![জাকাত না দেওয়ার শাস্তি](uploads/2024/03/22/1711047047.zakat2.jpg)
জাকাতের বিধান পালন না করা মানে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা। জাকাত ফরজ হওয়ার মতো সম্পদের মালিক হওয়ার পরও যারা এ বিধান পালন করবে না, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহে তাদের জন্য ইহকালীন লাঞ্ছনা ও পরকালীন শাস্তির কথা এসেছে।
ইহকালীন শাস্তি : কোরআন ও হাদিসে জাকাত আদায় না করার ইহকালীন শাস্তির যে বর্ণনা এসেছে, তা হলো—আল্লাহ বলেন, ‘আমার রহমত সব কিছুতে পরিব্যাপ্ত। তা আমি সেই লোকদের জন্য লিখব যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, জাকাত দেয় ও আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’ (সুরা মায়ারিজ, আয়াত : ২৪-২৫)
আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহকে সাহায্য করবে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন; নিঃসন্দেহে আল্লাহ শক্তিসম্পন্ন, সর্বজয়ী। তারা সেসব লোক—যাদেরকে আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা প্রদান করলে তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত প্রদান করে, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে নিষেধ করে।’ (সুরা হাজ, আয়াত : ৪০-৪১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি লোকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাসক নেই ও মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে ও জাকাত আদায় করবে…।’ (সুরা হাজ, আয়াত: ৪০-৪১)
আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের একমাত্র বন্ধু আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও ঈমানদাররা, যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং তারা রুকুকারী।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৫৫)
জাকাত আদায় না করার কারণে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে জাতি জাকাত দেয় না, মহান আল্লাহ তাদের ওপর বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। (হাকেম, মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন, কিতাবুল জিহাদ, ২/১৩৬)
পরকালীন শাস্তি : জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীকে পরকালে কঠিন ও ভয়ংকর আজাবের মুখোমুখি হতে হবে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সে আজাবের চিত্র ফুটে উঠেছে—আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৪-৩৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন আর সে তার জাকাত দেয় না, কেয়ামতের দিন ওই সম্পদকে দুটি বিষের থলিবিশিষ্ট মাথায় টাকপড়া মারাত্মক বিষধর সাপে পরিণত করা হবে, যা তাকে পেঁচিয়ে তার চোয়ালে আঘাত করে করে বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত ধন...।’ (বুখারি, কিতাবুজ জাকাত, ৫/২১০)
আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ যাদের তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন, তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কেয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে…। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা সম্পদ জমা করে রাখে, তাদের এমন গরম পাথরের সুসংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানে জাহান্নামে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তা তাদের স্তনের বোঁটার ওপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশি ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের ওপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে।’ (বুখারি, কিতাবুজ জাকাত, ৫/২১৫)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক