![গত ৫০ বছরের সবচেয়ে বড় সৌরঝড়](uploads/2024/05/17/sun-1715953802.jpg)
সম্প্রতি শক্তিশালী সৌরঝড় সংঘটিত হয়েছে। এই সৌরঝড়কে গত ৫০ বছরের মধ্যে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রবল ঝড়ে সৌরশিখা ছিটকে বেরিয়েছে সূর্যের বাইরে মহাকাশেও। সৌরঝড়ের প্রভাব পড়েছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। এবার শক্তিশালী সৌরঝড়ের ফলে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে উত্তর মেরুতে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের আকাশ। ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, সৌরঝড়ের কারণে বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক পাওয়ার গ্রিড, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও সংযোগ ও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সৌরঝড়ের ছবি তুলেছে। সংস্থাটির একাধিক ক্যামেরায় সৌরঝড়ের মুহূর্ত ধরা পড়েছে। নাসা জানিয়েছে, ১৪ মে সূর্য থেকে শক্তিশালী সৌরশিখা নির্গত হয়েছে। এ সময় বিস্ফোরণের ঘনত্ব ছিল এক্স৮.৭। এর আগে চলতি মাসের ১১ ও ১৩ তারিখে সূর্যে একই জায়গায় দুটি বিস্ফোরণ হয়েছে। ১৪ তারিখ ওই একই জায়গা তৃতীয় বিস্ফোরণ হয়। সেই কারণেই তৃতীয় বিস্ফোরণের অভিঘাত তীব্র ছিল।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর ‘আদিত্য-এল১’ সৌরযানও তীব্র সৌরঝড়ের ছবি তুলেছে। ইসরো গত মঙ্গলবার আদিত্য-এল১ এর তোলা সৌরঝড়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করেছে। সূর্য ও পৃথিবীর মাঝের ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে (এল ১ পয়েন্ট) রয়েছে আদিত্য-এল১। সেখান থেকে প্রতি মুহূর্তে সে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করছে। চাঁদ থেকেও এই ঝড়ের ছবি তোলা হয়েছে। চাঁদের চারদিকে ঘুরছে চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার। সেই ক্যামেরাতেও সৌরঝড় ধরা পড়েছে।
সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটেছে বলে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের। সৌরঝড়ের কারণে স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্পেস এক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। স্পেস এক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক এ বিষয়ে এক্সে লিখেছেন, ‘অনেক চাপ তৈরি হয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যাচ্ছে।’
এ ছাড়া সৌরঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের আকাশে যে উজ্জ্বল বেগুনি, সবুজ, হলুদ ও গোলাপি রঙের আলো দেখা যাচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে নর্দার্ন লাইট বা উত্তরের আলো। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, চীন, ইংল্যান্ড, স্পেনসহ নানা দেশে দেখা যাওয়া এই আলো বিজ্ঞানীদের কাছে ‘অরোরা বোরিয়ালিস’ নামে পরিচিত। ১৬১৯ সালে এই শব্দের নামকরণ করেন বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলেই। তিনি রোমান ভোরের ঈশ্বর অরোরার নামে নামকরণ করেন।
নাসা জানিয়েছে, এ ঘটনায় সূর্য শক্তিশালী সৌরশিখা তৈরি করেছে। এর মধ্যে অন্তত সাতটি প্লাজমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল, যা করোনা নামে পরিচিত, সেখানে কোটি কোটি টন প্লাজমা ও শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। সৌরঝড়ের কারণে সৃষ্ট অগ্নিশিখার জন্য পৃথিবীর ব্যাসের ১৬ গুণ বেশি সানস্পট বা সূর্যদাগের যুক্ত বলে মনে করা হয়। সূর্য যখন তার ১১ বছরের চক্রের শীর্ষে পৌঁছায় তখন সৌরঝড় দেখা যায়। সূত্র: নাসা
/আবরার জাহিন