![নেভারকুসেন টু চ্যাম্পিয়ন](uploads/2024/04/16/1713243491.Levarkusen---Partha.jpg)
জার্মান বুন্দেসলিগায় খেলবে ১৮ দল, তবে মৌসুম শেষে চ্যাম্পিয়ন হবে বায়ার্ন মিউনিখ। গত ১১ মৌসুম ধরে এটাই যেন হয়ে উঠেছিল অলিখিত নিয়ম। লিগের অন্য দলগুলো বাভারিয়ানদের বিপক্ষে গড়তে পারত না কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জাবি আলানসোর ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া বায়ার লেভারকুসেন বায়ার্নের ধারাবাহিকতায় ছেদ চিহ্ন বসিয়েছে।
১২০ বছরের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবার শিরোপা উঠেছে জার্মান রাইন নদীর তীরবর্তী লেভারকুসেন শহরের ক্লাবটিতে। শিরোপা নিশ্চিতের ম্যাচে দর্শকদের বাধভাঙা উল্লাসে স্পষ্ট শিরোপার জন্য কতটা মরিয়া ছিল। শহরটিতে বুন্দেসলিগা জয়ের উৎসব হতে পারত দুই দশকেরও বেশি আগে, ২০০২ সালে। ভাগ্যদেবী পক্ষে না থাকায় সেবার জয়োৎসব হয়নি। একই বছর আরও দুই শিরোপা লড়াইয়ে সমর্থকদের মন ভাঙে লেভারকুসেন। তিন শিরোপা হাতছাড়া করা লেভারকুজেনকে তাই প্রতিপক্ষরা বিদ্রূপ করে ডাকত ‘নেভারকুসেন’ বলে। নেভারকুসেন থেকে এবার বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয়ন লেভারকুসেন।
এক মৌসুমে তিন শিরোপা ঘরে তোলা যেকোনো দলের জন্যই দারুণ কিছু। ইউরোপিয়ান ফুটবলে এই ইতিহাস গড়তে পেরেছে কেবলমাত্র ১০ ক্লাব। যার শুরুটা হয়েছিল স্কটিশ ক্লাব সেল্টিককে দিয়ে। ২০০১-০২ মৌসুমে চতুর্থ ক্লাব হিসেবে লেভারকুসেনের সামনে ছিল ট্রেবল জয়ের সুযোগ। পুরো মৌসুমে দারুণ ছন্দে থাকা লেভারকুসেনের ভাগ্য ছিল না পক্ষে। না হলে মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে কোনো ক্লাব কী তিন তিনটি শিরোপা হাতছাড়া করে!
২০০২ সালের ৪ মে শুরু লেভারকুসেনের হৃদয় ভাঙার গল্পের। সেদিন শিরোপা ঘরে তুলতে হার্থা বার্লিনের বিপক্ষে দলটির চাওয়া ছিল জয়। সেই কাজটা ঠিকঠাক করেছিল রাইন নদীর ধারের ক্লাবটি। কিন্তু সমীকরণটা আরেকটু কঠিন ছিল তাদের জন্য। শিরোপা জিততে তো শুধু জয় নয়, দরকার ছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হার। নিজেদের মাঠ সিগন্যাল ইদুনা পার্কে ওয়েডান ব্রিমেনের বিপক্ষে কোনো ভুল করেনি হলুদ জার্সিধারীরা। ফলে শিরোপা উঠতে উঠতে ওঠেনি লেভারকুসেনের হাতে। অথচ, শেষদিনে হার্থা বার্লিনকে হারিয়ে নিজেদের কাজটুকু ঠিকঠাকই করেছিল লেভারকুসেন।
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় জার্মান কাপ। জার্মানি টপ-ফ্লাইটে ব্যর্থতার ৬ দিন পর ঘরোয়া টুর্নামেন্টে লেভারকুসেন ফাইনাল হেরে যায় শালকের কাছে, ৪-২ ব্যবধানে। দুই মঞ্চে দুই শিরোপা হাতছাড়া করা দলটির সামনে শেষ সুযোগ ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। জোড়া ধাক্কার তিন দিন পর, ক্ষতে প্রলেপ দিতে ইউরোপ সেরা টুর্নামেন্টে নেমেছিল লেভারকুসেন। প্রতিপক্ষ ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের অষ্টম মিনিটে রাউল গঞ্জালেসের গোলে পিছিয়ে পড়ে জার্মান ক্লাবটি। ম্যাচের শুরুতে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা লেভারকুসেন সমতায় ফেরে ৬ মিনিট পরেই।
প্রথমার্ধের অন্তিম মিনিটে জার্মান ক্লাবটিকে ফের পেছনে ফেলেছিলেন জিনেদিন জিদান। শেষতক ২-১ ব্যবধানের হারে লেভারকুসেনের তৃতীয় শিরোপার স্বপ্নও অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। একই বছর টানা তিন শিরোপার কাছে গিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়া লেভারকুসেন তখন থেকেই ‘নেভারকুসেন’। দুই দশকের বেশি সময় ধরে সেই অপবাদ বহন করা বায়ার লেভারকুসেন এবার শিরোপা জিতেই ঘোচাল ‘নেভারকুসেন’ তকমা।