![ইন্টেন্ট, ইমপ্যাক্ট, গেম সেন্স... এরপর কী!](uploads/2024/06/27/BD-Cricket-Intent-1719482247.jpg)
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হাহাকার নতুন নয়। কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। সবশেষ সমীকরণ মিলিয়ে আফগানিস্তানের কাছে জেতার বদলে হারের স্বাদে আরও একবার দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের দৈন্যদশা।
ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়ার হারের পর হিসেবের বাইরে অবস্থান করা বাংলাদেশের সামনেও অর্ধ উন্মুক্ত হয়ে যায় সেমিফাইনালের দ্বার। রশিদ খানদের দেওয়া মাত্র ১১৬ রানের লক্ষ্য ১২.১ ওভারে টপকাতে পারলেই হয়ে যেত ইতিহাস। প্রথমবারের মতো সেই দুয়ার পেরোতে পারলেই টি-টোয়েন্টি তথা আইসিসির কোনো বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ পা রেখে ফেলতো শেষ চারে। যদিও সেই রূপকথা আর বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়নি ৮ রানের পরাজয়ে। এমন পরাজয়ের পর আরও একবার যেন সামনে এলো ইন্টেন্ট তথা লক্ষ্য অনুযায়ী ছোটার ঘাটতির।
এমন কথা বলেছেন খোদ সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালই। ইএসপিএনক্রিকইনফোতে তিনি বলেন, ‘কোনো ম্যাচ না জিতে শেষ ম্যাচে আপনার সামনে সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ। আপনি সম্ভবত এই লক্ষ্য অর্জনে সবকিছুই করবেন। মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ রান তাড়া করে ফেলবে। এরপর উইকেট গেল, কিছু ওভারে ইন্টেন্ট কম ছিল, যে কারণে বাংলাদেশের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে যায়।’
তামিম যেই ইন্টেন্টের কথা বলছেন এই ইন্টেন্ট নিয়ে আলোচনা কম হয়নি ২০২১ আসরে। ইন্টেন্ট মূলত সামনে নিয়ে আসে খেলোয়াড়দের টি-টোয়েন্টি মেজাজ ও স্ট্রাইকরেটকেও। ধীরগতির মিরপুরের উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার পর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের।
সেবার বিশ্বকাপ চলাকালীন ক্রিকেটারদের ইন্টেন্টের সমালোচনা করে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘খেলায় দলের অ্যাপ্রোচ-অ্যাটিটিউট কোনোটাই ঠিক ছিল না। যেই অ্যাপ্রোচটা দরকার ছিল সেটা আমি পাইনি তাদের মাঝে। আমাদের পরিকল্পনাও ভালো ছিল না।’
দিনবদলের বার্তা নিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সরিয়ে সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করা হয় ২০২২ এশিয়া কাপে। টি-টোয়েন্টির মেজাজকে আয়ত্তে আনতে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেট তত্ত্বকে পরিচিত করান দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম।
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘পারফরম্যান্সের চেয়ে ইমপ্যাক্টকে বেশি গুরুত্ব দিই আমি। ৭-৮ জন ক্রিকেটার ম্যাচে ইমপ্যাক্ট রাখতে পারলেই জয়ের দেখা পাবে। পারফর্মার থাকার পরও একটা দল হারতে পারে। যদি আমাদের অধিক ইমপ্যাক্টফুল ক্রিকেটার থাকে তখন অনেক ম্যাচ জেতার সুযোগটাও বেশি থাকবে।’
কিন্তু সেই ইমপ্যাক্টের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। উল্টো ভারতের বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে নতুন করে সমালোচিত হয়েছে ক্রিকেটারদের গেম সেন্সের। অতিরিক্ত তাড়াহুড়োয় লিটনের গড়ে দেওয়া শক্ত ভিতে দাঁড়িয়েও জয়ের সম্ভাবনা বলি দেয় বাংলাদেশ।
সেই ম্যাচ শেষে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও শিকার করেছিলেন সেটি, ‘আমাদের জেতা উচিত ছিল। আমরা মাঝখানে খুব বেশি শট খেলার চেষ্টায় ২-৩ ওভারে মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলেছি।’
এবারের আসরে সুপার এইটে দুই ম্যাচ হারের পর সমীকরণ মিলিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা চলে আসার পরও বাংলাদেশ ব্যর্থ রক্ষণশীল মনোভাবের ক্রিকেটে। ১১৬ রানের লক্ষ্য ১২.১ ওভারে টপকানোর চেষ্টা কতটুকু করেছে তা বোঝাই গিয়েছে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ম্যাচ পরবর্তী কথাতেই। ‘পরিকল্পনা ছিল প্রথম ছয় ওভার চেষ্টা করব। যদি আমরা ভালো শুরু করি এবং দ্রুত উইকেট না পড়ে তাহলে আমরা সুযোগটা নিব। যখন আমাদের তিন উইকেট পড়ে গেল দ্রুত তখন আমাদের পরিকল্পনা ছিল কীভাবে ম্যাচটা জিততে পারি।’
অধিনায়কের এমন ভঙ্গুর মানসিকতা ও রক্ষণশীল ক্রিকেট সামনে এনেছে লড়াই করতে না জানা একটা দলের বাস্তব চিত্র। বলা চলে আগের দুই আসরের ঘাটতিগুলোই নতুন করে দেখা দিয়েছে আরেকবার। কথা হলো ইন্টেন্ট, ইমপ্যাক্ট ও গেম সেন্সকে বাদ দিয়ে নতুন কোন শব্দে নিজেদের ব্যর্থতা ব্যাখ্যা করবে বাংলাদেশ দল।