ঢাকা ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ কেন পড়া হয়?

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ০৭:১২ পিএম
‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ কেন পড়া হয়?
আরবিতে 'আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম' লেখা ক্যালিগ্রাফি। ইন্টারনেট

প্রতিটি কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ ও স্মরণ করা সুন্নত। ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ পড়ার দ্বারা আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়। 

‘আউজুবিল্লাহ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। এর পূর্ণ বাক্য ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’র অর্থ ‘আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।’ আউজুবিল্লাহকে এক কথায় ‘তায়াউজ’ বলা হয়। আউজুবিল্লাহ পাঠের অনেক জায়গা আছে। এই আয়াত পাঠের ফলে নানাবিধ কল্যাণ লাভ করা যায়। আউজুবিল্লাহ পাঠের কয়েকটি জায়গা নিয়ে এখানো আলোচনা করা হলো—

কোরআন তেলাওয়াতের শুরুতে
কোরআন তেলাওয়াতের শুরুতে আউজুবিল্লাহ পাঠ করা সুন্নত। কোরআন তেলাওয়াতের সময় যেন শয়তান ধোঁকা দিতে না পারে, সে জন্য আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তুমি কোরআন তেলাওয়াত করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৮)

নামাজে শয়তান কুমন্ত্রণা দিলে
নামাজ পড়ার সময় শয়তান মানুষকে নানাভাবে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। নামাজরত অবস্থায় শয়তান কুমন্ত্রণা দিলে কি করতে হবে সে ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা রয়েছে। উসমান বিন আবুল আস (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, শয়তান আমার মধ্যে এবং আমার নামাজ ও কিরাতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে আমার কিরাতে জটিলতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এ হচ্ছে শয়তান, যাকে ‘খানজাব’ বলা হয়। তুমি তার আগমন অনুভব করলে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করবে (অর্থাৎ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পাঠ করবে) এবং বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে।’ উসমান (রা.) বলেন, এরপর থেকে আমি এমনটি করি। ফলে আল্লাহ তাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন।” (মুসলিম, ২২০৩)

রাগ হলে
রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। তাই রাগের সময় শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। সুলায়মান ইবনে সুরাদ (রা.) বলেন, “আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। দুইজন লোক গালাগালি করছিল। তাদের একজনের চেহারা লাল হয়ে রগগুলো ফুলে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি এমন একটি দোয়া জানি, এই লোকটি তা পড়লে রাগ দূর হয়ে যাবে। সে যদি পড়ে ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’, তা হলে তার রাগ চলে যাবে।’ তখন সুলায়মান তাকে বলল, নবি (সা.) বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাও।’ সে বলল, ‘আমি কি পাগল হয়েছি?” (বুখারি, ৩২৮)

মনের মধ্যে শয়তান কুমন্ত্রণা দিলে

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২০০)

মসজিদে প্রবেশের সময়
মুসলমানরা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজসহ নানা কাজে মসজিদে প্রবেশ করে থাকেন। মসজিদে প্রবেশের সময় শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়। কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে রাসুলুল্লাহ (সা.) আউজুবিল্লাহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন নবি (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়ে বলে, হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। আর বের হওয়ার সময় যেন নবি (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়ে বলে, হে আল্লাহ, আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করুন।’ (ইবনে মাজাহ, ৭৭৩)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর

 

সৌদি সরকারের সম্মাননা পেলেন হাব সভাপতি

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১১ পিএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১২ পিএম
সৌদি সরকারের সম্মাননা পেলেন হাব সভাপতি
হাব সভাপতিকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করছেন সৌদি আরবের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. আল হাসান আল মানাখরা। ছবি: সংগৃহীত

হজ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমকে বিশেষ সম্মাননা জানিয়েছে সৌদি সরকার।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. আল হাসান আল মানাখরা হাব সভাপতিকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সৌদি হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের ডিজি ড. বদর আল সোলায়মানি।

অনুষ্ঠানে সৌদি উপমন্ত্রী ড. আল হাসান আল মানাখরা বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় হাব সভাপতির ভূমিকার প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের হজে সৌদি মোয়াল্লিমদের সেবা প্রদানে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে জানতে চেয়েছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

চলতি বছরের হজে পাথর নিক্ষেপের জন্য জামারাতে প্রবেশের সময় অব্যবস্থাপনাসহ কিছু সৌদি মোয়াল্লিমের গাফিলতির বিষয়ে সৌদি উপমন্ত্রীকে হাব সভাপতি অবহিত করেছেন। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে ড. আল হাসান আল মানাখরা বলেন, ‘আগামী (২০২৫) হজের বিষয়ে একটি রোডম্যাপ শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। এ সময় তিনি আল্লাহর মেহমানদের কল্যাণে আগামীতে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন এবং হাজিদের কষ্ট লাঘবে কি কি করা যায় এ বিষয়ে হাব সভাপতির মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করেন।’

সম্মাননা গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাব সভাপতি বলেন, ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের হজযাত্রী ও হজ এজেন্সির কষ্ট লাঘব হয়েছে। একসময় হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার আকদ ও হজ ভিসার বারকোডের জন্য এজেন্সিকে মক্কার মোয়াসসাসায় দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো এবং অমানবিক শারীরিক কষ্ট করতে হতো। সৌদি সরকারের ই-হজ চালু করার পর এখন আর এ ভোগান্তি নেই।’

এদিকে সৌদি সরকারের ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনা বর্তমানে হজযাত্রীদের মোয়াল্লেম সিলেকশন, বাড়ি ভাড়া, ট্রান্সপোর্ট, প্যামেন্ট, ই-ভিসা ইত্যাদি সহজ করার জন্য তিনি সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হজযাত্রীদের কল্যাণে ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করেছেন। বর্তমান ডিজিটাল ই-হজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ পর্বও সহজ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজযাত্রীদের কল্যাণে সার্বক্ষণিক হজ কার্যক্রম ব্যক্তিগতভাবে তদারকি করেন।’

২০২৪ সালের হজে সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ করে সময় শেষ হয়ে যাবার পরও হজ ভিসা ইস্যু চালু রাখার জন্য সৌদি হজ ও ওমরা উপমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এ সময় তিনি সৌদি বাদশাহ, ক্রাউন প্রিন্স, হজ ও ওমরা মন্ত্রী, ভাইস মিনিস্টারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার বার্তা পৌঁছাতে উপমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলানের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাব সভাপতি। পাশাপাশি হাবকে সম্মানিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

রায়হান/মিরাজ রহমান

অল্প আমলে বেশি সওয়াব

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১০:১০ এএম
অল্প আমলে বেশি সওয়াব
মোনাজাতরত মুসল্লির ছবি

এমন অনেক আমল রয়েছে, যা সহজেই করে অনেক বেশি সওয়াব অর্জন করা যায়। আল্লাহর প্রিয় হ‌ওয়া যায়। এখানে তেমন কিছু আমল সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনার আলোকে আলোচনা তুলে ধরা হলো


বিশুদ্ধ নিয়তে অল্প দান: প্রতিটি আমলের জন্য নিয়ত শুদ্ধ রাখা আবশ্যক। আল্লাহ মানুষের নিয়ত দেখেন। বিশুদ্ধ নিয়তের প্রতিদান আল্লাহ বেশি দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, (আর আল্লাহ হালাল ছাড়া গ্রহণ করেন না) আল্লাহ তা ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন করো। একপর্যায়ে এই সামান্য দান পাহাড়সম হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস: ১৪১০)

ইফতার করানো: রোজাদারকে ইফতার করানো স‌ওয়াবের কাজ। ইফতার করাতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না; শুধু খেজুর ও পানি দিয়েও করানো যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তার জন্যও রোজা পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৪৬)

পানি পান করানো: তৃষ্ণার্ত মানুষকে পানি পান করানো ইবাদত। এই সহজ আমলটি করে এর অসামান্য ফজিলত অনায়াসেই অর্জন করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিমকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা সহজলভ্য। সে যেন একটি গোলামকে মুক্ত করল। যে কোনো মুসলিমকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৪৭৪)

সাধ্যমতো সাহায্য করা: মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। টাকা-পয়সা দিয়েই যে শুধু সাহায্য করা যায়, বিষয়টি এমন নয়। উপকার করার মানসিকতা পোষণ করলে কথা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, শ্রম দিয়েও করা যায়। এতে একদিকে মানবিকতা প্রকাশ পায়, অন্যদিকে আমলনামায় যুক্ত হয় অগণিত স‌ওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আপন কোনো ভাইয়ের কাজের জন্য পায়ে হেঁটে যায়, তার এ কাজ দশ বছরের ইতেকাফ থেকে উত্তম। যে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য একদিনের ইতেকাফ‌ও করে, আল্লাহতায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দেয়াল করে দেন। প্রতি খন্দক আসমান ও জমিনের দূরত্ব থেকে বেশি।’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস: ৭৩২৬)

বিপদগ্রস্তকে সান্ত্বনা দেওয়া: বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানোতে রয়েছে অনেক স‌ওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান করে, তার জন্য‌ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির মতো স‌ওয়াব রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬০২)

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা: রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মাধ্যমে অর্জিত হয় সদকার স‌ওয়াব, অর্জিত হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পথের কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া সদকা।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০০৯)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকালে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান তৈরি করা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৬৯)

তাসবিহ পড়া: আল্লাহর নামের স্মরণে অনেক সওয়াব আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি গাছ হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬৪)

হাসিমুখে কথা বলা: হাসিমুখে কথা বলা সদকা। অথচ এতে না শারীরিক কোনো কষ্ট হয়, না আর্থিক কোনো ক্ষতি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৭০)

 

লেখক: শিক্ষার্থী, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল-মাদানী

ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া
রাসেলস ভাইপার সাপের ছবি

আল্লাহতায়ালা এই ধরণীকে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সাজিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নানান প্রাণীর বিচরণ পৃথিবীতে ঘটেছে। এর মধ্যে সাপ-বিচ্ছু অন্যতম। সম্প্রতি এ দেশে রাসেলস ভাইপার তথা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এ জাতীয় সব ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেক আগেই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। যা বিভিন্ন হাদিসে লক্ষণীয়। 


হাদিসে এসেছে, একবার বিচ্ছুতে দংশিত এক ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আনা হলে তিনি বলেন, সে যদি বলত: আউুযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক। অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামের সাহায্যে তাঁর সৃষ্ট বস্তুর অনিস্ট থেকে আশ্রয় চাই। তা হলে তা তাকে দংশন করতে পারত না অথবা তার ক্ষতি করতে পারত না। (আবু দাউদ, ৩৮৯৯)

অনুরূপ, উপরিউক্ত হাদিসে বর্ণিত দোয়াটি যদি কেউ সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করে, তা হলে ওই রাতে কোনো বিষাক্ত প্রাণীর বিষ তার অনিষ্ট করতে পারবে না। (তিরমিজি, ৩৬০৪) 

আরেক হাদিসে লক্ষ্য করা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রিয় নাতি হাসান এবং হুসাইন (রা.)-এর জন্য সব অনিষ্ট থেকে রক্ষার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে আশ্রয় চাইতেন, আউুযু বিকালিমা তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আয়নিল লাম্মাতিন। অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাচ্ছি। (বুখারি, ৩৩৭১)

তবে ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার্থে ওই প্রাণীকে হত্যা করা বৈধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) পাঁচ প্রকার প্রাণীকে হত্যা করা বৈধ বলেছেন। এর মধ্যে সাপ, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর অন্যতম। (মুসলিম, ২৭৫২)

তাই সকল প্রকার ক্ষতিকর ও বিষাক্ত প্রাণীর অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকতে হাদিসে নববিতে বর্ণিত দোয়াসমূহ আমাদের নিয়মিত পাঠ করা উচিত। পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাতে দুই হাত তুলে সব সৃষ্ট প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে দোয়া করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা উত্তম হেফাজতকারী এবং তিনিই সর্বাধিক দয়ালু।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৬৪)

লেখক: শিক্ষার্থী , আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

সুখময় জীবনলাভের অমূল্য পাথেয়

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১০:১০ এএম
সুখময় জীবনলাভের অমূল্য পাথেয়
হাদিসের বিখ্যাত ৩টি কিতাবের ছবি

আমরা সবাই উন্নত জীবনযাপন করতে চাই। ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলতে চাই জীবনোদ্যান। প্রশান্তির ফল্গুধারায় সজীব করে তুলতে চাই প্রতিটি মুহূর্ত। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুখ অধরাই থেকে যায় অনেকের। কাঙ্ক্ষিত সুখ কিংবা আত্মতৃপ্তির জীবন পেতে ইসলামের দিকেই ফিরে আসতে হবে সবাইকে। কারণ, কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাগুলোর ছত্রে ছত্রে রয়েছে সুখময় জীবনলাভের অমূল্য পাথেয়। এখানে উন্নত জীবনলাভে হাদিসের ৫ নির্দেশনা তুলে ধরা হলো


আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন কে আছ, আমার কাছ থেকে এ কথাগুলো গ্রহণ করবে এবং সে অনুযায়ী নিজে আমল করবে অথবা কাউকে শিক্ষা দেবে, যে এমনভাবে আমল করবে? আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আছি। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং গুনে গুনে এ পাঁচটি কথা বললেন, এক. তুমি হারাম কাজ থেকে বিরত থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আবিদ (ইবাদতকারী) বলে গণ্য হবে। দুই. তোমার ভাগ্যে আল্লাহতায়ালা যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তাতে খুশি থাকলে, লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা স্বনির্ভর বলে গণ্য হবে। তিন. প্রতিবেশীর সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলে প্রকৃত মুমিন হতে পারবে। চার. যা নিজের জন্য পছন্দ কর, তা-ই অন্যের জন্যও পছন্দ করতে পারলে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে। পাঁচ. অধিক হাসা থেকে বিরত থাকো। কেননা অতিরিক্ত হাসি-কৌতুক হৃদয়কে মৃত করে দেয়।’ (তিরমিজি, ২৩০৫)

হারাম থেকে বেঁচে থাকা

সুখময় জীবন পেতে হারাম ও সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা নিষিদ্ধ কাজের বড় বড়গুলো থেকে বিরত থাক, তা হলে আমি তোমাদের ছোট ছোট পাপ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদের এক মহামর্যাদার স্থানে প্রবেশ করাব।’ (সুরা নিসা, ৩১) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে জান্নাতি, আর যারা আমার অবাধ্য হবে, সেই অস্বীকার করবে।’ (বুখারি, ৭২৮০)

আল্লাহর বণ্টনে সন্তুষ্ট থাকা

সব সময় আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সম্পদের প্রাচুর্য না থাকলেও ধনী হওয়া যায়। প্রকৃত ধনাঢ্যতা আত্মার ধনাঢ্যতা। যে হৃদয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার এবং মানুষের কাছে না চেয়ে শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়ার চেতনা তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সুখী এই পৃথিবীতে আর কেউই নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মার  ধনাঢ্যতাই হচ্ছে প্রকৃত ধনাঢ্যতা।’(মুসতাদরাক, ৮১৪২)

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ

পরিপূর্ণ মুমিন তারা, প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ করেন যারা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (বুখারি, ৬০১৮)

নিজের ও অন্যের জন্য পছন্দ

নিজে যা পছন্দ করেন, অন্যের জন্যও তা পছন্দ করা; উন্নত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। মুসলিম মাত্র এমন মানিসকতা লালন করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার মুসলমান ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করে যা নিজের জন্য পছন্দ করে।’(বুখারি, ১৩)

অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে থাকা

অতিরিক্ত হাসি মানুষের ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্য ও আখেরাত ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটির অভ্যাস গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে (জাহান্নামের ভয়াবহতা যদি উপলব্ধি করতে) হাসতে কম, কাঁদতে বেশি। (বুখারি, ৬৪৮৫)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

সুরা ফিলের উচ্চারণ ও অর্থ

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০৭:৩৫ পিএম
সুরা ফিলের উচ্চারণ ও অর্থ
আরবিতে সুরা ফিল লেখা ছবি। ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনের ১০৫ তম সুরা ফিল। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে আয়াত আছে ৫টি। তৎকালীন ইয়েমেনের শাসক ছিল আবরাহা। সে ছিল খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। কাবা ঘিরে সে সময়ের মানুষের আগ্রহ, শ্রদ্ধাবোধ এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে কাবার জৌলুস তার পছন্দ হয়নি। সে ঈর্ষায় ফেটে পড়ত। কাবার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে রাজধানী সানায় একটি গির্জা নির্মাণ করে। মানুষ আসবে, এ আশায় বুক বাঁধে। কাজ হয়নি। তেমন সাড়া পড়েনি। সে ক্ষুব্ধ হয়। কাবা ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়। সে বিশাল বিশাল হাতি (৯-১৩ টি) ও বিপুল সৈন্য (৬০ হাজার) নিয়ে কাবার অভিমুখে রওনা হয়। সে বছর হস্তী বাহিনীর বছর বলা হয়। কুরাইশরা তা দেখে ভয় পেয়ে বসে। কাবাঘর ছেড়ে দূরে অবস্থান নেয়। আল্লাহ ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল পাখি পাঠিয়ে হস্তী বাহিনী ধ্বংসে করেন। এই প্রেক্ষিতে এ সুরাটি নাজিল করা হয়েছে। 

সুরা ফিল

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ (1) أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ (2) وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ (3) تَرْمِيهِم بِحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ (4) فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُولٍ (5)

বাংলা উচ্চারণ: আলাম তারা কাইফা ফাআলা রাব্বুকা বি আসহাবিল ফিল। আলাম ইয়াজ আল কাইদাহুম ফি তাজলিল। ওয়া আরসালা আলাইহিম তাইরান আবাবিল। তারমিহিম বি হিজারাতিম মিন সিজ্জিল। ফাজা আলাহুম কাআসফিম মাকুল।

বাংলা অর্থ: তুমি কি দেখনি যে, তোমার প্রতিপালক হাতি ওয়ালাদের সঙ্গে কেমন (আচরণ) করেছিলেন? তিনি কি তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেননি? তাদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছিলেন। যারা তাদের ওপর পোড়া মাটির কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদের চিবানো তৃণ-ঘাসের মতো করে দিয়েছিলেন। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক