ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে ট্রাম্পের নির্বাচনি আনন্দ...

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪১ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪১ এএম
বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে ট্রাম্পের নির্বাচনি আনন্দ...
ড. আমাল মুদাল্লালি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বিতর্কটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। উভয় দলের প্রার্থীই তাদের প্রতিপক্ষকে বিবাদে ফেলে দেন। বিতর্কটি এমন যে, ডেমোক্র্যাটদের মতে বয়স কোনো সমস্যা নয় এবং ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপযুক্ত নন। হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, প্রার্থী নির্বাচনে যোগ্যতার একটি বিষয় আছে। 

গত বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ক সত্যিই ঐতিহাসিক ছিল। এই বিতর্কের পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা আতঙ্কিত। তারা কী করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাংবাদিকদের কাছে কয়েকজন বলেছেন, বিকল্প প্রার্থী খুঁজে বের করা উচিত। অপর দিকে রিপাবলিকানরা বিষয়টি নিয়ে আনন্দ উদযাপন করছেন। বিতর্কের সময় বাইডেন মেসেজ আদান-প্রদানে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বেশির ভাগ প্রশ্ন উপেক্ষা করছিলেন। 

বিতর্কটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এতে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীর ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে। আমেরিকান সংবাদমাধ্যমে এসব বিষয় বিস্তরভাবে চলে এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট একই শব্দ ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের কর্মক্ষমতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, তিনি ‘সংগ্রাম’ করে যাচ্ছেন। রাজনীতি আরও বেশি নাটকীয়। 

ডেমোক্র্যাটদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এখনো পাঁচ মাস সময় হাতে রয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছিলেন, জো বাইডেন ‘ধীর গতিসম্পন্ন কিন্তু শক্তিশালী সমাধানকারী’। প্রকৃতপক্ষে প্রেসিডেন্ট তার সমাপনী বক্তব্যে সংগ্রামের কথা বলেছেন। 

নির্বাচনের আগে বিতর্কটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য বড় ধরনের সতর্কতা। তারা দুই প্রার্থীকে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখছেন। তবে প্রতিযোগিতাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যদিও স্টেটগুলোর জনগণই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করবেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। নির্বাচন তথ্য বিশ্লেষক ডোয়েন নেট সিলভারের মতে, ৬৫.৭ শতাংশ ভোটে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প অনেক বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতবেন। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

ডেমোক্র্যাটদের সমস্যা হচ্ছে, এখান থেকে প্রচারণা কোন দিকে যাবে? সম্মেলনের আগে দলের পক্ষ থেকে ভিন্ন প্রার্থী বাছাইয়ের আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকে বাইডেনকে প্রত্যাহারের আহ্বানও জানিয়েছেন। বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারে দাতারা এখন কী করবেন? তারা কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকবেন নাকি নির্বাচনের আগে তাকে ত্যাগ করবেন? এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিকে এসব মোকাবিলা করতে হবে। তবে এই পর্যায়ে এসে প্রার্থী পরিবর্তন করা কঠিন। দলে এমনও লোক আছেন যারা বিশ্বাস করেন, বাইডেন এ পর্যায়ে এসে আরও ভালো করবেন। যদিও নির্বাচন অতি সন্নিকটে। রিপাবলিকান কনভেনশনের মাত্র চার দিন আগে ১১ জুলাই ট্রাম্পকে ‘হাশ মানি’ বা ঘুষসংক্রান্ত মামলায় বিচারক সাজা ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, এতে মানুষের মনের পরিবর্তন হতে পারে। 

ট্রাম্পকে তার সমর্থকরা বাইডেনের বিরুদ্ধে বিতর্কে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন। যদিও ভোটারদের প্রকৃত মতামত জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে সিদ্ধান্তহীন তারাই, যারা ২০২৪ সালের নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। যা-ই ঘটুক না কেন, প্রত্যেকেই তাদের প্রার্থীকে সমর্থন করবেন। 

অন্য ঘটনাগুলোও নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কংগ্রেসে বিশেষ করে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের কর্মক্ষমতার ওপর সবার দৃষ্টি রয়েছে। কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট উভয়েরই এমন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রয়োজন, যিনি দলের জন্য সম্পদ। ভোটারদের কাছে বোঝা নন।

রিপাবলিকানরা সিনেট পুনরুদ্ধার করতে এবং হাউস ধরে রাখতে চান। তারা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প তার কর্মক্ষমতায় সিনেট পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটদের ভাবনা, প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তাদের ক্ষতি করতে পারে। যদি তা-ই হয়, সে ক্ষেত্রে তাদের প্রার্থী নির্বাচনে নতুন করে ভাবতে হবে। 

লেখক:  জাতিসংঘে লেবাননের সাবেক রাষ্ট্রদূত 
আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

মফস্বলে পাঁচ দিন: উন্নয়ন-অবনয়নের খণ্ডচিত্র

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৫১ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৫১ এএম
মফস্বলে পাঁচ দিন: উন্নয়ন-অবনয়নের খণ্ডচিত্র
ড. তোফায়েল আহমেদ

গত ঈদের অবকাশে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার কটি গ্রামে গিয়ে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি ও নানাজনের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ করছিলাম। চট্টগ্রাম শহর থেকে উত্তরে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে এ গ্রামের অবস্থান। অনেক কিছুই দেখলাম, শুনলাম এবং বোঝার চেষ্টা করলাম। তার কিছুটা এখানে তুলে ধরছি। আমি যেমন এলাকার মানুষকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞেস করছিলাম, এলাকার মানুষও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা খবরবার্তা ‘যাচাই’ করছিলেন। 

যাচাই বলছি এই অর্থে যে, খবরের বিষয়গুলো এমন নয় যে, তারা জানেন না। বিলক্ষণ জানেন। শুধু যাচাই করে নিশ্চিত সত্যায়ন-প্রত্যয়ন করতে চান। যেমন- আমাকে আমেরিকা, চীন ও ভারতের রোহিঙ্গা নীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। ভারতের সেভেন সিস্টারস ও ভবিষ্যতের কথিত ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্রে’র সম্ভাবনা নিয়ে এবং মায়ানমার রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ও রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আদৌ সম্ভব হবে কি না- এ রকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে তৃণমূলের মানুষের এত আগ্রহ অতীতে কখনো দেখিনি। 

অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত রাজনীতিসচেতন মানুষই এসব বিষয়ে আগ্রহ দেখায়। সবচেয়ে বহুল আলোচিত বিষয় হিসেবে সাধারণের আলোচনায় যা উঠে আসে তা ছিল উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন পর্যায়ের নানা দুর্নীতি, সমাজে সর্বত্র ন্যায্যতার ঘাটতি, দ্রব্যমূল্য ও সামগ্রিক অব্যবস্থার প্রশ্নাবলি, যথা জোরজবরের স্বরূপ ও উন্নয়ন নৈরাজ্য। যতটুকু সম্ভব বিষয়গুলো খোলামেলা আলোচনা করেছি। তবে কোনো সক্রিয় দলীয় নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে কোনো আলোচনা হয়নি। আমার আগ্রহ ছিল নিতান্তই নিরীহ অদলীয় মানুষ। 

যেসব এলাকা আমি ঘুরলাম, সেগুলো মোটামুটি সচ্ছল গ্রাম। তবে এসব গ্রামে এখন গ্রামীণ পরিবেশ বিদ্যমান নেই, আবার শহরের নৈর্ব্যক্তিক ও সংস্কৃত নাগরিকতাও নেই। একধরনের আধখ্যাঁচড়া অবস্থা। এখানে যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও তারা আমার পরিচিত। তাই বিশ্বাসযোগ্যতা শতভাগ। কারও কিছু গোপন করার নেই। ঘরবাড়ি, জীবনযাত্রা, সুযোগ-সুবিধা- সবটাই প্রায় শহুরে। 

তবে তারা পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত নয়। এখনো ইউনিয়ন পরিষদ। প্রধান গ্রামীণ সড়কগুলোতে সড়কবাতি আছে। বড় বড় পাকা দালানবাড়ির বাইরে বৈদ্যুতিক বাতি থাকে, তাতেও সড়ক আলোকিত হয়। প্রবাসী আয়ে বেশির ভাগ বাড়িঘর দালান ও বহুতল বাড়িগুলো নির্মিত। শিক্ষায় এখানে অভিভাবকদের ভালো বিনিয়োগ। গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে চিকিৎসা, প্রকৌশল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। 

এমনও আছে, বাবা-মা প্রাইমারির গণ্ডি পার হননি। শুধু ছেলেদের নয়, মেয়েদেরও বিদেশে পড়াতে পাঠিয়েছেন। সকাল-বিকেল দলে দলে স্কুলের ছেলেমেয়ে দেখা যায়। গৃহবধূদের দোকানে, বাজারে বাজার করতে দেখা যায়। অধিকাংশের পরনে অবশ্য বোরকা থাকে। মানুষ সহজে হেঁটে চলে না। ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং সিএনজিচালিত ত্রি-চক্রযান ব্যবহার করে। নারী-পুরুষ টেক্সি রাইড শেয়ার করে নিঃসংকোচে। নারী-পুরুষ উভয়ের গতিশীলতা ও বহিঃগমন বেড়েছে। 

ছেলেদের চুলের কাট ও ছেলেমেয়ে সবার পোশাক-পরিচ্ছদে আধুনিকতা। বহুমুখী ব্যবহার্য মোবাইল ফোন হাতে হাতে। মহাসড়কে বাস নেই বললেই চলে। রাস্তাজুড়ে শত শত সিএনজিচালিত সবুজ টেক্সি। এক টেক্সিতে কমপক্ষে পাঁচজন। দুই থেকে পাঁচ মিনিটেই এসব টেক্সি পাওয়া যায়। খুব কম লোক হাঁটতে চায়। সামান্য দূরত্বেও টেক্সিতে ওঠে। সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা ভাড়া। টেক্সিতে না উঠে রাস্তায় হাঁটার উপায় নেই। যানবাহনের গতি, ওভারটেক ইত্যাদির কারণে হাঁটা খুবই অনিরাপদ। সঠিক সংখ্যা না গুনে থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু অনেক লোক দেখলাম। গ্রামে মসজিদ, মক্তব, মন্দিরের সংখ্যা বেড়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নতি চোখে পড়ার মতো। 

স্কুল-মাদ্রাসাও একইভাবে পূর্বাপেক্ষা অবকাঠামোগত দিক থেকে উন্নত। মসজিদগুলো জুমা ছাড়াও প্রতি ওয়াক্তে দুই-তিন সারি মুসল্লি এবং স্কুল-মাদ্রাসাগুলোও শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ। প্রতিটি মসজিদে উচ্চ শব্দের মাইকে আজান এবং ওয়াজ চলে। প্রায় রাতে কোনো না কোনো তরিকা ও সঙ্ঘের সভা-সম্মেলন হয়। গ্রামের সনাতনী হাটবাজার নির্ধারিত হাটবারে আগের মতো জমে না। বড় সড়কের দুই পাশজুড়ে দোকানপাট। এক হাটের সঙ্গে আরেক হাটের সীমারেখা বজায় নেই। 

সড়ক পাশের দোকানপাট এক হাটের সঙ্গে আরেক হাটকে যুক্ত করে নিয়েছে। হাটবারের দরকার হয় না। সকাল-সন্ধ্যা সবখানে বাড়ির কাছেই মাছ-মাংস, তরকারি সবই পাওয়া যায়। গ্রামের ভেতরেও প্রচুর ছোট ছোট দোকান। অনেক বাড়িতে দেখলাম সকালের নাশতা দোকান থেকে কিনে আনা হয়। পরোটা, নানরুটি, পাউরুটি হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। সকালে নানা দোকানে লাইন করে এসব কেনা হচ্ছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও একটি সংবাদপত্র কেনার জন্য একজন হকারের সন্ধান পেলাম না। এখানে সংবাদপত্র কেউ পড়ে বলে মনে হলো না। এ পর্যন্ত যা বলা হলো তার সবই হয়তো অর্থনৈতিক বা সচ্ছল জীবনের নতুন সাংস্কৃতিক রূপান্তরের পরিচয় বহন করে।

এবারে সবিস্তারে বর্ণনা না দিয়ে চারটি ঘটনার উল্লেখ করছি, তাতে সামাজিক পরিবর্তনের একটি ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। ঘটনা এক. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবক্ষয়। আমার কথিত গ্রাম এলাকায় চারটি প্রাইমারি স্কুল ও একটি উচ্চবিদ্যালয় রয়েছে। উচ্চবিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৬৮ সাল। কিছুদিন ধরে স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল খুবই শোচনীয়। গত বছর কতজন পরীক্ষা দিয়েছে, স্কুল বন্ধ থাকায় তা জানতে পারিনি। তবে এ বছর প্রায় ৯৭ জন ডাহা ফেল করেছে। হয়তো দুই-তৃতীয়াংশ। লাগাতার আগের বছরগুলোতেও ফলাফল এ রকমই ছিল। 

নবম-দশম শ্রেণির দু-একজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করে যা জানলাম, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি পড়ানোর যোগ্য শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নানা রাজনীতি। বিজ্ঞান বিষয়ে কোনো ব্যবহারিক ক্লাস-পরীক্ষা হয় না। প্রতি পরীক্ষার আগে কিছু টাকা দিতে হয়, তাতে কাজ সেরে যায়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়ে মানুষের বিস্তর অভিযোগ কিন্তু বলার কোনো জায়গা নেই। তারা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী। শিক্ষকদের গায়ে হাত উঠেছে, এ রকমও শোনা গেল। ঘটনা দুই. কারও বিপদে কেউ নেই। 

এলাকায় বেশ কিছু ছোট, মাঝারি ও বড় গরু মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে। কোরবানি বাজারের জন্য পশুপালন করা হয়। কোরবানির মাস দেড়েক আগে অভিনব কায়দায় একটি খামার থেকে ছয়টি গরু লুট হয়ে যায়। একটি মিনি ট্রাক ও একটি টয়োটা হাইয়েজ নিয়ে রাত ২টার দিকে পাঁচ-ছয়জন ডাকাত আসে। তারা ২০ মিনিটের মধ্যে গরুগুলো নিয়ে চম্পট দেয়। একজন বাড়ি থেকে বের হন। তাকে ডাকাত দল তারই লুঙ্গি ও শার্ট খুলে এমনভাবে বাঁধে, তার জীবন শঙ্কা দেখা দেয়। পাড়ার লোকজন সকালে জানতে পারে। থানা, পুলিশ, সমাজ, ইউনিয়ন পরিষদ কেউই কিছু করেনি। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউই কারও বিপদে বা দুর্দিনে এগিয়ে আসছে না। 

ঘটনা তিন. উন্নয়নের শিলালিপি। উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত মহাসড়ক। মহাসড়ক থেকে গ্রামের দিকে নেমে গেছে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা জেলা পরিষদ সড়ক। ওই সড়ক থেকে ছোট ছোট ৫, ১০, ১৫, ২০, সর্বাধিক ৩০ মিটারের বিভিন্ন বাড়ির প্রবেশপথ। সবগুলো প্রবেশপথ চারটি উৎসের অর্থ ব্যবহার করে কংক্রিট বিছিয়ে পাকা করা হয়েছে। 

প্রতিটি বাড়ির প্রবেশপথের কংক্রিট ঢালাইয়ের প্রকল্প মূল্য ১ লাখ টাকা। কোনোটা ১ লাখে না হলে পরেরবার নতুন প্রকল্প করা হয়। আধা কিলোমিটার সড়ক জলমগ্নমুক্ত রাখার জন্য রাস্তার দুই পাশ বা এক পাশে ছিল সরু জলনিষ্কাশনি পরিখা। স্থানীয় ভাষায় ‘গড়খাই’। এসব জল নিষ্কাশনি গড়খাই পার্শ্ববর্তী বাড়িভিটার মালিক তাদের সীমানাভুক্ত করে নিয়েছেন। এখন পানি সরে না। তাই এলাকাজুড়ে এক ফুট গভীর ও আট-দশ ইঞ্চি প্রস্থের অনেক পাকা ড্রেন। 

এভাবে গ্রামীণ সড়কে খণ্ড খণ্ড পাকা ড্রেন। যার কোনো আউট ফল নেই। ড্রেনের পানি কোনো নালা-নর্দমায় পড়ার ব্যবস্থা নেই। মাঝে মাঝে রাস্তায় ড্রেন। এ যেন সেই শূন্যে ঝুলে থাকা ব্রজের মতো, যার কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ড্রেনগুলো প্রায় বন্ধ এবং কালো বিষাক্ত পানি জমে মশার আবাস। বাড়ির প্রবেশপথগুলোর প্রতিটির মুখে শিলালিপি রয়েছে। প্রতিটি শিলালিপিতে তিন থেকে চারজনের নাম। 

একই বাড়ির প্রবেশমুখে তিনটি শিলাও দেখা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতি ১০-১২ মিটার ড্রেনেও শিলালিপি। কোনোটিতে স্থানীয় এমপি, নিচে এমপির কোনো চামচা, যার কোনো পদ-পদবি নেই। কোনোটিতে জেলা পরিষদ সদস্য/সদস্যা, প্রকল্প কমিটির সভাপতি, কোনোটিতে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার, আবার কোনোটিতে উপজেলা পরিষদ সভাপতি ও অন্য 
দু-একজন। এভাবে আধা কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে প্রায় ২০টি শিলালিপি। ওই প্রবেশপথগুলোর আবার নামকরণ হয়েছে নানা প্রভাবশালীর বাবা-মা, ভাইবেরাদরের নামে। 

একজন মজা করে বললেন, কোনো দিন কোনো কারণে এসব এলাকা ধ্বংস হয়ে মাটিচাপা পড়ে গেলে এবং কখনো যদি খনন করে এ সভ্যতার পরিচিতি নির্ণয় করা হয়, তাহলে একটি নতুন পাথর যুগের সন্ধান মিলতে পারে। ‘উন্নয়ন শিলাপ্রস্তর যুগ’। এভাবে সারা ইউনিয়নের ৮-১০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে হাজারের কাছাকাছি ভিত্তিপ্রস্তর ও পরিচিতির শিলালিপি দেখা যাবে। সরকারি অর্থ উন্নয়নের সঙ্গে প্রস্তরখণ্ডে নিজের নাম খোদাই করার এ হিড়িক অভাবনীয় ও অভূতপূর্ব। অথচ ওই এলাকার ঐতিহ্যগতভাবে পানি নিষ্কাশনি নালা-নর্দমা, খাল-ছড়াগুলো ভরাট ও বেদখল। গ্রামের মূল সড়ক খানাখন্দ ও গর্তে ভরা। ঘটনা চার. পোস্টার শুভেচ্ছা। রাস্তায় রাস্তায় শুভেচ্ছা পোস্টার। 

পাঁচ-ছয়জনের ছবি। নিচে একজনের বড় ছবি। তিনি হয়তো বড় নেতা নন। এভাবে ছোট ও মাঝারি নেতাদের বড় বড় ছবি। বিষয় ঈদের শুভেচ্ছা। নেতা বড়, ছোট, মাঝারি, পাতি ও তস্যপাতি। তোমার এ শুভেচ্ছায় মানুষের কী আসে যায়! এক বাটি মাংস, এক বাটি ফিরনি কিংবা সামনে এসে একটি সালাম দিয়ে যদি বলতে ‘ঈদ মোবারক’, তাহলে অন্য কিছু না হলেও একটি রাজনৈতিক গণসংযোগ বলা যেত। 

এ জাতীয় অসুস্থ সংযোগরহিত পোস্টার শুভেচ্ছা এক নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একজন বললেন, আমি তার শুভেচ্ছার নিকুচি করি। সে কে, কোথাকার হরিদাস পাল? রাস্তায় পোস্টার সেঁটে শুভেচ্ছা জানায়! এগুলো চাঁদাবাজির একটি কৌশল। এভাবে আমাদের গ্রাম, শহর সর্বত্র নতুন উন্নয়নের আশকারায় নবতর এক সামাজিক ও রাজনৈতিক রূপান্তর ঘটছে। বিষয়গুলো গভীরভাবে অধ্যয়নের অবকাশ দাবি রাখে।

লেখক: শিক্ষক ও শাসনবিষয়ক গবেষক
[email protected]

প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও চীন সফরের আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক গুরুত্ব

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ এএম
প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও চীন সফরের আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক গুরুত্ব
ড. সুলতান মাহমুদ রানা

আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ভারত সফরের দুই সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের বিষয়টি আঞ্চলিক রাজনীতিতে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করলে পরিষ্কার ধারণা করা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও উন্নয়ন অভিযাত্রায় অংশীদার হিসেবে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকতে চায় চীন। 

পরিস্থিতিগত কারণে আঞ্চলিক উদীয়মান দুই পরাশক্তি চীন ও ভারতের কড়া নজর রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে দেশ দুটি। এটিকে কাজে লাগানোর কৌশল নিয়ে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতি অনুসরণ করেই টানা চার মেয়াদে এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। 

আর এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও আসন্ন চীন সফর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এমন অবস্থাকে দৃশ্যত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একধরনের সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের মাইলফলক হিসেবে লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিতে বন্ধুত্ব স্থাপনের রোল মডেল হিসেবেও বিষয়টিকে তুলে ধরা যায়।

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক কারণে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী অন্যান্য দেশে প্রভাব বিস্তারের একধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে ভারত ও চীনের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করার যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল ও জোরদার করার প্রচেষ্টা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক একীভূতকরণে বিশেষ অবদান রাখবে।

আমরা লক্ষ করেছি যে, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত ও চীনের সঙ্গে এমন চমৎকার ‘ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক’ বজায় রেখে চলেছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্ক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্কটি পুরোপুরি অর্থনৈতিক। 

প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশের বিপদের বন্ধু আর চীন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারসাম্যের কূটনীতি স্পষ্ট। তিনি ভারত এবং চীন উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান এবং সেই নীতি অনুসরণ করেই চলেছেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের সমাধানের জন্য চীনের কোনো বিকল্প নেই বলেও বাংলাদেশ মনে করছে। কূটনীতিতে স্থায়ী বন্ধু বা স্থায়ী শত্রু বলে কিছু নেই। তাই ভারসাম্যের কূটনীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে দূরদর্শিতার স্পষ্ট ছাপ রাখবে বলা যায়। 

অন্যদিকে চীনের ওপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নির্ভরতায় যুক্তরাষ্ট্র এই সফরের দিকে তাকিয়ে থাকবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এই অঞ্চলে এখন চীনের একাধিপত্য প্রায় প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও নেপালের মতো দেশগুলো চীনের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দৃষ্টি থাকাটাই স্বাভাবিক। 

নানাবিধ বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক বিষয়ের সঙ্গে আঞ্চলিক-রাজনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায়ও বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশরূপে পরিগণিত। ফলে বৃহৎ পরাশক্তির রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে নতুন করে সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। 

ভারত চায় ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকুক। চীনের প্রত্যাশাও বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকবে। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণে এটি সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূমিকা পালন অতি তাৎপর্যপূর্ণ। বিগত ১৫ বছরের অধিক সময় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুপম নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বরাজনীতি-আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় উচ্চাসনে সমাসীন। 

বাংলাদেশ আজ একটি উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বনেতাদের কাছেও বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত। স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির হার-শিল্প উন্নয়নসহ সার্বিক অর্থনৈতিক বিকাশ, রাজনৈতিক পরিপক্বতা সর্বোপরি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ অধিকমাত্রায় সমাদৃত। কৌশলগত কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবদান অপরিসীম। 

ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলোতে যে জনসংখ্যা, সেটা বৈশ্বিক জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। যার ৫৮ শতাংশই তরুণ। কর্মশক্তি ও ভোক্তা- এই দুই হিসাবেই সংখ্যাটা অনেক। এখানকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৈশ্বিক অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশ। 

জিডিপির পরিমাণ বৈশ্বিক জিডিপির ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া বিশ্বের যে সমুদ্র আছে, তার ৬৫ শতাংশ পড়েছে ইন্দো-প্যাসিফিকে। সমতল ভূমির ক্ষেত্রে যেটা ২৫ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই বৈশ্বিক পরাশক্তিদের দৃষ্টি এই অঞ্চলে নিবদ্ধ। বাংলাদেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারত ও উন্নয়নে অংশীদার চীনসহ সবার সঙ্গে নিবিড় সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতিতে ইতিবাচক অবদান রেখে চলেছে। 

ভূ-রাজনীতিতে যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে তার সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অবস্থান আঞ্চলিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের অন্যতম সারথি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আর এ কারণেই ভারত সফরের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চলেছে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের চাহিদার ক্ষেত্রগুলোতে ভারত বেশ মনোযোগী। বাংলাদেশও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী কূটনীতিতে বাংলাদেশ-ভারত, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক যত বেশি ভারসাম্যমূলক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিমুখী হবে, তত বেশি আমাদের দেশের জনগণের আর্থসামাজিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। 

তাই কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায়ের মাধ্যমে ভারত ও চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তা আগামী দিনে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার হাতকে আরও মসৃণ করবে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফর দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীল রাজনীতিতে শক্তিশালী ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করবে। 

পরিশেষে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও চীন সফরের অভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, তা হলো দেশের উন্নয়নকে যেমন এগিয়ে নেওয়া, তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে ভারসাম্য নীতি প্রতিষ্ঠিত করা।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

সর্বজনীন পেনশন আগে পরে সবাই এর আওতায় আসবেন

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
আগে পরে সবাই এর আওতায় আসবেন
মাহবুব আহমেদ

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। সবাই এর আওতায় আসবেন। কেউ আগে আবার কেউবা পরে। সবারই এ কর্মসূচির আওতায় আসা উচিত। এতে ক্ষতি নেই। আমিতো ক্ষতির কিছুই দেখি না। বরং জীবনের শেষদিকে একটি আর্থিক নিরাপত্তা হিসেবে এমন একটি কর্মসূচি দরকার ছিল।

পৃথিবীর অনেক দেশেই এ সিস্টেম আছে। সেটা চিন্তা করেই আমাদের এখানে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা পর্যায়ে সবাইকেই এ কর্মসূচির আওতায় আসতে হবে। এ বছর শিক্ষকরা আসছেন। আগামী বছর থেকে সরকারি কর্মচারীরা এর আওতায় আসবেন।

বেসরকারি পর্যায়ে তো নির্দিষ্ট প্যাকেজই রয়েছে। সব উন্নত রাষ্ট্রেই বার্ধক্যে এ ধরনের নিরাপত্তামূলক আর্থিক কর্মসূচি দিয়ে সেফগার্ড দেওয়া হয়।

সাবেক অর্থসচিব

সর্বজনীন পেনশন আলোচনায় বসলেই সব ঠিক হয়ে যেত

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:১১ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
আলোচনায় বসলেই সব ঠিক হয়ে যেত
নজরুল ইসলাম খান

পেনশন স্কিমে কয়েকটি বিষয় নতুন আছে। এগুলো আলাপ-আলোচনা করে নিলেই ঠিক হয়ে যেত বলে মনে করি।

দূরত্ব না বাড়িয়ে বরং কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। দূরত্ব না বাড়ানো ভালো। বিশেষ করে যারা ব্যবস্থাপনায় আছেন তাদের এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার প্রয়োজন ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যেভাবে হঠাৎ করেই অচল করে ফেলা হলো সেটাও কতটা ঠিক হয়েছে, তা দেখা দরকার। এর পেছনে অন্যকিছু আছে কি না, তা নিয়ে আমি কিছুটা শঙ্কিত।

তবু এখনো আলোচনায় বসে প্রয়োজনে কিছু বিষয় সংশোধন করার সুযোগ আছে। কত টাকারই বা ব্যাপার। হয়তো আমাদের অর্থনৈতিক কিছুটা সমস্যার কারণে সহজেই প্রয়োজনীয় অনেক কিছু করা যায় না।

সাবেক শিক্ষা সচিব

ন্যায়সংগত ও যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত প্রয়োজন

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
ন্যায়সংগত ও যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত প্রয়োজন
আবুল কাসেম ফজলুল হক

শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করে একটি যুক্তিগ্রাহ্য ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে এর সমাধান হয়ে যায়। যারা সরকারিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পেনশন পান তাদের বিষয়ে আপাতত কোনো হস্তক্ষেপ বা পরিবর্তন না করা ভালো। এটা চলছে, সবাই মেনে নিয়েছে। কিন্তু সরকার কেন পরিবর্তন করতে চাচ্ছে তা ঠিক বোঝাও যাচ্ছে না।

তবে যারা এখনো সরকারি চাকরি করেন না তাদের জন্য আলাদা পেনশন ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। সেটি করলে সরকার ভালো কাজ করত।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরিবর্তন আনায় শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে কোনো কিছু পাস করানো এই জিনিসটা ভালো না। সরকারকে বা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা যায়।

জনসভা, মিছিল প্রতিবাদ করতে গেলে সংগ্রামের ব্যাপার দাঁড়ায়। সব কিছুতেই সংগ্রাম করতে হবে এরকম না। বাংলাদেশে এখন যে অবস্থা, সংগ্রামের অনেক ক্ষেত্র আছে। তাই বিষয়টি ভালো করে বুঝে অল্প সময়ে সমাধান করা উচিত।

সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়