![পরিত্যক্ত গুদামে গোপনে চাল মজুত](uploads/2024/02/09/1707467868.Rice.jpg)
আমন ধানের রেকর্ড উৎপাদনের পরও বাজারে চাল ও অন্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে খোদ কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেছেন, অসৎ ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে চালসহ অন্যান্য পণ্য মজুত করে বাজারমূল্য অস্থিতিশীল করছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) খবরের কাগজ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ বলেন, ‘আমরা এমনও খুঁজে পেয়েছি যে অসৎ ব্যবসায়ীরা অনৈতিক উদ্দেশ্যে পুরোনো ও অপ্রচলিত বা পরিত্যক্ত গুদামে চালসহ নানা কৃষিপণ্য গোপনে মজুত করে রেখেছে, যেন সাধারণ মানুষ বা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ খোঁজ বা সন্দেহ না করে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য-প্রমাণ পেয়ে আমরা এসব ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করেছি এবং সর্বদা সজাগ আছি। ভবিষ্যতে এমন অনৈতিক ও অবৈধ মজুতদারি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে এবং সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। শুধু চাল কেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আর কোনো পণ্যের দাম বাড়তে দেবে না। এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা নিয়মিত বাজার ও মজুত পরিস্থিতি মনিটর করছি। সরবরাহ ঠিক রাখতে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় চার পণ্য আমদানিতে শুল্কও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে আমরা কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে মিটিং করছি। এ মিটিংয়ে আমরা বাজার পরিস্থিতি আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম ঠিক করা হয়।’
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমের নিয়মিত খবরাখবর ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমের সহযোগিতা আমাদের বাজারব্যবস্থা মনিটরিংয়ে প্রত্যক্ষভাবে কাজে লাগছে। এভাবেই নিয়মিত আমরা গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই।’
সাম্প্রতিক সময়ে চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দামের তুলনায় আমাদের দেশের বাজারে এই মূহূর্তে চালের দাম একটু কমই আছে।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চালের গড় মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ ডলারের মতো। আমাদের দেশীয় বাজারে এ দাম এখন ৪৫০ ডলার আছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অসৎ মজুতদারদের কারণে চালের বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়িয়েছি। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।’
এদিকে চলতি বছর দেশে আমন ধানের উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর আমন মৌসুমে আবহাওয়া খুবই ভালো ছিল। এ ছাড়া সরকারের নানা কর্মসূচিও রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনে কাজে লেগেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রতিবেদন (বুধবার প্রকাশিত) থেকে জানা গেছে, দেশে এ বছর চলতি মৌসুমে রোপা ও বোনা আমন মিলিয়ে উৎপাদন হয়েছে মোট ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৪ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার ৮০০ টন। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টন বা শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ।
গত বছর আমন মৌসুমে ধানের মোট উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টন। সে তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ১৯ লাখ ১ হাজার ৪০০ টন বা ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।
ডিএইর সরেজমিন উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বেশি অর্জন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া প্রণোদনা, হাইব্রিড বা উন্নত জাতের বীজ ও উপকরণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও কৃষককে সারের মূল্যে দেওয়া ভর্তুকিসহ অনেকগুলো সরকারি কর্মসূচি এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আমন ধান উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব ড. শাহ মো. হেলাল উদ্দীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কৃষিতে সরকারি কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম সার ক্রয়ে কৃষককে দেওয়া ভর্তুকি। এতে সাধ্যের মধ্যে কৃষক সার ক্রয় করতে পারেন এবং জমিতে তা প্রয়োজনমাফিক প্রয়োগ করতে পারেন।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ছাড়া কৃষিতে সারা বছর ধানসহ বিভিন্ন ফসলে নানা উপকরণ সহযোগিতা দেয় সরকার। এর মাধ্যমে দেশের সব ধরনের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। এতে সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।