![স্পেস এক্সের নতুন স্পেস স্যুট প্রদর্শন](uploads/2024/05/17/space-1715953233.jpg)
আমেরিকান মহাকাশযান প্রস্তুতকারক ও মহাকাশ যাত্রায় সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স এবং ‘ইন্সপিরেশন৪’ মিশনের কমান্ডার জ্যারেড আইজ্যাকম্যান মানুষের স্পেস ফ্লাইট সক্ষমতা দ্রুত বিকাশ ঘটাতে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এজন্য তারা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘পোলারিস প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে গুরুত্বপূর্ণ দাতব্য ও মানবিক কাজকে সমর্থন করা। জ্যারেড আইজ্যাকম্যান উদ্যোক্তা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরোপকারীও বটে।
সম্প্রতি এক প্রেস রিলিজে স্পেস এক্স পোলারিস প্রোগ্রামের মহাকাশচারীরা যে স্পেস স্যুটগুলো পরবে তার বর্ণনা করেছে। একই সঙ্গে নভোচারীরা এই প্রোগ্রামের তিনটি মহাকাশ মিশনের সময় যে গবেষণা পরিচালনা করবে তা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে প্রথম মিশনটি এই গ্রীষ্মে হওয়ার কথা রয়েছে।
এই মিশনগুলো নাসার ‘কমার্শিয়াল ক্রু ডেলিভারি (সিসিডি)’ প্রোগ্রামের সঙ্গে কোম্পানির অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করবে। স্পেস এক্সের ‘ক্রু ড্রাগন’ যানকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) মহাকাশচারী পরিবহনের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে নাসা।
প্রতিষ্ঠানটির প্রেস বিবৃতি অনুসারে, নতুন স্যুটগুলো ‘ইন্ট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটি (আইভিএ)’ স্যুটের উন্নত রূপ। বর্তমানে ড্রাগন ক্রুরা এই উন্নত স্যুট ব্যবহার করছেন। এতে ‘ডেমো-টু’ মিশনের ক্রু যুক্ত ছিল, যারা ফ্লাইট সিস্টেমটি যাচাই করেছে। এ ছাড়া ইন্সপিরেশন৪ মিশনের ক্রুরাও এই স্যুট পরেছে। বিশ্বে এটিই প্রথম সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক নাগরিক কর্তৃক পরিচালিত মহাকাশ মিশন।
সর্বাধুনিক স্যুটটি ‘অ্যাক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটি স্পেস স্যুট’ নামে পরিচিত। এতে বেশ কিছু নতুন ফিচার যোগ করা হয়েছে। স্পেস এক্স দাবি করেছে, গতিশীলতার কথা মাথায় রেখে এই স্যুট তৈরি করা হয়েছে। স্পেস এক্সের টিম চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে নভোচারীদের আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে নতুন উপকরণ, তৈরির প্রক্রিয়া ও অভিনব নকশা ব্যবহার করেছে এই স্যুটে। এ স্যুটে চাপহীন পরিস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন নভোচারীরা।
স্যুটটিতে অতিরিক্ত সিল ও পেসার ভালভের মতো অপ্রয়োজনীয় ফিচার রয়েছে। যেন ইভিএ এর সময় স্যুটে সঠিক মাত্রায় চাপ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। নতুন থ্রিডি প্রিন্টেড হেলমেটে সুরক্ষার জন্য ভিসর নামে একটি পর্দা যুক্ত করা হয়েছে। এতে একটি ক্যামেরা ও নতুন হেডস-আপ ডিসপ্লে (এইচইউডি) রয়েছে, যা স্যুটের ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে।
এই স্যুটগুলো পোলারিস প্রোগ্রামের প্রথম ‘পোলারিস ডন’ নামের মিশনে ব্যবহার করা হবে। এই মিশন আগামী গ্রীষ্মে হওয়ার কথা রয়েছে। মিশনটি আইজ্যাকম্যানের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। এটি ফ্যালকন-নাইন রকেটের ওপরে লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ থেকে উৎক্ষেপণ করবে ক্রু ড্রাগন। এই মিশনের ক্রুরা পাঁচ দিন মহাকাশে থাকবেন। এ সময় তারা পৃথিবীর সর্বোচ্চ কক্ষপথে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন।
মহাকাশে অবস্থানের সময় পোলারিস ডন মিশনের ক্রুরা প্রথম বাণিজ্যিক স্পেসওয়াক পরিচালনা করবে। একই সঙ্গে তারা মহাকাশে স্টারলিংকের লেজারভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রথম পরীক্ষা করবেন।
এ ছাড়া এই মিশনের ক্রুরা ট্রান্সলেশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর স্পেস হেলথ (টিআরআইএসএইচ), বায়োসার্ভ স্পেস টেকনোলজিস, স্পেস টেকনোলজিস ল্যাব, ওয়েইল কর্নেল মেডিসিন, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স ল্যাবরেটরি (জেএইচইউএপিএল), প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ও ইউএস এয়ার ফোর্স একাডেমির সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করবে। এই প্রচেষ্টাগুলো মহাকাশযানে বেশি সময় অবস্থানকালে মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
পোলারিস ডনের ওপর নির্ভর করে দ্বিতীয় মিশন ‘পোলারিস ২’ পরিচালিত হবে। তৃতীয় মিশন ‘পোলারিস ৩’ এ ব্যবহার করা হবে স্টারশিপ এবং সুপার হেভি লঞ্চ ভেহিকেল। তবে স্পেস এক্সের বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, স্যুটগুলো প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। সূত্র: ফিজ ডট ওআরজি