সেবার অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানা। সেমিফাইনালের রুদ্ধশ্বাস মঞ্চ। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল ভারত ও ইংল্যান্ড। অ্যাডিলেডে জিতেছিল ইংল্যান্ড, এবার গায়ানায় ভারত। ভেন্যু বদলের সঙ্গে সঙ্গে জয়ী দলের নাম পাল্টালেও ম্যাচের দৃশ্যপট কিন্তু একই। প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে জয় ছিনিয়ে নেওয়া।
অ্যাডিলেডে ২০২২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতকে স্রেফ উড়িয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল শিরোপা জেতা ইংল্যান্ড। ভারতের করা ৬ উইকেটে ১৬৭ রান ইংল্যান্ড স্পর্শ করেছিল দোর্দণ্ড দাপটে। যেখানে দেখা মিলেছিল জস বাটলার-আলেক্স হেলসের অতিমানবী ১৭০ রানের উদ্বোধনী জুটি, ইংলিশদের জয় ১০ উইকেটে।
এবার গায়ানা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমির মঞ্চে সেই ভারত ও ইংল্যান্ড মুখোমুখি। ম্যাচের আগে বাংলা গণমাধ্যগুলোর বেশির ভাগ শিরোনাম ছিল ‘প্রতিশোধ না পুনরাবৃত্তি।’ সেই প্রশ্নের উত্তরটা পাওয়া গেল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে। উত্তরটা হলো, প্রতিশোধ। ক্রিকেটীয় চেতনায় এমন শব্দ বিরোধমূলক হলেও স্বস্তি আর আনন্দের বড় উপলক্ষ তো রোহিত-কোহলিদেরই। ২০২২-এর সেমির হারের শোধ তারা ঠিকই নিল পরের আসরে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে টিম ইন্ডিয়া।
অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ড জিতেছিল যেমন প্রবল প্রতাপে। গায়ানায় তেমনি জিতল ভারতও। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ফের আলো ছড়ালেন রোহিত শর্মা, করলেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। সঙ্গে সূর্যকুমার যাদবের কার্যকর ইনিংস। শেষের দিকে হার্দিক ও জাদেজার ছোট্ট ঝড়। সব মিলিয়ে গায়ানার মন্থর ও অসম বাউন্সের উইকেটেও ভারতের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। জবাবে ইংল্যান্ড যেন দিকহারা পথিক। অক্ষর প্যাটেল ও কুলদ্বীপ যাদবের মায়াবী ঘূর্ণিতে রীতিমতো দিশেহারা ইংলিশ ব্রিগেড। গুটিয়ে যায় মাত্র ১০৩ রানে, ১৬.৪ ওভারে। ৬৮ রানের আয়েশি জয়ে এক দশক পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত।
শনিবার (২৯ জুন) শিরোপা লড়াইয়ে রোহিতদের প্রতিপক্ষ প্রথমবারের মতো ফাইনালের মঞ্চে পা রাখা দক্ষিণ আফ্রিকা।
টানা দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চতুর্থ ফাইনালে যাওয়ার জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৭২ রান। সেমির মঞ্চে এমন টার্গেট একটু দুরূহ হলেও চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের হয়ে বাজি ধরেছিলেন অনেকেই। কিন্তু ভারতের বোলিং লাইনের সামনে ইংলিশরা এমন আত্মসমর্পণ করবে, তা হয়তো ভাবেনি কেউ! চতুর্থ ওভারে জস বাটলারকে দিয়ে শুরু উইকেট পতন। এরপর এই ধারা ছিল অব্যাহত। অক্ষর ও কুলদ্বীপের ঘূর্ণির সঙ্গে জাসপ্রিত বুমরাহর পেস অ্যাটাক কুলিয়ে উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড।
টপ-অর্ডার পুরোই বিধ্বস্ত। জস বাটলার (২৩) ও হ্যারি ব্রুক (২৫) ছাড়া ফিল সল্ট, মঈন আলী ও জনি বেয়ারস্টো ফেরেন দুই অঙ্কের রান করার আগেই। লেট-অর্ডারে জফরা আর্চার (২১) ও লিভিংস্টোনের প্রচেষ্টা (১১) হারের ব্যবধানই কমিয়েছে মাত্র। ২৩ রানে তিন উইকেট নেওয়া ভারতের অক্ষর প্যাটেল জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। সেখানে ১৯ রানে তিন উইকেট কুলদীপের। বুমরাহর শিকার একটি।
এর আগে এই রোদ, এই বৃষ্টি ছিল গায়ানার প্রকৃতিতে। বৃষ্টির বাধায় নির্ধারিত সময়ে শুরু হতে পারেনি ম্যাচ। সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে খেলা শুরু হওয়ার পর ৮ ওভার শেষে আরেক দফা বৃষ্টির হানা। এই দফায় ফের সোয়া এক ঘণ্টা করতে হয় অপেক্ষা। লম্বা সময় খেলা বন্ধ থাকার পর অবশেষে শুরু হয় মাঠের লড়াই।
সেমির মঞ্চে জ্বলে উঠতে পারেননি বিরাট কোহলি। দায়িত্বটা নিতে হয়েছে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকেই। তার ব্যাটেই আসে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৯ বলে ৫৭ ঝলমলে রান। কোহলির মতো রিশভ পান্থ দ্রুত বিদায় নিলে ভারতের স্কোর সমৃদ্ধ করেছেন সূর্যকুমার যাদব। সঙ্গে ছিল হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজার খণ্ড ঝড়। ৩৬ বলে ৪৭ রান করেন সূর্যকুমার। হার্দিক ১৩ বলে ২৩ ও জাদেজা ৯ বলে খেলেন ১৭* রানের ইনিংস। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগানো ইংলিশ বোলার ক্রিস জর্ডান নেন সর্বোচ্চ তিন উইকেট।
রোহিতদের ফাইনালে ওঠার আনন্দের ম্যাচে কীর্তি গড়েছেন আম্পায়ার রড টাকার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ পরিচালনার রেকর্ডটি এখন এই অস্ট্রেলিয়ানের। ভারত-ইংল্যান্ডের লড়াইটি বৈশ্বিক আসরে টাকারের ৪৬তম ম্যাচ। তাতে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন পাকিস্তানের আম্পায়ার আলিম দারের ৪৫ ম্যাচের কীর্তিটি।