![আবারও রোহিঙ্গাদের ঢল নামার আশঙ্কা](uploads/2024/06/21/rohingakk24-1718987658.jpg)
মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সংঘাত চলছে। দিন দিন এ সংঘাতের বিস্তারে ব্যাপক ভয় ও শঙ্কা বিরাজ করছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের আবারও বাংলাদেশে ঢোকার প্রবণতাকে উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (২১ জুন) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বিভিন্ন উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনের শীর্ষ নির্বাহী এবং বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমানও বিষয়টি রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কয়েকজন রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে এবং তারা শিবিরের রোহিঙ্গাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর আমাদের একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাখাইনের পরিস্থিতির উত্তরোত্তর অবনতি ঘটছে। সেখানে আরও রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা অসহায়। তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন।’ শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশন ইউএনএইচসিআরের চিঠির কোনো জবাব এখনো দেয়নি বলে জানান তিনি।
এ ইস্যুতে বাংলাদেশের সরকারের অবস্থান জানতে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কেউই ফোন রিসিভ করেননি। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে আর আশ্রয় দেওয়া হবে না বলে যে নীতি নিয়েছিল বাংলাদেশ, তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। ওই সময় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে।
বর্তমানে এই রোহিঙ্গাদের টেকনাফের কুতুপালং ইউনিয়নের শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে। ঢাকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে পারবে না বাংলাদেশ। চীনের মধ্যস্থতায় আশ্রিত এই রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
তবে বিভিন্ন কারণে এই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে স্থবির অবস্থা চলছে। আর এরই মধ্যে রাখাইনে তীব্র সংঘাত শুরু হয়েছে আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে। সেই সংঘাতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা আরাকান আর্মি রাখাইনের একের পর এক শহর-গ্রামের দখল নিচ্ছে। গত সপ্তাহে রাখাইনের দুই সীমান্তবর্তী শহর বুথিডং এবং মংডুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি।
এই দুই শহরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা থাকে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের যুদ্ধের জেরে মংডু ও বুথিডংয়ে আটকা পড়েছে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। সূত্র: রয়টার্স