![যুবাদের লক্ষ্য এবার বিশ্বকাপ](uploads/2023/12/19/1702958681.BD-U-19-2.jpg)
মহান বিজয় দিবসের আলোকসজ্জা সরেনি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে। এর মধ্যেই এশিয়ার সেরা হয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দল। যুবাদের অর্জনে এই আলোকসজ্জা মনে হচ্ছিল সার্থক। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটের এই আলোকসজ্জায় যুবাদের বরণে প্রস্তুত ছিল বিসিবি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায় মূলত ফ্লাইট দেরি হওয়ায়। ৬টা ৫৩ মিনিটে মিরপুরে পা রাখে যুবারা। এরপর একাডেমি ভবনের সামনে তাদের নিয়ে দেওয়া হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। মিরপুরে পাওয়া সংবর্ধনার পর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান শিবলী বলেন, ‘নিজেদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন ভালো খেলার। তার বিশ্বাস দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য যুব বিশ্বকাপেও দেশকে এনে দিবেন সাফল্য।’
এশিয়া কাপের ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। এর আগে সেমিফাইনালে ভারতকে উড়িয়ে দেয় ৪ উইকেটের ব্যবধানে। শক্তিশালী ভারতকে হারানোর পর খানিকটা নিশ্চিত ছিল এশিয়া কাপের শিরোপা উঠবে জুনিয়র টাইগারদের ঘরে। তবে এর আগে নিজেদের ওপর প্রবল বিশ্বাস ছিল যুবাদের। অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান শিবলী বলেন, ‘আসলে আমরা প্রত্যেক খেলোয়াড়, প্রত্যেক মানুষ-সবাইকে খুব বিশ্বাস করেছি এবং আমরা আমাদের ওপর বিশ্বাস ছিল যে আমরা ভালো করতে পারি।’
এশিয়া কাপে পাওয়া এই সাফল্যের পেছনের রহস্যও উন্মোচন করেন রাব্বি। জানান, ভারতে খেলা সবশেষ টুর্নামেন্ট তাদেরকে দিয়েছে এমন সাফল্যের অনুপ্রেরণা। তার মতে, ‘ইন্ডিয়াতে আমরা যে ম্যাচগুলো খেলেছি, ওইখানে খুব ভালো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট হয়েছে। সুতরাং এটা আমাদের জন্য ভালো উন্নতি বয়ে এনেছে। ফলে ওইখান থেকে ভালো ইম্প্রুভমেন্ট হয়ে যাওয়ায় এশিয়া কাপে ভালো করতে পেরেছি।’
ফ্লাইট দেরি করায় সন্ধ্যা ৬টার কিছুক্ষণ আগে ঢাকায় এসে পৌঁছায় যুবারা। সেখানেই তাদেরকে দেওয়া হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। মিরপুরে করানো হয় মিষ্টিমুখ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন, বিসিবি পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটুসহ আরও অনেকে।
মিরপুরে পৌঁছানোর পর ফের ট্রফি জয়ের উৎসব করে বাংলাদেশের যুবারা। দুবাইয়ের উৎসব যেন নতুন করে দেখা যায় ঢাকায়। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ের বছরপূর্তির দিনে যুবারা ট্রফি উৎসবে অনুসরণ করেন মেসিকে। এরপরেই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি ও দলের ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলী।
শিরোপা জয়ের পর আর্জেন্টিনার অনুকরণে উদযাপনের কারণ হিসেবে রাব্বি জানান, এতে অনুপ্রাণিত হয় দল। তার কথায়, ‘নিজে ব্রাজিল সাপোর্ট করি। আসলে মেসির সেলিব্রেশন করার কারণ হচ্ছে এই উদযাপন আমার দল খুব বেশি উপভোগ করে। এই জন্য এই সেলিব্রেশন করা। (দলের সবাই) আর্জেন্টিনা সাপোর্টার না, দলের সবাই আসলে চাঙা থাকে।’
এমন শিরোপা জয় দলের দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। সেটা অবশ্য নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বয়সে ছোট হলেও রাব্বি মানেন সেই সত্যটা। তাই বিশ্বকাপে এই দায়িত্ববোধ থেকে খেলতে চাওয়ার ইচ্ছাটা পোষণ করে বলেন, ‘প্রথমবার আমরা এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হলাম। এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। সামনে যে ওয়ার্ল্ড কাপ আছে এটার জন্য আমাদের এখন দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। এশিয়া কাপ থেকে আমরা খুব ভালো প্রিপারেশন নিয়েছি ওয়ার্ল্ড কাপের জন্য।’
দলের সবাই ভালো ছন্দে আছে বলেও আশাবাদী রাব্বি। তার কথায়, ‘ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরা চেষ্টা করব ভালো খেলার। আমাদের ব্যাটসম্যান, বোলার, ফিল্ডার- সবাই খুব ভালো টাচে আছে। আমরা যদি এই ধারাবাহিকতা রাখতে পারি, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই ওয়ার্ল্ড কাপে ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারব দেশের জন্য।’
অন্যদিকে এশিয়া কাপে ৩৭৮ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন আশিকুর রহমান শিবলী। অসংখ্য ক্যামেরার ভিড়ে কথা বলতে কিছুটা জড়তা কাজ করছিল তার মধ্যে। এমন জড়তা নিয়েই শিবলী জানান, তিনিও মুখিয়ে আছেন বিশ্বকাপে ভালো করতে।
শিবলীর ভাষ্যমতে, ‘ভালো করার ইচ্ছে তো সবারই থাকে। আমরা চেষ্টা করব ভালো কিছু দেওয়ার, রেজাল্টটা পরে দেখা যাবে। বিসিবি আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ ভালো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। আমাদের চেষ্টাটা পুরোপুরি করতে পারলে ভালো কিছু হবে।’ এশিয়া কাপে নজর কাড়া শিবলী জানান, ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে আদর্শ মানছেন বিরাট কোহলিকে। তার মতোই ইনিংস লম্বা করেছেন এশিয়া কাপের ফাইনালে। তার ব্যাটে আসে ১৪৯ বলে ১২৯ রান। এমন ইনিংস খেলার কথা আগেভাগে চিন্তা করেননি শিবলী। বরং নজর রেখেছিলেন নিজের স্বাভাবিক খেলার দিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি খেলাটা খেলেছি। চেষ্টা করেছি ধৈর্য নিয়ে ব্যাটিং করার, যা হওয়ার হয়েছে।’ সেঞ্চুরি করার পথে বড় উদযাপনে তার সঙ্গী হন অপরপ্রান্তে থাকা আরিফুল ইসলাম। নিজের উদযাপন নিয়ে বলেন, ‘সিনিয়র হিসেবে আরিফুল খুবই ডেডিকেটেড, ফ্রি মাইন্ড, সাপোর্টিভ। সবকিছু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন।’
এশিয়া কাপে আশা জাগানো যুবারা বিশ্বকাপে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবে, এমনটাই প্রত্যাশা।