![জিআই স্বত্ব পেল বাংলাদেশের ৭ পণ্য](uploads/2024/07/01/jii-1719813767.jpg)
সাত পণ্যের জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) থেকে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। ডিপিডিটির তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সাত পণ্যের মধ্যে আছে নরসিংদীর লটকন, মধুপুরের আনারস, ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ, শেরপুরের ছানার পায়েস, নওগাঁর নাগ ফজলি আম, দিনাজপুরের লিচু ও সুন্দরবনের মধু।
আরও ২৫টি পণ্যের জিআই সনদ দেওয়ার জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জিআই সনদ দেওয়া যায় কি না এমন পণ্যের তালিকায় আছে যশোরের খেজুর গুড়, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা, জামালপুরের নকশি কাঁথা, মৌলভীবাজারের আগর-আতর, রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম, মুক্তাগাছার মণ্ডা, রাজশাহীর মিষ্টি পান, গোপালগঞ্জের রসগোল্লাসহ অন্যান্য।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো পণ্যের জিআই সনদ যেন অন্য কোনো দেশ নিয়ে না নেয়, এ জন্য আমরা তৎপর আছি। সাত পণ্যের জিআই সনদ দেওয়ার কাজ শেষ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সাত পণ্যের নাম সুবিধামতো সময়ে ঘোষণা করা হবে। আরও ২৫ পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি।’
মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক ও কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের আমরা বলেছি যে আপনার এলাকায় কী কী জিআই পণ্য আছে, সেটা নিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করুন। আমরা আপনাদের সহায়তা করব। এসব উদ্যোগের কারণেই অগ্রগতি হয়েছে। অনেক আবেদন পাওয়া গিয়েছে।’
ডিপিডিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোনো দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া ও সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, সেই সঙ্গে ভৌগোলিকভাবে ও ঐতিহ্যগতভাবে যে পণ্যগুলোকে ‘নিজস্ব’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যেসব পণ্য এই স্বীকৃতি পায়, সেগুলোর মাঝে ভৌগোলিক গুণ, মান ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। একটি পণ্য যখন জিআই স্বীকৃতি পায়, তখন সেটিকে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, জিআই সনদ পাওয়া পণ্যগুলোর দেশে-বিদেশে আলাদা কদর থাকে। শুধু তা-ই নয়, সনদপ্রাপ্তির পর ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি একাধারে উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। অন্য কোনো দেশ বা অন্য কেউ তখন আর এই পণ্যের মালিকানা বা স্বত্ব দাবি করতে পারে না। নিয়ম অনুযায়ী কৃষিপণ্য, প্রকৃতি থেকে আহরিত সম্পদ ও কুটির শিল্পকে এই সনদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসব জিআই পণ্য আছে, সেখানে এর সবগুলো ধরনই রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। এরপর ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি। আইন অনুযায়ী, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধনের জন্য কোনো ব্যক্তিসংঘ, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে ডিপিডিটিতে পর্যাপ্ত প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তসহ আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর সেগুলোকে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে আবেদনকারীকে পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বিবেচনা করার পর সব ঠিক থাকলে সেই জার্নালে প্রকাশ করা হয়। জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ যদি সেই পণ্যের বিরোধিতা করতে চান, তাহলে তার জন্য সর্বোচ্চ দুই মাস সময় ধরা আছে। বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো পণ্যের জন্য কেউ আবেদন করার মানে এই নয় যে সেই সব পণ্য জিআই সনদ পাওয়ার মতো যোগ্য বা নিশ্চিতভাবে এই সনদ পেয়ে যাবে। ডিপিডিটিতে যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। যাচাই-বাছাই করার পর এগুলোর কোনো কোনোটি জার্নালে যাওয়ার আগেই বাদ পড়তে পারে। আবার জার্নালে প্রকাশ হওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে যদি কেউ এগুলোর বিরোধিতা করেন এবং সেই অভিযোগ খণ্ডানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ না থাকে, তাহলেও তা বাদ যেতে পারে।
বাংলাদেশি যেসব পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে: জিআই আইন বিধিমালা পূরণ করে এখন পর্যন্ত মোট ২১টি পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে। সেগুলো হলো জামদানি শাড়ি, বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাত আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বাংলাদেশের কালোজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকার মসলিন, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের শীতলপাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।