![প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করুন](uploads/2024/07/01/Editorial-1719810000.jpg)
নানা চ্যালেঞ্জে সামষ্টিক অর্থনীতি। প্রকল্প গ্রহণ ও পরিচালনায় দূরদর্শিতার চরম অভাব। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিশ্লেষকরা মনে করেন, উন্নয়ন কর্মসূচির এই দুর্বলতার কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কমপক্ষে ৩৫৭টি প্রকল্প ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যেও শেষ হয়নি। আগামী এডিপিতে স্থান পেয়েছে ৫৭টি নতুন প্রকল্প। আগের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প আছে ১ হাজার ১৮৯টি। এর মধ্যে ১০ বছরের বেশি বয়স হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৩৬ এবং পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৭৪৫টি। মোট প্রকল্প ১ হাজার ২৪৬। এবারে এডিপিতে নতুন প্রকল্প রয়েছে ৫৭টি। পূর্ববর্তী অর্থবছরে অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু বরাদ্দ পায়নি এমন আরও ৫১ প্রকল্প আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্থান পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, এডিপির প্রকল্পগুলোর ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রকল্প চারবার সংশোধিত হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বারবার বর্ধিত মেয়াদ পাওয়া প্রকল্পের সংখ্যা ৫১৮।
আইএমইডির পরিচালক ড. মো. তায়েবুর রহমান এক গবেষণাপত্রে বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিলম্বের বড় কারণ পর্যাপ্ত সম্ভাব্যতা যাচাই ও অংশীজনের মতামতের অভাব। তার মতে, দ্বিতীয় বড় কারণ দুর্বল প্রকল্প ডকুমেন্ট এবং তৃতীয় কারণ ডিপিপিতে (ড্রাফট প্রজেক্ট প্রপোজাল) কোনো এক্সিট প্ল্যান না থাকা। এসব কারণে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হয়। এতে বারবার সংশোধন ও সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়।
সিপিডি জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটের এডিপিতে সাধারণ ও বিনিয়োগ প্রকল্পের বেশির ভাগই নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়নি। বছরের পর বছর ধরে বারবার একই প্রকল্প এডিপিতে স্থান পায়। মেয়াদ শেষ হয় কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয় না। কোনো কোনো প্রকল্প কোনো অর্থবছরে নামমাত্র বরাদ্দ পেয়ে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে প্রকল্পের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। ফলে জনগণ কিংবা রাষ্ট্র এসব প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছর এ ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় নানা রকম চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা বা বিলম্ব আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি ইঙ্গিত করে। এ নিয়ে অতীতেও অনেক কথা হয়েছে কিন্তু কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। সমস্যা হলো, একটি বিনিয়োগ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে না পারলে ব্যয় বাড়ে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিটার্ন পাওয়া যায় না। এটি তাৎক্ষণিক না হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্প যদি সময়মতো সম্পন্ন না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় হয় এবং জনগণ প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন খবরের কাগজকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের একটি বড় অংশ বিদেশি ঋণে বাস্তবায়ন করা হয়। সুতরাং এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ঋণের দায় ও ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ে। এটি মূল্যস্ফীতির উচ্চহার সৃষ্টি ও আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি যে, আগামী বাজেটের ঋণ পরিশোধে সরকার ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ রেখেছে। সুতরাং ঋণের দায় ও চাপ বাড়লে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ আরও ঘনীভূত হবে। ঋণের বিকল্প হলো সরকারের রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু সেটি সরকার করতে পারছে না।
এ ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের নজরদারির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে ওই প্রকল্পের অংশীজনের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রকল্প ডকুমেন্ট শক্তিশালী এবং ড্রাফট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) পরিকল্পনামাফিক করা, সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সে জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করতে হবে। সেটাই সবার প্রত্যাশা।