![চোকার্সমুক্ত হয়ে স্বপ্নের ফাইনালে দ. আফ্রিকা](uploads/2024/06/28/southkoreia-1719551691.jpg)
অবশেষে হলো স্বপ্নপূরণ। দীর্ঘ অপেক্ষার হলো অবসান। স্বপ্নের ফাইনালের টিকিট পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপার মঞ্চে জায়গা করে নেয় দলটি। বোলারদের অনন্য-অসাধারণ নৈপুণ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালের মুখ দেখল তারা। কিংবদন্তি কেপলার ওয়েসেলস, হ্যান্সি ক্রনিয়ে, গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফ্যাফ ডু প্লেসি কিংবা হালের টেম্বা বাভুমার অধিনায়কত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে একাধিকবার খেলেও শিরোপার মঞ্চে কখনো পা পড়েনি। এইডেন মার্করামের অধীনে অবশেষে স্বপ্নের ফাইনালে পা রাখল তারা। এর মধ্য দিয়ে চোকার্স অপবাদে কুলুপও এঁটে দিল।
‘দক্ষিণ আফ্রিকা আর সেমিফাইনাল’ শব্দ দুটি যেন একে অপরের পরিপূরক। বিশ্বকাপমানেই সেমিফাইনালে প্রোটিয়ারা। তারপরও হযবরল হারে শেষ চার থেকে বিদায়। এতদিন এই ছিল দলের নিয়তি। ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে যার যাত্রা শুরু। সবশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপেও এমন ভাগ্যই বরণ করেছিল। ওয়ানডের মতো ২০০৭ এবং ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দলটির শেষ যাত্রা ছিল ওই সেমিফাইনাল। এভাবে বারংবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে নিতে তাদের কপালে জোটে চোকার্স অপবাদ। সেই অপবাদ ঘোচাতে দীর্ঘ ৩২ বছর লাগল তাদের।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবার বড় জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। লঙ্কানদের মাত্র ৭৭ রানে গুটিয়ে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয়। পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয় দলটি। প্রথম ব্যাট করে ডাচরা মাত্র ১০৩ রান তুলতে সমর্থ হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই মামুলি পুঁজি তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে। এক সময় ম্যাচের দৃশ্যপট দেখে মনে হচ্ছিল হারতে যাচ্ছে প্রোটিয়ারা। কিন্তু ডেভিড মিলার ৭ বল হাতে রেখে একাই ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৪ উইকেটে জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গেও একই অবস্থা। প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১১৩ রান করে দলটি। বাংলাদেশ তাড়া করতে নেমে ১০৯ রানে থামে। ৪ রানে ম্যাচ জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। টাইগারদের বিপক্ষে হারা ম্যাচটি আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তে জেতে প্রোটিয়ারা। গ্রুপ পর্বে চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে আরও নাটকীয়তার জন্ম দেয়। নেপালের কাছ থেকে মাত্র ১ রানে ম্যাচ জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১১৫ রান করে শুরুতে দলটি। নেপাল থামে ১১৪ রানে।
গ্রুপ পর্বের মতো সুপার এইটেও জয় পেতে বেগ পোহাতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৮ রানে প্রথম ম্যাচটি জেতে। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় মাত্র ৭ রানের। আর সুপার এইটের শেষ ম্যাচটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটের ব্যবধানে জেতে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ম্যাচ থেকেই মনে হচ্ছিল এবার উল্টো রথে হাঁটতে শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট। কারণ এই দলের সঙ্গে তাদের ক্রিকেটীয় পূর্বপুরুষ, পূর্বসূরিদের কিছুতেই মেলানো যাচ্ছিল না। যে দলটি বছরের পর বছর, বিশ্বকাপের পর বিশ্বকাপ (হোক সেটা ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) প্রতিপক্ষের কাছে হাস্যকরভাবে, বাজেভাবে হেরে বিদায় নিয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলে সেমিফাইনালে এসে নেতিয়ে পড়েছে। কিংবা হট ফেবারিট হিসেবে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে প্রথম রাউন্ড থেকে নিজেদের গোঁজামিল হিসেবের গ্যাঁরাকলে পড়ে বিদায় নিয়েছে। পায়নি প্রকৃতির অনুকম্পা। সে দলই চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখাল অন্যরূপ। বিশ্বকাপে হাস্যোপ্রদ বিদায়ের রেকর্ড গড়ে চোকার্স উপাধি পাওয়া দলের গা থেকে অবশেষে মুছে গেল চোকার ট্যাগ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরে ফাইনালে উঠবে দক্ষিণ আফ্রিকা- এমন ভাবনা কারোর মনেই ছিল না। খোদ প্রোটিয়াদের মনে ছিল কি না অনেকের সন্দেহ! কারণ সাদামাটা এক দল নিয়ে এবারের আসরে অংশ নেয় দলটি। সেই দলই শেষ পর্যন্ত করল বাজিমাত। ব্যাটিংয়ে সেভাবে আলো ছড়াতে না পারলেও বোলারদের অসাধারণ নৈপুণ্যে শিরোপা মঞ্চে উঠে আসে তারা। বৃহস্পতিবার আফগানিস্তান ম্যাচেও অন্যরকম কিছুর প্রত্যাশা করছিল ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে সাধারণ সমর্থকরা। কারণ এবারের আসরে যেভাবে খেলছিল আফগানরা, তাতে আফগান রূপকথা, আফগানিস্তানের ইতিহাস রচনার প্রত্যাশা করেছিল সকলে! প্রোটিয়াদের হারিয়ে ফাইনালে খেলবে আফগানিস্তান- এমন ভাবনা ভাবার লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। আরও একবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেবে প্রোটিয়ারা। চির অপবাদ চোকার্স গায়ে ক্রিকেটে থেকে যাবে দলটি। তবে সেসব আর হয়নি। ক্রিকেট বিধাতা এবার দু’হাত ভরে বর দিয়েছে তাদের।
শনিবার (২৯ জুন) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। গ্রুপ পর্ব থেকে সুপারএইট এরপর সেমিফাইনাল। কোনো ম্যাচ না হেরে অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালে অপরাজিত থাকতে পারবে তো এইডেন মার্করামের দল?