![ঈমান দুর্বল হয় যে ৭ কারণে](uploads/2023/11/06/1699231920.07. low iman-ok.jpg)
অতিরিক্ত কাজের চাপ কিংবা লাগাতার পরিশ্রমের ফলে শরীরের কর্মক্ষমতা যেমন কমে যায় বা হ্রাস পায়; সৎকর্মহীনতা ও নানা কারণে ঈমানও তেমন দুর্বল হয়ে পড়ে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর ৭টি কারণের কথা পাওয়া যায়। যথা—
১. ঈমানি পরিবেশ ও সৎকর্ম থেকে দূরে থাকা : লম্বা সময় ধরে ঈমানি পরিবেশ ও সৎকর্ম থেকে দূরে থাকলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য সে সময় কি এখনও আসেনি, যে আল্লাহর স্মরণে আর যে প্রকৃত সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হয়ে যাবে? আর তারা যেন সেই লোকদের মতো না হয়ে যায় যাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, অতঃপর তাদের ওপর অতিবাহিত হয়ে গেল বহু বহু যুগ আর তাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়ল। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ১৬)
ইমাম হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘দ্বীনি ভাইয়েরা আমাদের কাছে আমাদের পরিবারের তুলনায় মূল্যবান। কারণ পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে দুনিয়ার কথা স্মরণ হয় আর দ্বীনি ভাইদের সংস্পর্শ আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ঈমানের দুর্বলতা, শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, অনুবাদ : হাসান মাসরুর, রুহামা পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা : ২৯)
২. সৎ মানুষের সান্নিধ্য ত্যাগ : ঈমান দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, সৎ ও আল্লাহওয়ালা মানুষের সহচার্য থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকা। বিখ্যাত একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস; অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ (ঈমানের দুর্বলতা, শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, অনুবাদ : হাসান মাসরুর, রুহামা পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা : ৩০)
৩. দুনিয়ার মোহ, ধন-সম্পদ ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেতে থাকা : দুনিয়ার মোহ, ধন-সম্পদ অর্জনে ব্যস্ত ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জীবনের অধিকাংশ সময় মেতে থাকলে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দিনার ও দিরহামের গোলাম ধ্বংস হোক।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৮৬)
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালোবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রুপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদিপশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪)
৪. পাপীদের কাছে বেশি বেশি সময় কাটানো : ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, গুনাহগার ও পাপীদের সংস্পর্শে বেশি বেশি সময় কাটানো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের দেখা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘সুসঙ্গী ও কুসঙ্গীর উপমা আতর বিক্রেতা ও কামারের মতো। আতর বিক্রেতার পাশে বসলে; হয় সে তোমার দেহে (বিনামূল্যে) আতর লাগিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার কাছ থেকে তা ক্রয় করবে। তা না হলেও অন্ততপক্ষে তার কাছ থেকে এমনিই সুবাস পেতে থাকবে। পক্ষান্তরে কামারের পাশে বসলে; হয় সে তার আগুনের ফিনকি দ্বারা তোমার কাপড় পুড়িয়ে ফেলবে, না হয় তার কাছ থেকে বিকট দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২১০১)
৫. দ্বীনি জ্ঞান ও ঈমান চর্চা থেকে দূরে থাকা : দ্বীনি জ্ঞান অর্জন অথবা ঈমান চর্চা থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকলে ধীরে ধীরে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। (ঈমানের দুর্বলতা, শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, অনুবাদ : হাসান মাসরুর, রুহামা পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা : ৩১)
৬. বিলাসী মনোভাব পোষণ : ইসলামে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা বিলাসী মনোভাব এবং অধিক আশা-প্রত্যাশা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য সে সময় কি এখনও আসেনি, যে আল্লাহর স্মরণে আর যে প্রকৃত সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হয়ে যাবে? আর তারা যেন সেই লোকদের মতো না হয়ে যায় যাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, অতঃপর তাদের ওপর অতিবাহিত হয়ে গেল বহু বহু যুগ আর তাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়ল। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ১৬)
হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা করি প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং অধিক আশা-আকাঙ্ক্ষা। এগুলো পরকালকে ভুলিয়ে দেয়।’ (ফাতহুল বারি, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি, খণ্ড : ১১, পৃষ্ঠা : ২৩৬)
৭. অনর্থক কথা ও কর্মসম্পাদন এবং অন্তরের কাঠিন্যতা : ইসলামে অনর্থক কথা ও কাজকর্মকে নিষেধ করা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাওয়া, ঘুম, অত্যাধিক রাত জাগরণ, অনর্থক কথাবার্তা বলা ও অনর্থক কাজ করা এবং অন্তরের কাঠিন্যতার কারণে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অত্যাধিক হেসো না, কারণ অত্যাধিক হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৩)
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক