নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে সুপার এইটের কক্ষপথে ঢোকার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে বাংলাদেশ। নেপালের মতো দলকে হারানো কি আর এমন ব্যাপার? তাই ম্যাচের পরদিন শুক্রবার দলের খেলোয়াড়রা সবাই ছিলেন ‘চিল’ মুডে। কোনো অনুশীলন ছিল না। তাসকিন আহমেদ তার স্ত্রীকে নিয়ে ক্যারিবিয়ান সাগরের নীল-সবুজ পানির জলকেলিতে মেতে উঠেন। মাহমুদউল্লাহ পড়ে আসেন জুমার নামাজ। অন্যরা ছিলেন যে যার মতো দিনটি উপভোগ করতে ব্যস্ত। দলে একমাত্র সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ ছাড়া বাকি সবাই প্রথমবারের মতো এসেছেন সেন্ট ভিনসেন্ট। নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে সুপার এইটের কক্ষপথে ঢোকার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে বাংলাদেশ। নেপালের মতো দলকে হারানো কি আর এমন ব্যাপার? তাই ম্যাচের পরদিন শুক্রবার দলের খেলোয়াড়রা সবাই ছিলেন ‘চিল’ মুডে। কোনো অনুশীলন ছিল না। তাসকিন আহমেদ তার স্ত্রীকে নিয়ে ক্যারিবিয়ান সাগরের নীল-সবুজ পানির জলকেলিতে মেতে উঠেন। মাহমুদউল্লাহ পড়ে আসেন জুমার নামাজ। অন্যরা ছিলেন যে যার মতো দিনটি উপভোগ করতে ব্যস্ত। দলে একমাত্র সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ ছাড়া বাকি সবাই প্রথমবারের মতো এসেছেন সেন্ট ভিনসেন্ট।
সাগর পরিবেষ্টিত এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি তাই যে যার মতো করে দেখছেন। কিন্তু দিন গড়িয়ে রাত আসার পর সবার সেই ‘রিলাক্স’ মুডে চিন্তার ভাঁজ এনে দেয়। এর কারণ ছিল নেপাল দল। বাংলাদেশের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেপাল জয়ী হয়নি। যদি তারা জিততে পারতো, তাহলে আজ এই নেপালের বিপক্ষে ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের ম্যাচটি হয়ে উঠতো সুপার এইটে উঠার অলিখিত সেমিফাইনালে। ছিটকে পড়তো নেদারল্যান্ডস। তিন ম্যাচে বাংলাদেশ ৪ ও নেপাল ৩ পয়েন্ট নিয়ে পরস্পরের মোকাবেলা করতো। যে দল জয়ী হতো, তারাই সুপার এইটে সঙ্গী হতো দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের চেয়েও ভালো অবস্থানে থেকে নেপাল শেষ পযন্ত জয়ী হতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ১১৩ রান তাড়া করতে নেমে শেষ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৬ রানের। বাংলাদেশ নিতে পেরেছিল ১ রান। হেরেছিল ৪ রানে। নেপাল ১১৫ রান তাড়া করতে নেমে শেষ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ২ রানের। কিন্তু তারা কোনো রানই নিতে পারেনি। হেরে যায় ১ রানে। নেপাল হেরে গেলেও বাংলাদেশে জন্য ভালো একটা বার্তা দিয়ে গেছে। যে বার্তার পূবাভাস ছিল তারাও হেলাফেলার নয়। চাইলেই বাংলাদেশ তাদের বলে-কয়ে হারাতে পারবে না।
যদি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি নেপাল এ রকম তুমুল লড়াই না করত, তাহলে নেপালকে নিয়ে খুব একটা আগ্রহ কারো থাকতো না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের তেজোদ্দীপ্ত লড়াই ক্রিকেট বিশ্বকে করেছে মুগ্ধ। ধারাভাষ্যকাররা বারবার বলছিলেন প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে জিততে চলেছে নেপাল। হেরে গিয়েও নেপাল এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্র-বিন্দুতে। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচকে দিয়েছে নতুন করে গুরুত্ব। বাংলাদেশকেও ভাবতে হচ্ছে গুরুত্ব দিয়ে। পরিকল্পনায় আনতে হচ্ছে পরিবতন। অথচ এই নেপালকে ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ডের খেলায় বাংলাদেশ পাত্তাই দেয়নি। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ৮ উইকেটে। নেপাল আগে তখনব্যাট করে ৫ উইকেটে করেছিল ১২৬ রান। বাংলাদেশ সেই রান তড়া করেছিল ১৫.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে।
নেপাল-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ যখন শেষ হয়, সেন্ট ভিনসেন্টে তখন রাত। সকালে হতেই বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানের কারণে নেপাল দলের এ রকম লড়াই নিয়ে বাংলাদেশ দলের মনোভাব জানা যায়নি। কোন উইকেটে খেলা হবে তাও জানা যায়নি। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশ একটি ম্যাচ খেলাতে সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেট নিয়ে যে অন্ধকারভাব ছিল তা কেটে গেছে। কারণ সেই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১০ বছর পর। কিন্তু নেপাল-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের পর সে ভাবনায় নতুন করে পরিবর্তন হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশ টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৫৯ রান করে ম্যাচ জিতেছিল ২৫ রানে। কিন্তু নেপাল-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ হয়েছে লো-স্কোরিং। টস হেরে নেপাল ফিল্ডিং নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটে মাত্র ১১৫ রান করতে দিয়েছিল। কাজেই আজকের ম্যাচে উইকেট আর টস দুইটিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুইটি ম্যাচেই একটি বিষয় পরিস্কার হয়ে গেছে রান খুব বেশি হবে না। বোলারাদের রাজত্ব থাকবে বেশিই। সেখানে আবার ছড়ি ঘুরাবেন স্পিনাররাই। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১ ওভার বোলিং করেই ১ উইকেটের মালিক হয়েছিলেন। নেপাল-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ তো ছিল স্পিনারদের দাপট। আরও স্পস্ট করে বললে লেগ স্পিনারদের। দুই দলের দুই লেগ স্পিনার নেপালের কুশাল ভুতেল ও দক্ষিণ আফ্রিকার তাবারেজ শামসি ১৯ রান করে দিয়ে ৪টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে একজন মাত্র স্পিনার থাকায় বাধ্য হয়ে অধিনায়ক মার্করামও বল হাতে তুলে নিয়ে ২ ওভার বোলিং করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তুলে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। কাজেই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে যে উইকেটে খেলা হয়েছে, সেই উইকেটে আজকের খেলা হলে বাংলাদেশ দলের সেরা একাদশে হয়তো কোনো পরিবর্তন আসবে না, কিন্তু নেপাল-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের উইকেটে খেলা হলে সেরা একাদশে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুব বেশি। সেক্ষেত্রে স্পিনার একজন বাড়ানো হতে পারে। তিন পেসার ভালো করায় টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো সেখানে হাত দিবে না। তখন হয়তো জাকের আলীর উপর খড়গ নেমে আসতে পারে। খেলার সম্ভাবনা বেশি শেখ মাহেদী হাসানের। তবে সব কিছুর সিদ্ধান্ত হবে কাল ম্যাচের আগে উইকেট দেখে।
নেদ্যারলান্ডেসের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে সুপার এইটের পথে এক পা দিয়ে রাখা বাংলাদেশ দলে অনেকখানি স্বস্তি বিরাজ করছিল। সেখানে নেপাল কপালে চিন্তার একটু ভাঁজ তৈরি করেছে ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রাপ্তি ছিল দলের সেরা ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নিজেকে ফিরে পাওয়া। সাকিবে এই ম্যাচেও নিজের ফেরাটাকে ধরে রাখতে পারলে নেপাল হয়তো কোন রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারবে না।