![মেসি ডি’অর](uploads/2023/11/01/1698816331.MESSI-1111.jpg)
তিনি বিস্ময়, একজন জাদুকর এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। শেষ বিশেষণে তর্ক-বিতর্ক ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু লিওনেল মেসি যে সেরা ফুটবলারদের একজন, তা নিয়ে তর্কের সুযোগ নেই। ৩৬ বছর বয়সে আরও একবার এটা প্রমাণ করেছেন তিনি। জিতেছেন বিশ্বসেরার খেতাব। উঁচিয়ে ধরেছেন রেকর্ড অষ্টম ব্যালন ডি’অর, যা অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে তিনবার বেশি। এক কথায়, আর্জেন্টাইন খুদেরাজের অসামান্য কৃতিত্বে ব্যালন যেন এখন মেসি ডি’অর। এটাও বিশ্বাস করা হচ্ছে, বিশ্বকাপজয়ী তারকার রেকর্ড চিরস্থায়ী হবে।
ইউরোপে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে মেসির দ্বৈরথ সবার জানা। দুই ফুটবল এলিয়েন পালা দিয়ে জিতেছেন ফরাসি ফুটবল ম্যাগাজিনের খেতাব। ব্যালন ডি’অর জয়ের সংখ্যায় একে-অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা ছিল তাদের মাঝে। সেই স্বর্ণকাল শেষ হয়েছে বেশ আগে; রোনালদোর ছন্দপতনে। মেসি? এখনো বিশ্বকে চমক উপহার দিয়ে চলেছেন তিনি। নিজে হাসছেন, হাসাচ্ছেন সবাইকে। ফুটবলের বরপুত্রের নজরকাড়া হাসির দেখা মিলল প্যারিসেও। সোমবার রাতে জমকালো নাইট অ্যাওয়ার্ডে বিশেষ দৃষ্টি ছিল ‘ডার্ক ব্ল্যাক’-এ মোড়ানো মেসি, তার স্ত্রী ও তিন সন্তানে।
আগেই ধারণা করা হচ্ছিল, এই পাঁচ ফিরবেন ছয় হয়ে। সেটাই হয়েছে। বিদায়বেলায় মেসি পরিবারের সঙ্গী ছিল ব্যালন ডি’অর ট্রফি। ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হলান্ডকে হারিয়ে অষ্টমবারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছেন তিনি। মজার বিষয় হলো, মেসি ট্রফি বুঝে নিয়েছেন ডেভিড বেকহামের হাত থেকে, যার হাত ধরে ইন্টার মিয়ামিতে গিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড এবং আলো ছড়াচ্ছেন আমেরিকান ফুটবল লিগে। এর আগে পিএসজিতে থাকাকালীন একবার ব্যালন ডি’অর জিতেন মেসি। বার্সেলোনা অধ্যায়ে ছয়বার।
২০০৯ সালে ব্যালন ডি’অর জয়ের খাতা খোলেন মেসি। এরপর ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ এবং ২০২১ সালে খুদেরাজের মাথায় উঠেছিল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। এই খেতাব জয়ের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রোনালদো। পাঁচবার জিতেছেন পর্তুগিজ যুবরাজ। তালিকায় সিআর-সেভেনের পর তিনবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী মিশেল প্লাতিনি এবং ইয়োহান ক্রুইফ। মেসির অষ্টম সাফল্যে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ২০২২ বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ৩৬ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গোল্ডেন বল জেতেন তিনি। সাত গোলের পাশাপাশি অ্যাসিস্ট ছিল তিনটি।
গত মৌসুমে পেশাদার ফুটবলেও শিরোপার স্বাদ পান মেসি। লিগ ওয়ানজয়ী পিএসজির জার্সিতে ৪১ ম্যাচ খেলে গোল করেন ২১টি। এসব কীর্তিতেই আরও একবার ব্যালন ডি’অর ট্রফিকে চুমু খাওয়ার সুযোগ হয়েছে তাদের। হয়তো শেষবার! মেসি এখন ইউরোপ ছেড়েছেন। খেলছেন মেজর লিগ সকারে। ইউরোপ ছেড়ে দেওয়ায় ফরাসি ফুটবল ম্যাগাজিনের বিবেচনায় থাকার সুযোগ নেই মেসির। শেষবেলায় আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন তিনি। দ্বিতীয় বয়ঃজ্যেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ৩৬ বছর ৪ মাস বয়সী মেসি।
এই রেকর্ডটি এতদিন ছিল করিম বেনজেমার দখলে। গত বছর ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার। ব্যালন ডি’অরে সবচেয়ে বয়স্ক বিজয়ী স্ট্যানলি ম্যাথিউস। ১৯৫৬ সালে ফরাসি ফুটবল ম্যাগাজিনের উদ্বোধনী অ্যাওয়ার্ড নাইটে বর্ষসেরা ফুটবলারের ট্রফিতে চুমু খেয়েছিলেন ৪১ বছর বয়সে। ম্যাথিউসের পরের স্থানে নাম লিখিয়ে মেসি বলেছেন, ‘এই ট্রফিটি সবাই সবচেয়ে বেশি জিততে চায় এবং এটি আমার, আমার সতীর্থদের এবং আমার দেশের জন্য একটি স্বপ্ন ছিল।’
অষ্টম ব্যালন ডি’অর ট্রফিকে বিশেষ অ্যাখ্যা দিয়ে আর্জেন্টাইন তারকা বলেছেন, ‘২০২১ সালেও জিতেছিলাম। আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের সুবাদে। কিন্তু এটি অনেক বেশি বিশেষ, কারণ এটি আমাদের বিশ্বকাপ জেতার পরে এসেছে।’