কাঠ থেকে তৈরি শপিং ব্যাগ প্লাস্টিকের ব্যাগের টেকসই বিকল্প হিসেবে আশা জাগাচ্ছে। ‘লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের সুইডিশ এক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান কাঠশিল্পের বর্জ্য থেকে বায়োপ্লাস্টিক তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেছে। শপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে স্মার্টফোন পর্যন্ত তৈরিতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাঠের প্রধান উপাদান লিগনিন থেকে এই জৈবভিত্তিক উপাদান তৈরি করা হয়েছে। কাগজ ও মণ্ড তৈরির কারখানায় সাধারণত এই উপাদান ফেলে দেওয়া হয় বা পোড়ানো হয়। তবে লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজ এমন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় লিগনিনের গুঁড়াকে ‘রেনোল’ নামের জৈবভিত্তিক উপাদানে রূপান্তর করা যায়।
রেনোলের রং দেখতে কাঠের মতোই, গন্ধও একই রকম হয়। তবে এতে প্লাস্টিকের মতো নমনীয়তা ও বৈচিত্র্য থাকায়, বর্তমানে প্লাস্টিক শিল্পে ব্যবহার করা জীবাশ্মভিত্তিক উপাদানের টেকসই বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. ক্রিস্টোফার ক্যারিক বলেন, ‘আমরা কাঁচামাল হিসেবে তেলের পরিবর্তে এটি ব্যবহার করছি।’
সাধারণত জৈবভিত্তিক উপাদানগুলো নির্দিষ্ট একটি পণ্য তৈরির জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়। তবে এই উপাদান বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক তৈরিতে কাজে লাগানো যাবে। শপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করা সম্ভব এর মাধ্যমে।’
লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী ফ্রেডরিক মালমফোর্স বলেন, ‘কাগজের ব্যাগের প্রতি অনেকের অনেক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কাগজ ভালো জিনিস, আমরাও কাগজ পছন্দ করি। তবে আমাদের পণ্যটি কাগজ ও প্লাস্টিকের মাঝামাঝি অবস্থান করে। ফলে এর মাধ্যমে কাগজের মতো পরিবেশবান্ধব ব্যাগ পাওয়া যাবে, আবার প্লাস্টিকের মতো সুবিধাও পাওয়া যাবে।’
বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল লিগনিন গুঁড়াকে থার্মোপ্লাস্টিক রেনোলে রূপান্তর করার রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি পচা ডিমের গন্ধ দূর করা। লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজ পাঁচ বছর গবেষণা করে, লিগনিনের আসল গন্ধ ধরে রাখার সমাধান খুঁজে বের করেছে। বর্তমানে উপাদানটির গন্ধ বন থেকে সংগ্রহ করা কাঠের মতোই।
প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাদের তৈরি জৈব প্লাস্টিককে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতে কাজ করছে। ইভি চার্জার, হিট পাম্প ও ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের জন্য প্লাস্টিক তৈরি করে এমন একটি ব্রিটিশ সংস্থার সঙ্গে তারা চুক্তি করেছে। পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক উৎপাদনকারীদের নিয়ে নতুন করে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে এই জৈব প্লাস্টিকের সাফল্য এল।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষা করা প্রতিটি মানুষের অণ্ডকোষে মাইক্রোপ্লাস্টিক নামের ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে চীনা গবেষকরা হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং পায়ের রক্তের জমাটেও এগুলোর উপস্থিতি পেয়েছেন।
এর আগে লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রকল্পে নতুন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্কুল অব কেমিস্ট্রির ড. সারাহ কি-এর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, উজ্জ্বল রঙের প্লাস্টিক সাধারণ রঙের চেয়ে দ্রুত নষ্ট হয়। গবেষণাটির প্রধান ড. সারাহ বলেন, ‘লাল ও সবুজের মতো রঙিন প্লাস্টিক খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে। যেসব পণ্য খোলা আকাশের নিচে বা রোদে অনেক বেশি সময় থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং এড়িয়ে চলা উচিত।’
লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজ দাবি করেছে, তাদের তৈরি খয়েরি রঙের জৈব প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিক কমাতে ও পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কার্বন নিরপেক্ষ রেনোল উপাদান বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি মেটাতে সক্ষম। ফ্রেডরিক মালমফোর্স আরও বলেন, পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে লিগনিন পাওয়া যায়।
প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ কোটি টন লিগনিন উৎপন্ন হয়। আর জৈব পদার্থের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। আমাদের প্লাস্টিক শিল্পের জীবাশ্ম প্রভাব ভাঙতে হবে।