সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা।
সোমবার (১ জুলাই) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একযোগে এই কর্মসূচি পালন করছেন।
ফলে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
রবিবারও (৩০ জুন) দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালিত হয়। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
এ সময় ফেডারেশনের সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রস্তাবিত এই স্কিম বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, যারা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তারাও এর ভুক্তভোগী হবেন। আমাদের আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষার পক্ষে এবং উচ্চশিক্ষা-ব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। তাই দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সবাইকে এক হতে হবে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আহ্বান জানাব, তারা যেন দল-মত নির্বিশেষে এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
সংগঠনের মহাসচিব ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি আমাদের আত্মমর্যাদার লড়াই। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি বিষয়টি সুরাহা করার জন্য। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাইনি। দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। একযোগে তারাও এই কর্মসূচি পালন করবে।’
প্রত্যয় স্কিম থেকে অন্তর্ভুক্তি বাতিল ছাড়া আরও দুটি দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। সেগুলো হলো- শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি।
ঢাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনে ৯ কর্মসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের জন্য ৯টি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সেগুলোর হলো- সব বিভাগের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা; অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস বন্ধ রাখা; সব পরীক্ষা বর্জন করা (মিডটার্ম, ফাইনাল ও ভর্তি পরীক্ষা); বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ রাখা এবং সব ধরনের সভা বন্ধ (একাডেমিক কমিটি, সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভা); ডিন অফিস, ভর্তি পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখা এবং নবীনবরণ-সিলেকশন বোর্ডের সভা বন্ধ রাখা। এ ছাড়া ইনস্টিটিউট ও গবেষণা সেন্টারের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ, হলের প্রাধ্যক্ষ অফিস এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বন্ধ রাখা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রেখে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান। তিনি বলেন, ‘বিভাগগুলোকেও আমরা জানিয়ে দিয়েছি। সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাসও বন্ধ থাকবে। সব পরীক্ষা বর্জন করা হবে। মিডটার্ম, ফাইনাল পরীক্ষা কিছু অনুষ্ঠিত হবে না। কোনো দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কাজ করবেন না।’
সেবা না দেওয়ার ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
অবিলম্বে দাবি বাস্তবায়ন না করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচলের হুমকি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মো. আব্দুল মোতালেব। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানা হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়া হবে। পানি, বিদ্যুৎ থাকবে না; টয়লেট পরিষ্কার, ময়লা পরিষ্কার করার কেউ থাকবে না, গাড়ি চলবে না, অফিস চলবে না, কোনো কিছু চলবে না, সব বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী সরকারকে ভুলভাল বুঝিয়ে প্রত্যয় নামে একটা স্কিম ঘোষণা করেছে। অবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
আন্তবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মহিউদ্দীন খন্দকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে ৭ জুলাই কমিটির সঙ্গে বসে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত: শিক্ষামন্ত্রী
কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এইচএসসি পরীক্ষার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশনের আওতায় কারা আসবেন, সেটা সরকারের নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটার সঙ্গেই আছে। শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে জানাচ্ছেন, সরকারই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখানে কিছু করার নেই।
পর্যায়ক্রমে সবাই আসবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হচ্ছে সেটাও নয়। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এ পেনশনের আওতায় আসবেন। হয়তো এ বছর শিক্ষকরা আসছেন, আগামী বছর অন্যরা আসবেন।
ঢাবির অধিভুক্ত-উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষার সূচি অপরিবর্তিত
কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষাগুলো পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন ও কার্জন হল পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষাগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। উল্লেখ্য, অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষাসমূহ পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন ঢাবি ও জবি প্রতিনিধি]