![সোনা পরিশোধন করেই বড় বাজার দুবাই](uploads/2023/12/14/1702568987.Dubai Gold Market OKk.jpg)
দুবাই বিশ্বের সোনা বেচাকেনার অন্যতম বড় বাজার। বাণিজ্যের দিক থেকে দেশটি বিশ্বের অন্যতম সেরা হলেও সোনার উৎপাদন কিংবা মজুতের কোনো তালিকাতেই সেরা ৫-এর মধ্যে নেই দুবাই। মূলত সোনা আমদানি ও পরিশোধন করে দেশটি। সেই সঙ্গে মান ও দামে সহজলভ্যতার কারণেই দুবাই মধ্যপ্রাচ্যের সোনার হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে।
সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি কেবল একটি বিলাসবহুল ধাতুই নয়, বরং একটি মূল্যবান সম্পদও। বিশ্বের সোনার বাজারের কথা মনে এলেই আগে চলে আসে দুবাইয়ের নাম। এ কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) থেকেও বিশ্বব্যাপী দুবাই নামটিই বেশি পরিচিত।
বিশ্বের বড় ৫ সোনার বাজারের একটি দুবাই
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লন্ডন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনার বাজার। আর তালিকায় বিশ্বের পঞ্চম সোনার বাজার দুবাই। তবে বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর সোনার বাজার হলো দুবাই মলে অবস্থিত গোল্ড সুক।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে লন্ডনে ১ হাজার ৫০০ টন সোনা কেনাবেচা হয়, যা বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নিউইয়র্ক, দেশটিতে ১ হাজার টন সোনা কেনাবেচা হয়। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, যেখানে ৭০০ টন সোনা কেনাবেচা হয়। এ ছাড়া তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা জাপানের ৫০০ টন এবং দুবাইতে ৪০০ টন সোনা বেচাকেনা হয়।
দুবাই একটি ক্রমবর্ধমান আর্থিক কেন্দ্র এবং এটি এশিয়ার একটি প্রধান সোনার বাজার। দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক অবস্থান এবং করহার কম হওয়ায় দেশটিকে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলেছে।
দুবাইয়ের সোনার বাজারের আকার
দুবাইয়ের সোনার বাজার বিশ্বের বৃহত্তম সোনার বাজারগুলোর মধ্যে একটি। ১৯ শতকে দুবাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে এবং সোনা এই বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। ২০ শতকের গোড়ার দিকে সোনার বাজারটি একটি আধুনিক বাজারে পরিণত হয় এবং এটি বিশ্বব্যাপী সোনার ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে ১৮ থেকে ২৪ ক্যারেটের সোনা পাওয়া যায়। এখানে বিভিন্ন ধরনের সোনার গহনা পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে আংটি, চেইন, ব্রেসলেট, ইয়াররিং ও নেকলেস।
দুবাই সোনার বাজারের মোট আকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে সোনা আমদানি ও রপ্তানির দিক থেকে দুবাই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। দুবাইয়ের সোনার বাজারের প্রধান অংশীদার হলো ভারত, চীন, ইতালি ও তুরস্ক। ভারত দুবাইয়ের বৃহত্তম সোনা আমদানিকারক দেশ।
বাংলাদেশের দুবাইনির্ভরতা কেমন
দুবাই থেকে বাংলাদেশের সোনা আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ দুবাই থেকে ৪৫ টন সোনা আমদানি করেছে। এর আগের বছর বাংলাদেশ দুবাই থেকে ৪১ টন সোনা আমদানি করেছিল। ২০১৯ সালে মাত্র ৩০ টন সোনা আমদানি করেছিল। দুবাই থেকে বাংলাদেশের সোনা আমদানির প্রধান কারণ হলো সোনা আমদানিতে শুল্ক কম, যা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য এই বাজারকে আকর্ষণীয় করে তোলে। ২০২২ সালে দুবাই থেকে বাংলাদেশের সোনা আমদানির মোট মূল্য ছিল ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
দুবাইয়ের আমদানিনির্ভরতা ও সোনা পরিশোধন
সংযুক্ত আরব আমিরাত আফ্রিকা থেকে অপরিশোধিত সোনা কিনে থাকে। ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর তারা আফ্রিকার দেশগুলো থেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের সোনা নিয়ে আসে। ২০১৪ সালে দুবাইয়ের কালোতি জেলায় পরিশোধনাগার নির্মাণে ৬ কোটি ডলারের বিশাল বিনিয়োগ করে দেশটি। এরপর থেকেই আমদানি আরও বেড়ে যায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত আফ্রিকান সোনার সবচেয়ে বড় গ্রাহক। কিন্তু ইউএই স্টোরেজ এবং ট্রেডিং সুবিধাসহ দুবাই মাল্টি কমোডিটিস সেন্টারের হিমায়িত অঞ্চলে একটি বিশ্বমানের শোধনাগার তৈরি করেছে। মূলত সোনা পরিশোধন করার প্রযুক্তি এবং স্টোরেজ এবং বাণিজ্যের অন্যান্য সুবিধা দুবাইকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সোনার হাবে পরিণত করেছে।
দুবাইতে সোনা কেন তুলনামূলক সস্তা
দুবাই সর্বদা সোনাকে কর থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। ট্যাক্স বাদ দেওয়ার কারণে দুবাইতে সোনার দাম সব সময় সস্তা ছিল। কারণ ক্রেতাদের শুধু সোনার গয়নার মূল্য পরিশোধ করতে হয়। দুবাইতে সোনা সস্তা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এটি। সে কারণে মানুষ দুবাই শহরে গিয়ে সোনা কিনতে পছন্দ করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোনা উৎপাদনকারী ৫ দেশ
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোনা উৎপাদনকারী দেশ। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া ৩১০ টন সোনা উৎপাদন করে, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন (৩০০ টন); তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া (৩০০ টন)। এ ছাড়া চতুর্থ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (২০০ টন) এবং কানাডা (১৮০ টন) বিশ্বের শীর্ষ সোনা উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সোনা মজুতকারী ৫ দেশ
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই মাসের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত আছে এমন পাঁচটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র (৮ হাজার ১৩৩ টন), জার্মানি (৩ হাজার ৩৭১ টন), ইতালি (২ হাজার ৪৫১), ফ্রান্স (২ হাজার ৪৩৬) ও রাশিয়া (১ হাজার ৯০৯ টন)। এই পাঁচটি দেশের সোনার মজুত বিশ্বের মোট মজুতের প্রায় ৭০ শতাংশ। এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দুবাই। মূলত আমদানিনির্ভর হওয়া সত্ত্বেও সোনার বাজারে দুবাইয়ের এমন সাফল্য সত্যিই অবাক করার মতো।
সোনা কেন মজুত করে রাখা হয়
সোনা একটি বিলাসবহুল ধাতু হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এটি শুধু একটি বিলাসবহুল ধাতুই নয়, একটি মূল্যবান সম্পদও। সোনা তার দীর্ঘস্থায়িতা, বিরলতা এবং আকর্ষণীয় রঙের জন্য মূল্যবান। সোনা মজুত রাখার অনেক কারণ রয়েছে। সোনাকে একটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন অর্থনীতি অস্থির হয়, তখনো সোনার মূল্য ঠিক থাকে। এটি মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা করার একটি দুর্দান্ত উপায়। পাশাপাশি সোনা একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগ বিকল্প। এটি একটি স্থিতিশীল সম্পদ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেটির মূল্য বাড়তে পারে। সোনা একটি বিনিয়োগ হিসাবে বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়, যেমন স্বর্ণের মুদ্রা, স্বর্ণের বার এবং স্বর্ণের গয়না। এ ছাড়া সোনা অনেক সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটিকে প্রায়ই ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য এবং শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কিছু ধর্মে সোনাকে পবিত্র ধাতু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে সোনা অন্যান্য কারণেও মজুত করে রাখা হয়। যেমন- কিছু লোক সোনাকে একটি বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে দেখে। এটিকে পোশাক, গয়না বা অন্যান্য জিনিস তৈরিতে ব্যবহার করে।
[সূত্র: আরব নিউজ, ব্লুমবার্গ, ইয়াহু ফাইন্যান্স, ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল, ইউরো নিউজ, জি বিজনেস]