিষয়, কোনো শব্দের নকল বা অনুকরণ 
করা নয়।

পারডো বলেন, ‘তাদের ডাকা নামগুলো মানুষের নামের মতো এলোমেলো মনে হয়। এভাবে একে অপরকে নাম ধরে ডাকতে কিছুটা বিমূর্ত চিন্তা ক্ষমতার প্রয়োজন হয়।’

উইটেমেয়ার বলেন, ‘হাতি অসাধারণ সামাজিক প্রাণী। তারা সবসময় পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে, স্পর্শ করে। এই নাম ধরে ডাকা, খুব সম্ভবত তাদের পরস্পরের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করার সক্ষমতার আরেকটি প্রমাণ। আমি মনে করি, এই গবেষণা তুলে ধরে হাতিরা কতটা বুদ্ধিমান ও আকর্ষণীয়। আশা করছি, এটি তাদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় আরও আগ্রহ তৈরি করবে।’

মানুষ কি একদিন হাতিদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে?
এ বিষয়ে উইটেমেয়ার বলেন, ‘এটা খুবই চমৎকার কল্পনা, তবে আমরা এখনো সেখান থেকে অনেক দূরে আছি। হাতির ডাকের মধ্যে কীভাবে তথ্য এনকোড করা হয়, সেই সিনট্যাক্স বা মৌলিক উপাদানগুলো আমরা এখনো জানি না। সেটা বের করতে হবে, তারপর আমরা তাদের বোঝার ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি অর্জন করতে পারব।’ সূত্র: রয়টার্স

জাহ্নবী

আনারসের ভালো ও মন্দ

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
আনারসের ভালো ও মন্দ

আনারস কম-বেশি সারা বছরই পাওয়া যায়। এই ফল অনেকে খেতে পচ্ছন্দ করলেও, আবার অনেকে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এর বেশ কিছু কারণও রয়েছে। আনারস এমন একটি ফল, এটিকে যে খায় এটিও সেই খাদককে খাওয়ার চেষ্টা করে। যে পদার্থটি আনারসকে এই আচরণ করতে সহায়তা করে, তা হলো ব্রোমেলিন । এটি এক ধরনের এনজাইম। এই এনজাইম আনারসের রসে ও কাঁচা আনারসের কাণ্ডে পাওয়া যায়। এনজাইমটি প্রোটিন ভাঙার কাজ করে, এতে মাংস নরম করতে ও হজমে সহায়তা করে।

আনারসের মধ্যে থাকা ব্রোমেলিন খাওয়ার সময় জিব্বা ও ঠোঁটে একটি ঝাঁজালো ও জ্বালা-পোড়ার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। কিছু লোকের জন্য যা অস্বস্তিকর হতে পারে, তবে এটি ক্ষতিকর নয়। আনারস খাওয়ার আগে লবণাক্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ব্রোমেলিনের ঝাঁজালো প্রভাব কিছুটা কমে যায়।

ব্রোমেলিনের কিছু উপকারিতা রয়েছে। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাশাপাশি প্রদাহ কমাতে, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। আনারসে ব্রোমেলিন থাকায় এটি দিয়ে ওষুধ বানানো হয়ে থাকে। তা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিকনভালসেন্ট  ব্যবহারকালীন সময়ে ডাক্তাররা আনারস খেতে নিষেধ করে থাকেন। কারণ এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

আনারস খাওয়ার ফলে অনেকের শরীরে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। অ্যালার্জির উপসর্গ হিসেবে ঠোঁট ফুলে যাওয়া ও গলায় সুড়সুড়ি বোধ হতে পারে। তাই আনারস খাওয়ার আগে কেটে লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত। এতে করে আর কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

আনারসের কারণে নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় থাকলে নারীদের এটি খেতে বারণ করা হয়।  গর্ভাবস্থার পরে চাইলে আনারস খেতে পারেন। তবে শরীরের অবস্থা বুঝে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

আনারস খাওয়ার পর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালির কাছে পৌঁছানোর পর এটি অ্যালকোহলে পরিণত হয়। এ কারণে মানুষের দেহে বাতের ব্যথা শুরু হতে পারে। তাই যাদের দেহে বাতের ব্যথা আছে বা বাত হতে পারে মনে হচ্ছে, তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।

অনেকেই কাঁচা আনারস দিয়ে জুস বানিয়ে থাকে। তবে এটি শরীরে বিরূপ প্রভাব তৈরি করতে পারে। মাঝে মাঝে কাঁচা আনারস খাওয়ার কারণে বমির প্রবণতা দেখা দেয়। কাঁচা আনারসে থাকে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যাসিডিটি, যা মুখের ভেতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে। ফলটি খাওয়ার পর মাঝে মাঝে অনেকের পেটে ব্যথাও হতে পারে।
রক্ত তরল করার জন্য ওষুধ তৈরিতে আনারস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে বাধা দিয়ে থাকে। আনারস দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। যাদের দাঁতে ক্যাভিটিস ও জিংজাইভেটিভসের সমস্যা আছে, তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।

আনারস খেলে শরীরে নানা  ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও এটি পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান মানবদেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শুনতে অবাক লাগলেও, আনারস ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার ও অনেক কম ফ্যাট রয়েছে।

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে আনারস খেলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনো রোগপ্রতিরোধ করা সম্ভব।

/আবরার জাহিন