ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

ভাঙনে হুমকির মুখে বাঁধ বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার শঙ্কা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:০৪ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:০৫ এএম
বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার শঙ্কা
সারিয়াকান্দি উপজেলার ইছামারা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন আতঙ্কিত মানুষ। ছবি: খবরের কাগজ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ব্রহ্মপুত্রের ডান তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ যমুনা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। এবার বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ হারাতে পারেন তাদের বাড়িঘর আর নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি। 

ইতোমধ্যে সারিয়াকান্দির কামালপুর, ইছামারা ও ধুনটের শওরাবাড়িতে বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। আতঙ্কে বাঁধসংলগ্ন এলাকা থেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ। 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইছামারা এলাকায় যমুনা নদীভাঙছে মূল বাঁধ থেকে ১৫০ মিটারের মধ্যে। ভাঙন এলাকায় প্রতিরক্ষার কাজ বন্ধ থাকায় ওই বাঁধ কত দিন পর্যন্ত টিকবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ, ভাঙনের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

সারিয়াকান্দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ন কবির জানান, জুনের মাঝামাঝি যমুনা নদীর ডান তীরে ভাঙন দেখা দিলে প্রতিরক্ষার কাজ শুরু করা হয় ৬৫০ মিটার এলাকায়। তবে এখনো কাজ বাকি রয়েছে ৫৫০ মিটার। তিনি বলেন, ‘বাঁধ রক্ষায় ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ হাজার জিও ব্যাগ ও ৭ হাজার জিও টিউব ফেলা হয়েছে। ফলে কয়েকটি পয়েন্টে এখন ভাঙন বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু কোনো বরাদ্দ না থাকায় প্রতিরক্ষার কাজ বন্ধ হয়ে আছে ইছামারা এলাকায়। এতে ভাঙনঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা। এ বাঁধটি নিরাপদ করতে কত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব প্রয়োজন? এ প্রশ্নের জবাবে মো. হুমায়ন কবির বলেন, ‘নদীভাঙন আরও তীব্র না হলে ৫০ হাজার জিও ব্যাগ এবং ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার জিও টিউব হলেই প্রাথমিকভাবে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়া সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসই) আরিফুর রহমান জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর থেকে ধুনট উপজেলার শওরাবাড়ী পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার তীর স্থায়ীভাবে রক্ষায় নেওয়া ৮২৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সোনাতলা থেকে ধুনট পর্যন্ত প্রায় ৪৬ কিলোমিটার তীরে ভাঙন পুরোপুরি বন্ধ হবে। এ মুহূর্তে ভাঙন রোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে ৫০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ডান তীরে ভাঙন অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য ‘সবুজ পাতা’য় স্থান পাওয়া ৮২৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।’ এ প্রকল্প প্রায় চূড়ান্ত বলে মো. আরিফুর রহমান জানান, সার্ভের কাজ শেষ হলেই এলাকার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদন হবে। 

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সারিয়াকান্দির এলাকাগুলোতে রবিবার (৩০ জুন) গিয়ে দেখা যায়, মানুষ আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ থেকে অনেকেই তাদের বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। 

ওই উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আজাহার আলী জানান, গত বছর জুন থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তার এলাকায় বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন অন্তত ৪ হাজার মানুষ। যেভাবে নদীভাঙছে, তাতে এ বছর আরও মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারেন এ আশংকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন,‘ইতোমধ্যেই বাঁধে আশ্রয় নেওয়া অনেকেই বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। ইছামারা ও কামালপুরের অনেকেরই জমি চলে গেছে নদীর পেটে।’

ইছামারা গ্রামের মো. বিল্লাল আখন্দের সঙ্গে কথা হয় যমুনার তীরে। যমুনার ভাঙনে তার বসতবাড়ির ১৫ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। চরের ভেতর তার ৫-৬ বিঘা জমি আছে। কিন্তু সেগুলো আর কত দিন টিকে থাকবে, তা নিয়ে তিনি বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। বাড়িঘর সরিয়ে কোথায় নিয়ে গেছেন জানতে চাইলে মো. বিল্লাল আখন্দ বলেন, ‘বাঁধের ওপর গেছি। সেখানে আরও মানুষ তাদের বাড়িঘর তুলেছেন।’

কিলিং মিশন শেষে সিয়ামের সঙ্গে নেপাল গিয়েছিলেন ফয়সাল

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:১৭ এএম
কিলিং মিশন শেষে সিয়ামের সঙ্গে নেপাল গিয়েছিলেন ফয়সাল
মোস্তাফিজুর রহমান-ফয়সাল আলী সাহাজী-সিয়াম

কলকাতার সঞ্জিবা গার্ডেনে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর বিভিন্ন স্থানে গা-ঢাকা দেন খুনিরা। এ খুনের মাস্টারমাইন্ড আকতারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। অপর কিলার জিহাদ কলকাতায় গা-ঢাকা দেন। বাকিরা পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। খুনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে সিয়াম নেপালে পালিয়ে যান। এ সময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল সাহাজীও নেপালে সিয়ামের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে তিনি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। 

নেপালের ‘গন্ডকীর দুলিয়া’ নামক এলাকায় সিয়াম তার এক পূর্ব পরিচিত সুপারি ব্যবসায়ীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সিয়াম ওই ব্যবসায়ীকে বলেছিলেন যে, ফয়সাল তার বন্ধু। তার কাছে বেড়াতে এসেছে। এতে ওই ব্যবসায়ী কিছুই বুঝতে পারেননি। নেপালে যাওয়ার পর সিয়ামের অর্থ ফুরিয়ে এসেছিল। সিয়াম তখন ফয়সালকে কলকাতা ফেরত যাওয়ার নিদের্শ দেন। 

পরে ফয়সাল কলকাতায় এসে তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। বাংলাদেশে এসে প্রথমে ঝালকাঠি এবং পরে সীতাকুণ্ডের একটি মন্দিরে আত্মগোপন করেন। পরে ঢাকার ডিবি পুলিশ প্রযুক্তির সহযোগিতায় তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে নেপাল পুলিশ সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সিয়াম এখন কলকাতার জেল-হাজতে রয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। অন্যদিকে কলকাতায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। 

এ দুটি মামলায় ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- শিলাস্তি রহমান, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজি, ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল সাহাজী। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যার ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। যেহেতু এই মামলার পিও (ঘটনাস্থল) কলকাতা, সেহেতু এই মামলার মূল তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক কলকাতায় খুন হয়েছেন এ জন্য ডিবি পুলিশ শুধু ছায়া তদন্ত করছে। তাই খুনের মোটিভ কী আসে এর জন্য কলকাতা পুলিশের দিকে লক্ষ রয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের। এ ছাড়াও আনারের পরিবার কলকাতায় যাওয়ার পর ডিএনএ পরীক্ষার কী ফল আসে তার দিকেও নজর রয়েছে ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। 

সূত্র জানায়, কলকাতায় আনার হত্যার পর ঢাকার ডিবির পক্ষ থেকে ছায়া তদন্ত শুরু হয়। শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা হওয়ার পর এই তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের খুব শিগগির আবার কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে। ডিবির দল কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশে আনার হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কলকাতায় পুলিশ অবহিত করবে। 

মোস্তাফিজুরের দায় স্বীকার

হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে করা মামলার অন্যতম আসামি মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল এই জবানবন্দি দেন তিনি। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গ্রেপ্তার মোস্তাফিজুর রহমান স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় পুলিশ এদিন আদালতে তাকে হাজির করে। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান তা রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। এ নিয়ে এই মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন আদালতে জবানবন্দি দিলেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গত ২৬ জুন আনার হত্যায় জড়িত ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন ২৭ জুন আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন: সব রয়ে গেছে পরিকল্পনা পর্যায়ে

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩২ এএম
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন: সব রয়ে গেছে পরিকল্পনা পর্যায়ে
মাঝারি বৃষ্টিতে মহাসড়কে জলাবদ্ধতা। ছবি: খবরের কাগজ

দায়িত্ব নেওয়ার পর চার বছরে শুধু পরিকল্পনা পর্যায়েই রয়ে গেছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) যাবতীয় কার্যক্রম। যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলোও কবে বাস্তবায়ন হবে তা বলতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা। 

২০২০ সালে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশন বুঝে নেওয়ার পর চার বছর পার হলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতার উন্নতি হয়নি বলেই মনে করেন নগরবাসী। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই এখনো রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ফলে নগরবাসী নতুন করে জলাবদ্ধতার শিকার হতে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন দরকার। পূর্ণাঙ্গ ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। সেটা না করে যেটুকু প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ছিল, তাও ধ্বংস করা হয়েছে।’

২০২০ সালে ঢাকা ওয়াসা খাল হস্তান্তরের সময় জানা যায়, রাজধানীতে মাত্র ২৬টি খাল রয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ডিএনসিসির ৩০টি এবং ডিএসসিসির ৩৯টি মিলিয়ে মোট ৬৯টি খালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আর দুই সিটি করপোরেশনের নর্দমা রয়েছে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালগুলোর দায়িত্ব নেওয়ার পর রুটিনমাফিক উচ্ছেদে কিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তা ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খাল-নর্দমা পরিষ্কার করা হয়। 

তবে দুই মেয়র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বাইরে নগরবাসীর দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, খালে বর্জ্য ফেলে নগরবাসী। নির্বিচারে খাল দখল করে। এগুলোর অবসান হওয়ার দরকার। 

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম খাল উদ্ধারে ‘কলাগাছ থেরাপি’র কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাড়ির বর্জ্য যেসব পাইপের মধ্য দিয়ে খালে ফেলা হয়, সেই প্রতিটি পাইপে কলাগাছ ঢুকাতে পারলে মনে শান্তি পেতাম। আমার ব্যর্থতা এখানে। কারণ কীভাবে বারিধারা, গুলশানের লোকেরা খালের মধ্যে কালো বর্জ্য দিয়ে দিচ্ছে। এটি অত্যন্ত কষ্ট লাগে আমার।’

ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘খাল দখলের সময় খেয়াল থাকে। জলাশয় আইন অনুযায়ী দখল হওয়া খালের জায়গা উদ্ধার করতে গেলে মানুষের কান্নার রোল পড়ে যাবে। লাঠিপেটা বা তদারকি করে দুর্নীতিমুক্ত হওয়া যায় না। একজন নাগরিক হিসেবে যদি দুর্নীতিমুক্ত হতে না পারি, তাহলে কিছুই হবে না।’

ডিএনসিসির যত পরিকল্পনা

খালের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর প্রথমেই সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। এই কাজ দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে সীমানা নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়। সিএস, আরএস আবার কোথাও মহানগর জরিপ ধরে খালের সীমানা নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ অবস্থায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে ডিএনসিসি। টাস্কফোর্স কয়েকটি সভাও করেছে। এখনো সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়নি। 

ঢাকা ওয়াসা থেকে খাল বুঝে নেওয়া পর ওয়াসার আগের কিছু জনবল নিয়েছিল ডিএনসিসি। কিন্তু অন্তর্কোন্দল দেখা দেওয়ায় এসব জনবল ওয়াসায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এরপর ড্রেনেজ সার্কেল গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দেয় ডিএনসিসি। সেই প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয় কোনো ফিডব্যাক এখনো দেয়নি। এ ছাড়া ডিএনসিসি খালগুলোর আধুনিকায়নেও একটি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। সেই প্রস্তাবও মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। 

ডিএসসিসির যত পরিকল্পনা

ডিএসসিসির ৩৯টি খালের মধ্যে ডিএনডি এলাকায় আছে ১৫টি। এগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এই খালগুলোও ডিএসসিসিকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

ঢাকার বড় একটি অংশের বৃষ্টির পানি মান্ডা, জিরানী, শ্যামপুর ও কালুনগর খাল হয়ে নিষ্কাশন হয়। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালগুলো আসলে বাস্তবে নেই। আছে কাগজে-কলমে। এসব খাল উদ্ধারে ৮৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। প্রকল্পের কাজ কোথাও কোথাও শুরুও হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ১৮টি খাল বুঝে নেওয়ার পর মাত্র চারটি খাল নিয়ে পরিকল্পনা করে এগিয়েছে সংস্থাটি। বাকি খালগুলোর সংস্কার ও উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে রুটিন পরিচর্যা না হওয়ায় সেই খালগুলোও আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে উদ্ধার ও খনন ডিএসসিসির ভালো একটি কাজ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যান্য খালের সীমানা নির্ধারণ, দখলমুক্তকরণ এবং অন্যান্য কাজ কবে শেষ হবে তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছেন না। 

ডিএসসিসি নর্দমা ও খালের সঙ্গে নদীর সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি প্রয়োজনের আলোকে মাস্টার ড্রেন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেটা পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রাথমিকভাবে নিউ মার্কেট থেকে পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তর প্রাঙ্গণের ভেতর দিয়ে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল, বংশাল এলাকা দিয়ে বুড়িগঙ্গা, জুরাইন ও শ্যামপুর এলাকায় মাস্টার ড্রেন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

ডিএনসিসির মতো ডিএসসিসিও দায়িত্ব নেওয়ার চার বছরেও ড্রেনেজ সার্কেল তৈরি করতে পারেনি। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য গোপন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য গোপন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন

মতিউর, ফয়সালকাণ্ডের পর সরকারের ওপরের মহল থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সততা নিশ্চিতে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেলে করণীয় নির্ধারণের জন্য এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স কমিটি।

আজ বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হচ্ছে। কোনো রিটার্নে গরমিল পাওয়া গেলে তা আরও বিস্তারিত তদন্তের জন্য এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলে (সিআইসি) পাঠানো হবে। এখানে প্রাথমিক তদন্ত শেষে টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা রাষ্ট্রের সেবক হিসেবে কাজ করে থাকেন। তারা সেবা করার অঙ্গীকার করেই কাজ শুরু করেন। সরকারের প্রতিনিধি তারাই। এখানে কেউ যদি দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তবে তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’ 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মো. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষের করের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা হয়। এ ছাড়া তারা অন্যান্য সুবিধা পান। তাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ যদি দুর্নীতি করে তবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। 

উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন: 

নজরদারিতে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের দক্ষ ও সৎ হিসেবে পরিচিত এমন কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকারের ওপরের মহলের নির্দেশে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক বিভাগ, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআরসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আছেন। 

এই কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে টাস্কফোর্স যেকোনো দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। এনবিআরের তিন গোয়ন্দা শাখা সিআইসি, ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও এই কমিটিতে আছেন। 

হিসাব জব্দ ও সম্পদ ক্রোক: 

স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে সরকারি কর্মকর্তারা রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজে বা তার পক্ষে তার আইনজীবী হিসাব কষে আয়, ব্যয় ও সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করে রিটার্নে উল্লেখ করেন। হিসাব মতো কর পরিশোধ করেন। রিটার্ন জমার পর আয়কর আইন অনুযায়ী দেওয়ার তথ্য খতিয়ে দেখার আইনি সুযোগ আছে। গরমিল পাওয়া গেলে টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশে এনবিআর, বিএফআইইউ হিসাব জব্দ করবে। 

পাচার করা অর্থ ফেরত আনতেও পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা নেওয়া হবে। দ্বৈত কর চুক্তির আওতায় যে দেশে অর্থপাচার হবে সে দেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সহযোগিতাও নেওয়া হবে। অন্যদিকে আদালতের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

পরবর্তী সময়ে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে আনা হবে। যে ব্যক্তি এ ধরনের অপকর্ম করবে তাকে জেল জরিমানার মতো শাস্তির আওতায় আনতেও টাস্কফোর্সের সুপারিশে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টাস্কফোর্সের সুপারিশে মামলা করা হবে। আদালতে মামলা চলাকালে দেশ-বিদেশ থেকে প্রয়োজনী তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে টাস্কফোর্সকে সরাসরি কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

কর দেন গড়ে ৬ লাখ: 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ। সরকারি চাকরিতে ২০টি ধাপ (গ্রেড) রয়েছে। প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান সচিবেরা। প্রথম থেকে নবম গ্রেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসাবে, ১০ম গ্রেড দ্বিতীয় শ্রেণি, ১১ থেকে ১৬তম গ্রেড তৃতীয় শ্রেণি এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেড ৪র্থ শ্রেণি হিসেবে ধরা হয়। 

সাধারণত মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে প্রতি করবর্ষে বাধ্যতামূলক কর এবং আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। সাধরণত গ্রেড ১০ পর্যন্ত কর্মকর্তারা করের আওতায় পড়েন। গড়ে প্রতি করবর্ষে ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তারা রিটার্ন দিয়ে থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তথ্য প্রধান পর্যায়ে খতিয়ে দেখা হবে। 

বিদেশে সম্পদের খোঁজ পেলে জরিমানা: 

সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নে অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে বিদেশে অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে তোলা এবং অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়া গেলে টাস্কফোর্সের সুপারিশে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে। এক্ষেত্রে বিদেশে সম্পত্তির ন্যায্য বাজার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলমান আয়কর আইনেও এমন বিধান থাকছে।

বর্তমান কর্মকর্তাদের পশাপাশি সাবেকদেরও তথ্য দেখা যাবে: 

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বর্তমান কর্মরতদের পশাপাশি সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নের তথ্যও খতিয়ে দেখা হবে। 

করবর্ষ শেষ: 

৩০ জুন ২০২৩-২৪ করবর্ষ শেষ হয়েছে। নতুন অর্থবছর ১ জুলাই শুরু হয়েছে। শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের না, এনবিআর বেসরকারি খাতের করদাতাদেরও রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। 

রাজস্ব আইনে ইচ্ছাকৃতভাবে আয়কর ফাঁকি দিলে বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বড় অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৫ বছর করাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। এ ছাড়া পাচার করা অর্থের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা, সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংকের সব হিসাব জব্দ করা যাবে। 

বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রার অসীমের সীমাহীন সম্পদ

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৭ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৯ এএম
সাব-রেজিস্ট্রার অসীমের সীমাহীন সম্পদ
ছবি: খবরের কাগজ

বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল। সর্বশেষ সরকারি বেতন স্কেলে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা তিনি। ৩৪ বছর ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সাব-রেজিস্ট্রার পদে বরিশাল সদর উপজেলায় কর্মরত। নবম গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতনের হিসাব ধরলে ৩৪ বছর চাকরি জীবনে তার আয় আড়াই কোটি টাকার বেশি নয়। কিন্তু অসীম কল্লোলের বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ। এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদের রয়েছে বাড়ি গাড়ি। সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ার উৎস খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

এদিকে বরিশাল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকে অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আগেও কয়েকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। 

এর মধ্যে রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলায় ১ একর ২৫ শতাংশ জমির ওপর সোনার বাংলা মৎস্য খামার ও অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সদর উপজেলার কাগাসুরা মুকুন্দপট্টি রাস্তার দুই পাশে ৮০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ নামে মাছের ঘের। কাগাসুরা বাজারসংলগ্ন এক একর জমির ওপরে মালটা বাগান, নগরীর ৪নং ওয়ার্ড ১২ শতাংশের একটি প্লট। লাকুটিয়া এলাকায় ২০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, নগরীর পোর্ট রোডে ৫ তলার ভবন। নগরীর হাসপাতাল রোডে অগ্রণী হাউজিং লিমিটেডের ‘ড্রিম প্যালেসে’ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং-৩/এ)। 

এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের চলাচলের জন্য রয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৬৪৮১ নম্বরের টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি। স্ত্রীর নামে সদর উপজেলার তালতলী বাজারে ইট, বালু ও রড-সিমেন্টের ব্যবসা। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন অসীম কল্লোল এলাকায় চাকরি করেছেন সেসব এলাকায় কিনেছেন জমি ও ফ্ল্যাট। তার এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার ওপরে। 

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন স্কেল অনুযায়ী একজন সাব-রেজিস্ট্রার ৯ম গ্রেডের বেতন প্রাপ্ত হন। ২২ হাজার থেকে শুরু করে চাকরির শেষ সময়ে এসে মাসে সর্বোচ্চ বেতন দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৬০ টাকায়। সর্বশেষ বেতন অনুযায়ী ৩৪ বছর চাকরি জীবন হিসাব করলে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।’

সেই আয় দিয়ে সংসার পরিচালনা, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে লাখ দশেক টাকার বেশি সম্পদ গড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল এবং তার পরিবারের যে সম্পদের কথা শোনা যায় তার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি, যা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের এত সম্পত্তির উৎস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার।

কাগাসুরা এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাগাসুরার মুকুন্দপট্টি সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ, বাজারসংলগ্ন মালটা বাগান, লাকুটিয়া এলাকায় সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের বলে আমরা জানি। ওই বাগান দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ 

সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ ও মালটা বাগান দেখভালের দায়িত্বে থাকা আসমত আলী খান বলেন, ‘আমি যতদূর জানি মালটা বাগান ও মাছের ঘের ও তার জমির মালিক সাব-রেজিস্ট্রার। তিনি মাঝেমধ্যে এখানে এসে ঘুরে যান। এ ছাড়া এই এলাকায় তার আরও কয়েকটি জমি রয়েছে বলে শুনেছি।’

তালতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ‘এই বাজারে ইট, সিমেন্ট ও বালু বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মূল মালিক সাব-রেজিস্ট্রার কল্লোল। তবে কাগজে-কলমে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তার স্ত্রী।’

এ বিষয়ে অসীম কল্লোল বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার কাগাসুরায় আমার কোনো জমি নেই। সেখানে সম্বন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) গোলাম রাব্বানীর নামে ৬০ শতক জমি আছে। তিনি ময়মনসিংহ জেলায় থাকেন। তার অসুস্থতার কারণে ওই সম্পত্তি আমি দেখাশোনা করি। নগরীর উত্তর মল্লিক রোড এলাকায় ড্রিম প্যালেস নামে ৯১০ ফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পোর্ট রোড এলাকায় সরকারি খাস জমিতে ৫তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগ সত্য নয়। ওই এলাকায় আমার বাবার নামে একটি বাড়ি আছে। যেখানে আমরা ৪ ভাই একসঙ্গে থাকি।’ 

তবে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট থাকার সত্যতা স্বীকার করে অসীম কল্লোল বলেন, ‘ডিবিএইচ থেকে ৮৫ লাখ টাকার লোন নিয়ে দুটি ফ্ল্যাট কিনেছি। এ ছাড়া সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদে ১ একর ২৫ শতাংশ জমি স্ত্রীর নামে রয়েছে, যা হেবা দলিল মূলে কেনা হয়েছে। এর বাইরে আমার এবং আমার পরিবারের কোনো সম্পদ নেই। ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে হিসাব দেওয়া আছে।’

তিনি আরও বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর এখানকার কিছু অসাধু দলিল লেখক এবং অফিসের কিছু কর্মচারী আমার কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ নিতে চেয়েছে। আমি তাদের কথামতো কাজ না করায় ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য দিচ্ছে।’ 

প্রত্যয় স্কিম ‘ষড়যন্ত্রমূলক’

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
প্রত্যয় স্কিম ‘ষড়যন্ত্রমূলক’

চার কারণে সর্বজনীন পেনশনে প্রত্যয় স্কিমের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষক নেতারা। আলোচনা ছাড়া বড় পরিবর্তন, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই নিয়মে পেনশন প্রাপ্য হলেও সেখান থেকে বের করে প্রত্যয় স্কিমে যুক্তকরণ, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা স্কিম এবং বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হলে সরকারবিরোধীদের জন্য সুযোগ তৈরির শঙ্কা থাকায় এমনটা মনে করছেন তারা। 

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। বাকি দুই দাবি হলো- শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি।

সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলমত নির্বিশেষে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষায় সেশনজটসহ নানা সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অল্প সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা আশাবাদী, শিক্ষকরা আগে কখনো এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল না। 

তিনি বলেন, আমরা স্টেকহোল্ডার। কমিটিতে আমাদের কাউকে রাখা হয়নি। আলোচনা ছাড়াই ঠিক করে দেবে, এটা কেন মানতে হবে? ২০১৫ সালেও তারা একই কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে কমিটমেন্ট করেছিল শিক্ষকদেরকে সুপারগ্রেড দেবে। কিন্তু সেটা কোথায়? এখন আমরা প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত কোনো কিছু বিশ্বাস করব না। এ জন্য তাদেরকে বিশ্বাস করব না। আমাদেরকে আলাদা করে দিয়ে অপমান করা হয়েছে। এটা একটা ষড়যন্ত্র। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে অফিশিয়ালি কোনো পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে আন-অফিশিয়ালি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শিক্ষকরা যে প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক বলছেন, সেটি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। 

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ষড়যন্ত্রমূলক। ২০১৫ সালের পে-স্কেল করার সময় শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হয়। এবারও সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘সেবক’ নামের আরেকটি স্কিম আনা হবে। সেই রূপরেখা এখনো ঠিক হয়নি। যেখানে একই সঙ্গে আগে সবাই পেনশন পেত, নতুন নিয়মে সবাইকে একসঙ্গে না রেখে আলাদা করে সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেনশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। সেটা না করে চাপিয়ে দেওয়াকে আমরা উচ্চশিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছি। প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবে না। শিক্ষার মান কমে যাবে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সদস্য ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, সবাই একই পেনশনের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তাহলে কেন আমাদের আলাদা করা হলো? আবার আলাদা ‘সেবক স্কিম’ হবে? এটি কীভাবে সর্বজনীন হবে? পেনশন যাদের ছিল না, তাদের দরকার ছিল। কিন্তু যাদের আছে, তাদের জন্য কেন নতুন নিয়ম করতে হবে? 

সরকারের দায়িত্বশীল পলিটিক্যাল অংশ থেকে কথা বলা উচিত উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে, এটা বিশ্বস্বীকৃত। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য বহন করবে। জীবনমানের উন্নতি হবে যেহেতু, তাহলে সুযোগ-সুবিধা কেন কমে যাবে? এভাবে সুযোগ-সুবিধা কমানো কিসের বার্তা দেয়? 

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করার জন্য মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির যুক্তিসঙ্গত সমাধান করা উচিত।’

স্থবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে সেবা বিঘ্ন
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে শ্রেণিকক্ষে ঝুলছে তালা, অন্যদিকে একই দাবিতে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতায় প্রশাসনিক ভবন, মেডিকেল সেন্টারে সেবা না পেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেককেই। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী পহেলা জুলাই থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। এদিকে এই কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা নয় বরং শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্যই এই কর্মবিরতি বলে দাবি করেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। একই সময়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা চললেও সেখানে অংশ নেননি শিক্ষক সমিতির নেতারা।
একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও সকাল থেকে অফিসে যাননি। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। কথা হয় প্রশাসনিক ভবনে বৃত্তির চেক নিতে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া ২০১৭-১৮ সেশনের এক শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন না কি কর্মবিরতি চলছে, তাই তারা কোনো সার্ভিস দেবেন না। কর্মবিরতি শেষ হলে তারা সেবা প্রদান করবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কর্মবিরতির কারণে সেবা পাননি শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন খোকা। তিনি বলেন, ‘রবিবারে গিয়ে ডাক্তার পাইনি। আজকে সকালে আবার গিয়েছি, তবে ডাক্তার বললেন কর্মবিরতিতে সেবা দেবেন না। এটা খারাপ লাগার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মেডিকেল সেবা বন্ধ ছিল না। কোনো বর্বর জাতিও এভাবে হাসপাতাল সেবা বন্ধ করবে না।’ মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রচণ্ড জ্বর, তারপরও ওষুধ দিল না। ফিরে আসতে হয়েছে।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে ঢাবির শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র দুইজন রয়েছেন। সাধারণত অন্য সময়ে তিন-চারজন থাকেন। সহকারী মেডিকেল অফিসার হালিমা সাদিয়া বলেন, ‘কর্মবিরতির কারণে সেবা দিচ্ছেন না তারা। যখন কর্মবিরতি শেষ হবে তখন সেবা পাওয়া যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. মোতালেব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হওয়ার কারণে আমরা নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করিনি। তবে জরুরি সব সেবা চালু রয়েছে। শুধুমাত্র দাপ্তরিক ক্ষেত্রে কর্মবিরতি দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতি শিক্ষার্থী জিম্মি করে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নয়, বরং তাদের মুক্তির জন্যই আন্দোলন। জিম্মি আমাদেরই করা হয়েছে। যখন আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী পহেলা জুলাইয়ের পর আলাদা পেনশন সুবিধা পাবে, এটি তো বৈষম্য। যেখানে পেনশন সুরক্ষা হওয়ার কথা, সেখানে প্রত্যয় স্কিম চালু হলে দিন শেষে আমরা যারা প্রবীণ শিক্ষক আছি অবসর শেষে তাদের বেঁচে থাকার জন্য একটি ভবিষ্য তহবিল থাকছে, সেখানে আমার শিক্ষার্থীদের জন্য সেটি হবে শূন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আন্দোলন আমার জন্য না, এই আন্দোলন আমার সন্তানের জন্য, যারা আমার ছাত্র-ছাত্রী। যারা ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হয়ে আসবে এবং শিক্ষক হবে, তাদের জন্যই আন্দোলন।’ 

>আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত: এ কে আজাদ চৌধুরী
>ন্যায়সংগত ও যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত প্রয়োজন: আবুল কাসেম ফজলুল হক
>আলোচনায় বসলেই সব ঠিক হয়ে যেত: নজরুল ইসলাম খান
>আগে পরে সবাই এর আওতায় আসবেন: মাহবুব আহমেদ