![ব্যয় কমাতে হালকা হচ্ছে ইভিএম!](uploads/2024/07/01/evmm-1719816049.jpg)
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ফলে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে আগামী ২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সেই সঙ্গে ব্যয় কমাতে ইভিএমের ওজন কমিয়ে হালকা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই তথ্য খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। একই সঙ্গে ইভিএম প্রকল্পকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘সরকারের নতুন বরাদ্দ ছাড়াই প্রকল্পের অবশিষ্ট ১১৬ কোটি টাকা এবং সংগ্রহে থাকা সচল ইভিএমগুলো দিয়ে আপাতত কার্যক্রম চালিয়ে নিতে গত ১৯ জুন আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। তাতে প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে অবশিষ্ট টাকা দ্রুত ছাড় পাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। আমাদের সেই প্রস্তাবনার ব্যাপারে গতকাল রবিবার ওই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে মৌখিক সম্মতি জানিয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্প পরিচালনার আনুষ্ঠানিক সম্মতিপত্র খুব শিগগির আমাদের কাছে তারা পাঠাবে।’
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘প্রকল্পটির জন্য সরকার নতুন করে আর বরাদ্দ না দিলেও প্রকল্পের টাকা এবং সংগ্রহে থাকা সচল ইভিএমগুলো নিয়েই আপাতত কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আমরা নতুন করে পরিকল্পনা সাজিয়েছি। তার মধ্যে রয়েছে এই ভোটযন্ত্র ইভিএমকে হালকা করে উৎপাদন ব্যয় কমানো। কারণ ইসির সংগ্রহে থাকা প্রতিটি ইভিএমের দাম প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আর কারিগরি উন্নয়ন তথা ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল দেশসেরা প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক সেই বৈঠক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হায়দার আলী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক এই আলোচনার পর সিরিজ আলোচনা চলবে। এ লক্ষ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হবে। পরে সেই কমিটির বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সবার মতামত নেওয়ার পর ইভিএমের কারিগরি উন্নয়নে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান খবরের কাগজকে বলেছেন, বর্তমানে ১ লাখ ৫ হাজার ইভিএম ব্যবহার অনুপযোগী। আর ৪৫ হাজারের মতো মেশিন নির্বাচনে ব্যবহার করা যাচ্ছে। সেগুলোর মাধ্যমে বিগত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অর্ধশতাধিক উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমতির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান পেলে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কোনো অসুবিধা হবে না। সচল ইভিএমগুলো দিয়ে উপজেলা নির্বাচনের মতো আগামীতে স্থানীয় সরকারের বাকি নির্বাচনগুলো চালিয়ে নেওয়া যাবে। আর অকেজো ইভিএমগুলোও মেরামতযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্ভব হলে সেগুলোও মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০১৮ সালে হাতে নেওয়া ইসির এই প্রকল্পের মেয়াদ রবিবার শেষ হয়। সে সময় একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেই সময় এই প্রকল্পের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয় ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দরে কেনা হয় দেড় লাখ ইভিএম। এগুলোর জীবনকাল কমপক্ষে ১০ বছর বলা হলেও অব্যবস্থাপনা আর অযত্নের কারণে তিন বছর পরই অকেজো হতে শুরু করে। ইসির সংরক্ষণে থাকা বেশির ভাগ (১ লাখ ৫ হাজার) ইভিএম বর্তমানে অকেজো হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। বাকি ৪৫ হাজার ইভিএম ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়। আর পাঁচ বছরের মাথার প্রকল্পের কার্যক্রমই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমে ১৫০ আসনে এবং পরে অন্তত ৬০-৭০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের কমিশন। এ জন্য নতুন করে গ্রহণ করা হয় ৯ হাজার কোটি টাকার দ্বিতীয় ইভিএম প্রকল্প। কিন্তু সরকারের আর্থিক সংকটের কারণে সেই প্রকল্প স্থগিত করা হয়। ফলে ইভিএমের পরিবর্তে বিগত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট গ্রহণ করা হয়।