ঢাকা ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের দাবি সর্বমহলে

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১২ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:২০ এএম
সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের দাবি সর্বমহলে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের বিধান নিয়ে আবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে কথা উঠেছে। এমনকি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের দুজন সংসদ সদস্য। গত ২৫ জুন ২০২৪-২৫ সংসদে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানোর পরও দুর্নীতি কমেনি। সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক করার জোরালো দাবি জানান তিনি। একই দাবি জানিয়ে সরকারি দলের অপর সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, শহরের ৯০ শতাংশ বাড়ি হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের। এত বাড়ি, এত জমি হলো অথচ গোয়েন্দারা কেউ টের পেল না।

উচ্চমাত্রার দুর্নীতি কমাতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে প্রতিবছর সম্পদের হিসাব নেওয়া এবং তা নিয়মিত হালনাগাদ করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ বিষয়ে আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্টে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশের ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদনের দিনে কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এমন একসময়ে এ পরামর্শ দিল আইএমএফ, যখন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও এনবিআর থেকে প্রত্যাহারকৃত সদস্য মতিউর রহমানের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ২০২২ সালের ১৬ জুন জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাবের বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ হালনাগাদ করা হচ্ছে। দুই বছর পার হলেও বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়নি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল নিশ্চিত করতে পারলে অপরাধ ও দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হলে তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। আয়কর রিটার্নে সম্পদের হিসাব বিবরণীর তথ্য থাকে। যদি কেউ না দিয়ে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

তিনি মনে করেন, সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করা হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ভয়ভীতি কাজ করবে। এতে করে দুর্নীতি কমবে। 

সরকারি চাকরিজীবীদের পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান ১৯৭৯ সালে চালু করা হয়। দেশে বর্তমানে ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবী আছেন। চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিতে আচরণ বিধিমালায় এ নিয়ম যুক্ত করা হয়। কিন্তু চার দশক ধরে এই নিয়ম পুরোপুরি প্রতিপালন করা যায়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীর প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু ৪৩ বছর আগের এ বিধানকে মানছেন না সরকারি চাকুরেরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় দুর্নীতি বন্ধে সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। এর মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিষয়টিও ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ওই অনুশাসন প্রতিপালন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এরপর কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু এত বছর অতিক্রম করার পরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমানে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৪ থেকে ১৫ লাখ। তাদের প্রত্যেককে যদি মূল্যায়ন না করা হয়, তাহলে সম্পদের হিসাব জমা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। অনেকে আছেন, যারা নিজের নামে সম্পত্তি করেন না। তাই সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করা হলেই যে দুর্নীতি প্রতিরোধ হবে, এটিকে আমি কার্যকর পদক্ষেপ মনে করি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু সম্পদের হিসাব জমা দিয়ে লাভ নেই। যারা দুর্নীতি করছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে আমরা সবাই জানি। ওই সব জায়গায় দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে পারলে সেটি হবে কার্যকর পদক্ষেপ।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণায়ের একটি সূত্র বলেছে, বিদ্যমান ১৯৭৯ সালের সরকারি আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।

২০২৩ সালের নভেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সেখানে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বলা হয়, ‘সরকারি চাকরিতে যোগদানের সময় এবং প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু নিয়মিত এ বিধানাবলি অনুসরণ করে হিসাব দাখিলের প্রশাসনিক চর্চা নেই। তবে এ অচল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-২০২২-এ আয়কর রিটার্ন স্লিপ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।’

সম্পদের হিসাব দাখিলের নিয়ম শিথিল করা হয়েছে: ২০২৩ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরিজীবী আচরণ বিধিমালা সংশোধনের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাবে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যারা নিয়মিত এনবিআরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, তাদের আলাদাভাবে কোনো সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে না। সরকার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর এনবিআরে দাখিল করা সম্পদের হিসাব বিবরণী সংগ্রহ করবে। জানা গেছে, প্রস্তাবিত সংশোধনী এনবিআরের সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা যাচাই- বাছাই করছে আইন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে বিধিমালাটি বাস্তবায়ন হলে সরকারি চাকুরেদের আলাদা করে সম্পদের হিসাব দিতে হবে না। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংশোধিত বিধিমালা কার্যকর হলে সম্পদ বিবরণী দাখিলের প্রক্রিয়া আরও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং দুর্নীতি বাড়বে। কারণ সরকারি চাকরি বিধিমালা প্রণয়নের সময় আয়কর রিটার্ন ছাড়াও সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিধান করা হয়েছিল এবং বর্তমানেও সে যৌক্তিকতা ফুরিয়ে যায়নি।

জটিলতা বাড়বে: এনবিআর সূত্র বলেছে, সংশোধিত বিধিমালাটি চূড়ান্ত হলে আইনি জটিলতা বাড়বে। বিদ্যমান এনবিআরের আইন অনুযায়ী, আয়কর বিবরণীতে জমা দেওয়া তথ্য সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা আছে এবং তা প্রকাশও করা যাবে না। এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আদালত চাইলে কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো রাষ্ট্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চাইলেই কেবল ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার যেকোনো তথ্য প্রদান করতে পারে এনবিআর। সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন এই নিয়ম বদলে ফেলা হয়েছে। সে অনুযায়ী এনবিআর নিজেই এখন তাদের সম্পদ বিবরণী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবে। অভিযোগ আছে, একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এনবিআরে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে প্রকৃত সম্পদ দেখান না। বেনামে সম্পদ লুকিয়ে রাখেন।

আচরণবিধি অনুযায়ী সব সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যাদের টিআইএন আছে এবং ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদধারী কিংবা বাড়ি-গাড়ি আছে, এমন সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারি চাকরিজীবীদের আলদাভাবে সম্পদ হিসাব জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। বর্তমান আয়কর আইনে রিটার্ন দাখিলের সময় সম্পদের হিসাব বিবরণী দিতে হয়।

সরকার যদি এই তথ্য চায়, তাহলে এনবিআর দিতে বাধ্য থাকবে। এর বাইরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পৃথকভাবে সম্পদের হিসাব দেওয়ার কোনো বিধান নেই। তিনি বলেন, বিদ্যমান আয়কর আইনে কোনো ব্যক্তি করদাতার তথ্য দেওয়ার নিয়ম নেই। সরকার যদি চায় তাহলে আইন সংশোধন করতে পারে। আসলে সরকার কী চায়, তার ওপর নির্ভর করছে বিষয়টি।

প্রত্যয় স্কিম ‘ষড়যন্ত্রমূলক’

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
প্রত্যয় স্কিম ‘ষড়যন্ত্রমূলক’

চার কারণে সর্বজনীন পেনশনে প্রত্যয় স্কিমের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষক নেতারা। আলোচনা ছাড়া বড় পরিবর্তন, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই নিয়মে পেনশন প্রাপ্য হলেও সেখান থেকে বের করে প্রত্যয় স্কিমে যুক্তকরণ, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা স্কিম এবং বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হলে সরকারবিরোধীদের জন্য সুযোগ তৈরির শঙ্কা থাকায় এমনটা মনে করছেন তারা। 

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। বাকি দুই দাবি হলো- শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি।

সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলমত নির্বিশেষে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষায় সেশনজটসহ নানা সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অল্প সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা আশাবাদী, শিক্ষকরা আগে কখনো এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল না। 

তিনি বলেন, আমরা স্টেকহোল্ডার। কমিটিতে আমাদের কাউকে রাখা হয়নি। আলোচনা ছাড়াই ঠিক করে দেবে, এটা কেন মানতে হবে? ২০১৫ সালেও তারা একই কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে কমিটমেন্ট করেছিল শিক্ষকদেরকে সুপারগ্রেড দেবে। কিন্তু সেটা কোথায়? এখন আমরা প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত কোনো কিছু বিশ্বাস করব না। এ জন্য তাদেরকে বিশ্বাস করব না। আমাদেরকে আলাদা করে দিয়ে অপমান করা হয়েছে। এটা একটা ষড়যন্ত্র। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে অফিশিয়ালি কোনো পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে আন-অফিশিয়ালি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শিক্ষকরা যে প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক বলছেন, সেটি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। 

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ষড়যন্ত্রমূলক। ২০১৫ সালের পে-স্কেল করার সময় শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হয়। এবারও সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘সেবক’ নামের আরেকটি স্কিম আনা হবে। সেই রূপরেখা এখনো ঠিক হয়নি। যেখানে একই সঙ্গে আগে সবাই পেনশন পেত, নতুন নিয়মে সবাইকে একসঙ্গে না রেখে আলাদা করে সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেনশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। সেটা না করে চাপিয়ে দেওয়াকে আমরা উচ্চশিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছি। প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবে না। শিক্ষার মান কমে যাবে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সদস্য ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, সবাই একই পেনশনের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তাহলে কেন আমাদের আলাদা করা হলো? আবার আলাদা ‘সেবক স্কিম’ হবে? এটি কীভাবে সর্বজনীন হবে? পেনশন যাদের ছিল না, তাদের দরকার ছিল। কিন্তু যাদের আছে, তাদের জন্য কেন নতুন নিয়ম করতে হবে? 

সরকারের দায়িত্বশীল পলিটিক্যাল অংশ থেকে কথা বলা উচিত উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে, এটা বিশ্বস্বীকৃত। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য বহন করবে। জীবনমানের উন্নতি হবে যেহেতু, তাহলে সুযোগ-সুবিধা কেন কমে যাবে? এভাবে সুযোগ-সুবিধা কমানো কিসের বার্তা দেয়? 

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করার জন্য মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির যুক্তিসঙ্গত সমাধান করা উচিত।’

স্থবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে সেবা বিঘ্ন
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে শ্রেণিকক্ষে ঝুলছে তালা, অন্যদিকে একই দাবিতে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতায় প্রশাসনিক ভবন, মেডিকেল সেন্টারে সেবা না পেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেককেই। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী পহেলা জুলাই থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। এদিকে এই কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা নয় বরং শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্যই এই কর্মবিরতি বলে দাবি করেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। একই সময়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা চললেও সেখানে অংশ নেননি শিক্ষক সমিতির নেতারা।
একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও সকাল থেকে অফিসে যাননি। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। কথা হয় প্রশাসনিক ভবনে বৃত্তির চেক নিতে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া ২০১৭-১৮ সেশনের এক শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন না কি কর্মবিরতি চলছে, তাই তারা কোনো সার্ভিস দেবেন না। কর্মবিরতি শেষ হলে তারা সেবা প্রদান করবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কর্মবিরতির কারণে সেবা পাননি শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন খোকা। তিনি বলেন, ‘রবিবারে গিয়ে ডাক্তার পাইনি। আজকে সকালে আবার গিয়েছি, তবে ডাক্তার বললেন কর্মবিরতিতে সেবা দেবেন না। এটা খারাপ লাগার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মেডিকেল সেবা বন্ধ ছিল না। কোনো বর্বর জাতিও এভাবে হাসপাতাল সেবা বন্ধ করবে না।’ মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রচণ্ড জ্বর, তারপরও ওষুধ দিল না। ফিরে আসতে হয়েছে।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে ঢাবির শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র দুইজন রয়েছেন। সাধারণত অন্য সময়ে তিন-চারজন থাকেন। সহকারী মেডিকেল অফিসার হালিমা সাদিয়া বলেন, ‘কর্মবিরতির কারণে সেবা দিচ্ছেন না তারা। যখন কর্মবিরতি শেষ হবে তখন সেবা পাওয়া যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. মোতালেব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হওয়ার কারণে আমরা নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করিনি। তবে জরুরি সব সেবা চালু রয়েছে। শুধুমাত্র দাপ্তরিক ক্ষেত্রে কর্মবিরতি দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতি শিক্ষার্থী জিম্মি করে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নয়, বরং তাদের মুক্তির জন্যই আন্দোলন। জিম্মি আমাদেরই করা হয়েছে। যখন আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী পহেলা জুলাইয়ের পর আলাদা পেনশন সুবিধা পাবে, এটি তো বৈষম্য। যেখানে পেনশন সুরক্ষা হওয়ার কথা, সেখানে প্রত্যয় স্কিম চালু হলে দিন শেষে আমরা যারা প্রবীণ শিক্ষক আছি অবসর শেষে তাদের বেঁচে থাকার জন্য একটি ভবিষ্য তহবিল থাকছে, সেখানে আমার শিক্ষার্থীদের জন্য সেটি হবে শূন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আন্দোলন আমার জন্য না, এই আন্দোলন আমার সন্তানের জন্য, যারা আমার ছাত্র-ছাত্রী। যারা ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হয়ে আসবে এবং শিক্ষক হবে, তাদের জন্যই আন্দোলন।’ 

>আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত: এ কে আজাদ চৌধুরী
>ন্যায়সংগত ও যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত প্রয়োজন: আবুল কাসেম ফজলুল হক
>আলোচনায় বসলেই সব ঠিক হয়ে যেত: নজরুল ইসলাম খান
>আগে পরে সবাই এর আওতায় আসবেন: মাহবুব আহমেদ

অবৈধ সম্পদে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে এগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা স্ত্রী, দুদকে মামলা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
অবৈধ সম্পদে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে এগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা স্ত্রী, দুদকে মামলা

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদের স্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সহকারী পরিচালক বদরুন নাহার। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে অবৈধ সম্পদে এগিয়ে আছেন তার স্ত্রী এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা বদরুন নাহার।

দুজনের বিরুদ্ধে অন্তত ৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কবির আহমেদের ১ কোটি টাকার সম্পদ আর স্ত্রী বদরুন নাহারের ৭ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। 

এসব অবৈধ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে দুজনের বিরুদ্ধেই সোমবার (১ জুলাই) পৃথক দুটি মামলা করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম। 

একটি মামলায় ১ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৭২৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে কবির আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অপর মামলায় তার স্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (গবেষণা ও পরিসংখ্যান উইং) সাবেক সহকারী পরিচালক বদরুন নাহারের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে আছাদুজ্জামানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে আছাদুজ্জামানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ
আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই)।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়মিত বৈঠক নির্ধারিত আছে। 

এ বৈঠকে আলোচ্যসূচির অন্যান্য বিষয় ছাড়াও আছাদুজ্জামানের দুর্নীতির অনুসন্ধান প্রশ্নে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও দুদকে আসা অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইতোমধ্যে কমিশনে মতামত দাখিল করেছে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি। এতে অনুসন্ধান করার অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে, অনুসন্ধান শুরু হবে। এর আগে গত সপ্তাহে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেছিলেন, ‘আছাদুজ্জামান বিষয়ে আসা অবৈধ সম্পদের অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অনুসন্ধান করা হবে কি না, সেটা কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের পর জানা যাবে।’ 

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার আছিয়া খাতুন কানাডায় থাকায় এবং সফরের মেয়াদ বাড়ায় গত মঙ্গলবার কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক হয়নি। তিনি ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। ফলে আজকের নির্ধারিত বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন। 

অস্বাভাবিক অর্থ-সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে কিছুদিন ধরেই ব্যাপক আলোচনায় আছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এখন বিপুল সম্পদ অর্জন নিয়ে আলোচনায় এলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় ঈদুল আজহার আগের দিন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট, ছেলের নামে একটি বাড়ি এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠা জমির ওপর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের মালিকানায় ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। রাজধানীর ইস্কাটনেও আফরোজার নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ধানমন্ডিতে। এর বাইরে সিদ্ধেশ্বরীতে আছাদুজ্জামানের মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০৬ শতক জমি কেনা হয় আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে।

এ ছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় আফরোজার নামে ২৮ শতক জমি কেনা হয়। একই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনা হয় তার নামে। পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। এ ছাড়া আছাদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগরে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। নিকুঞ্জ ১-এ আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলের নামেও একটি বাড়ি রয়েছে।

এই প্রতিবেদন নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হওয়ায় দুদকের পদক্ষেপের ওপর এখন নির্ভর করছে অনেককিছু। 

পুনর্গঠন হতে পারে মন্ত্রিসভা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:১২ পিএম
পুনর্গঠন হতে পারে মন্ত্রিসভা

চলতি মাসেই মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১১ জুলাই বর্তমান মন্ত্রিসভার ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের এই মন্ত্রিসভার ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগে অথবা পরে পুনর্গঠনের এই সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো খবরের কাগজকে জানিয়েছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ছয় মাসের ‘পারফরম্যান্স’ মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সময়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা কে কেমন করলেন, তার রিপোর্ট এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।

তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সুশাসনকে জোর দিয়ে এবার মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা ধারণা করছেন। আর এ ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতাই হবে পদোন্নতি কিংবা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির মূল ভিত্তি।

মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, দুর্নীতির বিষয়ে সাম্প্রতিক কালে গণমাধ্যমে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে সরকার সম্পর্কে জনমনে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অনেকের ধারণা। তাই সরকারের ভেতরে-বাইরে ইতিবাচক ভাবমূর্তি বাড়ানোর একধরনের তাগিদ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ব্যক্তির দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেয়ে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা অনেক বেশি জরুরি। ফলে জনগণের কাছে নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে, এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রক্ষার দায়িত্ব নেবেন না।

সূত্র জানিয়েছে, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা মিটিয়ে ফেলতে এই মুহূর্তে সুশাসনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ দেশগুলো (যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা) বিদ্যমান নির্বাচনিব্যবস্থার সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি নিয়ে বরাবরই অভিযোগ করে আসছে। তাই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারসহ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সরকার শুরু করেছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। যে অভিযানে ধরাশায়ী হয়েছেন সাবেক আইজিপিসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সাবেক সেনাপ্রধানের স্বজনরা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে দৃঢ় অবস্থানের প্রসঙ্গটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর রপ্তানি বাজারে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো মোকাবিলার জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং করোনা মহামারি-উত্তর অর্থনীতি পুনর্গঠনে সততার সঙ্গে কাজ করতে বলেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার এক সদস্য। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ জনবল তৈরি এবং তাদের বিদেশে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। এ সময় তিনি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

গণভবনের সূত্রগুলো দাবি করছে, একে তো অর্থনৈতিক সংকট, তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের রয়েছে অসহযোগিতা, সব মিলিয়ে সরকার বেশ কঠিন সময় পার করছে। তাই এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হতে পারে মন্ত্রিসভায় দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনে এ দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেবেন। বিষয়গুলো নিয়ে তিনি ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ কে বা কারা আসতে পারেন, সে বিষয়টি কাউকেই বলেননি। সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের বিষয়ে আভাস মিলেছে। 

এ বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন হয় ১১ জানুয়ারি। এরপর প্রথম দফায় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হয় ১ মার্চ। ওই দিন সাত প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন। ফলে মন্ত্রিসভার আকার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ জন (প্রধানমন্ত্রীসহ)। সব ঠিক থাকলে এ মাসেই দ্বিতীয় দফায় সম্প্রসারণের পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় রদবদলও হতে পারে। 

জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে ১৪ দলের শরিকদের ভাগ্য খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ঠাঁই পেতে পারেন মন্ত্রিসভায়। যেসব মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী নেই, নতুন মন্ত্রীদের এসব জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এর বাইরে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছয় মাসের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে দপ্তর পরিবর্তন করা হতে পারে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর। ছয় মাসের ‘এক্সপেরিমেন্ট’ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভাকে ঢেলে সাজাবেন- এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই তার ঘনিষ্ঠজনদের। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী দেশের ভেতর এবং বাইরের সংকট মোকাবিলায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আনার হত্যাকাণ্ড: চিঠি এলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ভারতে যাবে পরিবার

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
আনার হত্যাকাণ্ড: চিঠি এলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ভারতে যাবে পরিবার
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার

ভারত গিয়ে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে কলকাতার সিআইডির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আনারের পরিবারকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য একটি চিঠি পাঠাবে। এরপর তারা কলকাতায় যাবেন। 

এদিকে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে জানানো হয়েছে যে তারা (কলকাতা পুলিশ) আনার হত্যার তদন্তের বিষয়টি শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। কিছু তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। তারা তা মাঠপর্যায়ে সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। কিছুদিন পর বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিম যদি কলকাতায় আসে। তখন কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিমকে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে আনারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় খবরের কাগজকে জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য তারা আমাদের একটি চিঠি ইস্যু করবে। চিঠিটি ম্যানুয়ালি না ই-মেইলে দেওয়া হবে, তা জানানো হয়নি। চিঠি পাওয়ার পর আমরা কলকতায় যাব।’

গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। অন্যদিকে কলকাতায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ দুটি মামলায় ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

গত ২৬ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মোস্তাফিজ ও ফয়সাল নামের দুজনকে। এর মধ্যে ফয়সাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, আনারকে হত্যার পর যে ট্রলি ব্যাগে তার দেহের টুকরা ভরা হয়েছিল, সেই ট্রলি ব্যাগটি তিনি কলকাতার ‘অবনী রিভারসাইড মল’-এর পাশে একটি দোকান থেকে কিনেছিলেন। এ জন্য এ খুনের মাস্টারমাইন্ড আকতারুজ্জামান শাহীন তাকে ভারতীয় সাড়ে ৩ হাজার রুপি দিয়েছিলেন। আনারকে হত্যার পর শাহীন তার ট্রলিতে দেহের টুকরোগুলো ভরার উদ্যোগ নিলেও পরে তা করেননি। কারণ ওই ট্রলিতে তার একাধিক পাসপোর্ট ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। পরে শাহীন ফয়সালকে দিয়ে ওই ট্রলি ব্যাগ আনিয়ে নিয়েছিলেন। এরপর সেই ট্রলিতে করে আনারের দেহের খণ্ডাংশ ভরে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যার সঙ্গে জড়িত ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করীম মিন্টুকে এ মামলার অন্য আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ডিবি পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিন দিন রিমান্ড শেষ হলে ডিবি পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। মিন্টুকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার ব্যাপারে শুরু থেকে চাপ ছিল। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক এমপি তার জন্য তদবির করেছিলেন। মিন্টুর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গ্রিন সিগন্যাল পেলে তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। 

সূত্র জানায়, এ মামলার অন্যতম আসামি গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য অভিযান চালিয়েছে ডিবি। কিন্তু ওই তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা যায়নি। গ্যাস বাবু ডিবির কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, মোবাইলের যে ডিভাইস রয়েছে, সেই ডিভাইস তিনি আগেই নষ্ট করে ফেলেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ধারণা, গ্যাস বাবুর মোবাইলে তথ্য পাওয়ার আর কোনো আশা নেই। আনার হত্যার মিশন বাস্তবায়নের জন্য গ্যাস বাবু শাহীনকে কলকাতায় এ খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বলেছিলেন। যাতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টের না পায়।