ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও রাজস্ব আয় বেড়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা রাজ্যসহ সাতটি পাহাড়ি রাজ্যে ছোট-বড় মাছ, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, বর্জ্যতুলা, রড, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টিকসামগ্রী, মেলামাইনসামগ্রী, ভোজ্যতেলসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্য রপ্তানি হয়।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি হয় ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকার, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৫১ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ৫১৯ টাকা বেশি।
অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ৭ কোটি ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ৯ টাকার পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয় ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৫২ দশমিক ৮ টাকার পণ্য, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৪০ লাখ ৬৯ হাজার ৫১ টাকা বেশি। আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে আদা, পেঁয়াজ, জিরা ও পাথর।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বাবদ রাজস্ব আয় হয় ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৬ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি বাবদ রাজস্ব আয় হয় ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৮ টাকা, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৪ কোটি ১২ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৮ টাকা বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসে এ বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি হয় ৩ হাজার ৯২৩ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন, আগস্টে ৪ হাজার ৬৪ দশমিক ৮৬ টন, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৫৪৬ দশমিক ১৪ টন, অক্টোবরে ৪ হাজার ৬০১ দশমিক ৫১ টন, নভেম্বরে ৫ হাজার ৪৪৬ দশমিক ১৫ টন, ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩৩৪ দশমিক ৮৩ টন, জানুয়ারিতে ৫ হাজার ৮২৫ দশমিক ৯৬ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৯৬৭ দশমিক ৩৯ টন, মার্চ মাসে ৩ হাজার ৬১৩ দশমিক ১৯ টন, এপ্রিলে ৩ হাজার ৫০৩ দশমিক ৯৮ টন, মে মাসে ৪ হাজার ৯৯৮ দশমিক ৪১ টন, জুনে ৩ হাজার ৯৫৯ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন।
অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি হয় ৩ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৪১ মেট্রিক টন পণ্য, আগস্টে ২ হাজার ৪১৫ দশমিক ৯৫ টন, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ২৪২ দশমিক ৯২ টন, অক্টোবরে ৪৪৯৫ দশমিক ৯৭ টন, নভেম্বরে ৫ হাজার ২৯৮ দশমিক ৭৩ টন, ডিসেম্বরে ৬ হাজার ৩৬১ দশমিক ৭৩ টন, জানুয়ারিতে ৬ হাজার ২৪১ দশমিক ৩৪ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৬ হাজার ৬৪৯ দশমিক ৭ টন, মার্চে ৫ হাজার ৪৫৬ দশমিক ১৮ টন, এপ্রিলে ৪ হাজার ৭৭০ দশমিক ২৩ টন, মে মাসে ৪ হাজার ১৮৮ দশমিক ৭৩ টন ও জুনে ২ হাজার ৮৩১ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন।
বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে রপ্তানি করা হয় ১৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন পণ্য, আগস্টে ৫০০ টন, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৫০০ টন, অক্টোবরে ১৩ হাজার টন, নভেম্বরে ১৬ হাজার ৭৫০ টন, ডিসেম্বরে ৩ হাজার টন, জানুয়ারিতে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ১০ টন, মার্চে ১ হাজার টন, এপ্রিল ও মে মাসেও বন্দর দিয়ে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। জুন মাসে মাত্র সাত মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাইয়ে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা হয় ৫১৯ টন, আগস্টে ৩ হাজার ৪৮৮ দশমিক ১৫ টন, সেপ্টেম্বরে ১২ হাজার ৯৪০ টন, অক্টোবরে ৬৮৩ টন, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। জানুয়ারিতে ৭৭০ টন, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৯৩০ টন, মার্চে ৩৮ টন, এই অর্থবছরের এপ্রিল ও মে মাসেও কোনো ধরনের পণ্য আমদানি হয়নি। জুন মাসে মাত্র ১০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দরে ভ্রমণ কর বাবদ রাজস্ব আয় হয় ১৩ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্রমণ কর বাবদ আয় হয় ৭ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা বেশি।
স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও শোয়েব ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. রাজীব ভূঁইয়া জানান, অনুমোদন না থাকায় এ বন্দর দিয়ে হাতে গোনা কয়েকটি জাতের পণ্য আমদানি করা হয়। মূলত আখাউড়া-আশুগঞ্জ ফোর লেন সড়কের জন্য এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আনায় আমদানির পরিমাণ ও রাজস্ব আয় বেড়ে যায়।
স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পণ্য রপ্তানি বাড়ার বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। চাহিদা আছে এমন বৈধ পণ্যের একটি তালিকা নিয়ে আমরা শিগগিরই এনবিআরের কাছে যাব। আশা করি চলতি অর্থবছরেই এনবিআর পণ্যগুলো আমদানির জন্য অনুমোদন দেবে।’
স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব বলেন, ‘এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই ভালো দিক। নতুন নতুন আরও কী পণ্য রপ্তানি করা যায় আমাদের সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
আখাউড়া স্থল শুল্কস্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কায়ুম তালুকদার বলেন, ‘পণ্য আমদানি-রপ্তানি করার সময় আমরা ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন (একই ছাদের নিচে সব সেবা) করা হলে বাণিজ্যের গতি বাড়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।’