![পুনরাবৃত্তি না প্রতিশোধ](uploads/2024/06/27/India-vs-England-1719491551.jpg)
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ১৯ মাস। কষ্টের ক্ষতচিহ্ন এখনো দগদগে। অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল হারের দুঃসহ স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছে না ভারত। সেই স্মৃতি যেন জ্বলজ্বলে এক পোস্টার হয়ে আছে। কষ্টের ক্যানভাসে আঁকা পোস্টারটি ছিঁড়ে ফেলতে পারছেন না রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। কী করে পারবেন?
বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে লজ্জার হার! এমন হার মেনে নিতে কষ্ট তো লাগবেই। ২০২২ অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সেই হারের দেড় বছর পর আবারও বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত-ইংল্যান্ড। এবারও সেমিফাইনাল ব্যাটল। তবে লড়াইয়ের মঞ্চ শেষচারের হলেও ভেন্যু কিন্তু ভিন্ন। অ্যাডিলেড থেকে এবার গায়ানাতে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে খেলবে দুদল। বাংলাদেশ সময় আজ রাত সাড়ে ৮টায় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পরস্পরের বিপক্ষে মাঠে নামবে ভারত এবং ইংল্যান্ড। দুদলই ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে প্রচণ্ড আশাবাদী।
ম্যাচে দুই ধরনের গন্ধ পাচ্ছেন ক্রিকেটবোদ্ধা থেকে সাধারণ সমর্থকরা। এক পক্ষ দেখছে ভারতের প্রতিশোধের ম্যাচ হিসেবে, আরেক পক্ষ পুনরাবৃত্তির আশায় ক্ষণ গুনছেন। পুনরাবৃত্তির তালিকায় খোদ রয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলীও। তিনি তো বলেই দিয়েছেন, আমরা গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতকে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছি। এবারও আমরা ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেব। তবে নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আত্মপ্রত্যয়ী মঈন প্রতিপক্ষ ভারতকেও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। বিশেষ করে দলটির অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে নিয়ে আলাদাভাবে বলেছেন। বলাটাই স্বাভাবিক। সুপার এইট পর্বে ভারতের কাছে শক্তিধর অস্ট্রেলিয়া যেভাবে হেরেছে এবং ওই ম্যাচে রোহিত ৪১ বলে ৯২ রানের ঝলমলে ইনিংস দলকে উপহার দিয়েছেন। তাতে করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে সমীহ না করে উপায় আছে!
বিশ্বকাপের পুরোনো দুই প্রতিপক্ষ ভারত এবং ইংল্যান্ডের রেকর্ডবুক ঘেঁটে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে করে দুদলই রয়েছে একই মেরুতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৪টি ম্যাচ খেলেছে তারা। তাতে দুই দলের জয়ই সমান দুটি করে। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপ আসর থেকেই লড়াইয়ের শুরু। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ১৮ রানে পরাজিত হয়। ২০০৯ বিশ্বকাপে ভারতকে ৩ রানের ব্যবধানে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নেয় ইংলিশরা। এরপর ২০১২ শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপে ভারত জিতলেও সবশেষ ২০২২ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়েন ইংলিশরা। দুদলের টি-টোয়েন্টির ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত মোট ২৩ ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে তাতে ভারতের জয় ১২ ম্যাচে; ইংল্যান্ডের জয় ১১টিতে। আজ যে দল জিতবে তারাই ম্যাচ জয়ের পরিসংখ্যানে এগিয়ে যাবে।
চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলছে ভারত। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে এসেছে সেমিফাইনালে। গ্রুপ পর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড, কানাডা এবং স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে ২০০৭ বিশ্বকাপ জয়ীরা। গ্রুপসেরা হয়ে রোহিত শর্মার দল উঠে আসে সুপার এইট পর্বে। এই পর্বেও বাজিমাত ভারতের। তিন ম্যাচের তিনটিতে জেতে তারা। হারায় বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে। অপরদিকে বিশ্বকাপে শুরুটা ভালো না হলেও আস্তে আস্তে নিজেদের গুছিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন জস বাটলার, মঈন আলীরা। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টিতে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। পরে নামিবিয়া এবং ওমানকে হারিয়ে গ্রুপ রানার্স আপ হয়ে উঠে আসে সুপার এইট পর্বে। এখানে এসে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বড় জয় পায় ইংলিশরা। এ জয়ই সেমিতে ওঠার পথ সুগম করে। পরে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পরাজিত হলেও আরেক স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে সেমির টিকিট কাটে দলটি।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সমশক্তির দল ভারত-ইংল্যান্ড। পূর্ব রেকর্ড, জয়-পরাজয়ের ব্যবধান, বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স সমস্ত বিচারে একই মানদণ্ডে অবস্থান দুদলের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত একবার চ্যাম্পিয়ন ২০০৭ সালে, রানার্স আপ ২০১৪ সালে। ইংল্যান্ড ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৬ সালে রানার্স আপ। আবার দুদলের চারবারের সেমিফাইনাল দেখাতে সমান সংখ্যক ২টি করে জয় ভারত ও ইংল্যান্ডের। তাই আজ যে জিতবে তারা শুধু শিরোপার মঞ্চেই পা রাখবে না; পরিসংখ্যানের নিরিখে পরস্পরকে পেছনেও ফেলবে।