ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

এমপি আজীম হত্যাকাণ্ড : খুন ঢাকতেই পৈশাচিকতা

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ০২:৩৫ পিএম
এমপি আজীম হত্যাকাণ্ড : খুন ঢাকতেই পৈশাচিকতা
আনোয়ারুল আজীম আনার

হত্যাকাণ্ড চাপা দিতেই পৈশাচিক পন্থা অবলম্বন করেছে খুনিরা। এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহ নৃশংসভাবে টুকরো টুকরো করে কেটে হাড় ও মাংস আলাদা করে হলুদ মাখিয়ে রাখা হয় বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে এখনো তার লাশ পুরোপুরি পাওয়া যায়নি বলেও পুলিশ জানিয়েছে। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসে ভারত ও বাংলাদেশের কিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে আখতারুজ্জামান শাহীন। ডিবি পুলিশ বলছে, এই হত্যার জন্য ১০ কোটি টাকার বাজেট করা হয়। এর মধ্যে ভাড়াটে খুনিদের অগ্রিম ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা হত্যার পর দেওয়ার কথা।

আনারকে খুন করার জন্য শাহীন তিন মাস আগে থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা করেন এবং তার ওপর নজর রাখেন। আজীমকে হত্যার কয়েকটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। পরে তারা ভাড়াটে খুনিদের কাজে লাগিয়ে ঘটনাটি বিদেশের মাটিতে ঘটান। বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই অপরাধীরা কলকাতাকে বেছে নেয়। পরে পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী অপরাধীরা হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

সূত্র জানায়, অপরাধীদের উদ্দেশ্য ছিল আনারের লাশ গুম করা, যাতে তাকে কোনো দিন খুঁজে না পায়। আর সেটাই হয়েছে। তার লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

সূত্র জানায়, এর আগে রাজধানীর গুলশান ও বসুন্ধরার দুই বাসায় এমপি আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেখানেও পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পর সব হত্যার ক্লু পুলিশ বের করতে পারে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এমপিকে হত্যা করেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার পর হাড় ও মাংস আলাদা করে হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ঢোকান হত্যাকারীরা। যাতে কেউ সন্দেহ করলে বাজার থেকে কেনা মাংস বলে রক্ষা যাওয়া যায়। তিনি বলেন, দেশে হত্যাকাণ্ডের সাহস না পেয়ে হত্যাকারীরা দেশের বাইরে হত্যার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে তারা কলকাতায় বাসা ভাড়া নেন। এরপর পরিবার পরিচয়ে তারা কলকাতার ভাড়া বাসায় ওঠেন। পরে সেখানে জিহাদ ও সিয়াম নামে দুজনকে তারা ভাড়া করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডের সব পরিকল্পনা সাজিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী ঢাকায় ফিরে আসেন। 

এমপি আনার কলকাতায় গিয়ে বন্ধু গোপালের বাসায় ওঠেন। পরদিন কাজ আছে বলে বাসা থেকে বের হন আনার। পরে ফয়সাল নামে একজন সাদা গাড়িতে তাকে রিসিভ করেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আরেকজন সেই গাড়িতে ওঠেন। পরে তারা ওই ভাড়া করা বাসায় যান। এর পরই মুস্তাফিজ নামে এক ব্যক্তি ওই বাসায় ঢোকেন। সেই বাসায় জিহাদ অথবা জাহিদ ও সিয়াম আগে থেকেই ছিলেন। এরপর আধা ঘণ্টার মধ্যেই আনারকে হত্যা করা হয়। তার লাশ খণ্ডিত করা হয়। পরে ছাই রঙের একটি স্যুটকেসে করে লাশের একটি অংশ ও পরদিন হাড় ও মাংসের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পলিথিনে ভরে সরিয়ে ফেলা হয়।

হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল আনারের লাশ এমনভাবে গুম করা, যাতে তাকে কোনো দিন খুঁজে না পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীরা একে একে বাংলাদেশে চলে এলে মূল পরিকল্পনাকারী দেশ থেকে চলে যান। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। হত্যাকারীরা অনেক দিন ধরে এমপি আনারের ভারতে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। হত্যার পর হত্যাকারীরা আনারের ফোন থেকে বিভিন্ন জনকে মেসেজ পাঠান। যাতে কেউ তার নিখোঁজের বিষয়টি সন্দেহ না করে। সর্বশেষ ১৮ মে একটি মেসেজ পাঠানো হয়। 

এ ছাড়া ঘন ঘন একাধিক স্থানে আনারের ফোনটি পাঠানো হয়। সর্বশেষ বেনাপোল থেকে আনারের ফোন দিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে মেসেজ পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে তদন্তকারী সংস্থাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করারও চেষ্টা করা হয়।

ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কলকাতা পুলিশ ওই ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমান ও তার সহযোগীদের ট্রলি ব্যাগ আনা-নেওয়া, এমপি আনারের বাইরে রাখা জুতা ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। এ ছাড়া শিলাস্তি রহমান ওরফে শিলাস্তি নামে শাহীনের বান্ধবীর বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে আসার দৃশ্যও সিসিটিভি ফুটেজে আছে। জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া আমান জানিয়েছেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য ১০ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাদের ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর।

কর্মকর্তারা জানান, এমপি আনোয়ারুল আজীমকে নির্মমভাবে হত্যার নেপথ্যে স্বর্ণ চোরাচালানের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আক্তারুজ্জামান শাহীন নিজেও একজন স্বর্ণ চোরাচালানকারী। এমপি আনোয়ারুল আজীমের বিরুদ্ধেও স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে। কলকাতায় শাহীন ও আজীমের যৌথ ব্যবসা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, স্বর্ণ চোরাচালানের বিপুল অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এমপি হত্যাকাণ্ডে কলকাতাতেও একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। কলকাতার স্থানীয় পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এমপি আজীমের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে কলকাতার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাশের টুকরোগুলোর সন্ধানে মাঠে নেমেছেন। এ জন্য পলাতক সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। লাশের টুকরোগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ‘আনার হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। বিষয়টি বলার মতো তেমন কিছু নেই। সময় হলে সব কিছু সামনে আসবে।’

ডিবি সূত্র জানায়, আখতারুজ্জামান শাহীন কলকাতায় গিয়েছিলেন আমেরিকার পাসপোর্ট ব্যবহার করে। সেখানেই হত্যা এবং লেনদেন করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান আনারের ছোটবেলার বন্ধু শাহীন। ডিবি সূত্র জানায়, ১০ কোটি টাকার চুক্তিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শাহীন ভাড়াটে খুনিদের এমপি আজীমকে হত্যার দায়িত্ব দেন।

পরিকল্পিতভাবে খুন করে কলকাতা ছেড়ে বাংলাদেশ হয়ে ইতোমধ্যে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একাংশ।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, আখতারুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে। এলাকায় তিনি শাহীন মিয়া নামে পরিচিত। তার ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান। 

শাহীনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনার মতো আমিও শুনেছি এই হত্যার সঙ্গে অনেকেই জড়িত। তবে হত্যার ঘটনায় ১০ কোটি টাকা খরচ করার কথা ছিল, ৫ কোটি লেনদেন হয়, এমনটিই জানিয়েছেন আটক ব্যক্তিরা। তবে সেসব বিষয়ে আমাদের কাছে শক্ত তেমন কোনো ডকুমেন্ট নেই। তা ছাড়া এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আটক আছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানউল্লাহ আমান, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। সর্বশেষ শিলাস্তি রহমানকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ৩০ থেকে ৪০ জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

ভারতীয় পুলিশের দুই সদস্য ঢাকায় 

এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভারতীয় পুলিশের দুই সদস্য ঢাকায় এসেছেন। তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সন্ধ্যায় তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার আব্দুল আহাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আলোচিত এই ঘটনাটির তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিগগির কলকাতায় যাবে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ভারতীয় পুলিশের কাছে আটক হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

কলকাতায় আটক ২

এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কলকাতায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো ট্রলি ব্যাগ কিংবা এমপির দেহাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়নি কলকাতায়। স্পেশাল টাস্কফোর্সের একটি বিশেষ দল ঢাকায় অবস্থান করছে। সেই দলের সঙ্গে এনআইএর একজন সিনিয়র কর্মকর্তাও রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ওই দলের প্রয়োজনীয় প্রোটোকল সম্পূর্ণ করার কাজও হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এক সূত্র জানিয়েছে, এমপিকে হত্যা করে দেহ খণ্ড খণ্ড করে বেশ কয়েকটি ব্যাগে ভরে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করার জন্যও তাদের জেরা করা প্রয়োজন। সিসিটিভি সূত্রে পাওয়া এক অ্যাপ ক্যাবচালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন সিআইডির অফিসাররা। পাশাপাশি রাজারহাট-নিউ টাউন অঞ্চল থেকে যে ট্যাক্সিচালককে আটক করা হয় তাকেও রাতভর জেরা করেছে পুলিশ। গতকালই বনগাঁ থেকে একজনকে আটক করেছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। জুবায়ের নামে সন্দেহভাজন ওই যুবক সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, খুনে অভিযুক্ত একজন এই যুবকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই তাকে আটক করে জেরা শুরু হয়েছে। এমপির দেহ কোথায় লোপাট করা হয়েছে তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখছেন।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খুনের পর দেহ সারা রাত ফ্রিজে রাখা হয়েছিল। পরে দেহটি টুকরো টুকরো করে ট্রলিতে ভরে নিউ টাউন থেকে গাড়ি বদল করে খুনিরা যান রাজারহাটে অ্যাক্সিস মলের কাছে। নজরুল তীর্থের কাছে কোথাও ট্রলিভর্তি দেহটি ফেলে দেওয়া হয়। তারপর খুনিরা আরেকটি গাড়ি নিয়ে বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান।

৩০ এপ্রিল ঘাতকরা কলকাতায় আসেন। এক দালালের মাধ্যমে রেন্টালে ভাড়া করা ছিল গাড়ি। ৩০ এপ্রিল থেকে ভাড়ার ওই গাড়ি ব্যবহার করা শুরু করেন বাংলাদেশি তিন আততায়ী। গাড়ির চালককে জেরায় মিলেছে এই তথ্য। খুনের কয়েক দিন আগে ওই গাড়িতে করে শহরের বিভিন্ন শপিংমল, রিটেল স্টোরসহ একাধিক জায়গায় ঘোরেন তারা।

১৩ মে ওই গাড়িতে করে সংসদ সদস্যকে বরানগর থেকে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ১৪ মে আলাদা আলাদা সময় ওই ফ্ল্যাটে থেকে বেরিয়ে গাড়িতে করে যান তিনজন। তার পরই সম্ভবত বাংলাদেশে ফেরেন ওই ত্রয়ী।

ওই ফ্ল্যাটের বেডরুমের খাটের কোনায় রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। রক্তের চিহ্ন পাওয়া গেছে দরজার কাছে এবং সেখানে জুতার ছাপও পাওয়া গেছে। রান্নাঘরে লাশ কাটা হয় বলে পুলিশের অনুমান। যদিও রান্নাঘরে রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। সেখানে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। হ্যান্ড গ্লাভসের প্যাকেট পাওয়া গেছে খাটের নিচ থেকে, যদিও তাতে কোনো গ্লাভস ছিল না বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

পুলিশের ধারণা, কোনোভাবে যাতে ধস্তাধস্তি করতে না পারে সেই কারণে খাটের কোনায় তাকে ফেলে শ্বাসরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারা হয়। সেই কারণেই সেখানে রক্তের দাগ রয়েছে। এরপর সেখান থেকে রান্নাঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় ওই ঘরে এমপিসহ মোট সাতজন ছিলেন।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েছে, আনোয়ারুল আজীমের হত্যার মূল চক্রান্তকারী আমেরিকাপ্রবাসী ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামান শাহীন গত ৩০ এপ্রিলের পর আর ভারতে ঢোকেননি। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে সেখানকার গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এমপিকে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণ করে ১০ মে তিনি কলকাতা ছাড়েন। বিধাননগর কমিশনারেট এবং সিট -এর অফিসাররা জানিয়েছেন, এই তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতা মিলছে না, কারণ গত ৩০ এপ্রিল কলকাতায় আসা এবং তার কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতা ছাড়ার রেকর্ড রয়েছে। তারপর আর কলকাতা তথা ভারতে ঢোকার কোনো রেকর্ড নেই। এ ব্যাপারে দুই দেশের তদন্তকারীদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান চলছে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, শেষবার তার ফোনের লোকেশন ছিল উত্তর প্রদেশ। খুনের পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতেই তার মোবাইলটি উত্তর প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সন্দেহ পুলিশের। 

পুলিশ তদন্ত করে জেনেছে, উত্তর প্রদেশের মুজফফরপুরে মোবাইলের শেষ টাওয়ার ছিল। মাঝে মাঝে মোবাইল খোলা হচ্ছিল। তবে বেশির ভাগ সময়ের জন্যই বন্ধ করে রাখা হয়েছিল ফোনটি।

১৫ মের পরের দিন অর্থাৎ ১৬ মে সকালে আনারের নম্বর থেকে একটি ফোন আসে তার আপ্তসহায়কের নম্বরে। আবার অন্য ফোনটি আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মোবাইলে। কিন্তু এমন সময় ফোন করা হয়, দুজনের কেউই তা ধরতে পারেননি। 

কিন্তু খুনের বিষয়টি সামনে আসার পর পুলিশের ধারণা, খুনের পর খুনিরা মোবাইলটি লুট করে নেয়। এরপর প্রমাণ লোপাট করতেই এক আততায়ী তার মোবাইলটি নিয়ে বিহার হয়ে উত্তর প্রদেশে চলে যান। সেখান থেকে তিনি দিল্লি পালান, এমন সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। পুলিশের মতে, যে ব্যক্তি পুলিশ ও এমপির পরিবারের সদস্যদের বিভ্রান্ত করতে মোবাইল নিয়ে পালিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশিও হতে পারেন, আবার বাংলাদেশি আততায়ীদের এই রাজ্যের লিংকম্যানও হতে পারেন। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

এমপি খুনের আগের সময়টায় আমেরিকাপ্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীনের সর্বশেষ গতিবিধি নিয়ে আলাদা করে তদন্ত চলছে। এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা হলো নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের ৫৬বি ইউ ফ্ল্যাটটি তিনি ভাড়া নেন গত ২৫ এপ্রিল। ফলে মনে করা হচ্ছে সংসদ সদস্যকে খুন করার জন্যই তড়িঘড়ি ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। মাসিক ১ লাখ টাকায় ফ্ল্যাটটি ভাড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন স্থানীয় এক দালাল।

পাশাপাশি দুটি ফ্ল্যাটের মালিক অতিরিক্ত এক্সাইজ কমিশনার সন্দীপ রায়। একটি ফ্ল্যাটে (৫৬এ ইউ) সপরিবার সন্দীপবাবু থাকেন।

৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ আদালতের 

খুনের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে অপহরণের মামলায় ৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক এই আদেশ দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এই মামলার এজাহার আদালতে উপস্থাপন করা হলে তা গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করে এই নির্দেশ দেন আদালত। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা (আদালতে দায়িত্বরত) পুলিশের উপপরিদর্শক জালাল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগ এনে এই থানায় মামলাটি করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজীম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।

১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি খুদে বার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছেন। আমি অমিত সাহের কাজে সেখানে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। আমি পরে ফোন দেব।’ এ ছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। খুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারেন।

মামলায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এর পরও আমরা খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছেন।

ভারী বর্ষণের সতর্কতা, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:২২ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:২২ পিএম
ভারী বর্ষণের সতর্কতা, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রবিবার (৩০ জুন) আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতিভারী (২৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবল রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে ও বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

লাগাতার কর্মবিরতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:২৮ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
লাগাতার কর্মবিরতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা
বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: খবরের কাগজ

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা।

সোমবার (১ জুলাই) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একযোগে এই কর্মসূচি পালন করছেন।

ফলে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। 

রবিবারও (৩০ জুন) দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালিত হয়। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

এ সময় ফেডারেশনের সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রস্তাবিত এই স্কিম বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, যারা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তারাও এর ভুক্তভোগী হবেন। আমাদের আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষার পক্ষে এবং উচ্চশিক্ষা-ব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। তাই দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সবাইকে এক হতে হবে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আহ্বান জানাব, তারা যেন দল-মত নির্বিশেষে এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সংগঠনের মহাসচিব ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি আমাদের আত্মমর্যাদার লড়াই। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি বিষয়টি সুরাহা করার জন্য। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাইনি। দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। একযোগে তারাও এই কর্মসূচি পালন করবে।’ 

প্রত্যয় স্কিম থেকে অন্তর্ভুক্তি বাতিল ছাড়া আরও দুটি দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। সেগুলো হলো- শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি।

ঢাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনে ৯ কর্মসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের জন্য ৯টি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সেগুলোর হলো- সব বিভাগের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা; অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস বন্ধ রাখা; সব পরীক্ষা বর্জন করা (মিডটার্ম, ফাইনাল ও ভর্তি পরীক্ষা); বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ রাখা এবং সব ধরনের সভা বন্ধ (একাডেমিক কমিটি, সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভা); ডিন অফিস, ভর্তি পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখা এবং নবীনবরণ-সিলেকশন বোর্ডের সভা বন্ধ রাখা। এ ছাড়া ইনস্টিটিউট ও গবেষণা সেন্টারের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ, হলের প্রাধ্যক্ষ অফিস এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বন্ধ রাখা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রেখে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান। তিনি বলেন, ‘বিভাগগুলোকেও আমরা জানিয়ে দিয়েছি। সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাসও বন্ধ থাকবে। সব পরীক্ষা বর্জন করা হবে। মিডটার্ম, ফাইনাল পরীক্ষা কিছু অনুষ্ঠিত হবে না। কোনো দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কাজ করবেন না।’

সেবা না দেওয়ার ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
অবিলম্বে দাবি বাস্তবায়ন না করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচলের হুমকি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মো. আব্দুল মোতালেব। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানা হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়া হবে। পানি, বিদ্যুৎ থাকবে না; টয়লেট পরিষ্কার, ময়লা পরিষ্কার করার কেউ থাকবে না, গাড়ি চলবে না, অফিস চলবে না, কোনো কিছু চলবে না, সব বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী সরকারকে ভুলভাল বুঝিয়ে প্রত্যয় নামে একটা স্কিম ঘোষণা করেছে। অবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

আন্তবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মহিউদ্দীন খন্দকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে ৭ জুলাই কমিটির সঙ্গে বসে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত: শিক্ষামন্ত্রী
কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। 

রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এইচএসসি পরীক্ষার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশনের আওতায় কারা আসবেন, সেটা সরকারের নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটার সঙ্গেই আছে। শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে জানাচ্ছেন, সরকারই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখানে কিছু করার নেই।

পর্যায়ক্রমে সবাই আসবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হচ্ছে সেটাও নয়। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এ পেনশনের আওতায় আসবেন। হয়তো এ বছর শিক্ষকরা আসছেন, আগামী বছর অন্যরা আসবেন। 

ঢাবির অধিভুক্ত-উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষার সূচি অপরিবর্তিত
কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষাগুলো পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন ও কার্জন হল পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষাগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। উল্লেখ্য, অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষাসমূহ পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন ঢাবি ও জবি প্রতিনিধি]

ভুল চিকিৎসায় জীবন গেল ঐশীর, ২ চিকিৎসকের শাস্তি

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:২০ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:২০ এএম
ভুল চিকিৎসায় জীবন গেল ঐশীর, ২ চিকিৎসকের শাস্তি
অধ্যাপক কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) ডা. মো. নুরুল আজিম ও ডা. তানজিমা তাজরিন

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) গত বৃহস্পতিবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুজন চিকিৎসকের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। ছোট একটু জায়গাজুড়ে হলুদ রঙের ওপর কালো কালিতে ছাপানো কতগুলো অক্ষর। পত্রিকায় ছাপানো আরও গা-শিউরে ওঠা খবরের আড়ালে হয়তো খেয়ালও করে ওঠা হয়নি অনেকের। তবে এই বিজ্ঞপ্তি একজন বাবা ও মায়ের তিন বছরের অপেক্ষা ও সংগ্রামের ফল। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কর্নেল ডা. অধ্যাপক মো. নুরুল আজিমের (অবসরপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আহমেদ রশীদ ও শর্মিষ্ঠা আহমেদ ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাকে তাদের একমাত্র মেয়ে শ্রেয়সী আহমেদ ঐশীর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে কাউন্সিলে অভিযোগ করেছিলেন। কাউন্সিলের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, চিকিৎসক নুরুল আজিম অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন।

বিএমডিসি আরও বলেছে, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসক তানজিমা তাজরিন মূলত নুরুল আজিমের তত্ত্বাবধানে কাউন্সেলিংয়ের কাজ করতেন। এ ক্ষেত্রে অদক্ষতা, অপেশাদার আচরণ করার পাশাপাশি তিনি পেশাগত কাঠামো মেনে চলেননি। এ ছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তার ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জ্ঞানেও উল্লেখযোগ্য ঘাটতি প্রমাণিত হয়েছে। কাউন্সিলের ২০১০ সালের আইনের আওতায় বিএমডিসি নুরুল আজিম ও তানজিমা তাজরিনের রেজিস্ট্রেশন যথাক্রমে পাঁচ বছর ও এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে; যা চলতি বছরের ২৮ জুন থেকে কার্যকর হবে। এ সময়ে চিকিৎসক হিসেবে কোথাও চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন না তারা। এমনকি তারা নিজেদের চিকিৎসক হিসেবেও পরিচয় দিতে পারবেন না।

ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর মাত্র ১৭ বছর বয়সে আত্মহত্যার মতো ভয়ানক রাস্তা বেছে নেন প্রাণচঞ্চল ঐশী। পুরো নাম শ্রেয়সী আহমেদ ঐশী। ঐশীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে মেয়েকে নিয়ে তার বাবা আহমেদ রশীদের আবেগঘন পোস্ট স্পর্শ করেছিল গোটা দেশবাসীকে। কলিজার টুকরো মেয়ের মৃত্যুর পর মুষড়ে পড়েছিলেন বাবা আহমেদ রশীদ ও মা শর্মিষ্ঠা আহমেদ। তবে মেয়ের আত্মহত্যাকে কখনোই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি তারা। তারা বরাবরই বলে আসছিলেন, ঐশী আত্মহত্যা করেনি, তাকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ঐশীর মৃত্যুর দুই বছর পর পোক্ত তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে ২০২১ সালের ১১ মার্চ এই ঘটনার বিচার চেয়ে বিএমডিসিতে অভিযোগ করেছিলেন তারা। সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিলেন বিএমডিসি। তদন্তের রিপোর্টে অবশেষে সত্যতা মেলে বাবা-মায়ের অভিযোগের। দোষী সাব্যস্ত করা হয় সেই দুই চিকিৎসককে যাদের তত্ত্বাবধানে ঐশী চিকিৎসায় ছিলেন প্রায় আড়াই মাস। 

ঢাকার দিল্লি পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল ঐশী। মাত্র কয়েক মাস পর ছিল ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষা। পড়াশোনায় চেষ্টার অন্ত ছিল না। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই বাবা-মায়ের কাছে কান্নাকাটি করে বলছিল তার পড়াশোনা মনে থাকছে না। পরীক্ষার দিন যত ঘনিয়ে আসছে, দুশ্চিন্তা বাড়ে ঐশীর। তাই মেয়েকে সাইকিয়াট্রিস্ট কর্নেল ডা. অধ্যাপক মো. নুরুল আজিমের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা-মা। 

ঐশীকে দেখে তিনি সেদিন কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসিভ ওষুধ লিখে দেন। সঙ্গে তারই তত্ত্বাবধানে তরুণ চিকিৎসক ডা. তানজিমা তাজরিনের কাছে কাউন্সিলিং নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওষুধ সেবনের মাত্র ১২ দিনের মাথায় প্রথমবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ঐশী। তারপর তাকে আবারও ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ওষুধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। ওষুধ সেবনের আড়াই মাসের মাথায় আত্মহত্যা করে ১৭ বছর বয়সী ঐশী। আত্মহত্যার মাত্র কিছু সময় আগেও তার বাবাকে ইউনিমার্ট থেকে চেরি নিয়ে আসতে বলেছিল।

মেয়ের মৃত্যুকে বরাবরই ‘মেডিকেল ইনডিউসড সুইসাইড’ বলে দাবি করেছেন তার বাবা আহমেদ রশীদ। মেয়ের মৃত্যুর পর পর এক আত্মীয়ের কাছে জানতে পারেন ঐশীকে দেওয়া একটি ওষুধের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্রেককারী উপাদান রয়েছে। এতে নড়েচড়ে বসেন আহমেদ রশীদ। এবার মেয়েকে দেওয়া সব ওষুধ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। কথা বলেন দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে। তিনি জানতে পারেন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে, এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধগুলোই মেয়েটিকে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। শুধু একটি নয়, বরং ঐশীকে দেওয়া চারটে ওষুধের মধ্যেই ছিল আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্রেককারী উপাদান। এসব ওষুধের নির্দেশিকায় স্পষ্ট উল্লেখ ছিল এই ওষুধ বয়সন্ধিকালে প্রয়োগের উপযোগী নয়। তবুও ডাক্তার এই ওষুধের হাই ডোজ দিয়েছিলেন ঐশীকে। ঐশীর বাবা-মা মেয়ের মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকদের অবহেলা আর অপেশাদারত্বকেই দায়ী করেন।

খুচরায় চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৩ টাকা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:১০ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:১০ এএম
খুচরায় চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৩ টাকা
ছবি: খবরের কাগজ

রাইস মিলমালিকরা বলছেন, বোরোর মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। তারপরও ঈদের পর তেমন বাড়েনি চালের দাম। পাইকারি বিক্রেতারাও বলছেন, ঈদের সময় পরিবহন খরচ বাড়লেও পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। 

রবিবার (৩০ জুন) রাজধানীর কৃষিমার্কেট, কারওয়ানবাজার, বাদামতলীসহ বিভিন্ন বাজারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। 

দামের ব্যাপারে কৃষিমার্কেটের খুচরা চাল বিক্রেতা সৈকত আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ধানের দাম বেশি। ঈদের পরে চালের দাম কেজিতে ২/১ টাকা বেড়েছে। মোজাম্মেল চাল ৭২ টাকা, রশিদসহ অন্যান্য মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা, পাইজাম ৫৪-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোরবানি ঈদের সময় পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তার প্রভাব চালের বাজারেও পড়েছে।’ 

একই তথ্য জানান, কারওয়ানবাজারের হাজি রাইস এজেন্সির মালিক মো. মাঈনুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ঈদের পর বস্তায় ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা, আটাশ ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৭৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মিল থেকে বাড়ার কারণে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ জন্য বিক্রিও বেশি দামে করতে হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা আনোয়ার রাইস স্টোরের আব্দুল মান্নানও একই সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ডায়মন্ড চাল ৭৫ টাকা কেজি। অন্য মিনিকেটেরও বাড়তি দাম। ঈদে বেড়েছে। আর কমে না। মিল থেকে না কমালে আমরা কীভাবে কমাব। অন্য মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা কেজি। কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। 

তাদের কথার সত্যতা যাচাই করতে চালের পাইকারি মোকাম কৃষিমার্কেটে দেখা যায় বিভিন্ন আড়তে সারি সারি বস্তায় ঠাসা প্রায় দোকান। পাইকারি বিক্রেতা শাপলা রাইস এজেন্সির মালিক শিপন বলেন, ‘মানুষ কোরবানি ঈদ করে ঢাকা এসেছেন। ঈদের পর বিক্রিই নেই। একেবারে কম। বাড়েনি দাম। বর্তমানে মিনিকেট ৬৫-৬৮ টাকা, আটাশ চাল ৫২ টাকা ও মোটা চাল ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও এই রেট ছিল। কোনো দাম বাড়েনি।’ একই তথ্য জানান, বাদামতলীর বাবু বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ঈদের পর বিক্রিই নেই। মানুষ বাড়িতে গিয়েছিল। ঢাকায় এলেও চাল কেনা শুরু করেনি। চাহিদা একেবারে নেই। তাই চালের দামও বাড়েনি। বস্তায় ৫০ টাকা বাড়লেও এটা তেমন বৃদ্ধি না। কারণ অনেক জিনিসের দাম হঠাৎ করে ৫-১০ টাকা বেড়ে যায়। সেটাকে বৃদ্ধি বলা হয়।’

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন চালের দাম বেড়েছে। কিন্তু পাইকারিতে বাড়েনি। আসলে বেড়েছে কী চালের দাম? জানতে চাইলে বাংলাদেশ রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও রশিদ গ্রুপের কর্নধার আব্দুর রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের পর পরিবহন ব্যয় যেভাবে বেড়ে গিয়েছিল, চালের দাম তেমন বাড়েনি। বস্তা প্রতি ৫০ টাকাও বাড়েনি। খুচরায় কত বাড়ল তা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা পাইকারি বাজারে চাল বিক্রি করি। বোরো মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। আমন ধান বাজারে উঠলে আর বাড়বে না। সামান্য বেশি দামে বর্তমানে ধান কিনতে হচ্ছে। এ জন্য একটু বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এই বাড়তি দাম বস্তায় ৫০ টাকাও না। এটা বাড়তি বলা যায় না। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশে ৫০ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে এ ধানের আবাদ হয়েছে। এবার বোরোতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ কোটি ২২ লাখ টন। উৎপাদনও তার কাছাকাছি। তারপরও বিনা ছুতায় বাড়ছে চালের দাম।

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট বসছে আজ

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০১:০০ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০১:০৪ এএম
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট বসছে আজ
ছবি : খবরের কাগজ

মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর সোমবার (১ জুলাই) থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বসছে। মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর বর্তমানে ভ্যাট মওকুফ রয়েছে। যার সময়সীমা রবিবার (৩০ জুন) পর্যন্ত ছিল।

ভ্যাট বসার কারণে মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়বে কি না তা জানতে চাওয়া হলে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কারণে মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর যেন কোনো প্রভাব না পড়ে, এর জন্য আমরা সড়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। সড়ক মন্ত্রণালয় সেই চিঠি এনবিআরকে দিয়েছে। কিন্তু এনবিআর থেকে এখনো কোনো উত্তর পাইনি। তাই মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়ছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।    

সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ কর হলে দুইভাবে এনবিআরকে ভ্যাট পরিশোধ করার সুযোগ আছে। চলমান ভাড়া থেকে ভাড়া কেটে এনবিআরকে দেওয়া হতে পারে। আবার ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসাব কষে ভাড়ার সঙ্গে যোগ করে আদায় করা যায়। এতে ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে। ফলে ভাড়া বাড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমটিসিএলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন,  ১ জুলাই থেকে ভাড়া বাড়ার বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশ পাইনি। নিয়ম মতো, ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি ডিএমটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত হতে হবে। কিন্তু এর আগে এনবিআর থেকে কীভাবে ভ্যাট আদায় করবে তা স্পষ্ট করতে হবে। যে ভাড়া থেকে কেটে নিবে, না কি ভাড়ার সঙ্গে যোগ করে ভাড়া বাড়িয়ে আদায় করা হবে।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ওই সুবিধা দিয়ে আসছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এই জুনের পরে ওই ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা বাতিল করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেল সেবার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট কর্তন ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে ঢাকা দক্ষিণ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

ঢাকা দক্ষিণ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদীর সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হবে ৩০ জুন। এনবিআর গত ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করে। পরবর্তী সময়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পুনরায় আলোচনা হলেও মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেওয়ার অপারগতা জ্ঞাপন করে এনবিআর। 

এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মেট্রোরেল সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর আদায় করতে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পরিপালন যেমন ১৫ শতাংশ মূসকসহ টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করে মূসক আদায় এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পর্কে বিভাগীয় দপ্তরকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

গত ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেল চলাচল মতিঝিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। মেট্রোরেলের যাত্রীদের কোনো ক্লাস বা শ্রেণিবিন্যাস নেই। সব যাত্রী একই ভাড়ায় নির্ধারিত গন্তব্যে আসা-যাওয়া করতে পারেন। 

এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তিন ফুট উচ্চতার শিশুরা বিনা ভাড়ায় এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারেন। কিন্তু সবার জন্য মেট্রোরেল ও মেট্রোরেলের যাত্রীদের কোনো ক্লাস বা শ্রেণিবিন্যাস না থাকায় মেট্রোরেলের সেবার ওপর এই মুহূর্তে কোনো ধরনের মূসক বা ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল না এতদিন।