![যেভাবে মুক্তি পেলেন অ্যাসাঞ্জ](uploads/2024/06/27/Assange-1719458459.jpg)
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মার্কিন আদালতে দোষ স্বীকার করে মুক্তি পেয়েছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। রায়ের পর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনাও দিয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশ গুরুতর। কিন্তু তারপরও কীভাবে ছাড়া পেলেন তিনি? কীভাবেই-বা সম্ভব হলো পুরো প্রক্রিয়া?
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মার্কিন প্রতিরক্ষাবিষয়ক গোপন তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার। মূলত ২০১০ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে উইকিলিকস। পরে তা হৈচৈ ফেলে দেয় পুরো বিশ্বে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়ে নেন অ্যাসাঞ্জ। সেখানেই তাকে থাকতে হয় দীর্ঘ সাত বছর। পরে তাকে ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাজ্য। সে সময় খবর রটেছিল, অ্যাসাঞ্জকে বিচারের জন্য তুলে দেওয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, সব আশা ফুরিয়ে আসতে থাকা অ্যাসাঞ্জের জন্য আশার আলো দেখা দেয় গত মার্চে। যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস বা সিপিএস জানিয়েছে, দোষ স্বীকার করে আবেদনের একটি সম্ভাবনা ওই সময়ে ‘প্রথমে তাদের নজরে আসে’।
এ ছাড়া অ্যাসাঞ্জের মুক্তির নেপথ্যে আরও দুটি বিষয় ভূমিকা রেখেছে। তার অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব এবং দেশটিতে আসা নতুন সরকার। সমঝোতার সূত্রপাত সম্ভবত হয় ২০২২ সালের মে মাসে। সে সময় অস্ট্রেলিয়ার নতুন সরকার বিদেশে আটক থাকা নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ যা করেছেন তার সব তিনি সমর্থন না করলেও ‘যথেষ্ট হয়েছে’ এবং এখন তার মুক্তির সময় এসেছে।
সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি ছিল কূটনীতি, রাজনীতি ও আইনের একটি জোটবদ্ধ প্রচেষ্টা। মার্চে ‘দোষ স্বীকারের সম্ভাবনা’ নজরে আসার পর যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের পরিকল্পনা জানায়। কীভাবে অ্যাসাঞ্জকে আদালতে উপস্থাপন করা যেতে পারে এবং তিনি বিচারক ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে কীভাবে মুক্তি পেতে পারেন, সে বিষয়ে তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেয়।
গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির আইনপ্রণেতারা সরাসরি ওয়াশিংটনে গিয়ে তদবির করেন। পরে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলাপ করেন। এসবের বেশির ভাগই ঘটছিল পর্দার আড়ালে।
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টেও ভোট হয়। সেখানে সব দল সমর্থন দেয় বিষয়টিকে। সেখানে পাস হওয়া প্রস্তাবে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানানো হয়। পাশাপাশি ওই দুই দেশকে জানানো হয় যে, অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে পারবেন।
সমঝোতার বিষয়ে ইঙ্গিত আসে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও। চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানান, অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে বিচার প্রক্রিয়া বাতিল করার যে অনুরোধ এসেছে, তা বিবেচনা করছেন তিনি।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সুরক্ষায় আগ্রহী। বাইডেন প্রশাসন আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে চাইছিলেন। অন্যদিকে অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা অনেকে মনে করছিলেন, যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলে তারা অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণে সেভাবে রাজি না-ও হতে পারে।
হোয়াইট হাউস অবশ্য বলেছে, সমঝোতা প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি বিচার বিভাগের। গত বুধবার অ্যাসাঞ্জের দোষ স্বীকারের পর রায় ঘোষণার সময় বিচারক রামোনা ভি ম্যাংলোনা বলেন, মামলাটি যদি এক দশক আগেও তার কাছে আসত তা হলে তিনি দোষ স্বীকারের আবেদন গ্রহণ করতেন না। কিন্তু ২০২৪ সালের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ম্যাংলোনা আরও জানান, যে বিষয়টির ওপর তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন তা হলো- অ্যাসাঞ্জের কাজে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি, যিনি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সব পক্ষ এক জায়গায় এসে পৌঁছাতে পারার কারণেই মুক্তি পেয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। সূত্র: বিবিসি