পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে এসেছে। এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা করতে বাধা নেই। তবে মামলা করতে আইনি বাধ্যবাধকতায় আরও একটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। সেটি হচ্ছে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করা। এই নোটিশের প্রক্রিয়া শেষে মামলা করবে দুদক। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী জুলাই মাসে বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন দুদক চাইলে মামলা করতে পারে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একাধিক কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য যথেষ্ট এভিডেন্স (তথ্য-প্রমাণ) পাওয়া গেছে।
দুদক কর্মকর্তারা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, মামলার আইনি ভিত্তি শক্ত রাখার জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এখনো সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করা বাকি আছে। আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামী ২৩ ও ২৪ জুন ধার্য রয়েছে। তারা হাজির হন কিংবা না হন, এর পরের ধাপেই তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ করা হবে। সে ক্ষেত্রে এ মাসের শেষ দিকে (২৪ জুনের পর) তারা দেশে না থাকলেও তাদের বাসার ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হবে। এই নোটিশের প্রক্রিয়া শেষ করতে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশের প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত ১০ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর সব তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কমিশন অনুমোদন দিলে মামলা দায়ের হবে।
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে গত ২১ এপ্রিল অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী অনুসন্ধানের জন্য নির্ধারিত ৪৫ কর্মদিবসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৭ জুন। তবে এই সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত ১৫ কর্মদিবস পাওয়া যাবে। ফলে অতিরিক্ত সময়সহ অনুসন্ধানকাজ শেষ করতে ২১ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অনুসন্ধান শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের পর কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে মামলা করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে মামলা হতে পারে।
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে এখন পর্যন্ত ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাট, দেশের বিভিন্ন জেলায় ৬৯৭ বিঘা জমি, একাধিক মৎস্য ও গরুর খামার, রিসোর্ট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, বিও অ্যাকাউন্টসহ ৩৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সিটিজেন টেলিভিশনসহ ৫টি পূর্ণ মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৮টি ব্যবাসায়িক শেয়ার পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে এসব অর্থ-সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে।
অবৈধ সম্পদের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে বেনজীর আহমেদ গত ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন। তিনি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন।