ঢাকা ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

সোনা পরিশোধন করেই বড় বাজার দুবাই

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:২৭ পিএম
সোনা পরিশোধন করেই বড় বাজার দুবাই
ছবি : সংগৃহীত

দুবাই বিশ্বের সোনা বেচাকেনার অন্যতম বড় বাজার। বাণিজ্যের দিক থেকে দেশটি বিশ্বের অন্যতম সেরা হলেও সোনার উৎপাদন কিংবা মজুতের কোনো তালিকাতেই সেরা ৫-এর মধ্যে নেই দুবাই। মূলত সোনা আমদানি ও পরিশোধন করে দেশটি। সেই সঙ্গে মান ও দামে সহজলভ্যতার কারণেই দুবাই মধ্যপ্রাচ্যের সোনার হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে। 

সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি কেবল একটি বিলাসবহুল ধাতুই নয়, বরং একটি মূল্যবান সম্পদও। বিশ্বের সোনার বাজারের কথা মনে এলেই আগে চলে আসে দুবাইয়ের নাম। এ কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) থেকেও বিশ্বব্যাপী দুবাই নামটিই বেশি পরিচিত। 

বিশ্বের বড় ৫ সোনার বাজারের একটি দুবাই

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লন্ডন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনার বাজার। আর তালিকায় বিশ্বের পঞ্চম সোনার বাজার দুবাই। তবে বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর সোনার বাজার হলো দুবাই মলে অবস্থিত গোল্ড সুক।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে লন্ডনে ১ হাজার ৫০০ টন সোনা কেনাবেচা হয়, যা বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নিউইয়র্ক, দেশটিতে ১ হাজার টন সোনা কেনাবেচা হয়। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, যেখানে ৭০০ টন সোনা কেনাবেচা হয়। এ ছাড়া তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা জাপানের ৫০০ টন এবং দুবাইতে ৪০০ টন সোনা বেচাকেনা হয়।

দুবাই একটি ক্রমবর্ধমান আর্থিক কেন্দ্র এবং এটি এশিয়ার একটি প্রধান সোনার বাজার। দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক অবস্থান এবং করহার কম হওয়ায় দেশটিকে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলেছে।

দুবাইয়ের সোনার বাজারের আকার

দুবাইয়ের সোনার বাজার বিশ্বের বৃহত্তম সোনার বাজারগুলোর মধ্যে একটি। ১৯ শতকে দুবাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে এবং সোনা এই বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। ২০ শতকের গোড়ার দিকে সোনার বাজারটি একটি আধুনিক বাজারে পরিণত হয় এবং এটি বিশ্বব্যাপী সোনার ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে ১৮ থেকে ২৪ ক্যারেটের সোনা পাওয়া যায়। এখানে বিভিন্ন ধরনের সোনার গহনা পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে আংটি, চেইন, ব্রেসলেট, ইয়াররিং ও নেকলেস।

দুবাই সোনার বাজারের মোট আকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে সোনা আমদানি ও রপ্তানির দিক থেকে দুবাই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। দুবাইয়ের সোনার বাজারের প্রধান অংশীদার হলো ভারত, চীন, ইতালি ও তুরস্ক। ভারত দুবাইয়ের বৃহত্তম সোনা আমদানিকারক দেশ।

বাংলাদেশের দুবাইনির্ভরতা কেমন

দুবাই থেকে বাংলাদেশের সোনা আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ দুবাই থেকে ৪৫ টন সোনা আমদানি করেছে। এর আগের বছর বাংলাদেশ দুবাই থেকে ৪১ টন সোনা আমদানি করেছিল। ২০১৯ সালে মাত্র ৩০ টন সোনা আমদানি করেছিল। দুবাই থেকে বাংলাদেশের সোনা আমদানির প্রধান কারণ হলো সোনা আমদানিতে শুল্ক কম, যা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য এই বাজারকে আকর্ষণীয় করে তোলে। ২০২২ সালে দুবাই থেকে বাংলাদেশের সোনা আমদানির মোট মূল্য ছিল ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। 

দুবাইয়ের আমদানিনির্ভরতা ও সোনা পরিশোধন

সংযুক্ত আরব আমিরাত আফ্রিকা থেকে অপরিশোধিত সোনা কিনে থাকে। ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর তারা আফ্রিকার দেশগুলো থেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের সোনা নিয়ে আসে। ২০১৪ সালে দুবাইয়ের কালোতি জেলায় পরিশোধনাগার নির্মাণে ৬ কোটি ডলারের বিশাল বিনিয়োগ করে দেশটি। এরপর থেকেই আমদানি আরও বেড়ে যায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত আফ্রিকান সোনার সবচেয়ে বড় গ্রাহক। কিন্তু ইউএই স্টোরেজ এবং ট্রেডিং সুবিধাসহ দুবাই মাল্টি কমোডিটিস সেন্টারের হিমায়িত অঞ্চলে একটি বিশ্বমানের শোধনাগার তৈরি করেছে। মূলত সোনা পরিশোধন করার প্রযুক্তি এবং স্টোরেজ এবং বাণিজ্যের অন্যান্য সুবিধা দুবাইকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সোনার হাবে পরিণত করেছে।

দুবাইতে সোনা কেন তুলনামূলক সস্তা

দুবাই সর্বদা সোনাকে কর থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। ট্যাক্স বাদ দেওয়ার কারণে দুবাইতে সোনার দাম সব সময় সস্তা ছিল। কারণ ক্রেতাদের শুধু সোনার গয়নার মূল্য পরিশোধ করতে হয়। দুবাইতে সোনা সস্তা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এটি। সে কারণে মানুষ দুবাই শহরে গিয়ে সোনা কিনতে পছন্দ করে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোনা উৎপাদনকারী ৫ দেশ

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোনা উৎপাদনকারী দেশ। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া ৩১০ টন সোনা উৎপাদন করে, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন (৩০০ টন); তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া (৩০০ টন)। এ ছাড়া চতুর্থ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (২০০ টন) এবং কানাডা (১৮০ টন) বিশ্বের শীর্ষ সোনা উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি সোনা মজুতকারী ৫ দেশ

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই মাসের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত আছে এমন পাঁচটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র (৮ হাজার ১৩৩ টন), জার্মানি (৩ হাজার ৩৭১ টন), ইতালি (২ হাজার ৪৫১), ফ্রান্স (২ হাজার ৪৩৬) ও রাশিয়া (১ হাজার ৯০৯ টন)। এই পাঁচটি দেশের সোনার মজুত বিশ্বের মোট মজুতের প্রায় ৭০ শতাংশ। এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দুবাই। মূলত আমদানিনির্ভর হওয়া সত্ত্বেও সোনার বাজারে দুবাইয়ের এমন সাফল্য সত্যিই অবাক করার মতো।

সোনা কেন মজুত করে রাখা হয়

সোনা একটি বিলাসবহুল ধাতু হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এটি শুধু একটি বিলাসবহুল ধাতুই নয়, একটি মূল্যবান সম্পদও। সোনা তার দীর্ঘস্থায়িতা, বিরলতা এবং আকর্ষণীয় রঙের জন্য মূল্যবান। সোনা মজুত রাখার অনেক কারণ রয়েছে। সোনাকে একটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন অর্থনীতি অস্থির হয়, তখনো সোনার মূল্য ঠিক থাকে। এটি মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা করার একটি দুর্দান্ত উপায়। পাশাপাশি সোনা একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগ বিকল্প। এটি একটি স্থিতিশীল সম্পদ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেটির মূল্য বাড়তে পারে। সোনা একটি বিনিয়োগ হিসাবে বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়, যেমন স্বর্ণের মুদ্রা, স্বর্ণের বার এবং স্বর্ণের গয়না। এ ছাড়া সোনা অনেক সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটিকে প্রায়ই ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য এবং শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কিছু ধর্মে সোনাকে পবিত্র ধাতু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে সোনা অন্যান্য কারণেও মজুত করে রাখা হয়। যেমন- কিছু লোক সোনাকে একটি বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে দেখে। এটিকে পোশাক, গয়না বা অন্যান্য জিনিস তৈরিতে ব্যবহার করে।

[সূত্র: আরব নিউজ, ব্লুমবার্গ, ইয়াহু ফাইন্যান্স, ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল, ইউরো নিউজ, জি বিজনেস]

জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বেড়েছে

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বেড়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে একটি চাকরি মেলা। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। সে কারণে দেশটির বেকারত্বের হারও বেড়েছে। তবে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটিতে গত মাসে দেশটির নিয়োগকর্তারা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করেছেন। খবর বিবিসির।

ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নিয়োগকর্তারা জুন মাসে ২ লাখ ৬ হাজার জনের নতুন কর্মসংস্থান করেছেন। এর আগে গত মে মাসে দেশটিতে ২ লাখ ৭২ হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে সেখান থেকে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছিল, জুন মাসে নতুন করে ২ লাখ ১৮ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

কর্মসংস্থান কম হওয়ায় সঙ্গত কারণেই জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার সামান্য বেড়ে ৪ দশমিক ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ের মধ্যে দেশটিতে মজুরি বৃদ্ধির হার গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর ছিল।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, সর্বশেষ পরিসংখ্যানটি মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমকে চলতি বছরের শেষের দিকে সুদহার কমানোর এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, মার্কিন অর্থনীতি জুনে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাধীন সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বোওয়ারস্টক ক্যাপিটাল পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী এমিলি বোওয়ারস্টক হিল বলেছেন, পরিসংখ্যানগুলো ‘তুলনামূলকভাবে অনুকূল’। তিনি আরও বলেন, এই পরিসংখ্যান দেশটির বাজারকে সতর্ক করার জন্য যথেষ্ট খারাপ নয় এবং ফেডের (ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম) উদ্বিগ্ন হওয়ার মতোও যথেষ্ট খারাপ নয়।

এমিলি বোওয়ারস্টক আরও বলেন, ফেড ‘খুব স্পষ্টভাবে টেলিগ্রাফ করেছে যে, এই বছর তারা একটি ‘কাট’ (সুদহার হ্রাস) আশা করছে।’

চলতি বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার আবার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। ব্যাংকটি গত বছরের জুলাই থেকেই এই পরিসরের সুদহার বজায় রেখেছে।

গত বুধবার প্রকাশিত হওয়া মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বৈঠকের কার্যবিবরণীতে নীতিনির্ধারকরা স্বীকার করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি মন্থর হচ্ছে এবং জিনিসপত্রের ‘মূল্যের চাপ কমছে’।

যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজারগুলো দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম) সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সুদহার কমানোর প্রায় ৭২ শতাংশ সম্ভাবনার ওপর বাজি ধরছে এবং ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বার সুদহার কমানোর ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের মূল্য নির্ধারণ করছেন। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজার (ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট) হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে আর্থিক সম্পদ যেমন- স্টক, বন্ড, ডেরিভেটিভ ও মুদ্রা, ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন করা হয়।

খবরে বলা হয়, তবে জুন মাসে কর্মকর্তারা মার্চের পূর্বাভাস বাতিল করে দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছিল, চলতি বছরে সুদের হার ১ শতাংশের তিন-চতুর্থাংশ পয়েন্ট কমে যাবে। এর অর্থ হলো এবার গ্রীষ্মে শুরু হয়ে ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সুদের হার কমানো অব্যাহত থাকত।

খবরে বলা হয়, জুন মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ‘স্থিতিশীল’ থাকায় এবং কর্মসংস্থানের বাজার শক্তিশালী বলে ইঙ্গিত দেওয়া বিভিন্ন তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে, ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। এখন তারা মনে করছে, এই বছর সুদের হার কেবল একবার, মাত্র একটি কোয়ার্টার পয়েন্ট কমানো হবে।

বিবিসি জানায়, বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সাধারণত সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ফেডের পথনির্দেশ অনুসরণ করে। অর্থাৎ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর ফলে অন্য দেশগুলোতেও সুদহার কমতে পারে। যদিও মে মাসে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেছেন, ‘এমন কোনো আইন নেই যে, ফেডকেই (সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে) প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।’

ভৈরবে বস্তায় আদা চাষে বাড়ছে আগ্রহ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
ভৈরবে বস্তায় আদা চাষে বাড়ছে আগ্রহ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ঝগড়ারচরে বাড়ির আঙিনায় আদা বাগানের পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাড়ির আঙিনাসহ অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এ বছর উপজেলার ঝগড়ারচর, আতকাপাড়া, বাঁশগাড়ি, গজারিয়া ও মানিকদীতে সাড়ে ছয় হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক। এ পন্থায় আদা চাষে কৃষকরা অনেকটা লাভবান হওয়ার আশা করছেন। বস্তাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা খরচ হলেও প্রতি বস্তায় গড়ে এক থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন তারা। সে হারে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও অনেকটাই লাভবান হবেন আদাচাষিরা। আর বস্তায় আদা চাষ আরও বৃদ্ধি পেলে একসময় আমাদের দেশ থেকেও আদা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এ বছর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের পতিত জমি, বসতবাড়ির আঙিনা কিংবা সুউচ্চ ভবনের ছাদেও আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করছেন। উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন, গজারিয়া, শিবপুর এলাকায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। 

জানা গেছে, এভাবে আদা চাষ করলে তুলনামূলকভাবে রোগবালাই হয় না এবং খরচও অনেক কম হয়। চাষের জায়গাটি ছায়াযুক্ত হওয়ার ফলে ফলনও ভালো হয়। প্রতি বস্তায় তিনটি করে বীজ রোপণ করা হয়। এতে প্রতি বস্তায় এক কেজি করে আদা হলেও এখানে সাড়ে ছয় হাজার কেজি আদা উৎপাদন হবে। বাজারদর ভালো থাকলে কম করে হলেও ৬ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন তারা। 

এদিকে অনেকেই বাসাবাড়ির ছাদ, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদি পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বস্তায় উৎপাদিত আদা পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে আয় হবে লাখ লাখ টাকা। এতে দেশে আদার চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়াতে উঠান বৈঠক ও পরামর্শ দিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। 

কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আতকাপাড়া, নয়াহাটির কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘আমরা কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম বস্তায় আদা চাষ করে আবার না লোকসানে পড়ি। এখন দেখছি ফলন ভালো হচ্ছে। একেক বস্তায় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকা খরচ হয়। ফলন হয় একেক বস্তায় কম করে হলেও এক থেকে দেড় কেজি। প্রায় দুই হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। আমাদের অনেক টাকা আয় হবে।’

ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কবির বলেন, ‘আমি পেশায় একজন চিকিৎসক। আমার চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি কৃষির প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ কারও বাড়ির আঙিনা, এমনকি অনাবাদি জমি যেন খালি না রাখে। কিছু একটা হলেও যেন আবাদ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার অনাবাদি জমিসহ বাড়ির আঙিনাতেও বিভিন্ন সবজি বাগান আর ফলদ গাছ লাগিয়েছি। বস্তায় আদা চাষ এটা আমার কাছে নতুন পদ্ধতি বলে মনে হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগমের পরামর্শ নিয়ে আমার বাড়ির আঙিনায় এক হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। এক হাজার বস্তা থেকে কম করে হলেও আশা করছি প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কেজি আদা উত্তোলন করা যাবে। এটা সম্পূর্ণ দেশি আদা।’ 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, ‘এ বছর ভৈরবে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ ও উঠান বৈঠকসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে বস্তায় আদা চাষে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছেন। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অধিক পরিমাণে বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এভাবে আদা চাষ করার ফলে কৃষকদের অল্প খরচ হয়। একেকটি বস্তায় এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়া যায়। এভাবে আদা চাষ করলে ফলন ভালো হয়। পোকামাকড়ের উপদ্রব হয় না। এতে করে কৃষকরা অনেক লাভবান হতে পারবেন। এ আদা পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও বাণিজ্যিকভাবে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। বর্তমান সময়ে বস্তায় আদা চাষ বাণিজ্যিক কৃষিতে চলে যাচ্ছে। বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পেলে আমাদের দেশে বাইরে থেকে আর আমদানি করতে হবে না। আমরা আশা করছি, এ বছরের তুলনায় সামনের বছর বস্তায় আদা চাষ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে।’

ময়মনসিংহে মাছ-সবজির বাজারে উত্তাপ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
ময়মনসিংহে মাছ-সবজির বাজারে উত্তাপ
ময়মনসিংহ শহরতলির শম্ভু বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি ও মাছ। ছবি: খবরের কাগজ

ময়মনসিংহে বেড়েছে সব ধরনের মাছ ও সবজির দাম। মাছের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে গরু, খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দাম বাড়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।

শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে শহরতলির শম্ভুগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সিলভার কার্প ২৮০, দেশি পুঁটি ও কৈ ২০০, শিং ৪০০, শোল ৭৫০, মাঝারি আকারের রুই ৪০০, পাঙাশ ১৮০, তেলাপিয়া ২০০, টেংরা ৩৮০, পাবদা ৪৯০, মলা ৬৫০, কাতল ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেগুন ৮০, কচুরমুখী ৮০, করলা ৪০, শসা ৮০, গাজর ১৬০, টমেটো ১৫০, লতা ৪০, ঢ্যাঁড়স ৫০, কাঁচা পেপে ৫০, পটোল ৫০ কাঁকরোল ৫০ ও মিষ্টি লাউ ৩০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা হালি দরে। সবচেয়ে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। বর্তমানে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে গরুর মাংস কেজিতে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ ও ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কথা হয় মাছ বিক্রেতা ফারুক মিয়ার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে মাছের বিক্রিও কমেছে।

বাজারে মাছের ঘাটতি না থাকলেও দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা খুচরা বিক্রেতা। ভোরে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছ নিয়ে আসেন পাইকাররা। তারা এখন আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করায় আমরাও ক্রেতাদের কাছে বেশি দামেই বিক্রি করছি।’

সবজি বিক্রেতা মো. ফরাজি জানান, সদরের চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক নিচু ফসলি জমিতে পানি ঢুকেছে। কৃষকের অনেক সবজি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কাঁচা সড়কগুলোতে খানাখন্দের কারণেও বাজারে সবজি নিয়ে আসার পরিবহন খরচ বেড়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা সাইদুল মিয়া বলেন, ‘গত সপ্তাহেও মুরগি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এখন বাজারে সরবরাহ বেশি। পাইকাররা দাম কমিয়ে দেওয়ায় আমরা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’

হাতে ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে এসেছিলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চলছে। বাজারে এসে দেখি মাছ-সবজির বাজার উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তাই খরচ বাঁচাতে এক কেজি মাছ ও কিছু সবজি কিনেছি।’

পাঙাশ মাছ কিনছিলেন ভ্যানচালক মুজার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল সিলভার কার্প কিনব। কিন্তু মাঝারি আকারের এই মাছটি ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এত দামে মাছ খাওয়ার স্বাদ থাকলেও সাধ্য নেই। তাই ১৮০ টাকা কেজি দরে এক কেজি ওজনের একটি পাঙাশ মাছ কিনেছি। সঙ্গে কিছু তরিতরকারি কিনে বাড়িতে যাব।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘বাজারে অভিযান চালানো হবে। বিক্রিতে কোনো অসংগতির প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পেঁপে চাষে সফল ধামরাইয়ের কৃষকরা

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
পেঁপে চাষে সফল ধামরাইয়ের কৃষকরা
ঢাকার ধামরাইয়ে রোয়াইল ইউনিয়নে পেঁপে বাগান। ছবি: খবরের কাগজ

পেঁপে চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন ঢাকার ধামরাইয়ের কৃষকরা। উপজেলার প্রায় ৬২ হেক্টর জমিতে চলতি বছরে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। এতে ভিন্ন পেশা ছেড়ে অনেকেই পেঁপে চাষে মনোনিবেশ করেছেন। তবে উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পেঁপে চাষ হয়েছে।

ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৬২ হেক্টর জমিতে চলতি বছরে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। এতে একাধিক কৃষক পেঁপে চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। ফিরে এসেছে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা। অল্প খরচে বেশি আয়ের পথ সবজি চাষ। তাদের মধ্যে পেঁপে চাষ অন্যতম। খরচ কম লাভ বেশি। অন্য ফসলের চেয়ে পেঁপে চাষে খরচ কম। রোগবালাইয়ের ঝামেলাও নেই। ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে অনেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান না বলে জানান কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধামরাই উপজেলায় প্রায় ৬২ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পেঁপে চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে বাজারে পাইকারি ও স্থানীয় লোকজনের কাছে বিক্রি করছেন।

রোয়াইল ইউনিয়নের খরারচড় গ্রামের পেঁপে চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আগে রিকশা চালাতাম। তবে এবার রিকশা বাদ দিয়ে সবজি চাষ করছি। আমি দুই বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁপের দাম ২৮-৩৩ টাকা। আমি প্রায় ১ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। এভাবেই যদি পেঁপের দাম থাকে তা হলে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। খরচ অনুযায়ী পেঁপের বাজার বেশ ভালো।’

আমিনুল আরও বলেন, ‘পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছি। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরে এসেছে। সবজি চাষেই নিজের পরিবারে সুখ ফিরে এসেছে। আগামীতে পেঁপে চাষের সঙ্গে অন্য সিজনাল সবজি চাষ করব।’

বহুতকুল এলাকার একলাস খান বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে তাই বেশি জমিতে পেঁপে চাষ করতে পারিনি। তারপরও ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা। কারণ সার বিষ কম লাগে। শুধু ভারী বৃষ্টি হলে উঁচু পেঁপে গাছের সঙ্গে বাঁশ দিয়ে শক্ত করে খুঁটি দিতে হয়। তা ছাড়া অন্য কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আমি ৪০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। যদি বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হয় তা হলে আরও প্রায় ১ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারব।’ 

তবে একলাস খান ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আমাদের সবজি চাষে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করেনি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আসেন বাজারে বসেই কথা বলে চলে যান। শুধু বলেন, কোনো সমস্যা হলে জানাইয়েন। কিন্তু পেঁপে গাছ দেখে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কথা বলেন না। আমরা এলাকার ফার্মেসি থেকে কোনো ওষুধ লাগলে নিয়ে যাই, তাদের কথা মতো সেই সার বিষ জমিতে ও গাছে দিই।’

ইব্রাহিম হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘এখন সারা বছরই বাজারে কাঁচা পাকা পেঁপে পাওয়া যায়। দাম স্বাভাবিকের মতোই আছে। ৩০-৩৫ টাকায় কেনা যায়। তবে বেশির ভাগ পেঁপেই ঢাকার দিকে চলে যায়।’

ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সবজি চাষের মধ্যে পেঁপে অন্যতম। সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। পেঁপে চাষে খরচ কম লাগে তা ছাড়া বেশ কিছু দিন সংরক্ষণ করা যায়। আমরা কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষের জন্য বলে থাকি। এই চাষের জন্য ব্রঙ্ক এবং জিংক সার ব্যবহার করতে বলি। ব্যালেন্স সার ব্যবহার করলে পেঁপে গাছগুলো ভেঙে পড়ে না। ধামরাইতে সবজি চাষের জন্য প্রায় ৬২ হেক্টরের মতো জমি রয়েছে। কৃষকরা সারা বছর পেঁপে চাষ করে বাজারে কম বেশি সবজি বিক্রি করে নগদ টাকা আয় করতে পারেন। পেঁপে গাছগুলো ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই খাটো জাতের হাইব্রিড পেপের চাষ করলে ঝুঁকি কম।’

আখাউড়া স্থলবন্দরে বেড়েছে রাজস্ব আয়

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:১১ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:১১ পিএম
আখাউড়া স্থলবন্দরে বেড়েছে রাজস্ব আয়
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে একটি পণ্যবাহী ট্রাক। ছবি: খবরের কাগজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও রাজস্ব আয় বেড়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা রাজ্যসহ সাতটি পাহাড়ি রাজ্যে ছোট-বড় মাছ, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, বর্জ্যতুলা, রড, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টিকসামগ্রী, মেলামাইনসামগ্রী, ভোজ্যতেলসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্য রপ্তানি হয়।

স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি হয় ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকার, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৫১ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ৫১৯ টাকা বেশি। 

অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ৭ কোটি ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ৯ টাকার পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয় ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৫২ দশমিক ৮ টাকার পণ্য, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৪০ লাখ ৬৯ হাজার ৫১ টাকা বেশি। আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে আদা, পেঁয়াজ, জিরা ও পাথর।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বাবদ রাজস্ব আয় হয় ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৬ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি বাবদ রাজস্ব আয় হয় ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৮ টাকা, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৪ কোটি ১২ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৮ টাকা বেশি।

২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসে এ বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি হয় ৩ হাজার ৯২৩ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন, আগস্টে ৪ হাজার ৬৪ দশমিক ৮৬ টন, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৫৪৬ দশমিক ১৪ টন, অক্টোবরে ৪ হাজার ৬০১ দশমিক ৫১ টন, নভেম্বরে ৫ হাজার ৪৪৬ দশমিক ১৫ টন, ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩৩৪ দশমিক ৮৩ টন, জানুয়ারিতে ৫ হাজার ৮২৫ দশমিক ৯৬ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৯৬৭ দশমিক ৩৯ টন, মার্চ মাসে ৩ হাজার ৬১৩ দশমিক ১৯ টন, এপ্রিলে ৩ হাজার ৫০৩ দশমিক ৯৮ টন, মে মাসে ৪ হাজার ৯৯৮ দশমিক ৪১ টন, জুনে ৩ হাজার ৯৫৯ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি হয় ৩ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৪১ মেট্রিক টন পণ্য, আগস্টে ২ হাজার ৪১৫ দশমিক ৯৫ টন, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ২৪২ দশমিক ৯২ টন, অক্টোবরে ৪৪৯৫ দশমিক ৯৭ টন, নভেম্বরে ৫ হাজার ২৯৮ দশমিক ৭৩ টন, ডিসেম্বরে ৬ হাজার ৩৬১ দশমিক ৭৩ টন, জানুয়ারিতে ৬ হাজার ২৪১ দশমিক ৩৪ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৬ হাজার ৬৪৯ দশমিক ৭ টন, মার্চে ৫ হাজার ৪৫৬ দশমিক ১৮ টন, এপ্রিলে ৪ হাজার ৭৭০ দশমিক ২৩ টন, মে মাসে ৪ হাজার ১৮৮ দশমিক ৭৩ টন ও জুনে ২ হাজার ৮৩১ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন।

বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে রপ্তানি করা হয় ১৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন পণ্য, আগস্টে ৫০০ টন, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৫০০ টন, অক্টোবরে ১৩ হাজার টন, নভেম্বরে ১৬ হাজার ৭৫০ টন, ডিসেম্বরে ৩ হাজার টন, জানুয়ারিতে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ১০ টন, মার্চে ১ হাজার টন, এপ্রিল ও মে মাসেও বন্দর দিয়ে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। জুন মাসে মাত্র সাত মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাইয়ে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা হয় ৫১৯ টন, আগস্টে ৩ হাজার ৪৮৮ দশমিক ১৫ টন, সেপ্টেম্বরে ১২ হাজার ৯৪০ টন, অক্টোবরে ৬৮৩ টন, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। জানুয়ারিতে ৭৭০ টন, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৯৩০ টন, মার্চে ৩৮ টন, এই অর্থবছরের এপ্রিল ও মে মাসেও কোনো ধরনের পণ্য আমদানি হয়নি। জুন মাসে মাত্র ১০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়।

এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দরে ভ্রমণ কর বাবদ রাজস্ব আয় হয় ১৩ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্রমণ কর বাবদ আয় হয় ৭ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা বেশি।
স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও শোয়েব ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. রাজীব ভূঁইয়া জানান, অনুমোদন না থাকায় এ বন্দর দিয়ে হাতে গোনা কয়েকটি জাতের পণ্য আমদানি করা হয়। মূলত আখাউড়া-আশুগঞ্জ ফোর লেন সড়কের জন্য এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আনায় আমদানির পরিমাণ ও রাজস্ব আয় বেড়ে যায়।

স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পণ্য রপ্তানি বাড়ার বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। চাহিদা আছে এমন বৈধ পণ্যের একটি তালিকা নিয়ে আমরা শিগগিরই এনবিআরের কাছে যাব। আশা করি চলতি অর্থবছরেই এনবিআর পণ্যগুলো আমদানির জন্য অনুমোদন দেবে।’ 

স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব বলেন, ‘এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই ভালো দিক। নতুন নতুন আরও কী পণ্য রপ্তানি করা যায় আমাদের সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

আখাউড়া স্থল শুল্কস্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কায়ুম তালুকদার বলেন, ‘পণ্য আমদানি-রপ্তানি করার সময় আমরা ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন (একই ছাদের নিচে সব সেবা) করা হলে বাণিজ্যের গতি বাড়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।’