![বিভেদ বাড়ছে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর](uploads/2024/03/13/1710299214.Biden_Netaneyahu.jpg)
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে উত্তেজনা ও বিভেদ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণ বলছে, দুজনের মধ্যকার দৈনন্দিন ফোনালাপও বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক মাস আগেই।
গত সপ্তাহের শেষে যুক্তরাষ্ট্র গাজার বেসামরিকদের উদ্দেশ্যে সহায়তা পাঠাবে বলে জানায়। এ ছাড়া নেতানিয়াহুকে বেসামরিকদের প্রাণহানির ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে বলেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাফ জানিয়ে দেন, নেতানিয়াহু ইসরায়েলের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছেন।
পরের দিনই পাল্টা জবাব আসে নেতানিয়াহুর কাছ থেকে। পলিটিকো অ্যাক্সেল স্প্রিঙ্গারকে তিনি বলেন, বাইডেন ওই দুই বিষয় নিয়েই ভুল করছেন। অথচ ৭ অক্টোবর এ চিত্র ছিল ভিন্ন। ইসরায়েলকে সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বাইডেন।
কিন্তু গাজায় ৩১ হাজার মৃত্যু সে চিত্র পাল্টে দিয়েছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, বাইডেন প্রশাসন অস্ত্র ও অন্যান্য সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। আবার উল্টো দিকে গাজায় সরাসরি সহায়তা পাঠানোর কাজে হাত দিয়েছে ওয়াশিংটন।
৮১ বছর বয়সী বাইডেন ও ৭৪ বছর বয়সী নেতানিয়াহুর পার্থক্য কয়েক দশকের। কিন্তু এবার উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইসরায়েল গাজায় বেসামরিকদের মৃত্যু ও ক্ষুধার কষ্ট থামাতে যথেষ্ট করছে না। নিজ দেশের ভেতরে, এমনকি নিজ দলের ভেতর থেকেও চাপের মুখে পড়েছেন বাইডেন।
বাইডেন ও নেতানিয়াহুর সম্পর্ক প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য কর্মসূচির পরিচালক জন অল্টারম্যান বলেন, ‘দুই জন ব্যক্তিই অত্যন্ত দক্ষ ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর রাজনীতিবিদ, যারা একে অন্যকে সহযোগিতা করার বদলে চাপে ফেলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের তথ্যানুসারে, সহায়তার বহরে গুলি চালিয়ে ১০০ গাজাবাসীকে হত্যার ঘটনাই মূলত সম্পর্কের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও তার কট্টর ডান জোট অংশীদারদের হটিয়ে ইসরায়েলের ভেতরে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে আরও সহনীয় সরকার আনতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন পশ্চিমতীরে কিছু কট্টর ইহুদিদের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। এ বিষয়টিও নেতানিয়াহুর জোট অংশীদারদের বেকায়দায় ফেলেছে।
গাজার দক্ষিণে রাফায় অভিযান চালানো নিয়েও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে। বাইডেন চান না রাফায় অভিযান হোক। কারণ এতে করে বেসামরিকদের ব্যাপক প্রাণহানি হবে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু অভিযানের পক্ষে।
হোয়াইট হাউস মুখপাত্র অলিভিয়া ডালটন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা মনে করি রাফায় কোনো সামরিক অভিযান হওয়া উচিত না, যদি না দশ লাখেরও বেশি বেসামরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য ও প্রয়োগ সম্ভব এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আমরা এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা দেখিনি।’
এদিকে, যুদ্ধপরবর্তী গাজা কী রকম হবে, সে বিষয় নিয়েও বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মতবিরোধ রয়েছে। বাইডেন চান সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহায়তায় আঞ্চলিক সমাধান। গাজা ও পশ্চিমতীর নিয়ে আলাদা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হোক।
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর কথা হলো, ৭ অক্টোবরের জেরে যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হয়, তা হলে তা সন্ত্রাসবাদে মদদ দেবে। সব মিলিয়ে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে বাইডেন-নেতানিয়াহু সম্পর্ক। সূত্র: ব্লুমবার্গ