অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার, এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভেযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, তার দুই ভাই ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তিন দিনের মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করতে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, দুই কমিশনার ও সচিবকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) এ নোটিশ গ্রহণ করেছে দুদকের সংশ্লিষ্ট শাখা।
এতে বলা হয়েছে, নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু না হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে।
এর আগে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল আজিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়ে গত ২৯ মে দুদকে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।
এদিকে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো তফসিলভুক্ত ও আমলযোগ্য কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)। বিশেষ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আসা প্রতিবেদন এবং একজন আইনজীবীর দেওয়া অভিযাগপত্রের তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের দুর্নীতিসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফ এবং ভাইদের স্ত্রীর এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতির তথ্য চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে তাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি তদন্তে নির্বাচন কমিশন এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে দুটি টিমও গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সম্পদ, আর্থিক দুর্নীতি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে মাঠে কাজ করছেন দুদকের গোয়েন্দারা। তারা ঢাকা, চাঁদপুর জেলা সদর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গোপনে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।
আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর সেনাপ্রধান ছিলেন। অবসরের পর গত ২০ মে ‘তাৎপর্যপূর্ণ দুর্নীতিতে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ দুটি এবং আরেক ভাই আনিস একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তাদের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন জোসেফ। এ মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পান।