স্টেডিয়ামের আঙিনায় প্রবেশ করলেন জুটি বেঁধে। প্রায় গলাগলি ধরে এগিয়ে চলছিলেন গ্যালারির প্রবেশ পথের দিকে। দূর থেকে যা চোখে পড়ছিল বিশেষ এক কারণে। একজনের গায়ে ফরচুন বরিশালের জার্সি, অন্য জনের গায়ে রংপুর রাইডার্সের।
এই দুটি দল গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়। মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ তারিফ নামের দুই বন্ধু এসেছিলেন সেই খেলাটা উপভোগ করতে। দুজন বন্ধু বটে, তবে তাদের পছন্দ ভিন্ন। আমিরের প্রিয় ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। তাই বরিশালের জার্সি গায়ে জড়িয়ে এসেছেন। তারিফের প্রিয় সাকিব আল হাসান। প্রিয় ক্রিকেটারের টানে তার গায়ে রংপুরের জার্সি।
একটু পরেই তাদের প্রিয় ক্রিকেটার বা দল একে অপরের মুখোমুখি হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে শত্রুর কোনো ঝাঁঝ নেই। এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই তারিফ বললেন, ‘না না। ঝগড়া কেন হবে। আমরা তো খেলা নিয়ে আনন্দ করছি।’
আনন্দ থাকলেও দুজনের জার্সির ভিন্ন রং প্রকাশ করছিল বৈরিতার। তবে বাস্তবে দুজন প্রাণের বন্ধু। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বাড়ি তাদের। পড়াশোনা করেছেন একই প্রতিষ্ঠানে। চাকরিও করছেন একই জায়গায়। আমির বলেন, ‘আমরা চাকরি করি। বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসছি খেলা দেখতে।’
তবে আমিরের মন কিছুটা খারাপ ছিল। নিজে থেকেই বললেন, ‘মনটা এখন ভালো নাই। অনেক আগ্রহ নিয়ে তামিমের একটা ব্যানার নিয়ে আসছিলাম ৫০০ টাকা খরচ করে। কিন্তু ব্যানার নিয়ে ঢুকতে দেয়নি। নিয়ে গেছে ওটা।’ আমির যখন কথাগুলো বলছিলেন, পাশে দাঁড়ানো তারিফকেও সমব্যথী বলে মনে হচ্ছিল। বন্ধুর চাওয়া যে পূরণ হলো না!
আমির ও তারিফের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন ঘড়িতে বেলা পৌঁনে ৪টা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্সের মধ্যকার প্রথম ম্যাচ চলছিল তখন। গ্যালারির প্রবেশ পথের জনস্রোত আঁচ করা যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় রংপুর-বরিশাল ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে তো দর্শকে ভরে গেল গ্যালারি। আমির-তারিফের মতো সাকিব-তামিমের লড়াই দেখা নিশ্চয়ই এই দর্শকদের কাছে মূল আকর্ষণ!
একটা সময় গলায় গলায় বন্ধুত্ব ছিল সাকিব-তামিমেরও। তবে তাদের সেই বন্ধুত্ব এখন গল্পগাথায় পরিণত হয়েছে। দুজনের সম্পর্কটা এখন দা কুমড়োর মতো। দুজন মাড়িয়ে চলেন একে অপরের ছায়াও। এমন সম্পর্কের দুই ক্রিকেটার মাঠে মুখোমুখি হলে লড়াইয়ের উত্তাপ ছড়াবে বহুগুণ, তা বলাই বাহুল্য।
এদিন লোকাল হিরো তামিমের উইকেটটা আবার সাকিবই নিয়েছেন। আউট হওয়ার আগে দারুণ কিছু শটে ২০ বলে ৩৩ রান করেন তামিম। ৩ চারের সঙ্গে হাঁকান ২টি ছক্কাও। নিশ্চয়ই আমির তখন আনন্দে ফেটে পড়ছিলেন। পরে তাকে থামিয়ে তারিফকে উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ এনে দেন সাকিব। আমির-তারিফের অভিব্যক্তিটা তখন জানতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু তারা তখন গ্যালারির জনসমুদ্রে।