![একযুগ পর লোকাল বাস চালু, স্বস্তিতে যাত্রীরা](uploads/2024/06/29/3.-Sherpur-Local-Bus-1719629290.jpg)
ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা শেরপুর জেলার উত্তরের জনপদ ঝিনাইগাতী। শেরপুর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের এই উপজেলায় যেতে আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কোনো বিকল্প ছিল না। উপজেলা থেকে জেলা পর্যন্ত আসতে গুনতে হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো। এ ছাড়া তুলনামূলক অনিরাপদ এসব যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ত। রয়েছে প্রাণহানির ঘটনাও। এ ছাড়া ধীরে চলার কারণে যাত্রীদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় হতো। এসব সংকট থেকে যাত্রীদের রক্ষায় দীর্ঘ একযুগ পর আবারও চালু হয়েছে লোকাল বাস সার্ভিস। এতে অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য কমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর শেরপুর জেলা শহর থেকে ঝিনাইগাতীতে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিল লোকাল বাস। কিন্তু সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বাজারে আসার পর বাসের ব্যবসায় ভাটা পড়ে। এ ছাড়া বাস ডিজেলচালিত হওয়ায় খরচ বেশি পড়ত, মালিকের লাভও হতো কম। বাসের সংখ্যা কমতে কমতে এক সময় লোকাল বাস সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন যাত্রীদের অটোরিকশা ছাড়া অন্য কোনো বাহনে যাতায়াতের বিকল্প ছিল না।
যাত্রীরা জানিয়েছেন, লোকাল বাস সার্ভিস যখন চালু ছিল তখন ইজিবাইকে ঝিনাইগাতী যেতে ভাড়া লাগত ২৫ টাকা, আর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভাড়া লাগত ৩০ টাকা। কিন্তু নানা অজুহাতে এসব যানবাহনের ভাড়া বাড়তে থাকে। তখন ঝিনাইগাতী যেতে সিএনজিতে ভাড়া দিতে হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা আর ইজিবাইকে ভাড়া গুনতে হতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
জানা গেছে, তিন বাস মালিকের প্রচেষ্টায় গত ১৪ মে থেকে সাতটি বাস দিয়ে আবারও লোকাল বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তারা এখন ঝুঁকিপূর্ণ সিএনজিতে না উঠে বাসে যাতায়াত করছেন। বাস ভাড়া লাগছে ২০ টাকা। বাস চালুর পর সিএনজির ভাড়া কমতে শুরু করে। এখন সিএনজির ভাড়া কমিয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে, তবুও আগের মতো যাত্রী মিলছে না।
সম্প্রতি সরেজমিনে শেরপুর শহরের খোয়ারপাড় শাপলা চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই আছে সিএনজি ও ইজিবাইক। কিন্তু যাত্রীরা ওগুলোতে না উঠে বাসের সিটে গিয়ে বসছেন। কিছুক্ষণ পর বাসটি যাত্রী নিয়ে ঝিনাইগাতীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ওই বাস যাওয়ার পর আরেকটি বাস আগের জায়গায় এসে যাত্রী তুলতে শুরু করে। কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি এবং ইজিবাইক তখনো যাত্রী পায়নি।
ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগে বাস পাইনি। তাই সিএনজি দিয়ে যাতায়াত করেছি। সিএনজি চালকরা আগে যেভাবে বাড়তি ভাড়া নিতেন এখন আর তা পারছেন না। মাত্র ২০ টাকায় বাসে আরামে বাড়িতে যাচ্ছি। আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের যে কী উপকার হয়েছে, সেটা বোঝাতে পারব না।’
একই এলাকার আরেক যাত্রী আসলাম মিয়া বলেন, ‘আগে লোকাল বাস ছিল না। তখন সিএনজি চালকরা এর সুযোগ নিতেন। আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে তখন তারা দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছেন। শুধু তা-ই না, ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটিও হয়েছে। তবে এখন ২০ টাকা দিয়ে খুব সহজে বাসে যেতে পারছি।’
উপজেলার তেঁতুলতলা বাজারের যাত্রী হবির উদ্দিন বলেন, ‘চালকরা বেপরোয়া গতিতে সিএনজি চালাতেন। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটত। অনেক যাত্রী মারাও গেছেন। বাসের ভাড়া যদি বাড়ানো হয়, তারপরও আমি বাস দিয়েই যাতায়াত করব। সিএনজি দিয়ে চলাচল করব না। সিএনজি ঝুঁকিপূর্ণ, বাস অনেকটাই নিরাপদ।’
বাসচালক আবু সাইদ বলেন, ‘মাত্র ২০ টাকায় আমরা যাত্রীদের শেরপুর থেকে ঝিনাইগাতী নিয়ে যাচ্ছি। এই এলাকার মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা কম। এতদিন তাদের বাড়তি ভাড়া দিয়ে সিএনজি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে। বাস চালুর পর নিম্ন আয়ের মানুষরা অনেক উপকার পাচ্ছেন। এতে আমারও ভালো লাগছে।’
পরিবহন মালিক সমিতির বুকিং মাস্টার দেলওয়ার হোসেন মিন্টু বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা সাতটি বাস দিয়ে লোকাল সার্ভিস চালু করেছি। যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি ও কম খরচে দ্রুত সময়ে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনে আরও বাস চালু করা হবে। আমাদের লোকাল বাস সার্ভিস এখন প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছি। বর্তমানে আমাদের সব গাড়ি গ্যাসে রূপান্তর করা হয়েছে। তাই আমাদের খরচও কমেছে। আশা করি, যাত্রী সেবায় আমরা এই সার্ভিস চালু রাখতে পারব।’