চাঞ্চল্যকর এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া উঠতি মডেল শিলাস্তি রহমান দ্বিতীয় দফার রিমান্ডে নতুন অনেক তথ্য দিয়েছেন। মডেল হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অপরাধের জগতে জড়িয়ে যাওয়া শিলাস্তি তার সব অপরাধের দায় চাপাচ্ছেন এমপি আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ওপর। রিমান্ডে শিলাস্তি কলকাতার সহকারী চলচ্চিত্র নির্মাতা শুভংকর রাজবংশীর নাম বলেছেন। ঘটনার পর থেকেই শুভংকর পলাতক রয়েছেন। তবে শিলাস্তি দাবি করেছেন, শুভংকর তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কোনো ছবি বা সিরিয়ালে সুযোগ পাইয়ে দেননি।
শুভংকর কলকাতার টালিগঞ্জে অভিনয়ের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিলেন শিলাস্তিকে। শিলাস্তিকে তিনি বলেছিলেন, তার সঙ্গে অনেক পরিচালকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। দ্রুতই তিনি নায়িকা হয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। আর টালিগঞ্জে নায়িকা হওয়ার সুযোগ পেলে ঢাকার সিনেমায় দ্রুতই ডাক পড়বে তার। তখন আর পরিচালকদের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে না। এই লোভে পা দিয়ে আরও ফেঁসে যান বলে শিলাস্তি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। পরে শুভংকর ছাড়াও কলকাতার আরও দুজনের সঙ্গে পরিচয় হয় শিলাস্তির। এই দুজন কলকাতায় অবৈধ মানি একচেঞ্জের সঙ্গে জড়িত। তাদের বহুমুখী ট্র্যাপে পড়ে শিলাস্তি নিজেও অবৈধ বিদেশি মুদ্রার পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে যান।
শিলাস্তি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, গত ছয় মাসে তিনি পাঁচবার হ্যানিট্র্যাপে পড়ে কলকাতায় গেছেন। তবে একবার পরিবারের সঙ্গে গেছেন বলে দাবি করেছেন। পরিবারকে তিনি পাঠিয়ে দিলেও পরে শাহীনের সঙ্গে কলকাতার অশোকা রোডের একটি ফ্ল্যাটে চলে যান।
প্রথম দফা রিমান্ডে অনেক তথ্য গোপন করার কারণে ডিবি পুলিশ তাকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেয়। এই রিমান্ডে অল্প সময়ের মধ্যে একজন উঠতি নারী মডেলের অপরাধের জগতে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিস্মিত করেছে।
গত ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। ২৩ মে শিলাস্তিসহ আরও দুজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত ২৪ মে তাদের আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। অন্য দুজন হলেন আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও তানভীর ভূঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজি। পরে আদালত শিলাস্তিসহ মোট তিনজনকে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রথম দফায় রিমান্ডে কিছু তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে ডিবি পুলিশ গত ৩১ মে পুনরায় আদালতে আসামিদের হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে।
আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ডিবি পুলিশ তাদের ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এডিসি মো. শাহিদুর রহমান গতকাল সকালে খবরের কাগজকে জানান, শিলাস্তি একাধিকবার কলকাতায় গেছেন। এর মধ্যে পলাতক শাহীন তাকে একবার নিয়ে গেছেন।
মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে ঢাকার উত্তরা ক্লাবে আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে শিলাস্তির পরিচয় হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। এ সময় শিলাস্তি নিজেকে একজন মডেল হিসেবে শাহীনের কাছে পরিচয় দেন। শাহীন তাকে জানান, কলকতায় তার ব্যবসা রয়েছে। সেখানে তার সঙ্গে একাধিক পরিচালকের যোগাযোগ রয়েছে। এরপর থেকেই শিলাস্তি শাহীনের খপ্পরে পড়েন।
সূত্র জানায়, শাহীন পরে শুভংকর রাজবংশীর সঙ্গে শিলাস্তির পরিচয় করে দিলে শুভংকরের সঙ্গে তার ‘বিশেষ সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে। শিলাস্তি কলকাতায় গেলে শুভংকরের সঙ্গে আলাদা করে সময় কাটাতেন।
সূত্র জানায়, শুভংকর তার আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে শিলাস্তির পরিচয় করিয়ে দেন। তারা হলেন কলকাতার গুয়াবাড়িয়ার রোডের বাসিন্দা প্রমথেশ চ্যাটার্জি ও জোড়াসাঁকো রোডের বাসিন্দা রতন হরিবালা। তারা দুজন মূলত বিদেশি মুদ্রা চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। শিলাস্তি তদন্ত কমকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, এই দুজন তাকে বিভিন্ন সময় মুদ্রা বহন করার জন্য কাজে লাগিয়েছেন। এর জন্য তিনি মূলত শাহীনকে দায়ী করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি তাদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তবে শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ অটুক থাকে। সূত্র জানায়, শিলাস্তি যতবার কলকতায় গেছেন, ততবার তার সব খরচ শাহীন দিয়েছেন। এ ছাড়া তাকে মোটা অঙ্কের শপিংও করে দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার কারণে এ ঘটনার মোটিভ উদঘাটন হচ্ছে না। তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার।