হিজরি বর্ষের অষ্টম মাস শাবান। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অতি বরকতময় একটি মাস। আরবি এ মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আশ শাবানুল মুয়াজজাম’। অর্থ মহান শাবান মাস। রমজানের প্রস্তুতির জন্য নিজের ব্যস্ততা গুছিয়ে ইবাদতে মনোযোগী হওয়ার মাস এটি। ইবাদতের প্রাক-প্রস্তুতি সম্পন্নের উৎকৃষ্ট ও উত্তম সময় হলো শাবান মাস। এ মাসে রয়েছে ফজিলতপূর্ণ এক রাত। মুসলিমদের জন্য এ মাসে কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। এখানে কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—
দিন-তারিখের প্রতি লক্ষ রাখা: শাবান মাস থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের আগমনের জন্য অপেক্ষা করতেন। সাহাবিদের গুরুত্বারোপ করতেন। রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের হিসাব রাখা সুন্নতও। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২৩২৫)
দোয়া করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’। বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি, ৩/৩৭৫)
নফল রোজা: রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে অধিক হারে নফল রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবি (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কদিন ছাড়া বলতে গেলে সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৭৩৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরবি ১২ মাসের মধ্যে বরকতময় একটি মাস হলো শাবান। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা আদায় করেই তিনি রমজানের রোজা পালন করতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৩১)
বরকতপূর্ণ শবেবরাত: শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিনের পরবর্তী রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। শবেবরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবেবরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারায়াত’ তথা মুক্তির রজনি। হাদিসে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনি বলা হয়েছে। এ রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনি আসে, তখন তোমরা রাতে নামাজ আদায় করো, দিনের বেলা রোজা পালন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, আমার কাছে কোনো গুনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে মুক্তি দেব। আছো কি এমন কেউ, আছো কি এমন কেউ—এ আহ্বান করতে থাকেন ফজর পর্যন্ত।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৮)
মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫৬৬৫)
মনে রাখতে হবে, শবেবরাতের বিশেষ কোনো আমল নেই। এ রাতের জন্য বিশেষ কোনো আমল নির্ধারণ করা সুন্নাহ পরিপন্থি কাজ। স্বাভাবিক নিয়মের আওতাধীন ফরজ নামাজ মসজিদে আদায় করতে হবে। কিন্তু কোনো নফল ইবাদত-বন্দেগি করার ইচ্ছে হলে, তা নিজ ঘরে একাকী করা ভালো। বিভিন্ন বর্ণনায়, এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, দীর্ঘ সিজদা ও দোয়া-ইস্তেগফার করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২, ৩৮৩)
লেখক : খতিব, বঙ্গভবন জামে মসজিদ