দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের প্রতিটিতে গড়ে আওয়ামী লীগের ৩২ জনের বেশি মনোনয়ন চেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১ হাজার ৫৪৯ জন। বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। একাদশ জাতীয় সংসদের চেয়ে এবার ৩১ জনের বেশি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৪৮টি সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। তারা গত মঙ্গলবার দলের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করে, যা গতকাল বিকেলে শেষ হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়। তিন দিনে ১ হাজার ৫৪৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এ থেকে দলের আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি ফরমের দাম ছিল ৫০ হাজার টাকা।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে গত তিন দিন দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। দলের পুরোনো নেত্রীদের পাশাপাশি নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকাদের ভিড় ছিল উল্লেখ করার মতো। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বেশ কয়েকজন তারকা। অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, তারিন জাহান, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, শিমলা, শাহনূর, তানভীন সুইটি, মেহের আফরোজ শাওন, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর ও শামিমা তুষ্টি আছেন সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, এবার রেকর্ডসংখ্যক নারী সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫১৮ জন। দশম জাতীয় সংসদে এ সংখ্যা বেশ কম ছিল।
টানা চার মেয়াদে সরকার গঠন করায় আওয়ামী লীগে এবার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থন বেড়েছে। অনেকেই দলের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনুকরণে নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেক তারকাই এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তারা দলের প্রচারে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই তারকাদের অনেকেই এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন।
নাটক, চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকের মনোনয়ন সংগ্রহ করা নিয়ে আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে ক্ষোভ জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন নেত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তাদের দাবি, দুর্দিনে রাজপথের ত্যাগীরা যেন তারকা অভিনেত্রীদের ভিড়ে হারিয়ে না যান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত একটি দল। সারা দেশে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থন বেড়েছে। সরকারের উন্নয়নে জনসমর্থন বেড়েছে। তাই জনপ্রতিনিধি হতে চাওয়া প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিগত সংসদে যারা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই এবার বাদ পড়বেন। বিশেষ কারণে কয়েকজনকে এবার রাখা হতে পারে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ আগেই দলের নেতা-কর্মীদের জানিয়েছেন যে এবার সংরক্ষিত আসনে নতুন মুখ বেশি দেখা যাবে। এমন আভাসে দলের বিপুলসংখ্যক নেত্রী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক নেতা জানান, দলের পুরোনো ত্যাগী নেত্রীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন- এমন কয়েকজনকে সংসদে দেখা যেতে পারে। আওয়ামী লীগের জন্য যেসব পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে, এমন পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকেও কয়েকজনকে সংসদ সদস্য করার বিষয়ে আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘যাদের মা-বাবা দলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাদের পরিবারের মধ্য থেকেও সংসদ সদস্য করা হবে। আর একজন যেন বারবার সংসদ সদস্য না হন সেদিকটাও দেখা হবে।’