প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি পালিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে। গতকাল মঙ্গলবার (২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালন করেন।
এদিকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পাশাপাশি লাইব্রেরিও বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে অন্যান্য দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এটা সবার জন্য দুঃখজনক ঘটনা। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে না নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা আশা করব, আমাদের দাবি যখন পূরণ হবে, তখন পর্যন্ত যে সেশনজট বা যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা আমরা স্পেশাল ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে পূরণ করতে পারব।'
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্যই। ভবিষ্যতে তারাই শিক্ষক হবেন। এ আন্দোলন নিয়ে অনেক ধরনের অপপ্রচার চলছে। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এ আন্দোলন করা হচ্ছে। মূলত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্যই এ আন্দোলন করছেন। আর প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের শিক্ষকদেরই মূলত জিম্মি করা হচ্ছে।
এদিকে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঢাবির কর্মচারী সমিতির সভাপতি সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘এই আন্দোলন সফলভাবে শেষ না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। প্রধানমন্ত্রীকে কে বা কারা এমন ভুলভাল বুঝিয়েছে, আমরা জানি না। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য আন্দোলন করে ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন। তাদের প্রতি এই অন্যায় স্কিম মেনে নেওয়ার মতো নয়। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করা না হলে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাবিকে অচল করে দেব, পুরো বাংলাদেশ অচল করে দেব।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা যায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির মূল ফটকে ঝুলছে কর্মবিরতির ব্যানার। যেখানে লেখা, ‘পেনশনসংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ১লা জুলাই ২০২৪ হইতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি’।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পেনশনসংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। এর ফলে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ফটকে তালা দেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তরগুলোতেও একই অবস্থা। শিক্ষকরা দুপুর ১২টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও কর্মকর্তারা সকাল থেকেই কর্মবিরতি দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, ‘আমরা আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই আন্দোলনে নেমেছি। যাতে আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আকাশ-পাতাল বৈষম্য তৈরি না হয়। একটি মহল এ আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য, শিক্ষার্থীদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছানোর জন্য গুজব ছড়াচ্ছে যে এই আন্দোলন আমাদের স্বার্থে। কিন্তু আসলে এ আন্দোলন ভবিষ্যতে যারা শিক্ষকতায় যোগদান করবে তাদের জন্য।’
পেনশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান, আন্দোলন চলবে
সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপত্তি জানানোর পর প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। তবে এটিতে গোঁজামিল রয়েছে উল্লেখ করে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষকরা। একই সঙ্গে তিন দফা দাবি আদায়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তির ৫ ও ৬ নং পয়েন্টের জন্য ধন্যবাদ জানাই। ৮ নং পয়েন্টে যা সংখ্যা দেখিয়েছে সব ঠিক।
কিন্তু এটার মধ্যে চরম জালিয়াতি রয়েছে। ২০২৪ সালে টাকা জমা করে ৩০ বছর পরে ২০৫৪ সালে পেনশন পাবেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা পাবেন প্রতি মাসে। এই ৩০ বছরে বেতন বৃদ্ধি, ইনক্রিমেন্ট, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তার পেনশন হওয়া উচিত ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এটা আমরা বুঝিয়ে দিতে পারব। প্রত্যয় স্কিমে শিক্ষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’