ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

জিআই স্বত্ব পেল বাংলাদেশের ৭ পণ্য

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
জিআই স্বত্ব পেল বাংলাদেশের ৭ পণ্য
জিআই পণ্য

সাত পণ্যের জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) থেকে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। ডিপিডিটির তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

সাত পণ্যের মধ্যে আছে নরসিংদীর লটকন, মধুপুরের আনারস, ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ, শেরপুরের ছানার পায়েস, নওগাঁর নাগ ফজলি আম, দিনাজপুরের লিচু ও সুন্দরবনের মধু।

আরও ২৫টি পণ্যের জিআই সনদ দেওয়ার জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জিআই সনদ দেওয়া যায় কি না এমন পণ্যের তালিকায় আছে যশোরের খেজুর গুড়, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা, জামালপুরের নকশি কাঁথা, মৌলভীবাজারের আগর-আতর, রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম, মুক্তাগাছার মণ্ডা, রাজশাহীর মিষ্টি পান, গোপালগঞ্জের রসগোল্লাসহ অন্যান্য। 

ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো পণ্যের জিআই সনদ যেন অন্য কোনো দেশ নিয়ে না নেয়, এ জন্য আমরা তৎপর আছি। সাত পণ্যের জিআই সনদ দেওয়ার কাজ শেষ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সাত পণ্যের নাম সুবিধামতো সময়ে ঘোষণা করা হবে। আরও ২৫ পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি।’ 

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক ও কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের আমরা বলেছি যে আপনার এলাকায় কী কী জিআই পণ্য আছে, সেটা নিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করুন। আমরা আপনাদের সহায়তা করব। এসব উদ্যোগের কারণেই অগ্রগতি হয়েছে। অনেক আবেদন পাওয়া গিয়েছে।’ 

ডিপিডিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোনো দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া ও সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, সেই সঙ্গে ভৌগোলিকভাবে ও ঐতিহ্যগতভাবে যে পণ্যগুলোকে ‘নিজস্ব’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যেসব পণ্য এই স্বীকৃতি পায়, সেগুলোর মাঝে ভৌগোলিক গুণ, মান ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। একটি পণ্য যখন জিআই স্বীকৃতি পায়, তখন সেটিকে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। 

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, জিআই সনদ পাওয়া পণ্যগুলোর দেশে-বিদেশে আলাদা কদর থাকে। শুধু তা-ই নয়, সনদপ্রাপ্তির পর ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি একাধারে উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। অন্য কোনো দেশ বা অন্য কেউ তখন আর এই পণ্যের মালিকানা বা স্বত্ব দাবি করতে পারে না। নিয়ম অনুযায়ী কৃষিপণ্য, প্রকৃতি থেকে আহরিত সম্পদ ও কুটির শিল্পকে এই সনদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসব জিআই পণ্য আছে, সেখানে এর সবগুলো ধরনই রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। এরপর ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি। আইন অনুযায়ী, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধনের জন্য কোনো ব্যক্তিসংঘ, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে ডিপিডিটিতে পর্যাপ্ত প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তসহ আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর সেগুলোকে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে আবেদনকারীকে পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বিবেচনা করার পর সব ঠিক থাকলে সেই জার্নালে প্রকাশ করা হয়। জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ যদি সেই পণ্যের বিরোধিতা করতে চান, তাহলে তার জন্য সর্বোচ্চ দুই মাস সময় ধরা আছে। বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো পণ্যের জন্য কেউ আবেদন করার মানে এই নয় যে সেই সব পণ্য জিআই সনদ পাওয়ার মতো যোগ্য বা নিশ্চিতভাবে এই সনদ পেয়ে যাবে। ডিপিডিটিতে যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। যাচাই-বাছাই করার পর এগুলোর কোনো কোনোটি জার্নালে যাওয়ার আগেই বাদ পড়তে পারে। আবার জার্নালে প্রকাশ হওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে যদি কেউ এগুলোর বিরোধিতা করেন এবং সেই অভিযোগ খণ্ডানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ না থাকে, তাহলেও তা বাদ যেতে পারে।

বাংলাদেশি যেসব পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে: জিআই আইন বিধিমালা পূরণ করে এখন পর্যন্ত মোট ২১টি পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে। সেগুলো হলো জামদানি শাড়ি, বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাত আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বাংলাদেশের কালোজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকার মসলিন, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের শীতলপাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।

সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য গোপন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য গোপন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন

মতিউর, ফয়সালকাণ্ডের পর সরকারের ওপরের মহল থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সততা নিশ্চিতে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেলে করণীয় নির্ধারণের জন্য এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স কমিটি।

আজ বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হচ্ছে। কোনো রিটার্নে গরমিল পাওয়া গেলে তা আরও বিস্তারিত তদন্তের জন্য এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলে (সিআইসি) পাঠানো হবে। এখানে প্রাথমিক তদন্ত শেষে টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা রাষ্ট্রের সেবক হিসেবে কাজ করে থাকেন। তারা সেবা করার অঙ্গীকার করেই কাজ শুরু করেন। সরকারের প্রতিনিধি তারাই। এখানে কেউ যদি দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তবে তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’ 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মো. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষের করের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা হয়। এ ছাড়া তারা অন্যান্য সুবিধা পান। তাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ যদি দুর্নীতি করে তবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। 

উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন: 

নজরদারিতে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের দক্ষ ও সৎ হিসেবে পরিচিত এমন কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকারের ওপরের মহলের নির্দেশে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক বিভাগ, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআরসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আছেন। 

এই কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে টাস্কফোর্স যেকোনো দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। এনবিআরের তিন গোয়ন্দা শাখা সিআইসি, ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও এই কমিটিতে আছেন। 

হিসাব জব্দ ও সম্পদ ক্রোক: 

স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে সরকারি কর্মকর্তারা রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজে বা তার পক্ষে তার আইনজীবী হিসাব কষে আয়, ব্যয় ও সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করে রিটার্নে উল্লেখ করেন। হিসাব মতো কর পরিশোধ করেন। রিটার্ন জমার পর আয়কর আইন অনুযায়ী দেওয়ার তথ্য খতিয়ে দেখার আইনি সুযোগ আছে। গরমিল পাওয়া গেলে টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশে এনবিআর, বিএফআইইউ হিসাব জব্দ করবে। 

পাচার করা অর্থ ফেরত আনতেও পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা নেওয়া হবে। দ্বৈত কর চুক্তির আওতায় যে দেশে অর্থপাচার হবে সে দেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সহযোগিতাও নেওয়া হবে। অন্যদিকে আদালতের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

পরবর্তী সময়ে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে আনা হবে। যে ব্যক্তি এ ধরনের অপকর্ম করবে তাকে জেল জরিমানার মতো শাস্তির আওতায় আনতেও টাস্কফোর্সের সুপারিশে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টাস্কফোর্সের সুপারিশে মামলা করা হবে। আদালতে মামলা চলাকালে দেশ-বিদেশ থেকে প্রয়োজনী তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে টাস্কফোর্সকে সরাসরি কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

কর দেন গড়ে ৬ লাখ: 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ। সরকারি চাকরিতে ২০টি ধাপ (গ্রেড) রয়েছে। প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান সচিবেরা। প্রথম থেকে নবম গ্রেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসাবে, ১০ম গ্রেড দ্বিতীয় শ্রেণি, ১১ থেকে ১৬তম গ্রেড তৃতীয় শ্রেণি এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেড ৪র্থ শ্রেণি হিসেবে ধরা হয়। 

সাধারণত মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে প্রতি করবর্ষে বাধ্যতামূলক কর এবং আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। সাধরণত গ্রেড ১০ পর্যন্ত কর্মকর্তারা করের আওতায় পড়েন। গড়ে প্রতি করবর্ষে ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তারা রিটার্ন দিয়ে থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তথ্য প্রধান পর্যায়ে খতিয়ে দেখা হবে। 

বিদেশে সম্পদের খোঁজ পেলে জরিমানা: 

সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নে অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে বিদেশে অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে তোলা এবং অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়া গেলে টাস্কফোর্সের সুপারিশে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে। এক্ষেত্রে বিদেশে সম্পত্তির ন্যায্য বাজার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলমান আয়কর আইনেও এমন বিধান থাকছে।

বর্তমান কর্মকর্তাদের পশাপাশি সাবেকদেরও তথ্য দেখা যাবে: 

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বর্তমান কর্মরতদের পশাপাশি সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নের তথ্যও খতিয়ে দেখা হবে। 

করবর্ষ শেষ: 

৩০ জুন ২০২৩-২৪ করবর্ষ শেষ হয়েছে। নতুন অর্থবছর ১ জুলাই শুরু হয়েছে। শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের না, এনবিআর বেসরকারি খাতের করদাতাদেরও রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। 

রাজস্ব আইনে ইচ্ছাকৃতভাবে আয়কর ফাঁকি দিলে বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বড় অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৫ বছর করাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। এ ছাড়া পাচার করা অর্থের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা, সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংকের সব হিসাব জব্দ করা যাবে। 

বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রার অসীমের সীমাহীন সম্পদ

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৭ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৯ এএম
সাব-রেজিস্ট্রার অসীমের সীমাহীন সম্পদ
ছবি: খবরের কাগজ

বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল। সর্বশেষ সরকারি বেতন স্কেলে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা তিনি। ৩৪ বছর ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সাব-রেজিস্ট্রার পদে বরিশাল সদর উপজেলায় কর্মরত। নবম গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতনের হিসাব ধরলে ৩৪ বছর চাকরি জীবনে তার আয় আড়াই কোটি টাকার বেশি নয়। কিন্তু অসীম কল্লোলের বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ। এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদের রয়েছে বাড়ি গাড়ি। সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ার উৎস খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

এদিকে বরিশাল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকে অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আগেও কয়েকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। 

এর মধ্যে রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলায় ১ একর ২৫ শতাংশ জমির ওপর সোনার বাংলা মৎস্য খামার ও অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সদর উপজেলার কাগাসুরা মুকুন্দপট্টি রাস্তার দুই পাশে ৮০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ নামে মাছের ঘের। কাগাসুরা বাজারসংলগ্ন এক একর জমির ওপরে মালটা বাগান, নগরীর ৪নং ওয়ার্ড ১২ শতাংশের একটি প্লট। লাকুটিয়া এলাকায় ২০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, নগরীর পোর্ট রোডে ৫ তলার ভবন। নগরীর হাসপাতাল রোডে অগ্রণী হাউজিং লিমিটেডের ‘ড্রিম প্যালেসে’ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং-৩/এ)। 

এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের চলাচলের জন্য রয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৬৪৮১ নম্বরের টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি। স্ত্রীর নামে সদর উপজেলার তালতলী বাজারে ইট, বালু ও রড-সিমেন্টের ব্যবসা। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন অসীম কল্লোল এলাকায় চাকরি করেছেন সেসব এলাকায় কিনেছেন জমি ও ফ্ল্যাট। তার এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার ওপরে। 

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন স্কেল অনুযায়ী একজন সাব-রেজিস্ট্রার ৯ম গ্রেডের বেতন প্রাপ্ত হন। ২২ হাজার থেকে শুরু করে চাকরির শেষ সময়ে এসে মাসে সর্বোচ্চ বেতন দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৬০ টাকায়। সর্বশেষ বেতন অনুযায়ী ৩৪ বছর চাকরি জীবন হিসাব করলে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।’

সেই আয় দিয়ে সংসার পরিচালনা, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে লাখ দশেক টাকার বেশি সম্পদ গড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল এবং তার পরিবারের যে সম্পদের কথা শোনা যায় তার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি, যা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের এত সম্পত্তির উৎস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার।

কাগাসুরা এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাগাসুরার মুকুন্দপট্টি সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ, বাজারসংলগ্ন মালটা বাগান, লাকুটিয়া এলাকায় সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের বলে আমরা জানি। ওই বাগান দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ 

সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ ও মালটা বাগান দেখভালের দায়িত্বে থাকা আসমত আলী খান বলেন, ‘আমি যতদূর জানি মালটা বাগান ও মাছের ঘের ও তার জমির মালিক সাব-রেজিস্ট্রার। তিনি মাঝেমধ্যে এখানে এসে ঘুরে যান। এ ছাড়া এই এলাকায় তার আরও কয়েকটি জমি রয়েছে বলে শুনেছি।’

তালতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ‘এই বাজারে ইট, সিমেন্ট ও বালু বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মূল মালিক সাব-রেজিস্ট্রার কল্লোল। তবে কাগজে-কলমে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তার স্ত্রী।’

এ বিষয়ে অসীম কল্লোল বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার কাগাসুরায় আমার কোনো জমি নেই। সেখানে সম্বন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) গোলাম রাব্বানীর নামে ৬০ শতক জমি আছে। তিনি ময়মনসিংহ জেলায় থাকেন। তার অসুস্থতার কারণে ওই সম্পত্তি আমি দেখাশোনা করি। নগরীর উত্তর মল্লিক রোড এলাকায় ড্রিম প্যালেস নামে ৯১০ ফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পোর্ট রোড এলাকায় সরকারি খাস জমিতে ৫তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগ সত্য নয়। ওই এলাকায় আমার বাবার নামে একটি বাড়ি আছে। যেখানে আমরা ৪ ভাই একসঙ্গে থাকি।’ 

তবে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট থাকার সত্যতা স্বীকার করে অসীম কল্লোল বলেন, ‘ডিবিএইচ থেকে ৮৫ লাখ টাকার লোন নিয়ে দুটি ফ্ল্যাট কিনেছি। এ ছাড়া সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদে ১ একর ২৫ শতাংশ জমি স্ত্রীর নামে রয়েছে, যা হেবা দলিল মূলে কেনা হয়েছে। এর বাইরে আমার এবং আমার পরিবারের কোনো সম্পদ নেই। ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে হিসাব দেওয়া আছে।’

তিনি আরও বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর এখানকার কিছু অসাধু দলিল লেখক এবং অফিসের কিছু কর্মচারী আমার কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ নিতে চেয়েছে। আমি তাদের কথামতো কাজ না করায় ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য দিচ্ছে।’ 

প্রত্যয় স্কিম ‘ষড়যন্ত্রমূলক’

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
প্রত্যয় স্কিম ‘ষড়যন্ত্রমূলক’

চার কারণে সর্বজনীন পেনশনে প্রত্যয় স্কিমের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষক নেতারা। আলোচনা ছাড়া বড় পরিবর্তন, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই নিয়মে পেনশন প্রাপ্য হলেও সেখান থেকে বের করে প্রত্যয় স্কিমে যুক্তকরণ, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা স্কিম এবং বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হলে সরকারবিরোধীদের জন্য সুযোগ তৈরির শঙ্কা থাকায় এমনটা মনে করছেন তারা। 

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। বাকি দুই দাবি হলো- শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি।

সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলমত নির্বিশেষে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষায় সেশনজটসহ নানা সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অল্প সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা আশাবাদী, শিক্ষকরা আগে কখনো এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল না। 

তিনি বলেন, আমরা স্টেকহোল্ডার। কমিটিতে আমাদের কাউকে রাখা হয়নি। আলোচনা ছাড়াই ঠিক করে দেবে, এটা কেন মানতে হবে? ২০১৫ সালেও তারা একই কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে কমিটমেন্ট করেছিল শিক্ষকদেরকে সুপারগ্রেড দেবে। কিন্তু সেটা কোথায়? এখন আমরা প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত কোনো কিছু বিশ্বাস করব না। এ জন্য তাদেরকে বিশ্বাস করব না। আমাদেরকে আলাদা করে দিয়ে অপমান করা হয়েছে। এটা একটা ষড়যন্ত্র। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে অফিশিয়ালি কোনো পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে আন-অফিশিয়ালি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শিক্ষকরা যে প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক বলছেন, সেটি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। 

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ষড়যন্ত্রমূলক। ২০১৫ সালের পে-স্কেল করার সময় শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হয়। এবারও সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘সেবক’ নামের আরেকটি স্কিম আনা হবে। সেই রূপরেখা এখনো ঠিক হয়নি। যেখানে একই সঙ্গে আগে সবাই পেনশন পেত, নতুন নিয়মে সবাইকে একসঙ্গে না রেখে আলাদা করে সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেনশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। সেটা না করে চাপিয়ে দেওয়াকে আমরা উচ্চশিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছি। প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবে না। শিক্ষার মান কমে যাবে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সদস্য ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, সবাই একই পেনশনের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তাহলে কেন আমাদের আলাদা করা হলো? আবার আলাদা ‘সেবক স্কিম’ হবে? এটি কীভাবে সর্বজনীন হবে? পেনশন যাদের ছিল না, তাদের দরকার ছিল। কিন্তু যাদের আছে, তাদের জন্য কেন নতুন নিয়ম করতে হবে? 

সরকারের দায়িত্বশীল পলিটিক্যাল অংশ থেকে কথা বলা উচিত উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে, এটা বিশ্বস্বীকৃত। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য বহন করবে। জীবনমানের উন্নতি হবে যেহেতু, তাহলে সুযোগ-সুবিধা কেন কমে যাবে? এভাবে সুযোগ-সুবিধা কমানো কিসের বার্তা দেয়? 

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করার জন্য মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির যুক্তিসঙ্গত সমাধান করা উচিত।’

স্থবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে সেবা বিঘ্ন
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে শ্রেণিকক্ষে ঝুলছে তালা, অন্যদিকে একই দাবিতে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতায় প্রশাসনিক ভবন, মেডিকেল সেন্টারে সেবা না পেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেককেই। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী পহেলা জুলাই থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। এদিকে এই কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা নয় বরং শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্যই এই কর্মবিরতি বলে দাবি করেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। একই সময়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা চললেও সেখানে অংশ নেননি শিক্ষক সমিতির নেতারা।
একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও সকাল থেকে অফিসে যাননি। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। কথা হয় প্রশাসনিক ভবনে বৃত্তির চেক নিতে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া ২০১৭-১৮ সেশনের এক শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন না কি কর্মবিরতি চলছে, তাই তারা কোনো সার্ভিস দেবেন না। কর্মবিরতি শেষ হলে তারা সেবা প্রদান করবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কর্মবিরতির কারণে সেবা পাননি শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন খোকা। তিনি বলেন, ‘রবিবারে গিয়ে ডাক্তার পাইনি। আজকে সকালে আবার গিয়েছি, তবে ডাক্তার বললেন কর্মবিরতিতে সেবা দেবেন না। এটা খারাপ লাগার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মেডিকেল সেবা বন্ধ ছিল না। কোনো বর্বর জাতিও এভাবে হাসপাতাল সেবা বন্ধ করবে না।’ মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রচণ্ড জ্বর, তারপরও ওষুধ দিল না। ফিরে আসতে হয়েছে।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে ঢাবির শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র দুইজন রয়েছেন। সাধারণত অন্য সময়ে তিন-চারজন থাকেন। সহকারী মেডিকেল অফিসার হালিমা সাদিয়া বলেন, ‘কর্মবিরতির কারণে সেবা দিচ্ছেন না তারা। যখন কর্মবিরতি শেষ হবে তখন সেবা পাওয়া যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. মোতালেব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হওয়ার কারণে আমরা নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করিনি। তবে জরুরি সব সেবা চালু রয়েছে। শুধুমাত্র দাপ্তরিক ক্ষেত্রে কর্মবিরতি দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতি শিক্ষার্থী জিম্মি করে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নয়, বরং তাদের মুক্তির জন্যই আন্দোলন। জিম্মি আমাদেরই করা হয়েছে। যখন আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী পহেলা জুলাইয়ের পর আলাদা পেনশন সুবিধা পাবে, এটি তো বৈষম্য। যেখানে পেনশন সুরক্ষা হওয়ার কথা, সেখানে প্রত্যয় স্কিম চালু হলে দিন শেষে আমরা যারা প্রবীণ শিক্ষক আছি অবসর শেষে তাদের বেঁচে থাকার জন্য একটি ভবিষ্য তহবিল থাকছে, সেখানে আমার শিক্ষার্থীদের জন্য সেটি হবে শূন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আন্দোলন আমার জন্য না, এই আন্দোলন আমার সন্তানের জন্য, যারা আমার ছাত্র-ছাত্রী। যারা ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হয়ে আসবে এবং শিক্ষক হবে, তাদের জন্যই আন্দোলন।’ 

>আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত: এ কে আজাদ চৌধুরী
>ন্যায়সংগত ও যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত প্রয়োজন: আবুল কাসেম ফজলুল হক
>আলোচনায় বসলেই সব ঠিক হয়ে যেত: নজরুল ইসলাম খান
>আগে পরে সবাই এর আওতায় আসবেন: মাহবুব আহমেদ

অবৈধ সম্পদে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে এগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা স্ত্রী, দুদকে মামলা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
অবৈধ সম্পদে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে এগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা স্ত্রী, দুদকে মামলা

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদের স্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সহকারী পরিচালক বদরুন নাহার। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে অবৈধ সম্পদে এগিয়ে আছেন তার স্ত্রী এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা বদরুন নাহার।

দুজনের বিরুদ্ধে অন্তত ৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কবির আহমেদের ১ কোটি টাকার সম্পদ আর স্ত্রী বদরুন নাহারের ৭ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। 

এসব অবৈধ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে দুজনের বিরুদ্ধেই সোমবার (১ জুলাই) পৃথক দুটি মামলা করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম। 

একটি মামলায় ১ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৭২৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে কবির আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অপর মামলায় তার স্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (গবেষণা ও পরিসংখ্যান উইং) সাবেক সহকারী পরিচালক বদরুন নাহারের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে আছাদুজ্জামানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে আছাদুজ্জামানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ
আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই)।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়মিত বৈঠক নির্ধারিত আছে। 

এ বৈঠকে আলোচ্যসূচির অন্যান্য বিষয় ছাড়াও আছাদুজ্জামানের দুর্নীতির অনুসন্ধান প্রশ্নে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও দুদকে আসা অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইতোমধ্যে কমিশনে মতামত দাখিল করেছে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি। এতে অনুসন্ধান করার অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে, অনুসন্ধান শুরু হবে। এর আগে গত সপ্তাহে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেছিলেন, ‘আছাদুজ্জামান বিষয়ে আসা অবৈধ সম্পদের অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অনুসন্ধান করা হবে কি না, সেটা কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের পর জানা যাবে।’ 

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার আছিয়া খাতুন কানাডায় থাকায় এবং সফরের মেয়াদ বাড়ায় গত মঙ্গলবার কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক হয়নি। তিনি ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। ফলে আজকের নির্ধারিত বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন। 

অস্বাভাবিক অর্থ-সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে কিছুদিন ধরেই ব্যাপক আলোচনায় আছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এখন বিপুল সম্পদ অর্জন নিয়ে আলোচনায় এলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় ঈদুল আজহার আগের দিন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট, ছেলের নামে একটি বাড়ি এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠা জমির ওপর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের মালিকানায় ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। রাজধানীর ইস্কাটনেও আফরোজার নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ধানমন্ডিতে। এর বাইরে সিদ্ধেশ্বরীতে আছাদুজ্জামানের মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০৬ শতক জমি কেনা হয় আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে।

এ ছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় আফরোজার নামে ২৮ শতক জমি কেনা হয়। একই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনা হয় তার নামে। পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। এ ছাড়া আছাদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগরে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। নিকুঞ্জ ১-এ আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলের নামেও একটি বাড়ি রয়েছে।

এই প্রতিবেদন নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হওয়ায় দুদকের পদক্ষেপের ওপর এখন নির্ভর করছে অনেককিছু।