![জান্তার বিরুদ্ধে লড়ছেন বিদেশিরাও](uploads/2024/05/18/myanmar-1716008788.jpg)
মায়ানমারের জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান-বিরোধীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছেন বিদেশিরাও। তাদের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ সেনাও রয়েছেন। এ রকম স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তারা মায়ানমারের বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ দেখে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
অতীতে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর হয়ে লড়াই করা জেসন (ছদ্মনাম) চলত বছরের এপ্রিলেও লড়েছেন মায়ানমারের মাটিতে। তিনি নিজে থেকেই যোগ দিয়েছিলেন দেশটির ভেতরে চলমান লড়াইয়ে। আট সপ্তাহ সম্মুখভাগে যুদ্ধ করার পর নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরেছেন।
জেসন বলেছেন, ‘প্রতিরোধে ব্যস্ত যোদ্ধারা নিজেদের লক্ষ্য পূরণে জীবন দিতেও প্রস্তুত। এটি আমি অন্যান্য যেসব জায়গায় লড়াই করেছি, সেসব স্থান থেকে ভিন্ন। ওই সব স্থানে আপনি মানুষের চোখে ভয় বেশি দেখবেন। আর এখানের যোদ্ধারা সাহসী মানুষ।’
মায়ানমারের সীমান্ত এলাকার জাতিগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র দল কয়েক দশক ধরেই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কখনো কখনো তারা বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তাও পেয়েছেন। তবে বর্তমানে যা হচ্ছে তা ভিন্ন।
এ দৃশ্যপট শুরু হয় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর। সীমান্ত এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলোতে সংঘাত পৌঁছে যায়। মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে বিমান হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। গ্রামের পর গ্রামও তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব কর্মকাণ্ডকে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে।
এদিকে মায়ানমারের জান্তা বাহিনী ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে দেশের ভেতরে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন বলছে, মায়ানমারের ৫০ শতাংশেরও বেশির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তারা। সেগুলো এখন বিদ্রোহীদের দখলে।
অন্যদিকে আল-জাজিরার খবর বলছে, জান্তা বাহিনীর জেনারেলরা দেশের ভেতরের বিদ্রোহ দমাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই প্রতিরোধের কারণে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বড় মাপে এলাকাও হারাতে হয়েছে। অথচ বিদ্রোহীদের নির্ভর করতে হয় এয়ারগান ও স্লিংশটের মতো হালকা অস্ত্রের ওপর। আর জান্তা বাহিনীর হাতে রয়েছে চীন ও রাশিয়ার সরবরাহ করা শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র।
ইউক্রেন ও সিরিয়ার যুদ্ধের ক্ষেত্রে যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবকদের দলে দলে যোগ দিতে দেখা গেছে, সে রকমটা মায়ানমারের যুদ্ধের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এমনকি কোনো পক্ষকে বিদেশি নাগরিদের দলে টানার চেষ্টাও করতে দেখা যায়নি। তার পরও লড়াই জোরেশোরেই চলছে।
নিজের যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে জেসন বলেন, ‘আমি ভাড়াটে সেনা নই। আমি এটি করছি সঠিক পক্ষে থাকার জন্য।’ ছয় থেকে দশ সাবেক সেনাসদস্য নিয়ে একটি দল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিরা থাকবেন সে দলে। ওই দল নিয়ে জেসন ফিরে যাবেন মায়ানমারে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের চারটি ভিন্ন ধরনের সামরিক বাহিনীর জ্ঞান রয়েছে, যা ব্যবহার করে আমরা তাদের শেখাতে পারি। তাদেরকে সাহায্য করার মানসিকতা আমার আরও দৃঢ় হয়েছে সেখানে গিয়ে। তারা (বিদ্রোহীরা) শুধু তাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র চায়।’
তবে এই দল আলাদাভাবে কাজ করবে না বলেও উল্লেখ করেন জেসন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভিন্ন সত্তা হওয়ার বদলে তাদের বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনে কাজ করব।’ জেসন আরও বলেন, ‘আমরা এটি বিনামূল্যে করব। সদস্যদের নিজ কাজ থেকে সময় বের করতে হবে এটি করার জন্য।’ সূত্র: আল-জাজিরা