![আশার ভেলায় চাঁদের আলো](uploads/2024/06/15/Rishad-Hossain-1718448530.jpg)
একটি দলে লেগ স্পিনার থাকা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। ক্রিকেটে বিশ্বে লেগ স্পিনার যেন এক বিরল কিছু! পেস বোলারের অভাব নেই। ডানহাতি-বাঁহাতি স্পিনারের অভাব নেই। কিন্তু লেগ স্পিনারের বড্ড আকাল। টেস্ট খেলুড়ে ১২টি দেশের মাঝে পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে, অনেক দলেই নেই লেগ স্পিনার। আবার কোনো দলে নেই ঘাটতি। এই না থাকার দলে আছে বাংলাদেশও। টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পণ করার পর বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খুব একটা এগুতে পারেনি। তা শুধু টেস্ট ক্রিকেটেই নয়, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতেও। সেই না পারার মাঝে একটা হাহাকার ছিল লেগ স্পিনারের অভাব। অতীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন এসেছেন আশার আলো জ্বালিয়ে। কিন্তু হুট করে আবার নিভেও গেছেন। সেই অন্ধকারে আবার আলোর বার্তা নিয়ে এসেছেন রিশাদ হোসেন। যেন আশার ভেলায় চাঁদের আলো।
২০২৩ সালে চট্টগ্রামের আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক। তারপর একই বছর ডিসেম্বর নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় ওয়ানডেতে। এখন পর্যন্ত ৩ ওয়ানডে আর ১৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। এরই মাঝে আবার জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বকাপের মঞ্চেও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যখন দল ঘোষণা করে রিশাদকে দলে রাখা হয়, তখন তার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সংখ্যা ছিল আরও কম ১৪টি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন লেগ স্পিনারের জন্য এটি অনেক বড় ঘটনা। তার প্রতি প্রথমে নির্বাচকরা যে আস্থা রেখেছিলেন, পরে টিম ম্যানেজম্যান্ট সেরা একাদশে রেখে সে আস্থার আরও প্রতিদান দিয়েছিলেন, রিশাদ যেন তার যোগ্য সম্মান দিয়ে চলেছেন। এবারের আসরে তিন ম্যাচ খেলে ৭ উইকেট নিয়েছেন। যেখানে ৩টি করে উইকেট আছে আবার দুই ম্যাচে। ৭ উইকেট নিয়ে তিনি আসরে আছেন ওপরের দিকে।
যে দুটি ম্যাচে তিনি তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন, সে দুটিই ছিল ম্যাচের মোড় ঘুরানো। শ্রীলঙ্কাকে ১২৪ রানে আটকে রেখে ২ উইকেটে ম্যাচ জেতার পেছনে মূল কারিগর ছিলেন রিশাদ। পরপর ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে পরে পান আরও ১ উইকেট। তার এই ৩ উইকেট ছিল মাত্র ৭ বলের ব্যবধানে। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। এই উইকেট ৩টি তিনি পেয়েছিলেন ১৪ ওভার পর বল হাতে নিয়ে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পথে রিশাদ ঘাতক হয়ে ওঠেন। একইভাবে ১৪ নম্বর ওভারে তিনি ৩ বলে তুলে নেন ২ উইকেট। পরে নেন আরও ১ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রান দিয়েছিলেন ২২, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩৩। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে ১টি উইকেট পেয়েছিলেন তাও ছিল ১৯তম ওভারে। সে ম্যাচে আবার রান দিয়েছিলেন ৩২। এভাবেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে নতুন ত্রাণকর্তা হয়ে উঠেছেন রিশাদ হোসেন। ক্রমেই আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন লেগ স্পিনে।
এভাবে দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে পেরে খুবই খুশি রিশাদ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে এসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সব জেতার মাঝেই ভালো লাগা কাজ করে। আমার জন্যও ভালো লাগা কাজ করে। আলহামদুলিল্লাহ। অবদান রাখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সবার শরীরের যে ভাষা, যে প্রচেষ্টা ছিল, অনেক ভালো লেগেছে। আমরা আরও চেষ্টা করব কীভাবে আরও ভালো করা যায়।’
চতুর্থ উইকেট জুটিতে সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ও স্কট এডওয়ার্ডস দাঁড়িয়ে গেলেও রিশাদের মনে হয়নি ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যাবে। এ সময় তিনি বল হাতে পেয়েছিলেন। কী প্ল্যান ছিল? জানালেন, ‘নিজেকে ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করেছি। ১টা বা ২টা উইকেট নিলে খেলাটা আমাদের দিকে চলে আসবে। যখনই আমি বোলিংয়ে আসি চিন্তা করি কীভাবে দলকে কিছু দিতে পারি। চেষ্টা করেছি শুধু। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’ এ সময় বোলিংয়ে আসার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তাকে অনেক আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন বলেও জানান রিশাদ। তার এমন বোলিং নিয়ে ম্যাচসেরা সাকিব আল হাসান বলেন, ‘খুবই ভালো করছে। নতুন হিসেবে যে ক্যারেক্টার শো করেছে, তা ভালো।’
ডালাস ও নিউইয়র্কের উইকেটের পর সেন্ট ভিনসেন্ট। প্রথম দুটিতে লো স্কোরিং হওয়ার পর সেন ভিনসেন্টে মোটামুটি রান হয়েছে। উইকেট নিয়ে রিশাদ বলেন, ‘উইকেট যেমনই হোক, ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে হোক, বোলিংয়ের ক্ষেত্রে হোক, মাশআল্লাহ ভালো ছিল। চেষ্টা করেছি যে, নিজের সামর্থ্য যেটা ছিল সেটা ডেলভারি দেওয়ার।’ ব্যাটাররা রান করতে না পারাতে বোলারদের ওপর চাপ পড়ছে বলেও মনে করেন না তিনি। রিশাদ বলেন, ‘আসলে চাপ কিছু নয়। আমরা মাঠে যখন ১১ জন নামি, সবাই এক থাকি। প্রতিদিন তো আর একজন ভালো করবে না। প্রতিদিনই উন্নতি হচ্ছে।’