![তেজোদ্দীপ্ত কণ্ঠে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা বাইডেনের](uploads/2024/03/09/1709922072.Bidenkk.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বৃহস্পতিবার স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিয়েছেন। এটি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তার দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণগুলোর একটি।
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে জো বাইডেন ও রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আবার দেখা যেতে পারে মুখোমুখি লড়তে। তবে ইউক্রেন ইস্যু, অভিবাসন সমস্যা ও ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় দেশের ভেতরে চাপের মুখে রয়েছেন বাইডেন।
সেই চাপ থেকে উত্তরণের চেষ্টা গত বৃহস্পতিবার দেখা গেছে। বাইডেন নিজ ভাষণে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের কড়া সমালোচনা করেছেন। নিজেদের মধ্যকার পার্থক্যগুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। সাধারণত তাকে যে রকম বক্তব্য দিতে শোনা যায়, এটি সে রকম কোনো ভাষণ ছিল না। রয়টার্স এ ভাষণকে বলেছে ‘জ্বালাময়ী’, অন্যদিকে সিএনএন একে অভিহিত করেছে ‘অপ্রত্যাশিত’ হিসেবে।
বাইডেনের বয়স নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি দায়িত্ব সামলানোর জন্য স্বাস্থ্যগতভাবে ঠিক আছেন কি না, তা নিয়েও ছিল গুঞ্জন। কিন্তু সেসব পাশ কাটিয়ে বাইডেনকে স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে দেখা গেছে বেশ তেজোদ্দীপ্ত।
বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। তিনি রাশিয়ার দিকে মাথা নত করেছেন এবং মার্কিন অভিবাসন সামাল দেওয়া সংক্রান্ত বিল বানচাল করে দিয়েছেন।
কংগ্রেসের উদ্দেশে রাখা ৬৮ মিনিটের ভাষণে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বাইডেন রিপাবলিকানদের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য তুলে ধরেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল হামলার সত্য ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
এ ছাড়া বাইডেন জানান, মধ্যপ্রাচ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে কাজ করছেন তিনি। ইসরায়েল যাতে সহায়তার বিষয়টিকে গাজা প্রশ্নে দর-কষাকষিতে ব্যবহার না করে, সে জন্য তাদের সতর্কও করে দিয়েছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বক্তব্যের বড় একটি অংশজুড়ে ট্রাম্পকে নিয়ে কথা বলেছেন বাইডেন। তবে সরাসরি ট্রাম্পের নাম নেননি তিনি। বক্তব্যের শুরুতে বাইডেন বলেন, দেশে ও বিদেশে গণতন্ত্র হুমকির মুখে আছে। পুতিনকে ন্যাটো দেশে হামলা চালানোর আহ্বান জানানোর বিষয়টি নিয়েও ট্রাম্পের সমালোচনা করেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘আমার পূর্বসূরি, সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলেছেন- আপনি যা চান, তা-ই করুন। আমি মনে করি, এটি আপত্তিকর, বিপজ্জনক ও অগ্রহণযোগ্য।’ তিনি স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে পুতিনের উদ্দেশেও বার্তা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা সরে যাব না।’ ইউক্রেনের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য কংগ্রেসকে চাপের মুখে রেখেছেন বাইডেন।
ট্রাম্প ও রিপাবলিকরা ৬ জানুয়ারির ইতিহাস বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমার পূর্বসূরি ও আপনাদের মধ্যে কিছু মানুষ ৬ জানুয়ারির সত্যটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি তা করব না। আপনি শুধু জিতলে আপনার দেশকে ভালোবাসবেন, তা হয় না।’
বাইডেন ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার ইসুতে নিজ দলের ভেতরেও চাপের মুখে রয়েছেন। তবে ভাষণের দিন ডেমোক্র্যাটদের দেখা যায় করতালি ও উল্লাস প্রকাশ করে বাইডেনকে সমর্থন জানাতে।
বাইডেনের কড়া সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিজ সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বাইডেনের পাল্টা সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘তিনি বলছেন- আমি রুশ নেতার সামনে মাথা ঝুঁকিয়েছি। অথচ সে তাদের ইউক্রেনসহ সবই দিয়েছে।’
ট্রাম্প বাইডেন প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘তাকে কথা বলার সময় অনেক ক্ষিপ্ত দেখাচ্ছিল। ভারসাম্য হারাতে চলা মানুষের মধ্যে এমনটি দেখা যায়। রাগ ও চিৎকার দেশকে আবার একত্রিত করতে পারবে না।’
বাইডেনের জনপ্রিয়তা নিজ দেশে এখন কমতির দিকে। স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের মধ্য দিয়ে তার হাতে সুযোগ ছিল নিজ দৃষ্টিভঙ্গি লাখো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের উদ্দেশে তুলে ধরার।
তিনি এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পের গর্ভপাত আইনসংক্রান্ত বিষয়াদি, অর্থনীতির সঙ্গে তার চিন্তাভাবনার যে পার্থক্য আছে, তা তুলে ধরেছেন। বাইডেন নিজ বক্তব্যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কথাও তুলে ধরেন। তার মতে, বন্দুক সহিংসতায় দেশে প্রচুর মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। সূত্র: রয়টার্স
এমএ/