![১৪ দল কীভাবে চলবে জানতে চাইবেন শরিকরা](uploads/2024/05/23/14-Dol-1716443100.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর জোটের তিন শরিক দলের নেতারা আজ গণভবনে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে থাকবেন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া জোটের অন্য শরিক দলগুলোর নেতারাও। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সন্ধ্যায় বৈঠকে বসবেন। আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকার গঠনের সাড়ে চার মাস পর শরিকদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দল নেতাদের এই সাক্ষাৎ ক্ষমতাসীনদের কাছে হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সংসদ নির্বাচনের পর এই নেতারাই ঊর্ধ্বতন মহলে প্রকাশ করেছেন তাদের ক্ষোভ ও অপ্রাপ্তির অনুভূতি। অনুরাগের সঙ্গে বলেছেন, অবহেলা করলে ছেড়ে যাবেন ১৪ দলীয় এ রাজনৈতিক জোট।
তাই এই পরিস্থিতিতে আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে কী বলতে পারেন ক্ষুব্ধ ১৪ দলের নেতারা? খবরের কাগজের পক্ষ থেকে সেই প্রশ্নই করা হয়েছিল ১৪ দলের কয়েকজন নেতাকে। জবাবে এই জোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন, কথা হবে নানা বিষয়েই। তবে প্রথমত আমরা জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনব। ১৪ দল নিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কি নির্দেশনা দিচ্ছেন- সেটা দেখতে চাই। তারপর পরিস্থিতি বুঝে খোলামেলা আলোচনা করব। এসব নেতার প্রত্যেকেই বলেছেন, নির্বাচনের সাড়ে চার মাস পর আজ কাঙ্ক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শরিকদের কোনো খোঁজ নেয়নি। তাই আগামীতে ১৪ দল কীভাবে চলবে, আদৌ এখন আর এ জোটের প্রয়োজন আছে কি না- সে প্রশ্নও আসবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দিন পর ১৪ দল নেতাদের সঙ্গে বসছেন। তাই এ বৈঠকটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ বৈঠকে কি নিয়ে কথা বলবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনব।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের (ওয়ার্কার্স পার্টি) সিদ্ধান্ত হয়েছে খোলামেলা কথা বলার। বর্তমানে এই জোটের কোনো কার্যক্রম নেই। এ অবস্থায় ১৪ দল আগামীতে কীভাবে চলবে- সেই প্রশ্নটা এখন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলব।’
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটা ঠিক, নির্বাচনের পর গত সাড়ে চার মাসেও আমাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি। তারপরও আমি মনে করি ১৪ দল এখনো প্রাসঙ্গিক। এই জোটের প্রয়োজন রয়েছে। তাই ১৪ দল আগামীতে কীভাবে চলবে- সে বিষয়ে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দিকনির্দেশনা আসবে। তা না হলে আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলব, জানতে চাইব।’
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘১৪ দল আগামীতে কীভাবে চলবে? এ প্রশ্নটি এখন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই জোট ঢাকার বাইরে এখনো বিস্তৃত হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে যে সরকারি কমিটিগুলো রয়েছে, সেখানে ১৪ দল নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের (আজ) বৈঠকে বিষয়গুলো আসবে।’
তিনি (সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী) একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য (এমপি) ছিলেন। ১৪ দলের মনোনয়ন নিয়েই তিনি চট্টগ্রাম-২ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু গত (দ্বাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন বঞ্চিত হন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। এদিকে বার বার চট্টগ্রাম থেকে আসন চেয়েও পাননি সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদের সরকারে শিল্পমন্ত্রী করা হলেও এখন তিনি ‘সাইড লাইনে’ পড়ে আছেন বলে মনে করছেন।
অবশ্য জোটের মনোনয়ন পেয়েও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে পরাস্ত হয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। বিজয়ী ক্ষমতাসীন দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই ১৪ দলের এই তিন নেতা ক্ষুব্ধ। তারা অভিযোগ করে আসছেন এই বলে যে, সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অসহযোগিতা করেছে। কেন্দ্র থেকেও তাদের জয়ের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগ। তাই পরাস্ত করার মাধ্যমে তাদের অপমান করা হয়েছে।
এই নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা ভবিষ্যতে তাদের সম্মান রক্ষার জন্য দাবি জানাবেন। সেই সঙ্গে তুলে ধরবেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১৪ দলের রাজনৈতিক গুরুত্ব।
নির্বাচনে বিপুল বিজয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এই জোটের শরিক কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার ঠাঁই হয়নি মন্ত্রিসভায়। এ অবস্থায় সাড়ে চার মাস পর তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে একে ‘বিলম্বিত বৈঠক’ বলে মনে করছেন তারা।