ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তাপ লেবাননে ছড়িয়েছে বেশ আগেই। দেশটির প্রতিরোধগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে সম্প্রতি এই সংঘাত একটি দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
রবিবার (৩০ জুন) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননের তাইবেহ এবং রাব সালাসীন শহরে হিজবুল্লাহর অপারেশনাল অবকাঠামো এবং একটি সামরিক কাঠামোতে বিমান হামলার দাবি করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে রাতভর হামলার দাবি করা হয়। যদিও হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে নিজ দেশের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ৭টি দেশ। দেশগুলো হল- সৌদি আরব, কুয়েত, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, উত্তর মেসিডোনিয়া ও কানাডা।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস শনিবার দেশটিতে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের অবিলম্বে লেবানন ভূখণ্ড ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়াও নাগরিকদের লেবানন ত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছে। অস্থিতিশীল পরিবেশের কথা উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া আপাতত দেশটি ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানান তিনি।
একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যিক বিমান চালু থাকাকালে লেবানন থেকে নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। এ ছাড়া জার্মানি, কানাডা ও উত্তর মেসিডোনিয়া এবং কুয়েত একই আহ্বান জানিয়েছে। কুয়েত গত ২২ জুন তাদের নাগরিকদের যতদ্রুত সম্ভব লেবানন ছাড়ার অনুরোধ জানায়।
এ ছাড়া পাঁচটি দেশ নিজ দেশের নাগরিকদের লেবানন ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে। দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জর্ডান, রাশিয়া ও আয়ারল্যান্ড।
এবার রাফা ও শুজাইয়ায় একযোগে স্থল হামলা ইসরায়েলি বাহিনীর
গাজার দক্ষিণের শহর রাফা এবং উত্তর গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকায় একযোগে স্থল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই দুই এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই চলছিল। রাফায় একটি বাড়িতে হামলায় শিশুসহ অন্তত ছয়জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
টানা চতুর্থদিনের মতো শুজাইয়াতে বিরামহীন স্থল হামলা চলছে। শুজাইয়ার অধিবাসী আরিজ আল-জামাল বলেন, ‘‘এখানে আগ্রাসনের সময় আমরা বাড়িতে ছিলাম। ইসরায়েলি ট্যাঙ্কের গুলিবর্ষণের কারণে আমরা সেখান থেকে বের হতে পারিনি। বুলডোজার দিয়ে ইসরায়েলি সৈন্যরা আমাদের দরজা গুঁড়িয়ে দেয়। আমরা তাদের চিৎকার করে বলছিলাম যে ‘আমরা বেসামরিক মানুষ’। তাতে তারা সাড়া দেয়নি, তারা একবারের জন্যও গুলি করা বন্ধ করেনি।’’
অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনী সর্বশেষ অধিকৃত পশ্চিম তীরে অভিযান চালিয়ে ২০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্য দিয়ে গত অক্টোবরের পর থেকে পশ্চিম তীর থেকে আটককৃতের সংখ্যা হলো ৯৪৫০।
যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে আল-জাজিরাকে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে হামাস ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’সহ যেকোনো প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’’ সূত্র: আল-জাজিরা, আনাদুলো অ্যাজেন্সি।