![ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ২৫ মার্চ](uploads/2024/03/14/1710401972.train.jpg)
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ২৫ মার্চ থেকে আন্তনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৪ মার্চ শুরু হওয়া অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। আগামী ১১ এপ্রিল ঈদের দিন ধরে হিসাব করে যাত্রা বিবেচনায় টিকিট বিক্রি শুরুর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঈদুল ফিতরে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিকিটের কালোবাজারি রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সরদার শাহাদাৎ আলী এসব তথ্য জানান। এ সময় রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ও রেলপথ সচিব হুমায়ূন কবির উপস্থিত ছিলেন।
সরদার শাহাদাৎ আলী জানান, ২৪ মার্চ থেকে যাত্রার ১০ দিন আগের আন্তনগর ট্রেনের টিকিট অগ্রিম হিসেবে বিক্রয় করা হবে। পর্যায়ক্রমে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। যাত্রীদের টিকিট ক্রয় সহজলভ্য করার লক্ষ্যে পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলরত সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টা থেকে এবং পূর্বাঞ্চলে চলাচলরত সকল আন্তনগর ট্রেনের টিকিট দুপুর ২টা থেকে ইস্যু করা হবে। উল্লিখিত সূচি অনুযায়ী ঈদ অগ্রিম ও ফেরত যাত্রার টিকিট শতভাগ অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে।
তিনি আরও জানান, ঈদের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রয় করা হবে। অগ্রিম ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ৩ এপ্রিল। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রিম ফিরতি টিকিট বিক্রি হবে। ৩ এপ্রিল জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী আন্তজোনাল আন্তনগর ট্রেনের কোনো টিকিট ইস্যু করা হবে না।
রেলওয়ে মহাপরিচালক বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধার্থে ঈদ অগ্রিম ও ফেরত যাত্রায় আন্তনগর ট্রেনের সব আসন বিক্রয় শেষে কেবলমাত্র যাত্রী সাধারণের অনুরোধে ট্রেনে বরাদ্দকৃত সাধারণ শ্রেণির মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট স্টেশন কাউন্টার হতে বিক্রয় করা হবে।’
একজন যাত্রী উল্লিখিত ঈদ অগ্রিম যাত্রা ও ফেরত যাত্রার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ একবার করে টিকিট কিনতে পারবেন এবং প্রতিক্ষেত্রে সর্বাধিক ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন। একজন যাত্রীর সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহযাত্রীদের নাম ইনপুট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। ঈদযাত্রার অগ্রিম ও ফেরত যাত্রার টিকিট রিফান্ড করা যাবে না।
ঈদে চলবে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিশেষ ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (৪টি ট্রেন); চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন); ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন)। এ ট্রেনগুলো ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ও ঈদের পরের দিন থেকে ৫ দিন পর্যন্ত চলাচল করবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের কক্সবাজার ঈদ স্পেশালের ২টি ট্রেন চলবে। ট্রেন দুটি ঈদের আগে ৮ ও ৯ এপ্রিল; ঈদের পরের দিন থেকে ৩ দিন চলাচল করবে। ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন); ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটের শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন) শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে।
জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন) ঈদের আগে ৭ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিন; ঈদের পরের দ্বিতীয় দিন থেকে তিন দিন পর্যন্ত চলাচল করবে।
এ ছাড়া বেশ কিছু ট্রেনের শিডিউল ও যাত্রা বিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটির দিন প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তনগর নীলসাগর ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের পরিবর্তে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে চলাচল করবে। এই দুটি ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে না।
ঈদুল ফিতরের দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনা কিছু মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করবে। তবে কোনো আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে না। আন্তদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস, মিতালী এক্সপ্রেস, বন্ধন এক্সপ্রেস ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। মিতালী এক্সপ্রেস জলপাইগুড়ি থেকে ১৭ এপ্রিল চলাচল করবে।
ঈদের ১০ দিন আগে ও ১০ দিন পরে ট্রেনে সেলুন কার সংযোজন করা হবে না। ঈদের আগে ৮ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে ঈদের পরের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার, জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া অন্যান্য গুডস ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
ঈদযাত্রার শুরুর দিন ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, চিলাহাটি, বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রা বিরতি থাকবে না। সুন্দরবন, মধুমতি, বেনাপোল এক্সপ্রেস, নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রা শুরু করবে।
সক্ষমতা বেড়েছে রেলওয়ের, শিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা
গতবছর ঈদ মৌসুমে রেলে যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা ছিল ২৯ হাজার ৭০০ জন যাত্রীর। এ বছর সেই সংখ্যা সাড়ে ৩৩ হাজার জনে উন্নীত হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা পূরণের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৫০টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ৩৬টি বিজি কোচসহ সর্বমোট ৮৬টি কোচ যাত্রীবাহী সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করছে রেলওয়ে। পূর্বাঞ্চলে ১৩২টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১১৬টি লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
রেলওয়ে জানিয়েছে, নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে ট্রেন চলাচলের জন্য ডিভিশনাল ও জোনাল কন্ট্রোলে পৃথক পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ইমারজেন্সি ডিউটি দেওয়া হবে। রেলে যেন শিডিউল বিপর্যয় না হয়, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশন ও সিগন্যাল কেবিনে কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের তদারকির মাধ্যমে ট্রেন অপারেশন পরিচালনা করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ট্রেন শিডিউল অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থ রেলপথ পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। রিলিফ ট্রেন সবসময় প্রস্তুত রাখা হবে।