![সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন : বিএনপির খোকন সভাপতি, আ’লীগের মঞ্জুরুল সম্পাদক](uploads/2024/03/10/1710014970.supreem coart barkk10.jpg)
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ২৬২২ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক । তিনি পেয়েছেন ৩৩১৯ ভোট ।
শনিবার রাত ১টায় সমিতির অডিটরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। বাকি ১২টি পদের মধ্যে ৯টি পদে আওয়ামী লীগ প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেন- দুই সহসভাপতি রমজান আলী শিকদার (৩১৭৪) ও দেওয়ান মো. ওবাইদ হোসেন (২৯০৩)। দুই সহসাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব (৩০০৯), কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী (৩০৯৪)। এছাড়া চারটি সদস্যপদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আইনজীবীরা ৩টি সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সব পদে ভোটের পুনর্গণনা চেয়ে আবেদন করেছেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। ভোট গণনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে হট্টগোল ও মারামারির ঘটনায় গত শুক্রবার ভোর ৫টায় বন্ধ হয় ভোট গণনা। মারামারিতে আহত হন কয়েকজন। এ ঘটনায় সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী ও রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। যুবলীগের কয়েকজন নেতাকেও আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রুহুল কুদ্দুস কাজল ও এক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ৫ জনকে আদালতে হাজির করার পর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে ব্যালট গোছানোর পর ভোট গণনা বন্ধ থাকে ৩৪ ঘণ্টা। পরে গণনা শুরু হয় গতকাল বেলা ৩টায়।
গত শুক্রবার রাতে হট্টগোলের একপর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরের হাতে লেখা এক নোটিশে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। অবশ্য গতকাল তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাডে টাইপ করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে যুথীকে সম্পাদক ঘোষণাপত্রটি প্রত্যাহার করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার আগেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মাস্তান শ্রেণি আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করে। যদিও ইহা অর্থহীন ঘোষণা, তবুও কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা ‘ইগনোর’ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’
২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা: এবারের নির্বাচনে গত বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ শেষে রাতভর ব্যালট গোছানো হয়। এক পক্ষ রাতেই গণনার দাবি করেন। আরেক পক্ষ দিনের আলোতে ভোট গণনা করতে বলেন। এ নিয়ে কয়েকজন প্রার্থীর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ আহত হয়ে হাতপাতালে ভর্তি হন। রাতেই তিনি হত্যা চেষ্টার মামলা করেন। এতে সম্পাদক পদপ্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথীকে প্রধান আসামি করা হয়। তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। এ ছাড়া বিএনপি প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ, অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, ব্যারিস্টার ওসমান, অ্যাডভোকেট আরিফ, অ্যাডভোকেট সুমন, অ্যাডভোকেট তুষার, রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা), সাইদুর রহমান জুয়েল, অলিউর, যুবলীগ নেতা জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট সোহাগ। একই সঙ্গে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনার পাশাপাশি এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করেন এক নম্বর আসামি। নির্বাচন সাব-কমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে।’
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ৫ জন তিন দিনের রিমান্ডে: মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ, আইনজীবী ওসমান চৌধুরী, হাসানুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম ও এনামুল হককে গতকাল বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় পুলিশ ৫ দিন করে রিমান্ড চাইলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক আলী হায়দার।
আসামিরা যত শক্তিশালীই হোক গ্রেপ্তার করা হবে: ৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে হট্টগোল ও মারামারির ঘটনায় করা মামলার আসামিরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। মামলার সব আসামি আইনজীবীদের গ্রেপ্তার করা হবে। কে কোন দল করে তা বিবেচ্য নয়। আসামি কত বড় শক্তিশালী তা দেখার বিষয় নয়।’
এবারের নির্বাচনে মোট ৭ হাজার ৮৮৩ জন ভোটারের মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ জন ভোট দেন। সভাপতি, সহসভাপতি (দুটি), সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহসম্পাদক (দুটি), সদস্য ৭টিসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য এ নির্বাচন হয়ে থাকে। ১৪টি পদের বিপরীতে এবার নির্বাচনে ৩৩ জন প্রার্থী হন।
সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল: ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার পর পল্টনের চেম্বার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ।
তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান খবরের কাগজকে জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনার সময় মারামারির ঘটনায় করা মামলার ২ নম্বর আসাম ছিলেন। তিনি বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বারে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় শুক্রবার ২০ জনের নাম উল্লেখ করে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। এতে ১ নম্বর আসামি করা হয় অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীকে। ২ নম্বর আসামি করা হয় ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে। মারামারির ঘটনায় আহত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী (সাইফ) বাদী হয়ে ওই মামলা করেন।