![নির্ভার আওয়ামী লীগ : নির্বাচনে ৩২ দল, মনোযোগ সুষ্ঠু ভোটে](uploads/2023/12/02/1701501645.awamileague.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ৩০টি দল। এসব দল নির্বাচনে আসায় অনেকটাই ভারমুক্ত আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বেশির ভাগ দলের অংশগ্রহণের ফলে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য দেখানো সহজ হবে।
এবারের নির্বাচনকে একতরফা আখ্যা দেওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষে কঠিন হবে। গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা খবরের কাগজকে দলের এমন মনোভাবের কথা জানান।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, বেশির ভাগ দলকে নির্বাচনে আনতে পারাটা আওয়ামী লীগের প্রথম ধাপের সাফল্য। এখন সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিতর্কমুক্ত ভোট। যে দলগুলো নির্বাচনে এসেছে তাদের নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন করতে পারলে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে বড় চাপ কমে যাবে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিগত দুই নির্বাচন নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন ওঠায় এবারের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য দেখতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বর্জন করায় নির্বাচনে কয়টি দল অংশগ্রহণ করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। কারণ ২০১৪ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ না নেওয়ার ফলে মাত্র ১২টি দলকে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হন। এবার যেন সে রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতারা। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ৩০টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে ক্ষমতাসীনদের কৌশলের প্রথম ধাপের সাফল্য এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৩০টি নিবন্ধিত দল নির্বাচন অংশ নিচ্ছে। এটা একটা বড় সাফল্য। বিএনপির অনেকে অংশ নিচ্ছেন। আমরা কয়জনের নাম বলব! একরামুজ্জামান, মনজুর আলম, শওকত মাহমুদ, তৈমূর আলম খন্দকার, শমশেন মবিন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আহসান হাবীব, এ কে এম ফখরুল ইসলামসহ ১৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা এবং শাহ মোহাম্মদ জাফর, মেজর আখতারুজ্জামানসহ সাবেক ৩০ জন সংসদ সদস্য এই নির্বাচন অংশগ্রহণ করছেন।
ওবায়দুল কাদের গতকাল সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে বহু দিন পর একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সারা দেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২-১টা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিল কি না, তার চেয়ে জনগণের অংশগ্রহণটা কেমন, সেটা বেশি করে ভাববার বিষয়।’
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বেশির ভাগ দল নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে প্রথম ধাপের সাফল্য মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সাফল্য পূর্ণতা পাবে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে পারলে। যে কয়টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারা যদি ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে, ভোটের দিন যদি মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তাহলে নির্বাচন দেশে-বিদেশে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা খবরের কাগজকে জানান, নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে ১৪টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এবারের নির্বাচনে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনসহ আরও একাধিক দলকে পাওয়ার আশা ছিল সরকারের উচ্চপর্যায়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একাধিক বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে তারা নির্বাচনে আসেনি। চরমোনাই পীরের দলটির দেশের বেশির ভাগ আসনে প্রার্থী দেওয়া এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট পাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। তারাসহ আরও দুয়েকটি ইসলামী দল নির্বাচনে এলে বিএনপি ও সমমনাদের অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা আরও ফিকে হয়ে যেত। তবে শেষ পর্যন্ত যারা এসেছে তাদের নিয়েই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চেয়েছি। বেশির ভাগ দল সাড়া দিয়েছে। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা জানান, বিএনপির সাবেক নেতা ও এমপিদের মধ্যে থেকেও আরও বেশিসংখ্যক নির্বাচনে অংশ নেবেন মনে করা হচ্ছিল। তারা ১৫ জনের মতো মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই সংখ্যাটা আরও কিছু বেশি হলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ত।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্রমতে, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি অন্য দলগুলোকে প্রভাবিত করতে পেরেছিল। সে নির্বাচনে বেশির ভাগ দলই অংশ নেয়নি। মাত্র ১২টি দল অংশ নেয়। কিন্তু এবারে বিএনপি অন্য দলগুলোকে সেভাবে আটকাতে পারেনি। কয়েকটি বাম দল ও কয়েকটি ইসলামী দল তাদের পক্ষে থেকেছে। ৪৪টি দলের মধ্যে ১৪টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ সংখ্যাটা দেশে-বিদেশে বড় করে প্রচার করবে আওয়ামী লীগ।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নিলে দলীয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। তবে এখন যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের নিয়ে যদি একটা সুষ্ঠু ভোট হয়, ভোটাররা যদি প্রশাসনিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, ভোটের ফলে যদি রায়ের প্রতিফলন ঘটে তাহলে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে। ভোটার অংশগ্রহণ যদি ৪০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে নির্বাচনকে ভোটারদের সংখ্যার দিক থেকেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে।