![বাবা-কোচকে ট্রফি উৎসর্গ ইয়ারজানের](uploads/2024/03/11/1710134184.yearjan=OK.jpg)
টাইব্রেকারে তিন-তিনটি শট রুখে দেশকে শিরোপা এনে দিয়েছেন ইয়ারজান বেগম। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক। তার মতো সুখী এই মুহূর্তে আর কে হতে পারে! পঞ্চগড়ের মেয়ে ইয়ারজান সত্যিই সুখী, গর্বিতও।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গতকাল ভারতকে হারানোর মূল কারিগর ছিলেন ইয়ারজান। ১-১ সমতায় ম্যাচ শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে নির্ধারণ হয় ম্যাচের ফল। যেখানে শুরুতে পিছিয়ে পড়ার পরও ইয়ারজানের দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ভারতের নেওয়া পঞ্চম শটটি ইয়ারজান রুখে দিতেই আনন্দে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ডাগআউট। ইয়ারজান তখন মাটিতে লুটিয়ে অঝোর কাঁদছিলেন। ম্যাচ শেষে কথা বলার সময়ও জড়িয়ে যাচ্ছিল তার কণ্ঠ। নেপাল থেকে বাফুফের পাঠানো ভিডিওতে বলছিলেন, ‘প্রথম কোনো টুর্নামেন্ট খেলছি এবার। আমার কোচদের আমি ধন্যবাদ জানাই আমাকে এই পর্যায়ে আনার জন্য। আজকে অনেক খুশি আমি। এই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে আমি সেরা গোলরক্ষক হয়েছি।’
সেরা গোলরক্ষক হওয়ার ট্রফি কাকে উৎসর্গ করতে চান? এমন প্রশ্ন করতেই আপ্লুত কণ্ঠে ইয়ারজান বলেন, ‘আমি আমার বাবা ও কোচকে উৎসর্গ করছি।’ কোচ বলতে দলের গোলরক্ষক কোচ আরিফুর রহমান পান্নুর কথা বুঝিয়েছেন ইয়ারজান। যিনি জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলরক্ষক।
সাফের বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের দাপট শুরু থেকেই। তবে সেই দাপটের মাঝেও ছিল একটা আক্ষেপ। ২০১৭ সালে প্রথমবার আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর এই প্রতিযোগিতার তিনটি আসরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। সবশেষ ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ ফরম্যাটে আয়োজিত আসরেও রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সাফের ওই প্রতিযোগিতাটি এবার আয়োজিত হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৬ ফরম্যাটে। যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এক অর্থে শিরোপা পুনরুদ্ধার করল বাংলাদেশ।
ঠিক এক মাস আগে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফেও শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে সেটা ছিল মহানাটকীয়তার ফাইনাল শেষে যৌথ চ্যাম্পিয়নশিপ। এবার এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশের মেয়েদের আনন্দ বেড়ে গেলে অনেক। দলের কোচ সাইফুল বারী টিটু বললেন, ‘এটার আনন্দ অন্য রকম। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে বলে।’ তবে এই অর্জনের সব কৃতিত্ব মেয়েদের দিয়েছেন টিটু, ‘একটা জিনিস হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৬ দলকে তৈরি করার জন্য সময় ছিল খুব কম। সেই হিসেবে ওরা যা করেছে, তা অসাধারণ। সব কৃতিত্ব মেয়েদের। এখানে আমার বিন্দুমাত্র কোনো অবদান নেই।’
বাংলাদেশ অধিনায়ক অর্পিতা বিশ্বাস বললেন, ফাইনালের আগের দিন ট্রফির সঙ্গে ফটোসেশনের সময় থেকেই ট্রফি নিয়ে ঘরে ফেরার স্বপ্ন আঁকছিলেন তিনি। সতীর্থদেরও তিনি সেটা বলেছিলেন। স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আনন্দ নিয়ে তাই তার উচ্চারণ, ‘আমি এখন সার্থক যে ট্রফিটা আমাদের কাছে ধরে রাখতে পেরেছি।’
ফাইনালের আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেসে ছিলেন সুরভী আকন্দ প্রীতি। শেষ পর্যন্ত এই পুরস্কার না পেলেও সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে না পারার কোনো আক্ষেপ নেই তার, ‘সর্বোচ্চ গোলদাতা না হওয়ার জন্য আফসোস নেই। কারণ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা জরুরি ছিল।’
প্রীতির কণ্ঠেও উঠে এল ইয়ারজানের বীরত্বের কথা, ‘ইয়ারজান যেভাবে সেভ দিয়েছে, আমাদের আলাদা আত্মবিশ্বাসই ছিল ও ভালো কিছু করবে। আমরা পেনাল্টিতে জিতব।’ সত্যিই জিতেছে বাংলাদেশ। এই অর্জনকে নিজেদের পরিশ্রমের ফল বললেন প্রীতি, ‘আমরা দুই মাস কষ্ট করে এখানে এসেছি। সবাই যে কষ্ট করেছি, সেটার ফল আল্লাহ দিয়েছে আমাদের।’